
ব্রজনাথ রথ-এর কবিতা
ওড়িয়া থেকে অনুবাদ ও ভূমিকা : অজিত পাত্র
ব্রজনাথ রথ ( ১২. ০১. ১৯৩৬ — ৩১. ০৫. ২০১৪ ) কোনোদিন কখনও সরকারি-বেসরকারি চাকরির আশ্রয় না নিয়ে স্বাধীনভাবে স্বাধীনতাত্তোর আধুনিক ওড়িয়া কাব্য-কবিতা রচনায় সমগ্র জীবন অতিবাহিত করেছেন, তিনি ওড়িয়া সাহিত্যের অন্যতম যশস্বী কবি হিসেবে আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় । গদ্য রচনায় যেমন সাবলীল ছিলেন তেমনই বাংলা সাহিত্যের বেশকিছু মণিমুক্তো ওড়িয়ায় অনুবাদ করে গেছেন । ‘মরুগোলাপ’, ‘মনর মানচিত্র’, ‘সময়র শব্দলিপি’, ‘নিজস্ব সংলাপ’, ‘সামান্য অসামান্য’ ইত্যাদি বেশকিছু কবিতা গ্রন্থের রচয়িতা । সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ‘ওড়িশা সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার’, অতিবড়ি জগন্নাথ দাস পুরস্কার’, কেন্দ্র সাহিত্য একাডেমীর প্রথম ‘টাগোর সাহিত্য পুরস্কার’ ইত্যাদি সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন । ফকির মোহন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে ডক্টরেট উপাধি প্রদান করা হয় । তাঁর প্রতিষ্ঠিত তিন তলা বিশিষ্ট ‘বিশ্ব-তারা পুস্তকালয়’ ওড়িশার বহু প্রাচীন পুস্তক ও পত্রপত্রিকার একটি গবেষণাগার হিসেবে সুপরিচিত । ব্রজনাথ রথের কবিতা সরাসরি ওড়িয়া থেকে বাংলায় অনুবাদ করলেন ওড়িয়া ভাষার আরেক কবি অজিত পাত্র।
অরুন্ধতী
অরুন্ধতী !
নক্ষত্র-খচিত দূর
আকাশের সপ্তর্ষিমণ্ডল থেকে
খসে আস ধীরে ধীরে
পৃথিবীতে
এই পৃথিবীতে ।
খসে আস, খসে আস তুমি
যুগ যুগান্তর ধরে
স্থানুত্বের বন্ধন ছিঁড়ে ।
কতকাল এমনি
উদাস চোখে
শূন্যের দোলায় ঝুলে
পৃথিবীকে রইবে চেয়ে ? ?
আমি তোমাকে চৈত্রের
অজস্র সুরভি ভরা
মল্লিকা করে
ফুটাব
এই আমার
ছায়া-স্নিগ্ধ কুঞ্জবিতানে ।
আমি তোমাকে আদ্য আষাঢ়ের
প্রথম কদম করে
হাসাব
এই আমার নদী কূলের
কদম শাখায় ।
বিনিময়ে
প্রদূষিত পৃথিবীর
বিষায়িত অশান্ত জীবনে
তুমি একটু শান্তি দেবে
দেবে উজ্জ্বলতা,
আকাশের একটু ছোঁয়া দেবে,
যার ওই নীল নীল
অনন্ত ব্যাপ্তিতে,
আর তোমার নীলাভ দীপ্তিতে
হৃদয়-আকাশ হবে নক্ষত্রমালিনী ।
অরুন্ধতী !
সপ্তর্ষিমণ্ডল ত্যজে এই পৃথিবী ও
রনযুদ্ধ এ অশান্ত পৃথিবীতে
সত্যি কী আসবে না
আসবে না তুমি ? ?
কোন স্বপ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ বসুধা ! !
কোন সম্ভাবনা নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছ বসুধা !
আগামীর কোন স্বপ্ন নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছ
অবসন্ন উদাস চোখে ?
পায়ের নীচে তোমার
ক্রমে ক্রমে ধসে যাচ্ছে মাটি
সংশয়ের চোরাবালিতে;
মাথার উপর খসে পড়ছে আকাশ
বিভ্রান্তির ভারি ভারি
ইস্পাতীয় সামিয়ানার মত;
সন্দেহের তার বেড়াতে
চিরে যাচ্ছে আঁচল,
তোমার উড়ন্ত আঁচল ।
তবুও
আগামীর কোন আশা নিয়ে
ভবিষ্যতের কোন স্বপ্ন নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছ বসুধা ! !
এমনি কতকাল দাঁড়িয়ে থাকবে
নিরবতার চৌকাঠে ভর দিয়ে ?
ঘুরতে ঘুরতে তাকাতে থাকবে শূন্য দিগন্তে ?
পূবে—পশ্চিমে
উত্তরে—দক্ষিনে
উর্ধ্বে—অধঃতে
কতকাল, আর কতকাল ? ?
কি সুন্দর গোলগাল নিটোল
গোল মুখটি তোমার
যাচ্ছে মউলে
হয়ে যাচ্ছে ফিকে;
চৈত্রের ঝাঁজে
কচি আমপাতার মত
গোলাপী ঠোঁটে তোমার
লেগে আছে
কোন মদ্যপ লম্পটের
বিষাক্ত চুম্বনের দাগ ?
চোখের কাজল নিরবে ধুয়ে দিয়ে
ঝরে পড়ছে অশ্রুর বৃষ্টি;
সযত্ন কবরী তোমার
এখন এলমেল
উড়ছে অদিনের ঝড়ে ! !
অরণ্যের কেশ তোমার
উপড়ে যাচ্ছে
কোন কামাদ্ধ পুরুষের
বলিষ্ঠ নির্দয় হাতে ?
স্নিগ্ধ-শ্যামল শরীরে তোমার
এ-কী পোড়াবারুদের গন্ধ !
বলতে পারবে বসুধা
তবুও তুমি নির্বাক কেন ?
কেন তুমি
এত নিরব-নিস্পন্দ ? ?
পায়ে তোমার
কোন জঘন্য বেশকার
পরিয়ে দিয়েছে রক্তের আলাতা
সিঁথিতে তোমার
কোন মায়াবী পুরুষ
লিপে দিয়েছে শোনিতের সিঁদুর ?
বিভৎস নৃত্যের তালে
ক্রমে আজ নিরব হচ্ছে
তোমার রুনুঝুনু পায়ের ঘুঙুর
সবুজ আঁচল তোমার
ক্রমশঃ পাল্টে যাচ্ছে ধূসর বিবর্ণ,
ওর শরীরে উঁকি দিচ্ছে শুধু
ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু-রক্তের
নীল-লোহিত চিহ্ন ।
আমি জানি
সব সম্ভাবনার মৃত্যুর পরেও
তুমি এমনি দাঁড়িয়ে থাকবে
এলো কেশে
লাঞ্ছিতের বেশে
আরএক নব স্বপ্নের শিশুকে
জন্ম দেওয়ার জন্য ।
আমি জানি
সব আশার অবসানের পরেও
তুমি এমনি দাঁড়িয়ে থাকবে
যুগ যুগ ধরে
আরএক নতুন সবুজ অঙ্কুরকে
দু’হাতের পাতার চন্দ্রবন্ধনীতে
সযত্নে আড়াল করে ।
বসুধা !
হে আমার প্রিয় বসুধা !
যদিও আজ কণ্ঠে তোমার
অনন্ত হাহাকার
আর গর্ভে তোমার
যুগযুগান্তরের ক্ষুধা,
কিন্তু তোমার গহন হৃদয়ের
কোনো গোপন প্রান্তরে
তবুও খেলা করে
তরঙ্গিত মউর সমুদ্র,
চোখের পাতায় খেলা করে
সম্ভবনার বিন্দুবিন্দু অফুরন্ত সুধা ।।
•••
পৃথিবী
মেয়ে;
সারা শরীরে যার
রূপ-সাগরের তরঙ্গ
এক চোখে যার সূর্য ।
হাতে
মুঠো মুঠো ফুল—
সময়ের ।
কণ্ঠে শুধু
জীবন-জিজ্ঞাসায় মুখরিত
দিবা-রাত্রির করুন সঙ্গীত ।
•••
স্মৃতি ও স্বপ্ন
একহাতে একমুঠো স্বপ্ন
আর একহাতে একমুঠো স্মৃতি নিয়ে
আমি ওকে প্রশ্ন করলাম
তুমি কি চাও
একমুঠো স্বপ্ন, না একমুঠো স্মৃতি ?
মিনাকরা আংটির মতো
ও চোখ দুটো নাচিয়ে নাচিয়ে
খুব আগ্রহে ও কেড়ে নিল
আমার হাতের মুঠো ‘স্বপ্ন’ ।
স্বপ্ন নিয়ে
ও আজ ফুল হয়ে ফুটছে
আর প্রজাপতি হয়ে উড়ছে ।
কিন্তু হায় !
‘স্মৃতি’কে ধরে
আমি তো অতল অন্ধকারের ভেতর
ধীরে ধীরে খসে খসে যাচ্ছি
মাটি থেকে পাতালের ভেতর… ।
•••
অলীক কামনা
এই টেলিগ্রাফ তারগুলোর
কী অসীম ধৈর্য !
দিনের পর দিন
আর রাতের পর রাত
শুধু
মানুষকে মানুষের
খবর পৌঁছে দিতে ব্যস্ত ।
হায় !
হৃদয়গুলো
টেলিগ্রাফ তার হত কি ?
•••
পাখি
টেলিফোনের তার
লম্বেগেছে দূরে…
কোথায় কত দূরে…
সুনসান নির্জন দুপুর
নীচে শুধু মাইল মাইল ধরে
রুক্ষ খেতমালা ।
তারের উপর বসছে
একাকী পাখিটি;
ঠোঁটে ওর শুকনো এক কুটো ।
একান্তে বসে বসে
পাখিটি কী ভাবছে কিজানি !
চারিদিকে ওর থমথমে নীরবতা
শুধু নীরবতার রাজধানী ।
টেলিফোনের তার
লম্বেগেছে দূরে…
কোথায় কত দূরে…
পাখি ! বল তুমি
কি খবর দিবে কাকে ??
আজ সব খবর তো অখবর
অখবর সব খবর;
ভাষনের ভীষনতায়
ভীত ও বিব্রত সারা
গ্রাম-শহর-নগর ।।
বেতারের তরঙ্গে
নেচে নেচে ছড়িয়ে পড়েছে
ছলনার ইস্তেহার
ইস্তেহারের ছলনা;
নীতিহীন নেতাদের
কলঙ্কিত হাতে
থইথই নাচছে
শতশত হতভাগ্য
জীবনের খেলনা ।
এখন পাখি
হে দূর বনের পাখি !
তাদের কী দিতে পারবে
একটুকু নীরবতা
একটু নিরীহতা
একটু নীল আকাশের কাজল ?
ওদের অন্ধ-চোখে
কাটাতে কী পারবে
অন্ধকারের পর্দা
ও অহংকারের পরোল ।
•••
মুখোশ
মুখ খুললে বিপদ
কারণ
পৃথিবী নড়ে যাবে
তাই মুখোশ দরকার ।
মুখ খুললে বিপদ
কারন
সিংহাসন হিলে যাবে;
তাই মুখোশ দরকার ।
মুখ খুললে বিপদ
কারন
আমার স্থিতি নড়ে যাবে
আমার সিংহাসন টলে পড়বে;
তাই মুখোশ দরকার ।
মুখোশের ভেতর
হাসলে বা কাঁদলে
বাইরে তো সবকিছু সমান !
মুখোশের আড়ালে
আপাতত আমি সুখি ( ? )
মুখোশের ভেতর
আপাতত আমি সম্রাট ( ? )
•••
আমি ও আষাঢ়
আষাঢ়
এক বিমুগ্ধ নায়িকার মতো
সন্তর্পনে এসে দাঁড়াল
আমার সামনে
নীল খোঁপায় ওর
কেতকী ও বেলেফুল গুঁজে ।
দিগন্ত চোখে ওর
সরুসরু ভাসমান মেঘের কাজল,
আর ত্রস্ত-ভীরু বিজুলীর
তির্যক চাউনি;
ময়ূর-গ্রীবায় ওর
অপরাজিতার মালা
কম্পমান ব্যস্ত দোলায়িত;
কম্পিত ঠোঁটে তার
বিচ্ছুরিত কৃষ্ণচূড়া-হাসি;
আর তার সর্বাঙ্গে শিহরিত
কদম্বের পুলোক-রোমাঞ্চ ।
আষাঢ়
এক প্রলুব্ধ নায়িকার মতো
আলিঙ্গন করল আমায়
ওর চারু স্নেহস্নিগ্ধ
করুনাদ্র শ্যামল বাহুতে;
বন্দী করল আবার
উড়ন্ত শাড়ির ঘন
নীল নীল ব্যস্ত তরণে;
ও আমাকে মুগ্ধ করল
মৌসুমী মাটির গন্ধে
লোভনীয় সবুজ উন্মাদে ।
জ্বালামুখী আমি রৌদ্র বৈশাখ
বন্দী হয়ে মায়াবিনী
আষাঢ়ের সবুজ মায়ায়
শুনলাম নিরবধি
রুনুরুনু বর্ষার সঙ্গীত;
ভূলে গেলাম অসহ্য
খররুদ্র রৌদ্রের জ্বলন ।
আজ অশান্ত নই,
আষাঢ়ের আর্দ্র আলিঙ্গনে
সৃষ্টি-স্বপ্নে আজ আমি উন্মাদ,
সংহারের পর্ব শেষে
প্রলয়-পয়োধি-জলে
আমি তো সেই আদি-স্রষ্টা
শান্ত-কান্ত মুগ্ধ-মনোহর,
নিখিল বিশ্বের প্রাণে
আমি এক চাঞ্চল্যকর
শরতের নতুন-সংবাদ ।
•••
তারপর অন্ধকার
তারপর অন্ধকার…
তাই আজ
ভালকরে
মন ভরে
এক কাপ মিঠে কফি খাওয়া যাক ।
তারপর অন্ধকার…
তাই আজ
বসে বসে
হেসে হেসে
দু’টো কথা স্নেহমাখা
খোলামনে খুশি-গল্প হোক ।
তারপর অন্ধকার…
তাই আজ
বাগানে
যতনে
কয়েকটি লাল লাল
গোলাপের চারা পোঁতা যাক ।
•••
মধুমিতা
তোমাকে ছুঁলে
আকাশকে ছোঁয়া যায় ।
তোমাকে চুম্বন দিলে
সূর্যকে চুম্বন দেওয়া যায় ।
তোমাকে আলিঙ্গন করলে
সাগরকে আলিঙ্গন করা যায় ।
কারণ
কারণ তোমার কুঞ্চিত কেশে
আকাশের অনন্ত নীলিমা,
তোমার অধীর অধরে
সূর্যের আরক্ত রক্তিমা,
তোমার ললিত তনুতে
সাগরের বিচিত্র ভঙ্গিমা ।
অথচ
তুমি আকাশ নও
তুমি সূর্য নও
তুমি সাগর নও;
তুমি মধুমিতা
সুন্দরী মধুমিতা ।
•••
সাঁঝ নেমে আসছে
একটা গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত গরিলার মতো
সাঁঝ নেমে আসছে টলেতে টলতে
পশ্চিম পাহাড়ের গহ্বর থেকে
এবং অদূর দিগন্ত হতে
ঘিরে আসছে আঁধার
বিষ্ফোরিত ধূম্রকুণ্ডলীর মতো ।।
শ্রাবনের বর্ষাভেজা সবুজ ধান খেত
আজ শূন্য ও ধূসর ।
দিক দিগন্তে শোনা যায় কেবল
ফাটা মাটির নিঃশব্দ ক্রন্দন
ও নীরব কোলাহল ।
লোমশ অন্ধকারের লোলুপ কালো হাত
ক্রমশঃ লম্বে যাচ্ছে দূর হতে বহুদূরে
এবং ওর শাণিত নখে
কুরে কুরে যাচ্ছে
বিষন্ন বসুধার
অবসন্ন বুক ।
তবুও বহু দূরে
দেখা যায়—
একটা টিমটিম ক্ষীণ আলোকের রেখা
নিশান্ত আকাশের ধ্রুবতারার মতো ।
কোনো অশ্বত্থ গাছের প্রসারিত শাখার
মর্মরিত পাতার গভীরে
শোনা যায়
কয়েকটি নবজাত পক্ষী শাবকের
চিঁচিঁ শব্দ
মৃদু হাওয়ায় বেণুতে বেণুতে
ধ্রুপদী আলাপ ধরেছে
বিনিদ্র আকাশ ।
ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে আসছে
শ্রান্ত জনপদের অশান্ত কোলাহল
নেমে আসছে সাঁঝ
টলতে টলতে
একটা রক্তাক্ত গরিলার মতো
পশ্চিম পাহাড়ের গহ্বর হতে ।
•••
একুশ বছর
মধ্যাহ্নের সূর্যের দিকে তাকিয়ে
বসেছিলাম,
হয়তো আর একটু পরে
সূর্য পশ্চিমে ঢলে যাবে ।
ঠিক এই সময়ে
বিচিত্রবর্ণা প্রজাপতিটি
কোথা থেকে উড়ে এসে
আমার সামনে নেচে নেচে
ঘুরতে লাগল ।
কী বিচিত্র ওর রঙ !
কী বিচিত্র ওর অঙ্গ !
কী বিচিত্র ওর ঢঙ !
যেন
এক বর্ণাঢ্য রুশীয় নাটকের
এক চপলছন্দা
লাস্যময়ী ব্যালেরিনা ।
ছোট ছোট ওর
দুটি চোখ ছিল
স্বপ্নের সোনালী দর্পন;
ছোট ছোট ওর
দুটি ডানায় ছিল
আকাশ পারাবার
অদ্ভুত উদ্দামতা ।
তারপর
এক বিমুগ্ধ দর্শকের মতো
পরম আগ্রহে
আমি ওকে প্রশ্ন করলাম
“প্রজাপতি !
তোমাকে যেন
কবে কোথায়
দেখেছি বলে মনে হয়,
যদি কিছু মনে না কর
তোমার পরিচয় দেবে কী” ?
এ শুনে
বিচিত্রবর্ণা প্রজাতি
হঠাৎ অন্তর্হিত হয়ে যেতে যেতে
হেসে হেসে বলল—
“বন্ধু মনে কর
অনেক দিনের আগে
অতীতের নিবীড় বনস্থের ভেতর
তোমার হারিয়ে যাওয়া
আমি তোমার সেই প্রিয় পরিচিত
স্বপ্ন রঙিন ‘একুশ বৎসর’ ।”
•••
অনেক সূর্যাস্ত পরে
অনেক সূর্যাস্ত পরে
একদিন সূর্য অস্ত যাবে
তারপর আর
হবে না সূর্যোদয়
এই জীবনে ।
তারপর শুধু রাত
রাত আর রাত
তমিস্রার সীমাহীন—
অনন্ত বিস্তৃতি
থেকে যাবে চিরকালের তরে ।
আজ আমি তাই
সংখ্যাহীন অজাত সূর্যকে
তেজিয়ান করে গেলাম নিজের রক্তে,
আমার জীবন সূর্যাস্তের পর
যুগ যুগ ধরে
ফুটিবে যা পূর্বাকাশপরে ।
***
ভালো কবিতা। অজিতবাবুর অনুবাদও সাবলীল।