কী বিচিত্র এই দেশ!  <br />  রূপশ্রী ঘোষ

কী বিচিত্র এই দেশ!
রূপশ্রী ঘোষ

সেই কোন ছোটোবেলা। ক্লাস নাইন বা টেন। বাংলার মাস্টারমশাই উদাত্ত গলায় বোঝালেন কালিদাস রায়ের ‘চাঁদ সদাগর’ কবিতা।
“মানুষই দেবতা গড়ে তাহারই কৃপার ’পরে
করে দেব-মহিমা নির্ভর”।
প্রতিটা লাইনের অর্থই মন দিয়ে তৈরি করেছিলাম। পরীক্ষায় নম্বর পাওয়ার জন্য। পেয়েওছিলাম। কিন্তু এমন হাড়ে হাড়ে টের পেতে হবে তখন তা ভাবিনি। ফলিত বিজ্ঞান নয়, যেন একেবারে ফলিত জ্যোতিষ।

চারিদিকে সাজো সাজো রব। ২২ আসছে। কয়েকটা রাজ্যে তো ছুটিই ঘোষিত হয়ে গেছে। এই রাজ্যেও কোথাও কোথাও অর্ধদিবস ছুটি ঘোষিত হয়েছে। কেন? কীসের জন্য? এই সমস্ত বৃত্তান্ত তা আর সাতকাহন করে বলার কী আছে। আমরা সবাই তো জানি কেবলমাত্র ২২ তারিখ নয়, আগামী দিনগুলোতে কী হতে চলেছে। বা কী চলছে দেশজুড়ে। ঐতিহ্যের ইতিহাস সংস্কার করতে, রক্ষা করতে মানুষ যে কোন খাতে নামছে এ তো অজানা নয়। প্রায় দেড়শো কোটি জনসংখ্যার দেশে যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, চেতনার অভাবে জর্জরিত মানুষ, প্রতি হাজার জন শিশু জন্মালে যেখানে প্রায় ছাব্বিশ সাতাশ জন শিশু মারা যায়, বেকারত্বের সংখ্যা প্রায় তেরো শতাংশ সে দেশে ধর্মের চাষ হয়। সেই দেশে মানুষ ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করে, আড়ম্বর করে, উৎসবের উন্মাদনায় গা ভাসিয়ে দিতে ওস্তাদ। জাতের নামে চলে বজ্জাতি। এইসব জাতপাত ভেদাভেদ, হিংসা, বিদ্বেষ, মারামারি, হানাহানি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখে বড়ো হওয়া, তার সঙ্গে ঘর করা এই দেশের দীর্ঘদিনের ইতিহাস। আর তারই চর্চা রমরমিয়ে চলে। ভারতীয়রা তা নিপুণভাবে রপ্তও করে নিয়েছে। এ সবের বাইরে বেরোনো এদেশের রীতিই নয়। যাঁরা দেশের শীর্ষ চূড়ায় থেকে দেশ চালান তাঁরা কি কখনও মানব মনের সংস্কার নিয়ে ভাবেন? এখানে কেউ মানসিক উন্নতি বা সংস্কার নিয়ে মাথা ঘামাতে ব্যস্ত নন। ভোট বড়ো বালাই। মুষ্টিমেয় মেধা সম্পন্ন বা চেতনা সম্পন্ন মানুষ কেবল দেশের দৈন অবস্থা দেখে হা হুতাশ করেন। না না, শিক্ষা স্বাস্থ্য নাইবা থাকল বেকারের সংখ্যা যতই বাড়ুক তা বলে দেশ দৈন ভাবার কোনো কারণ নেই। মন্দির ঘিরে যে ব্যয় তা কী এতদিনেও মুখস্থ হয়নি? হয়েছে তো। অভাব কেবল সেই মানুষটার যিনি সদর্পে বলবেন,
“শূন্য নয়, রাজদম্ভে পূর্ণ’ সাধু কহে,
“আপনায় স্থাপিয়াছ, জগতের দেবতারে নহে।’
হ্যাঁ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু আগে একথা বলে গেছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে কার কী এসে যায়। এমন ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা এখনও আছেন কিনা জানা নেই, সে তো ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু বর্তমান দেখে যাদের গাত্রদাহ চলছে তাঁরাও কী এর সঠিক কোনো সমাধান জানেন? এই রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে কেন্দ্রের কিছু মন্ত্রী অবাঙালি উচ্চারণে, গলা কাঁপিয়ে রবীন্দ্রনাথ আওড়ান ঠিকই, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সমস্ত বাণী মর্মে নিলে তো আর চলবে না। যতটুকু নেওয়া দরকার বেছে বেছে ততটুকুই নিতে হয়। সব বাণী নিতে হলে ‘দীনদান’ তো মিথ্যে হয়ে যেত।
এসবই কবি লেখকদের অরণ্যে রোদন। হীরক রাজার মূর্তিও তো ভাঙা হয়েছিল, ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়?’ও তো উচ্চারিত হয়েছিল। তাতে লাভ কী হয়েছে? এ তো হাতে গোণা মানুষের কান্না। দেশের গরিব, গুবরো খেতে না পাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চতলার বেশিভাগ মানুষই তো ধর্ম ধর্ম করে আর কুসংস্কারে ডুবে আছে। ভুবনায়নের বাতাস এ দেশের মানুষের সাজ পোশাক আর দৈননন্দিন ব্যবহারিক জিনিসের পালে হাওয়া লাগায়। মানুষের মনে শুভচেতনা জাগাতে ব্যর্থ। এখনও মানুষ হাতে কবজ তাবিজ পরে, উপোষ পালা, বার-ব্রত করে, দিনরাত ‘ঠাকুর ঠাকুর’ করে জীবন-তরী পার হতে চায়। সে তো সাধারণ মানুষ। কিন্তু ধর্মকে কেন্দ্র করে যে বিশাল ব্যবসা, যে বুর্জোয়া রীতির বিস্তার তার হিসেব কে রাখে? এই তো একটা খবরে দেখা গেল মন্দির চত্বর ঘিরে কত নিরামিষ হোটেল গজিয়ে উঠবে তার বার্তা ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়ে গেছে। মানুষ নিরামিষ খাবারের অভাবে মন্দির দর্শন থেকে যাতে বিরত না থাকেন তার আগাম বিজ্ঞাপন। এরকম জন-সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিষয়ে দিলে কতটা লাভ তা কর্তা ব্যক্তিরা ভালোই জানেন। তাই সে পথে হাঁটেন না।
কবিরা তো এ কথাও বলেন, ‘ছেলে ভালো হলে আমেরিকা কেড়ে নেবে’। আরে বাবা কেড়ে নেবে কেন? তার কী দায় পড়েছে। আমাদের দেশে লাখো লাখো মন্দিরের মতো লাখো লাখো উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন ইন্সটিটিউট যদি থাকত তাহলে কী আর মেধাবীরা আমেরিকা ছুটে যেত? বেশিরভাগ মানুষই যায় নিজের দেশের উন্নত প্রযুক্তি বিদ্যার অভাবে। যারা পরভূমে নিজবাসী হতে চায় তাদের কথা আলাদা।
ভাবলে অবাক হতে হয়, দেশের মানুষ আজও কত পিছিয়ে। ওইদিন নাকি রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। তাকে ঘিরে মানুষের কী হ্যাংলামো। কী অন্ধ উন্মাদনা। যাঁরা রামায়ণে রাম, সীতা, লক্ষ্মণের অভিনয় করে বহুল পরিচিত সেই অভিনেতারা মানুষকে বিনোদন দিলেন। মানুষের মনে স্থান করে নিলেন তাতে, তাঁদের যথেষ্ট মন ভরেনি। এখন তাঁরা ভাবছেন যে পরিচিতি হয়ে গেছে গেছে এরপর থেকে আরও বেশি করে মানুষের মনে প্রতিষ্ঠিত হবেন তাঁরা। এবার হয়তো রাম বা লক্ষ্মণ অবতারে তাঁরা কারো কারো থেকে পূজাও পেতে পারেন। সেই অভিনেতাদেরও বিশ্বাস এতদিনে নাকি ভারতের ফিকে হয়ে যাওয়া সংস্কৃতি পুনরায় ফিরে আসবে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাঁরা এও বলেছেন যে, “এই ‘রাম মন্দির’ই নাকি হবে জাতীয় মন্দির”। গোটা দেশ জুড়ে যে একটা রাম-ময় হাওয়া বয়ে চলেছে, ধর্মীয় বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে এই সংস্কৃতি কোনো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি হতে পারে? এই মন্দির সংস্কৃতি কোনো অনুপ্রেরণা হতে পারে? জানা নেই। এ পোড়া দেশে মানুষ এর থেকে বেশি কীই বা আশা করতে পারে। এক জন্ম-মৃত্যুহীন কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে এই ধর্মীয়-রাজনৈতিক উন্মাদনা, এই বিগলিতভাব দেখে হাতে হতাশা ছাড়া কিছুই থাকে না।
একজন সাধুশ্রেষ্ঠ নরোত্তমের জন্ম কী আমাদের দেশে হতে পারে না? যাঁর অনুপ্রেরণায় ভক্তবৃন্দ দলে দলে ‘ধরণীর ধূলা’ মেখে আনন্দ উদ্বেলিত হয়ে ভ্রমরের মতো ‘স্বর্ণময় মধুভান্ড’ ফেলে ‘কমলগন্ধে মত্ত’ হয়ে ‘পদ্ম-উপবনে’ ছুটে যেতে পারে। যেভাবে কবিতার নরনারীগণ সোনার মন্দিরের দিকে না তাকিয়ে পথের প্রান্তে যেখানে ভক্তের হৃদয় সৌরভ বিতরিত হচ্ছিল সেদিকে ছুটেছিল। দেবালয়ের রতনসিংহাসন যে রিক্ত, এ কথা বলতে যতটা সাহস লাগে, যে স্পর্ধা লাগে এ দেশে সেই মানুষের বড়ো অভাব। কবিতার নাস্তিক ঋষির মতো মানুষ চাওয়াও এক অতিরঞ্জিত কামনা মাত্র।
ছোটোবেলায় প্রশ্নের উত্তর হিসেবে প্রত্যেক ভারতীয়কেই হয়তো লিখতে হয়েছে ‘ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’। সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া গায়ে কাঁটা দেওয়া এক ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, ভারত বৈচিত্রহীন হয়েছে কিন্তু বিচিত্র ঘটনা বয়ে চলেছে। “অপরাধ না করেই হাজতে ১৫১ দিন” শিরোনামের একটি খবর শিহরিত করে। গত বছর ১৭ জুলাই মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়নীতে ঘটে যাওয়া এক ঘটনা। ওইদিন মহাকাল অর্থাৎ শিবের মিছিল বেরিয়েছিল। মিছিল যে মহল্লার সামনে দিয়ে যাচ্ছিল সেই বাড়ির নিজেদের বারান্দার দোতলায় দাঁড়িয়েছিল আদনান মনসুরি নামে ১৮ বছরে এক কিশোর এবং তার নাবালক আরও দুই ভাই। হঠাৎই মিছিল থেকে শোরগোল তোলা হয়েছিল – “উন লোগো নে মহাকাল কো থুকা হ্যায়”! সেই অপরাধে দুই নাবালক ভাইসহ আদনানকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। দুই ভাইকে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিলেও আদনানকে ১৫১ দিন হাজতে থাকতে হয়েছিল। এবং থুতু দেওয়ার ‘অপরাধে’ তাদের দোতলা বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। যদিও এই মামলা যেদিন মধ্যপ্রদেশের হাইকোর্টে উঠেছিল সেদিন অভিযোগকারী এবং প্রধান সাক্ষী জানিয়ে দিয়েছিল তাড়া আদনানকে থুতু দিতে দেখেনি। এও জানা যায় যেদিন প্রশাসন তাদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল সেদিন বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী সদস্যদের ডিজে, ঢোল বাজিয়ে নাচতে দেখেছিল স্থানীয় বাসিন্দারা। খুবই ভয়ংকর একটি ঘটনা। সংবাদপত্রের পাতা খুললেই এমনই ভয়ংকর এবং বিচিত্র ঘটনা অহরহ চোখে পড়ছে। মানুষ কথায় কথায় অপ্রত্যাশিতভাবে অসহায় হয়ে পড়ছে। আমরা আবার সেই আদিম মানসিকতায় ডুবে যাচ্ছি না তো? কে জানে, এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা কোনদিন কার জীবনে নেমে আসে, তাও অজানা। তাহলে কি মানুষ অসহায়ভাবেই বারান্দায় দাঁড়াতেই ভুলে যাবে? উত্তর জানি না।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes