
‘শ্রীমদ্ভাগবত-মহাপুরাণ’ থেকে ‘বেণুগীত’-এর শ্রীশুক উবাচ অংশের অনুসৃজনপ্রয়াস।
শুভম চক্রবর্তী
শুভম চক্রবর্তী
‘শ্রীমদ্ভাগবত-মহাপুরাণ’ থেকে ‘বেণুগীত’-এর শ্রীশুক উবাচ অংশের অনুসৃজনপ্রয়াস।
একদা শরৎকালে স্বচ্ছ জলাশয়
পদ্মে হলো পরিপূর্ণ এমন সময়
শ্রীকৃষ্ণ, গরুর পাল আর বৃন্দগণ
জড়ো হয়ে বনমাঝে করেন ভ্রমণ
পদ্মে পরিপূর্ণ থাকা জলের ওপর
মৃদুমন্দ বাতাসেরা বেঁধেছিল ঘর
ফলে যা হবার তাই হলো সুমধুর
ফুল্ল উপবন হল গন্ধে ভরপুর ১
বনেতে ফুটেছে ফুল অসংখ্য-প্রকার
ভ্রমর মত্ততা নিয়ে ঘোরে বারবার
পাখিরাও মুখরিত মুগ্ধ কলতানে
পর্বত-পুকুর-নদী ভরা গানে গানে
গোপবালকের দল, বলরাম আর
মধুর-ঈশ্বর-কৃষ্ণ এই সমাহার
এমন মুহূর্তে কৃষ্ণ গোচারণকারী
মধুর সুরের স্রোত ঠোঁটেতে বাঁশরি ২
এমন মধুর সুর যার কানে যায়
সে-জন মুহূর্তে প্রেমে হাবুডুবু খায়
মিলনের আকাঙ্ক্ষায় হয় সে আকুল
একমাত্র প্রেম সত্য বাকি বিশ্ব ভুল
এমন মধুর সুর গোপীদের কানে
শ্রীকৃষ্ণপ্রেমের বন্যা দ্রুত বয়ে আনে
বাঁশির মধুর তান পরস্পরময়
গোপীরা বর্ণনা করে মাধুর্যের জয় ৩
কিন্তু এইখানে এসে ঘটেছে প্রমাদ
গোপীদের মন আজ কৃষ্ণের আস্বাদ
পেয়েছে বলেই তাঁর অনন্ত মধুর
প্রেমের আশ্চর্য ঘ্রাণে তারা ভরপুর
গোপীদের মনপ্রাণ কৃষ্ণগত বলে
মন আর বশে নেই হারায় অতলে
এখন কে আর কাকে করবে বর্ণন
আপনার নয় তারা এখন আপন ৪
গোপগণ সঙ্গে করে বৃন্দাবনমাঝে
প্রবেশ করেন কৃষ্ণ অলৌকিক সাজে
প্রতি পদক্ষেপ তাঁর ছন্দস্পন্দময়
অনন্ত মধুর ছন্দ করেছে আশ্রয়
শ্রেষ্ঠতম নট আজ গন্ধর্ব আবেশে
মাথায় ময়ূরপুচ্ছ, হলুদাভ বেশে
দু-কানে সোঁদাল ফুল, বৈজয়ন্তী মালা
অপরূপ করে আছে রূপময় গলা
বাঁশরির রন্ধ্রে রন্ধ্রে অধরের সুধা
তার মনোহর সুরে আপ্লুত বসুধা
গোপীজন অনুক্ষণ করেন কীর্তন
শ্রীকৃষ্ণের পদচিহ্নে ধন্য বৃন্দাবন ৫
সে-বাঁশির সুর শুনে মুগ্ধ হয় নাই
এমন পদার্থ জানি ত্রিভুবনে নাই
গোপিনীরা সে-বাঁশির সুর বর্ণনায়
একান্ত অক্ষম হয়ে তন্ময়তা পায়
গোপিনীর মনে খুব আদরের মন
নিবিড় আশ্লেষে মনে বংশীবদন
সে-পরমানন্দময় মুগ্ধ সখীগণ
এইভাবে পরস্পরে করেন কথন ৬