
সেলিম মণ্ডল-এর গুচ্ছকবিতা
ঘাটকাহিনি
★
১
অপেক্ষার একটা পিচ্ছল ঘাট থাকে। পড়ে যাওয়ার ভয় আছে জেনেও সেই ঘাটের পাড়ে পা মেলিয়ে বসি। জল এসে পা ভেজায়। তারপর ভেজা চপ্পলের দাগ গুনতে গুনতে একদিন ভাঙা নৌকার শরীরে এঁকে দিই স্মৃতিদাগ।
২
নদীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার আগেই ঘাটের সঙ্গে সখ্যতা জমে। তারপর ঘন ঘন সন্ধ্যা নামে। প্রেমিক-প্রেমিকার দল ফিরে যায় বাড়ি। ঘাট অপেক্ষা করে একটি নৌকা আবার আসবে…
৩
ডুবে মরার ভয়ে ঘাটকে পরিত্যাগ করছ! দিগন্তে পাড়ের লাল ক্যাম্বিসের মতো সূর্য যে ছেলেটি বা মেয়েটিকে আত্মহত্যা করতে দেয়নি তারা পারাপারের সদিচ্ছাতেই ডুবতে চেয়েছিল…
চাঁদনামা
★
১
চাঁদ ঠুকরে খেতে খেতে পাখিটি একদিন বৃদ্ধ হয়ে যায়
২
ছোঁ মেরে যে পাখিটি চাঁদ নিয়ে আসে, আকাশের কাছে তার কোনো ঋণ নেই
৩
ভিজে চাঁদ শুকোতে গিয়ে মানুষ পুড়িয়ে ফেলেছে হাত
৪
চাঁদ দ্বি-পার্শ্বীয়ভাবে প্রতিসম; এই তত্ত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে কেউ এনেছে ছুরি, কেউ এনেছে ব্লেড
৫
চাঁদে পা রাখতে গিয়ে যারা পিছলে পড়েছে, তাদের জুতোয় ফিতে ছিল না
৬
একই চাঁদ, সবাই সবার মতো ভাগ করে নেয়। যার ফুটো থালা, তারই গলে যায়…
৭
আকাশ পায় না বলে, অনেক চাঁদ দিনে আত্মহত্যা করে
৮
আকাশ পায় না বলে, অনেক চাঁদ দিনে আত্মহত্যা করে
৯
মানুষ চাঁদ চায়নি বলে ছিঁড়ে ফেলেছে অজস্র যোনি
১০
কোন এক চাঁদবিক্রেতার কাছে টাকা ধার করতে গিয়ে জানতে পারি, সে জোছনা খেয়ে আত্মহত্যা করেছে
ধার
★
কীসের তাচ্ছিল্য? কীসের মিথ্যাবরণ মেঘ?
বরষণে বরষণে গান ফেরি করে—
ছুরি
ছোরা
ছিলা
নিশিকুটুম্ব গলা তোমার, রাতের আলো ভেরি
ভালোবেসেছি, এটুই জোছনা
ফিরিয়েই যদি নিতে চাও, নাও ফেরত সকল তৎসম-ঘৃণা
সকালবেলা আমিও সূর্য তোমায়
ধারে বেচে দেব!
অভিনয়
★
‘ভাত দাও, ভাত দাও’ বলে চিৎকার করে মাঠ
কেউ কোথাও ছিল কি? নালায় বয়ে গেছে শ্যালোর লাল!
ফাটা হাত, ফাটা পা যেখানে থাকুক লেগেছে দাগ
কেউ দেখেনি, কেউ দেখেও না
আগাছার ঝাড়ে ডেকেছে শুধু শিয়াল
মানুষ, মানুষের মতো করে গেছে শুধুই অভিনয়!
সখ্যতা শব্দটা হয় না। কথাটা সখ্য। ঠিক করে নিলে ভালো হয়। শুভেচ্ছা।