মেরু-নিশীথের নাবিকেরা <br />  প্রথম পর্ব <br /> পার্থজিৎ চন্দ

মেরু-নিশীথের নাবিকেরা
প্রথম পর্ব
পার্থজিৎ চন্দ

এই ধারাবাহিকটি এক ‘অবসরের’ ফসল; পাঠ থেকে পাঠান্তরে চলে যাবার প্রক্রিয়া। এক একটি লেখার সামনে বসে থেকে তার দিকে তাকিয়ে থাকা, অ্যকাডেমিক পাঠ-প্রক্রিয়া সে বিস্ময়ের কাছে ম্লান হয়ে আসে। কিছুটা অনিয়মিত, কিছুটা উল্লম্ফন। কোনও কিছুই হয়ে ওঠার যে দায় নেই তাই এই লেখাগুলির বৈশিষ্ট্য; যাকে ব্যর্থতা হিসাবেও চিহ্নিত করা যেতে পারে।

প্রথম পর্ব

পাখিদের আমি সবচেয়ে বড়ো ক্যাপিট্যাল মনে করি…

একটি বিকেল, বা একটির পর একটি বিকেল, যা ছুটে আসছে অনির্দিষ্ট কোনও প্রান্তর থেকে… যে বিকেলগুলির মধ্যে একমাত্র উপাদান হিসাবে রয়েছে ‘কিছুই না-হয়ে ওঠা’র প্রবাহ সে বিকেলগুলি কাটিয়ে দেবার সব থেকে আনন্দময় ও সার্থক রাস্তা খুঁজে পেয়েছিলাম একদিন। একদিন বিকেলের পেটের ভেতর বসে দেখেছিলাম দিকচক্রবালের দিকে উড়ে যাচ্ছে পাখি… পাখিদের দল।
মানুষ ও পাখির মধ্যে এই তীব্র সংরাগময় সম্পর্কের দিকে তাকিয়ে ক্রমশ বুঝতে পারছিলাম পাখি আসলে এক আশ্চর্য জীব, পাখি মানুষকে সব থেকে বেশি প্রভাবিত করেছে তার ‘হয়ে ওঠা’র পথে। মানুষের মনোজগতে নিশ্চয় পাখি এক আশ্চর্য উপাদান। মানুষের কাছাকাছি সে উড়েছে, সে বারবার মানুষকে প্ররোচিত করেছে উড়ে যাবার জন্য কিন্তু মানুষ ও পাখির মধ্যে রয়ে গেছে ‘দূরত্বের আনন্দ’। সে দূরত্ব কোনও দিন ঘোচেনি বলেই তা আজও রহস্যময়।
কেন পাখিকে বারবার মনে হয় মানুষের কাছাকাছি বাস করা অথচ মানুষের অভিজ্ঞতার থেকে দূরের এক ‘বিষয়’? এর সব থেকে বড় কারণ সম্ভবত এটিই যে মানুষ স্থলচর প্রাণীদের পোষ মানিয়েছে; জলচর প্রাণীদের দেখেছে জলের ভেতর ঘুরে বেড়াতে। তার পোষ-মানানো সমস্ত প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অনিবার্যভাবেই একমাত্রিক। সে মাঝে মাঝে তাকে দ্বিমাত্রিক স্তর দিতে চেয়েছে; ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের কল্পনার তাদের স্থান একমাত্রিক। তারা কঠিন অথবা তরল-সংলগ্ন হয়ে থেকেছে। অর্থাৎ সে মাধ্যমটি তাদের ধারণ করছে তা মানুষের কাছে স্পর্শযোগ্য। একমাত্র পাখির ক্ষেত্রে বিষয়টি পৃথক, পাখিকে ধারণ করেছে যে মাধ্যম তা মানুষের দৃষ্টিতে ধরা দিচ্ছে না। বারবার তার মনে গভীর রহস্যের জন্ম হচ্ছে ও সে রহস্য ধেয়ে যাচ্ছে আরও আরও বিস্ময়ের দিকে – এই ‘শূন্যের ভেতর’ যা ডানা ঝাপটে ওড়ে তা কী শূন্যের দিকে ধেয়ে চলা? না কি শূন্যের ভেতর সে পৃথক এক অবস্থান? একই রকমভাবে একই সঙ্গে অনুভূমিক ও উল্লম্ব অবস্থান থেকে তার চেতনাকে এতটা প্রভাবিত করেনি আর অন্য কোনও জীব, যা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পাখি করেছে। দৃষ্টির নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে যাবার ক্ষেত্রে পাখির ভূমিকা অপরিসীম। ফলে মানুষের সঙ্গে পাখির সম্পর্ক যতটা না প্রকাশ্যের তার থেকে অনেক বেশি অপ্রকাশ্যের।
কিন্তু আজ মনে হচ্ছে পাখি আর মানুষকে যদি কোনও এক কাল্পনিক ডায়ালগের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া যায় তা হলে পাখি ও মানুষের মধ্যে সে কথোপকথনের ভেতর কোন উপাদান সব থেকে বেশি ছড়িয়ে থাকবে? ছড়িয়ে থাকবে নির্জনতা স্তব্ধতা ও রহস্যময়তা। ‘হায় হাসি, হায় দেবদারু’র বলে প্রকৃত সারস ও মানুষের মধ্যে পৃথিবীর পবিত্রতম কান্না থেকে ঝরে পড়া জল রেখে গেছে মানুষ। কিন্তু পাখি তার অভিজ্ঞতা থেকেই মানুষকে আর খুব বেশি বিশ্বাস করে না। মানুষ তো পাখিকে সেই প্রথম থেকেই ‘বিশ্বাস’ করে না। কারণ পাখিই একমাত্র জীব যা মানুষকে ছুটিয়ে মারতে পারে; এবং শুধু তাই নয়, তাকে ছুটিয়ে নিয়ে গিয়ে, বহুদূর ছুটিয়ে নিয়ে গিয়ে সব শেষ আরও দূর উড়ে গিয়ে বিপন্নতার মুখে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। মানুষের অভিজ্ঞতার থেকে সম্পূর্ণ পৃথক এক ধারকে অবস্থান করার কারণে তাকে পাখির থেকে বেশি বিপন্ন ও বিষণ্ণ করতে পারেনি আর কোনও প্রাণী’ই। পাখি ও মানুষের সংরাগের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই বিষণ্নতাই জন্ম দিয়েছে নির্জনতার। বিকেলের পেটের ভেতর বসে পাখি’কে নির্জনতার ফসল বলেও মনে হয়।
এ রকম হাজারো মনে হওয়ার ভেতর গুঁড়ি মেরে ঢুকে যার আরেকটি ধারণাও; খুব মৃদু ও অনুচ্চ স্বরে একদিন মারাত্মক এক ধারণা বুনে দিয়েছিলেন জীবনানন্দ। তিনি মনে করেছিলেন পাখিরা আসলে সব থেকে ‘বড়ো ক্যাপিট্যাল’।
জীবনানন্দের ‘অগ্রন্থিত কবিতা’ হিসাবে যে বিপুল সৃষ্টি তারই একটি ‘এইসব পাখি’। জীবনানন্দের কবিতায় বারবার পাখি ঘুরেফিরে এসেছে; ‘রূপসী বাংলা’য় পাখিগুলি কিছুটা স্থির হয়ে বসেছিল বাংলার কোলের ভেতর। তারপর তারা শুধুই উড়ে বেড়িয়েছে, মানুষের সঙ্গে ভয়াবহ রহস্যময় সম্পর্ক’কে চিহ্নিত করেছে। এই কবিতাটিতেও তার ব্যতিক্রম নেই, সারাদিন পাখিদের হদিশ পাওয়া যায় না; ‘শহর কলকাতার শহর যেন পাখিহীন হয়ে থাকে;’। দ্বিতীয় লাইনে এই সংশয় ব্যক্ত করার আগে কবিতাটি শুরুই হচ্ছে পাখি ও মানুষের মধ্যে ঘনিয়ে থাকা সেই আবহমান রহস্যজটিল সম্পর্কের ইশারা দিয়ে, পাখিরা রয়েছে অথচ সারাদিন তারা যেন নেই। উড়ে চলে গেছে কোথাও।
তৃতীয় ও চতুর্থ লাইনটিতে কিছুটা পরে আসা যাবে, এবার ষষ্ঠ ও সপ্তম লাইনের কাছে যাওয়া যাক, জীবনানন্দ লিখছেন, ‘কলকাতা আমাদের, / এবং কলকাতা কলকাতাও পাখিদের।’
নাগরিক সভ্যতার পেটের ভেতর বসে তা হলে কি জীবনানন্দ অনুভব করেছিলেন মানুষ ও পাখির মধ্যে দীর্ঘ হয়ে উঠছে মহানগরের ছায়া? এই ভাবনা স্পষ্টতর হয় অষ্টম ও নবম লাইনে এসে, ‘সারা দুপুর পাখিগুলো দূরের থেকে আরো দূরে কোথাও চ’লে যায়। / শহর দরিদ্র হয়ে পড়ে।’ তা হলে কি মানুষের সব নাগরিক অর্জন এবং সফলতা ব্যর্থ ও অসফল হয়ে যেতে পারে পাখির অভাবে?
হতে পারে এবং অনিবার্যভাবে সেটিই যে হয় তা জীবনানন্দ উচ্চারণ করছেন মুক্ত কণ্ঠে; আমরা পেয়ে যাচ্ছি, ‘ধীরে ধীরে বিকেলের নরম আলো / নরম আলো পৃথিবীতে নামে; / ভিস্তির জলে তখন রাস্তা ঠাণ্ডা; / রাস্তায় ছায়া; / ব্যস্ততা তখন কম – আরো কম; / পাখিদের তখন পৃথিবীতে নামবার সময়;।’
এখানে এসে আরেকটি মাত্রা যুক্ত হয়ে যাচ্ছে পাখি ও মানুষের পৃথিবীর মধ্যে; পাখি ও নির্জনতার মধ্যে যে সম্পর্ক তা গাঢ়তর ও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পাখি একাধারে হয়ে উঠছে নির্জনতার ফসল এবং নির্জনতাকে আনয়নকারী। শুধু তাই নয়, জীবনানন্দের এ কবিতাটিতে আরেকটি ঘটনাও ঘটে; পাখির ভাষ্যে ফুটে উঠতে থাকে মানুষ ও পাখির মধ্যে সম্পর্ক। মানুষের নাগরিকতার মধ্যে নির্জনতা আবিষ্কার করে পাখিরা বলে ওঠে, ‘পাখির তখন আকাশ থেকে নামে / বলে তারা; ‘এমনতর কলকাতায় থাকতে পারা যায়; / এই সন্ধ্যার সমুদ্রে / আমরা গোলাপের পাপড়ির মতো খ’সে পড়ছি।’
মানুষের নির্জনতার সামান্যতম অবসরে যেন আত্ম-আবিষ্কারের আনন্দে মেতে উঠছে পাখিরাও, তারা নিজেদের চিনে নিচ্ছে গোলাপের পাপড়ি হিসাবে। এর পরের স্তবকটিতে জীবনানন্দের অতিপ্রিয় নির্মাণ প্রক্রিয়া কাজ করে চলেছে। তিনি মাইক্রোকজম থেকে ম্যাক্রোকজম পর্যন্ত স্থাপন করছেন এক দীর্ঘ টানেল, ‘অনেকক্ষণ ছাদে দাঁড়িয়ে দেখি আমি / চারদিকে পাখনা পালক; / পালক পাখনা।’ অংশের ভেতর সমগ্রকে আবিষ্কার করার এ প্রক্রিয়া জীবনানন্দের কবিতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। শুধু তাই নয়, আমরা পেয়ে যাচ্ছি তাঁর প্রিয়তম দুটি উপমা’ও, ‘দেবদারু পাতার ফাঁক দিয়ে সোনার ডিমের মতো সূর্য, / রূপোর ডিমের মতো চাঁদ,।’ এবং কবিতাটি শেষ হচ্ছে দুটি লাইনে ‘দুটি’ শব্দের প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে, জীবনানন্দ লিখছেন ‘কলকাতা? / কলকাতা!’
এখানে সবিস্ময়ে দেখার, একবার তিনি কলকাতার পর প্রশ্ন-চিহ্ন ব্যবহার করলেন ও দ্বিতীয়বার তিনি একই শব্দের পর বিস্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহার করলেন। যে প্রশ্নাতুর মনন এতক্ষণ পর্যন্ত সংশয়ে দীর্ণ ছিল তা যেন এক লহমায় বিস্ময়ের প্রগাঢ় উল্লাসে ফেটে পড়ল। মানুষের অবস্থান থেকে তিনি নাগরিক জীবনের মধ্যে পাখি-সংলগ্নতা আবিষ্কার করতে পেরেছেন অবশেষে। এ এক আধুনিক মানুষের চরম ‘ইউরেকা’। কলকাতার পেটের ভেতর লুকিয়ে থাকা পাখি-রহস্যের দ্বীপটিকে খুঁজে পেয়ে তিনি বিস্মিত হয়ে উঠছেন। সমস্ত সংশয়ের শেষে তিনি উপনীত হলেন চরম সত্যে।
কিন্তু এবার আমাদের ফিরে যেতে হবে কবিতাটির তৃতীয় লাইনে, যেখানে জীবনানন্দ লিখছেন, ‘পাখিদের আমি সবচেয়ে বড়ো ক্যাপিট্যাল মনে করি;।’
‘ক্যাপিট্যাল’ ও পুঁজি আমাদের কাছে যেভাবে সমার্থক হয়ে গেছে জীবনানন্দের এ উচ্চারণ তার থেকে এক বড়ো বাঁক; এক পৃথক অ্যভেনিউ খুলে দিচ্ছে যেন। পাখি-ধারণা ও পাখি-সংলগ্নতা যে মানব-সভ্যতা ও নাগরিক জীবনের প্রতি মানুষেরই পবিত্র লগ্নি-পুঁজি – এমন একটা স্তম্ভিত পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে আমাদের বিমূঢ় করে দিচ্ছেন জীবনানন্দ। আরও স্তম্ভিত করে দেওয়া বিষয় হল, এই স্পষ্ট ‘ঘোষণা’টিকে বুকে ধারণ করছে কবিতা।
কিন্তু এখানেই কি বিস্ময়ের শেষ? না, এবং না; কারণ এরপরেই লাইনেই তিনি লিখবেন, ‘জুটমিলের মালিকদের মতো অন্য রকম,-।’ এই ‘মতো অন্য রকম’ শব্দ তিনটি বেশ ঘাতক, কারণ জুটমিল মালিকরা অন্যরকম পুঁজির ধারক ও বাহক এমন লঘু ও অগভীর ধারণায় নিশ্চিত জীবনানন্দের আস্থা ছিল না। তাঁর ইতিহাসবোধ, অর্থনীতি ও কাল-চেতনা নিশ্চয় তাঁকে এমন একটি ধারণা উপহার দেয়নি। তা হলে কি তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে, কবিতার অমোঘ শর্তেই কিছুটা হয়তো, মুছে দিয়েছিলেন একটি শব্দ’কে? আসলে লাইনটি কি হতে চেয়েছিল, জুটমিল মালিকদের মতো ‘নয়’, অন্য রকম?
এই কল্পিত পুনর্নিমাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, বিতর্ক হতে পারে। সেখানে এর পরের লাইনটি সব থেকে বড়ো প্রমাণ হিসাবে গণ্য করাও যেতে পারে যেখানে আমরা পাচ্ছি, ‘কিন্তু কলকাতা কি শুধু জুটওয়ালাদের?’। জীবনানন্দ যদি বিশ্বাস করতেন পাখিরা জুটমিলের মালিকদের মতো ‘অন্যরকম’ ক্যাপিট্যালের ধারক ও বাহক তা হলে এই লাইনটির প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে যেত। কিন্তু এই লাইনটি ভয়ংকর রকমভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে রয়েছে। কলকাতা যে শুধু জুটমিলের মালিকদের নয়, সেখানে যে বিষণ্ণ ও গভীর বিস্ময়ে তাড়িত হওয়া মানুষের নাগরিক অবস্থানও সত্য এবং সম্ভব তা তার থেকে বেশি আর কেই বা বিশ্বাস করেছেন?
এখানে খুঁড়তে খুঁড়তে আরেকটি মাত্রা ফুটে উঠছে; তা হলে কি তিনি পুঁজির চরিত্র ও পাখির চরিত্র নিয়ে আরও গূঢ়তর কোনও ইশারা রেখে দিয়ে গেলেন? জুটমিলের মালিকদের হাতে যে পুঁজি আবর্তিত হয়ে চলেছে তার চলনের সঙ্গে ক্যাপিট্যাল-রূপে কল্পিত পাখিদের চলনের প্রকৃতি পৃথক। উদবৃত্ত শ্রম ও শোষণের পথ ধরে গড়ে ওঠা পুঞ্জিভূত পুঁজির বিপরীতে জীবনানন্দ আনয়ন করছেন (বা আবিষ্কার করছেন) আরেক ধরণের ‘পুঁজি’র। সে পুঁজির নাম ‘পাখি’। পাখিদের এই ‘পুঁজি’র শরীর থেকে উৎসারিত হয়ে চলে ‘আলো’, যে আলো জুটমিলের মালিকদের পুঁজি’তে অনুপস্থিত।
জীবনানন্দের কবিতা পাঠ তো আসলে নিজেকে বারংবার বিপন্ন করবার প্রক্রিয়া; তাই নিজেকে এক সন্ধেবেলা যে কোনও পাঠক’ই নিশ্চয় প্রশ্ন করবেন, পুঁজির সঙ্গে পাখিদের উড়ান-পদ্ধতির সাদৃশ্য দেখে বিস্ময়ে আত্মহারা হয়ে উঠবেন। পাখির মতো পুঁজি’ও হাজার হাজার বছর ধরে ‘প্রবাহিত’ হয়ে চলেছে। পার্থক্যটি গুণগত; পাখির নিজস্ব আলো আছে, পুঁজির নেই।
এবং জীবনানন্দ মানব-সভ্যতার ইতিহাসে সেই আবিষ্কারক যিনি আমাদের জানিয়ে দিয়ে গেলেন, ‘পাখিদের আমি সবচেয়ে বড়ো ক্যাপিট্যাল মনে করি;।’

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes