
শুভম চক্রবর্তী-র কবিতা
যূথচেতনার শ্বাস
১
সমস্ত আগল খুলে এখন উঠোনে পড়ে আছে। এ সময় খুব বৃষ্টি হয়। যেরকম গানে কাঁপে কারও কারও কান। যেরকম ঢেউ-এ ঢেউ-এ সব পারাপার শেষ হ’লে, অন্ধকারে কেঁদে ওঠে হাত ধরা, ম্যাজিকলণ্ঠন। দুয়ার খুলেছ তুমি প্রিয়তম, আগলও খুলেছ। চরাচর, শ্বাসেশ্বাসে, ঘন হয়ে ওঠে, শনশন।
২
সুবিশাল প্রেক্ষাপটে আজ তুমি এসেছ হে প্রেম। আমাদের অশ্রুগ্রন্থী, নির্গ্রন্থ কাকের ডাক, কোলাকুলি, মননহারেম। একটি গাধার পিঠে একটি পুটুলি শুধু বাঁধা। তাতেই উন্মোচিত, তাতেই আবদ্ধ সবই, উন্মোচন, ধাঁধা। খরতার বিপরীতে আজিকার প্রণয়প্রস্তাবে। উহারা অদ্ভুত লোক, কিছু বেশি ঘরে নিয়ে যাবে।
৩
না, আজ চিল্লিয়ে পথে কোকিল ডাকবো না। না, আজ বাড়িতে থাকব, না, ঘুরব হাটালেবিটালে। না, আজ যাব না মাঠে, বেড়াতে বা যৌথ কৃষিকাজে। মহারাজ এসেছ কী অপরূপ স্যাটাভাঙা সাজে।
৪
সামনে সবুজ দেখে কী নেশায় বুঁদ হয়ে আছি। অথচ রোজই থাকে এরকম কখনও দেখি না। খুব কেটে কেটে দেখি, খণ্ডিত ও ইউরোসেন্ট্রিক।আজকের দেখা বলো কতখানি ভুল আর কতটা গথিক। আড়ালবিহীন এক সবুজাভ শরীরের কাছে। লাউডগা সাপ সেজে ‘হে মোর দেবতা’ বসে আছে।
৫
যখন লাগে না ভালো, তখন সে না লাগাকে দেখি। অবতল, বহুমুখী, কিরণনির্ভর, ফণা তোলা। হাওয়াতে কেঁপেছে তার নির্ভার বাহুমূলগুলি। হাওয়াতে কেঁপেছে তার যূথচেতনার ডালি, নরমাংস ভক্ষণের সাধ। অপার, অগাধ।
৬
ছাতা উল্টে পড়ে আছে বর্ষার ভেতরে নিচু হয়ে। মানুষের জন্য কিছু কুকুরের বেদনারা এরকমই কেঁপে কেঁদে ওঠে। পশুর গহনে কোনো পিচ্ছিল নিয়তি-বৃষ্টি হ’লে।
৭
আজ আর লিখবো না৷ রবীন্দ্রনাথের কাছে যাব। এবং হুইস্কি খাবো বুড়োকে একটুও ছোঁয়াবো না। হুইস্কির বড়ো দাম এইমাত্র মনে পড়ে গেল। ‘ ও দাদু, তুমিও কিছু টাকাফাকা শেয়ার করো হে’।
৮
ব্যঞ্জনানির্ভর এই বেঁচে থাকা। কোনো ডালে পাখি বসে, কোনো ডালে কখনও বসে না। তাঁইশ দপদপ করে কোটরের নিজস্ব নিয়মে। এক পাখি দুই পাখি ‘মুই পাখি’ কখনও ব’ল না। কারণও ব’ল না তুমি কার্যের পেছন মেরে ফেরো। যেখানে বসে না কোনো পাখিটাখি বসে যে আঁখিতে।
৯
রোদে আঁচড়াও চুল রোদও মনের ভুলে আসে।ছইছই ডানা তুলে খুশবু দেয় ভোরের বাতাসে। বাতাস সে খুশবু নিয়ে ভারী হয়, পাছা ভারী নারী। তাকে কি কাব্যি ক’রে ‘নিতম্বিনী’ নামে ডাকতে পারি?
১০
‘তাও’কে পাব না আমি, আর ‘তাও’-ও আমাকে পাবে না। পাশের বাড়ির হ’লে ‘তাও’ গিয়ে দেখে আসা যেত। অন্তত পাব না দেখা, সেই না-পাওয়াকে দেখা যেত। অথবা চকিতে, ঘুমে হয়তো-বা ‘তাও’ পেয়ে যাব। পাওয়া বা না-পাওয়াটুকু তারপর কীভাবে বোঝাব !
১১
বেড়াল নিজেও জানে এঁটো ছাড়া অনন্য পাবে না। কার্ণিশে কার্ণিশে তাই লম্ফঝম্প দিয়ে একা ঘোরে। বেড়াল নিজেও জানে কতটা কঠিন এঁটোকাঁটা, বরাদ্দে রয়েছে তার আজি হতে শতবর্ষ পরে। কেউ আর পড়বে না তাকে। তাই স্টান্ট। লম্ফঝম্প মারে।
১২
আত্মার অভাবে খুব আত্মবিশ্বাসেরা বেড়ে যায়। একান্ত দালাল কিছু ঈশ্বরের মুখাপেক্ষী কবি। দশক দশক ধরে ঈশ্বরের পোঁদ চেটে খায়।
১৩
পাখি ও পরি তখন সপ্তম আকাশে উড়ে গেছে। মুসলমানীর গল্পে, ম্যাটাডোরে, আরব্য জলসায়। বোরখার ভেতর দিয়ে মিয়া খালিফার ঘন পর্ণ দেখা যায়। সব নদী সেখানেই থেমে গিয়ে সাগরে মিশেছে।
ভালো লাগলো, শুভম
ভালো লাগলো
অসাধারণ সব কবিতা গুলি । শুভমের কবিতা পড়লে মনে আরাম পাই খুব
প্রতিটি কবিতাই ভালো লাগার মত। সুন্দর লিখেছিস। এই পরীক্ষা নিরীক্ষা চলতে থাকুক।
ভালো লাগলো।
ভালো লাগল
প্রিয় শুভম, তোমার লেখার প্রতি আমি বরাবরই কৌতূহলী। তার অন্যতম কারণ তোমার লেখার গতি ও বাকস্পন্দ আমাকে মানসিক আরাম দেয়। এবং অনেকক্ষেত্রেই কোনও শব্দের পাশে পরবর্তী শব্দ অভাবনীয় হাজির হয়, যা আগে থেকে অনুমানযোগ্য ছিল না। শব্দ ব্যবহারের এই সাহস ও স্বকীয়তা আমাকে মুগ্ধ করে। এই লেখাগুলিও উপরিউক্ত সমস্ত বৈশিষ্ট্যকে বহন করে সাফল্যের সঙ্গে।