
রঙ্গিত মিত্রর কবিতাগুচ্ছ
ভাগ্যরেখা
চকলেটের গন্ধ ভেসে আসে অটো – স্ট্যান্ডের থেকে
যেরকম কালো জামায় তোমাকে মানায়।
শুনেছি, অন্ধকারে নাকি ঈশ্বরের বসবাস
ফায়ার স্টেশনের বন্ধ দরজার উপর
ম্যাসেজ পার্লারের নাম্বার ঝোলে।
ঝুলে থাকা দূষিত আকাশের উপর রাগ করে
শিরা কাটে ট্রাম।
ট্রাম লাইন যেন ভাগ্যরেখা।
পাথর
ভেড়ি আর পুকুরের সংযোগ হয়ে ওঠে
কোনো এক বর্ষায়।
বয়সের ছাপ মুছে সে আবিষ্কার করতে থাকে
কোনো দিন নদী হয়ে বয়ে যাওয়া অক্ষরগুলো
কালো আর লাল পিঁপড়ের আখ্যান।
তার গান গেয়ে যাবে বলেছিলো যে,
তার সমাধিতে আজ ফুল কেউ দেয়নি।
“সমস্ত ফুল পাথর হয়ে গেছে । “
বিকেল
ফুলের ভিতরে সাপেরা লুকিয়ে থাকে
ভ্রমরেরা কানে কানে সে প্রেমের কথা লিখে যায়।
মায়া বলে উপেক্ষিত জীবনের মুদ্রাগুলো
বৃহৎ ইক্যুলিব্রিয়ামে ফিজিক্সের অঙ্ক কষছে।
প্রকৃতির জেন্ডার জানা হয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি
তাই মধ্যরাতে ডারউইনকে প্ল্যান-চেট করি।
পরীক্ষা এবং জীবন
পৃথক পৃথক অধ্যায় বলে
সিলেবাসকে বাইপাস করে
সাইকেল চলে গেছে বিকেলের দিকে।
লাইফবয় সাবান
মরা শাপ পড়ে আছে রোদে।
মাছিরা চেটে যাচ্ছে বিষ।
তোমার জিনসের স্পর্শের
ধূলিকণা লাগানো বাতাস
পরিত্যক্ত অতীতকে নিয়ে যাচ্ছে স্কুলে।
আমার মাস্ক খসে পড়েছে
আমার গ্লাসে মদের থেকে
কোল্ড ড্রিংস বেশি।
তোমাকে ভালোবাসি ছাড়া সব কথা বলতে পেরেছি বলে
যতই ব্যবহৃত হোক
লাইফবয় সাবান-ই কিন্তু কাজে লাগে।
অপদস্থ
হয়তো এইভাবে চলে যাবে জীবন।
গোপনে শিখে নেওয়া ডি – মাইনার
গিটারের বাড়ানো তারে
বদ্রিপাখি এসে বসে।
ফ্রেট বোর্ড যেন ফুল কপির ক্ষেত
ফলহীন আমগাছের মতো লজ্জিত হয়ে থাকে
টবের তুলসী গাছটা ।
আমি শুধু বে-আইনি আওয়াজ বানাই।
জানলা, দরজা বন্ধ থাকলেও
ওরা বড় বেয়াড়া।
দর্শক শূন্য সভাঘরে তবু আমাকে অপদস্থ হতেই হয়।
বই-এর মলাট
পরিত্যক্ত সোলার প্যানেল, মৃত ম্যানগ্রোভের শিকড়
কাট মানি পায়রার ধাঁকের মতো ওড়ে।
গৌরী সেন এখন ক্রাউড ফান্ডিং চালান
ব্যবহার শব্দটা বিক্রির প্রতিশব্দের মতো ।
দামি ব্রাউন পেপার দিয়ে বইটা আবৃত
কিন্তু যেকোনো দিন,
বইটা আবার ছিঁড়ে যেতে পারে।
তোমার নাম আমার নাম
পাহাড়ের কোলে শহর লুকিয়ে আছে
উঁচু – নিচু উপত্যকা পেরিয়ে পেরিয়ে
অরণ্য মিশেছে মানুষের কাছে।
একা নদী, হারানো প্রেমিকার বাঁশি
সে ছিলো, যাকে চিনতে পারোনি।
আমার অবিশ্বাসের স্মৃতি – ফলকে
তোমার নাম লেখা।
বাড়ি ফেরার রাস্তা
অন্ধকারে মুখ কেটে দিয়ে রাতের লাইট-পোস্ট
তোমার মুখের সাদা ফিল্টারের সিগারেটে।
চুলের অস্পষ্ট আড়াল
শূন্যতাকে একশো দিয়ে গুণ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া দরজা
পাথরে মুখ দিয়ে একাকী বিড়াল।
এরোটিকার পাতাগুলো ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে যায়
এই বৃষ্টিতে নেশা করলে ভালো হত,
এই বৃষ্টিতে সঙ্গম করলে ভালো হত।
তোমাকে কী ভীষণ মিস করি, সেটা লেখা যাবে না বলে
গান ছড়াতে ছড়াতে বাড়ি ফেরার রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি।
হারমোনি
স্বস্তিকা চিহ্ন লেগে আছে ,
মেট্রো রেলের চেয়ারে।
ফাঁকা কামরায়
মেয়েটির বাড়ানো চুল
আমি তাকে দমদমে দেখেছি,
দেখেছি বেহালায়, দেখেছি যাদবপুরে ।
পাগলের মত করেছি পিছু ধাওয়া
সে আমাকে চেনেনি।
তার রেখে যাওয়া জুতোর শব্দে
হৃদয়ের হারমোনি ।
যেসব কথা লেখা যায় না
এই মাথা চুলের মতো ঝড়ে
ছেলেটিকে নিয়ে একটা ডায়মন্ড হারবার হয়ে যায় ।
বন্যা পেরোনো রেল – লাইন
আর খিদে পেরোনো শহর
ছাপা হচ্ছে দৃশ্যের ভিতর।
সরু গলি দেখলেই “কলকাতা ৭০” ।
চিন্তা – ভাবনায় জি-এস-টি , আই – পি – আর মিশে যায়
ভাঙা ক্যাসেটের টেপে
আমিও তো ঘুড়ি উড়িয়েছিলাম।
ঘুম
রাগ একটা নিয়ম। বোকামি একটা পর্যায়।
রাতে রাধা – কৃষ্ণ উচ্চারণ করতে করতে একদল লোক।
অম্বলে মাঝরাতে ঘুম ভাঙে। মাঝরাতে ঘুম ভাঙে টেনশনে।
আমাকে কারা যেন দেখছে।
আজানের শব্দ শুনি আলোময় জানলায়।
একটু সকাল হলে, আবার ঘুম পেয়ে যায়।
বিগ ডেটা
বিগ ডেটা নিয়ে নিয়েছে
রাতের ঘুম।
কে কত সামাজিক হবে তার পরীক্ষায়
চাকর হয়ে যেতে হচ্ছে ।
সামান্য বিশ্বাসের ভরসা নেই
জল ঢুকে পড়েছে ঘরে।
ওমেন লিডারশীপ নিয়ে রচনা লিখতে লিখতে
শুধু নাম্বারে নিয়ন্ত্রিত।
বাড়ি আর বাইরের হিপোক্রেসিতে এখনো ইকুয়ালিটি স্থাপিত হয়নি।
সেমিনারের পর ভালো খেতে দিলে, প্রচার দিলে, টাকা দিলে
কে না আসবে গালভরা কথা বলতে !
খুবই ভালো লাগল। অনবদ্য।
রঙ্গীত একটি নদীর নাম| স্রোতের ভালবাসা নিও|