
দেবব্রত কর বিশ্বাসের কবিতা
তোমাকে বলছি, নিজেকে বলছি
১.
আমি একদিন হিমালয়ে চলে যাবো ঠিক
আমি একদিন মায়ার দণ্ড ভেঙে দেবো ভুল
একদিন সমস্ত ‘আমি’ চুলোয় তুলে দিয়ে
আগুন ধরিয়ে দেবো নিজস্ব অভিমানের মাঠে
তুমি দূর থেকে দেখবে, সে পুড়ছে
সে, মানে একটা দেহ, একটা মন, একটা মিথ্যে
পুড়তে পুড়তে লাল হয়ে যাচ্ছে আলো হয়ে
তার রঙ তোমায় ভরিয়ে দিচ্ছে কান্নার সুখে
দেখবে, যাকে নিজের বলে ভালোবেসে ছিলে
সে অন্য কেউ নয়, কেউ নয়, কেউ নয়…
২.
ওখানে বৃষ্টি হলে আমি গন্ধ পাই এখানে
কেন এমনটা প্রতিবার হবে?
কেন মনে হবে একটা গেরুয়া পোশাক
ভিজতে ভিজতে মিশে যাচ্ছে জলের কুয়াশায়?
মাটি আর পাথরের সিঁড়ি উঠে গেছে জঙ্গলে
একটা বয়স্ক শরীর, যার অল্পবয়সী মন
সে ঘুপচিতে বসে চা বানাচ্ছে আমাদের জন্য
সেই সব জড়িবুটি চা-গন্ধ ভালো লাগছে আমার
সেই কোন দূর ভবিষ্যতে চা বানাচ্ছে গুরু
কাছে থেকে তার গন্ধ নিচ্ছে অজ্ঞান শিষ্য
৩.
তুমি কোথায় লুকিয়ে আছো জানতে না পারলে
তুমি কবে কাছে আসবে বুঝতে না পারলে
আরও আরও গভীর ভালোবাসায় চলে যাবো আমি
ঢালু হয়ে আসা পথের শেষে অপেক্ষা করবে নদী
আমি তার কাছে চলে যাবো, পা ডুবিয়ে দেবো শীতে
তারপর দূরের ঘর এসে ঘুমিয়ে পড়বে কাছের ঘরে
চোখ খুলে দেখব কালো জানলা ভেদ করে
বিছানার কাছে দাঁড়িয়েছ সদ্য স্নান সেরে উঠে আসা তুমি
দেখব তুমি হাসছ, অবিকল আমার মতো মিটিমিটি হাসি
৪.
কী যে সব বিপদ হয়েছে কী বলব তোমায়
কী আর বলব তোমার অজানা বলে কিছুই নেই
রোজ স্নান সেরে বিছানায় বসে থাকি আমি
ভাবি, তুমি দেখতে পাচ্ছ আমার চোখ দিয়ে
অথবা, তোমার মতো করে বুঝতে চাই আমি
ভাবি আর চোখ বুজি, কান্না জমতে থাকে অচেনায়
সে কী আজব কান্না কী বলব তোমায়
চোখে জল নেই, মনে দুঃখ নেই, সুখ নেই
ফাঁকা একটা ঘর ভালোবেসে ফেলেছি আমি
বসে আছি, অথচ এ ঘরে আমার চিহ্নটুকু নেই
৫.
আজ দুপুরে তুমি কি এসেছিলে?
আমি যেন টের পেলাম তীব্র স্রোত বয়ে যাচ্ছে কপালে
যেভাবে মা আসে, মায়ের হাত ধরে বাবা আসে
সেইভাবে ভালোবাসা টেনে নিচ্ছিলে যন্ত্রণার শিখর
কী পাবো আর কী পাবো না সেসব হিসেব জানি না
দীক্ষার দরজা পেরিয়ে শিক্ষার দিকে যাবো
তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়বে অন্ধকার আর
তোমার কপাল জুড়ে আমার আঙুল ছুঁয়ে দেবে
অনন্ত প্রেমের মহাকাল
আজ দুপুরে আমি কি এসেছিলাম? বলো?
খুব ভালো লাগলো দেবব্রত । নিজেকে এত কিছু বললে, তকেও!