তিরন্দাজির পথে, জেন <br /> পর্ব – ৬ <br /> অনুবাদ – পার্থজিৎ চন্দ

তিরন্দাজির পথে, জেন
পর্ব – ৬
অনুবাদ – পার্থজিৎ চন্দ

'জেন’- শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে চলা রহস্যময়, মিস্টিক এক সাধনপদ্ধতি; প্রাচ্যের সুগভীর দর্শনের একটি ধারা, যে ধারার মধ্যে মিশে রয়েছে পারমিতার ছায়া, ‘না-জানা’র মধ্য দিয়ে জানার গূঢ় পদ্ধতি। একটি সুবিখ্যাত জেন-কবিতায় পাওয়া যায়, ‘Sitting quietly, doing nothing / Spring comes, and the grass grows itself’। এই ‘কিছুই না-করা’র পদ্ধতি অর্জন করতে হয় দীর্ঘ অনুশীলনের মাধ্যমে। আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের এই ধারার সঙ্গে তিরন্দাজির মতো একটি শৌর্যময় বিষয়ের কি কোনও সংযোগ থাকতে পারে? তিরন্দাজি কি শিল্প? এই শিল্পের মধ্যে দিয়ে কি প্রবেশ করা সম্ভব জেন-এর মিস্টিক পৃথিবীতে? আজ থেকে প্রায় সত্তর বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল অয়গেন হেরিগেল-এর ‘Zen in the Art of Archery’। ব্যক্তি-অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এ কাহিনি যেন এক রোমাঞ্চকর শান্ত থ্রিলার, ইউরোপের চোখে ‘জেন’ দর্শন অথবা ভিন্নধারার ডিসকোর্স।

জেন সাধনের মহাপথ এ ভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে; দীর্ঘ সময় ধরে অনবরত অনুশীলন জেনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, অনুশীলনের পর অনুশীলন করে যেতে হয়। সমস্ত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিল্পের এই একই ধারা। গুরু ছাত্রদের সামনে অনুকরণ ও অনুসরণ করবার মতো উপাদান রাখবেন, শিক্ষার্থী বারংবার সেগুলি মেনে অভ্যাস করে চলবে – প্রথাগত শিল্প-পদ্ধতিগুলিতে এটাই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হিসাবে গণ্য করা হয়। যদিও বিগত কয়েক দশকে ইউরোপের শিক্ষাপদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে অনেক জায়গায়, মানুষ নতুন পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছে অন্তর থেকে। কিন্তু নতুন পথের যাবতীয় ঝলকানিকে অতিক্রম করে জাপানি জেন-শিক্ষাদান পদ্ধতি এতদিন পরও এভাবে অবিকৃত অবস্থায় রয়ে গেল কীভাবে?
এ প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়; কিন্তু বিষয়টি যথেষ্ট ভেবে দেখার মতো; প্রশ্নটি নিয়ে আরও আলোচনা ও গবেষণা হওয়া দরকার। জাপানি শিক্ষার্থীরা গুরু’র কাছে আসার সময় তিনটি জিনিস সঙ্গে করে নিয়ে আসে – সুশিক্ষা, শিল্পের প্রতি তীব্র আগ্রহ ও গুরু’র প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা এবং সমর্পণ। যুগযুগান্ত ধরে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক জাপানে এই দৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপিত। এটি জাপানিদের রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে; শিক্ষকদের কাছেও শিক্ষাদান শুধুমাত্র জীবিকা নয়, একটি আদর্শ।
জাপানে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক কাজ হল গুরু যা শেখাচ্ছেন তা প্রশ্নতীতভাবে অনুসরণ করে যাওয়া। শিক্ষকরাও ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞার বদলে শিক্ষার্থীদের শুধু প্রাথমিক নির্দেশ দিয়ে যান, শিক্ষার্থীদের কোনও প্রশ্নের প্রতি তিনি অতিরিক্ত গুরুত্ব দেন না।
শিক্ষার্থীরা ভুলের পর ভুল করে; গুরু’রা সেদিকে নির্বিকার ভাবে চেয়ে থাকেন। ত্রুটিগুলি শুধরে দেবার পরিবর্তে তিনি অপেক্ষা করেন শিক্ষার্থীদের পরিণত হয়ে ওঠার। সব কিছুরই উপযুক্ত সময় আছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই সে সময়ের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকেন।
শিক্ষার্থীর ভেতর শিল্পীসত্তার উণ্মেষ জরুরি, কিন্তু গুরু প্রথমে চান বারবার অভ্যাসের মধ্যে দিয়ে, ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে শিল্প-শ্রমিক করে গড়ে তুলতে। শিক্ষার্থীও একনাগাড়ে অনুশীলন করে গুরু’র ইচ্ছাকে মর্যাদা দেয়। সে সময়ে শিক্ষার্থীকে দেখলে মনে হতে পারে, শিল্পের সূক্ষ রূপের প্রতি তার কোনও আগ্রহ নেই; বরং সে যেন স্থূল-শিল্পবোধের দ্বারা চালিত হয়ে অদ্ভুতভাবে সমর্পিত হয়ে রয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর এই তথাকথিত স্থূল-শিল্পের সাধনা করার পর, শিল্প-শ্রমীকের জীবন যাপন করার পর একদিন সে আবিষ্কার করে এ পথে তার মুক্তি’ই ঘটেছে। অবদমনের পরিবর্তে মুক্তি। নিরন্তর অভ্যাসের ফলে তখন তার শিল্পের প্রায়োগিক দিকগুলি হাতের তালু’তে, এর ফলে অন্তরের যে কোনও ডাকে সে তখন সাড়া দিতে প্রস্তুত। তার পর্যবেক্ষণ তখন সূক্ষ, সূক্ষ পর্যবেক্ষণ তাকে অনুপ্রেরণা দেয় অনেক সময়ে। সে যেন তখন এক চিত্রকর; চিত্রকরের তুলি-ধরা হাত। মস্তিষ্কে ভেসে বেড়াচ্ছে ছবির পর ছবি। মনের ভেতর ভেসে ওঠা ছবিগুলিকে সে এঁকে ফেলছে। অঙ্কন প্রক্রিয়ার শেষে চিত্রকরের পক্ষে নির্দিষ্ট করে বলা অসম্ভব এই সৃষ্টির নেপথ্যে হাত বা তুলি – কার ভূমিকা বেশি বা কম।
কিন্তু এই দক্ষতার রূপান্তর জরুরি, একটা সময়ে সাধকের কাছে সেটি আধ্যাত্মিকতায় রূপান্তরিত হওয়া দরকার। তিরন্দাজির ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক শক্তির একীভবন প্রয়োজন, প্রাসঙ্গিক এক উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝনো যাক।
একজন চিত্রকর তাঁর ছাত্রদের সামনে বসে আছেন। তাঁর হাতে ধরা একটি তুলি, তিনি তুলিটিকে পরীক্ষা করলেন মন দিয়ে, তুলিতে রঙ লাগালেন, পাশে মাদুরের উপর গুটিয়ে রাখা কাগজ টানটান করলেন। কয়েক মুহূর্ত গভীর ধ্যানে ডুবে গেলেন; চিত্রার্পিতের মতো বসে রইলেন। তারপর দ্রুত তুলি দিয়ে কাগজের উপর আঁকতে শুরু করলেন, তাঁর তুলির প্রতিটি আঁচড় তখন নিখুঁত; যে ছবিটি হয়ে উঠল সেটিই ছাত্রছাত্রীদের কাছে আদর্শ একটি চিত্র হিসাবে পেশ করা হবে এবার।
ফুল সাজানোর গুরু এই কাজটি করেন অন্যভাবে। প্রথমে তিনি ফুলের গোছাটিকে খোলেন, নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করবার পর সব থেকে ভাল ফুলের গুচ্ছটিকে তুলে নেন। তারপর ফুলগুলিকে সব থেকে সুন্দরভাবে গোছা করে বেঁধে ফুলদানিতে রাখেন। প্রকৃতি যেন ঠিক এই রূপটিরই প্রতীক্ষায় ছিল, গুরুজি প্রকৃতির স্বপ্নের সেই রূপটিকে আবিষ্কার করলেন এইমাত্র।
একটা ব্যাপার স্বীকার করতে হবে, সৃষ্টির এই দুই প্রক্রিয়াতেই গুরুজিরা চরম একা। তাঁরা সে সময়ে ছাত্রদের দিকেও দৃষ্টি দেন না, কথা বলা তো অনেক দূরের ব্যাপার। তাঁরা সে সময়ে ধীরস্থির শান্ত ভাবে সৃষ্টির কাজ করে যান। এটা তাঁদের কাছে তখন আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সংযমে ভরা সৃষ্টির প্রক্রিয়া। আর সে সময়ে গোটা বিষয়টা এমনই মোহময় হয়ে ওঠে যে, কোনও দর্শককে সে দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতে হয়।
কিন্তু শিক্ষক নিজে হাতে এই সব কাজ করেন কেন? এগুলি তো তিনি ছাত্রদের দিয়েও করাতে পারেন। তা হলে কি তিনি তুলিতে এখনও রঙ লাগানোর মধ্যে দিয়ে, ফুলের গোছা থেকে ফুল বেছে নিতে নিতে নিজের কোনও ত্রুটিকে শুধরে নিতে চান? কেন তিনি এতটা পথ পেরিয়ে আসার পরেও বারবার, দিনের পর দিন একই কাজ করে যান আর ছাত্রদের সামনে সে নমুনা রাখেন?
তিনি শাশ্বত এই পথে থিতু থাকতে চান, কারণ তিনি অভিজ্ঞতা দিয়ে জেনেছেন এই কাজগুলি তাঁকে সৃষ্টির জন্য মনের শান্ত অবস্থা এনে দেয়। ধ্যানমগ্ন এ অবস্থায় থাকার ফলে তিনি তাঁর অন্তরের শক্তিকে জাগরুক করতে পারেন, স্নায়ুকে শান্ত রাখতে পারেন। এগুলি ছাড়া কোনও সৃষ্টিই সার্থকভাবে সম্পন্ন হতে পারে না।
গুরুজিরা শিল্পের কাছে আসেন কোনও উদ্দেশ্য ছাড়াই, যে কাজটি করতে যাচ্ছেন সেটি তাঁদের মাথার ভেতর ঘুরতে থাকে; শিল্প যেন তাঁদের ভেতর থেকে নিজেই উপস্থিতি জানান দেয়। তিরন্দাজির কৃতকৌশলের সঙ্গে এখানেও বিষয়টা একই। একমাত্র ধর্মীয় নৃত্যগীতের সময়ে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না, সেখানে কুশীলবেরা স্টেজে ওঠার আগে তাঁদের আত্মসংযম ও আত্মনিয়োজনের প্রক্রিয়াটি সেরে নেয়।
তিরন্দাজি একটা দীর্ঘ উৎসবের মতো। গুরুজিরা বারবার বলেন শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত হতে হবে, শিল্প ও শিল্পের কৃৎকৌশল – কোনওটিকেই অবহেলা করলে চলবে না। এসবের সঙ্গে বস্তুগত জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতা যখন নিরবচ্ছিন্নভাবে বয়ে যাবে তখনই সৃষ্টির সঠিক ক্ষণ উপস্থিত হবে। শিক্ষার্থী অনুসরণ করবার মতো আরেকটি ক্ষেত্র খুঁজে পাবে। তখন তার আত্মসংযম ও মনোসংযোগের অন্যান্য দিকগুলিতে নজর দেওয়া বেশি প্রয়োজন, উদেশ্যের দিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেবার কোনও দরকার নেই। কারণ সেটা চাতুরি, তার বদলে তাকে হয়ে উঠতে হবে আরও বেশি বেশি আধ্যাত্মিক পথের পথিক। শিক্ষার্থীরা নিজে থেকেই অনুভব করবে তারা নতুন নতুন সম্ভাবনার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে। এক সঙ্গে তারা এটাও আবিষ্কার করবে যে এ অনুভব তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর কোনও ভাবেই নির্ভর করছে না। শিক্ষার্থীর প্রকৃত শিক্ষার পথে একটি বিপদ ওঁত পেতে থাকে, তার হাত এড়িয়ে যাওয়া মুশকিল। শিক্ষার্থী মনে করতে শুরু করে শিল্পনৈপুণ্য তাকে এই পরিশ্রমের হাত থেকে রক্ষা করবে। আত্মমুগ্ধ হয়ে পড়ার একটা সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু প্রাচ্যে সে বিপদ তুলনামূলকভাবে কম। এখানে বিষয়টা সফলতা ও খ্যাতির প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যভাব বলতে গেলে বলতে হয়, এ সময়ে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্বাস করতে শুরু করে শিল্পের অস্তিত্বই তার জীবনের অস্তিত্ব।
শিক্ষকের চোখ কিন্তু এ বিপদটিকে দেখতে পায়। অত্যন্ত কুশলতায় তিনি শিক্ষার্থীর মনোজগত পরীক্ষা করেন; সত্তার একটি অংশ থেকে শিক্ষার্থীকে বিযুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
তিনি আপাতভাবে একটু ভিন্ন পন্থা গ্রহণ করেন; যেন তেমন কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন ভঙ্গিতে তিনি শিক্ষার্থীদের শেখান সত্তার সম্পূর্ণ বিনাশ ছাড়া, প্রকৃত অর্থে সম্পূর্ণ শূন্য হয়ে ওঠা ছাড়া কোনও শিল্প সৃষ্টি হতে পারে না। শিল্পের চরমস্তরে পৌঁছে নিজেকে মুছে দিতে হয় শিল্পের থেকে। তখন শুধুমাত্র থাকবে এক শক্তি, এক জাগরুক অবস্থা; সব অহ্ং বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সে অবস্থার বিস্তার অতল, তার পরিধি আকাশ ছোঁয়া। শুধুমাত্র জেগে থাকবে দেখার মতো চোখ আর শোনার মতো কান, বাকি সব বিলুপ্ত হয়ে যাওয়াই দস্তুর।
শিক্ষকের একমাত্র কাজ তখন শিক্ষার্থীকে নিজের মতো চলতে দেওয়া। শিক্ষার্থীর গ্রহণ ক্ষমতা বেড়েছে, এতদিন যা শুনে এসেছে এখন সে সেগুলিকে যেন স্পর্শ করতে পারে। অভিজ্ঞতা্লব্ধ এসব বিষয়গুলি সে অনেক সময়ে গুরুজির নজরে আনে।।অনেক সময়ে এমনও হয়, সেসব বিষয়গুলির নামও জানে না সে। গুরুজি চুপ করে থাকেন; কী আশ্চর্য, গুরুজির নীরবতার মধ্যেও যেন উত্তর ফুটে ওঠে শিক্ষার্থীর জন্য।
এভাবেই অন্তর্মুখী এক যাত্রার শুরু হয়। এ যাত্রা আর অন্বেষণ শুধু শিক্ষার্থীর একার নয়, শিক্ষকেরও। শিক্ষার্থীর এ যাত্রাকে গুরুজি ব্যাহত করতে চান না, তাই তিনি নতুন কোনও জ্ঞান বিতরণ করেন না। বরং খুব গুপ্ত ও ঘনিষ্ঠ পদ্ধতিতে ছাত্রদের গভীর কতগুলি কথা বলেন। বৌদ্ধমতে প্রজ্জ্বলিত বাতি দিয়ে হাজার হাজার বাতি জ্বালানোর উদাহরণ দেওয়ার প্রচলন আছে। শিক্ষকও সেই ভঙ্গিতে এক হৃদয় থেকে আরেক হৃদয়ে শিল্পের স্বরূপ ছড়িয়ে দেন, তাদের আলোকিত করেন। শিক্ষার্থী দ্রুত বুঝে যায় বাইরের হাতছানি ক্ষণিকের, মরীচিকার মতো। শিক্ষার্থী হিসাবে পুর্ণতার সন্ধান পেতে গেলে তাকে ভিতরপানে চাইতে হবে।
অন্দরমহলের কাজটি সহজ নয়, নিজের ভেতর যে সত্তা তাকে প্রথমে জাগ্রত করতে হয় শিক্ষার্থীকে। অনবরত আত্মানুসন্ধানে রত থাকতে হয়, অনুশীলনের মধ্যে ডুবে যেতে হয়। সেখানে শিল্পী ও শিল্পীসত্তা অন্য এক উচ্চতা লাভ করে। শিল্প যখন অনন্ত সত্যের মধ্যে অবস্থান করে, অনন্ত সত্য যখন শিল্পকে ধারণ করে রাখে, সে যখন আদি-শিল্পের রূপ হয়ে ওঠে তখনই তার প্রকৃত সার্থকতা। এ সময়ে ব্যক্তি আর কোনও কিছুর সন্ধানে থাকেন না, তিনি খুঁজে পান। একজন শিল্পী বেশ কিছুদূর পর্যন্ত দুর্বোধ্য মানুষ; তাঁর মধ্যে একই সঙ্গে কাজ করে যায় ‘করা’ ও ‘কিছু না-করা’, কর্ম ও অপেক্ষা, ‘হয়ে ওঠা’ এবং ‘না-হয়ে ওঠা’ – আর এসব কিছুর দিকে স্থির তাকিয়ে থাকে তার ভেতরের বুদ্ধ। ব্যক্তিমানুষ, তাঁর শিল্প, কর্ম – সব একীভূত হয়ে পড়ে। বহিরঙ্গের বহুকিছু একজন শিল্পীকে ছেড়ে চলে যেতে পারে, কিন্তু যা কিছু অন্তরের, ভীতরের তা তাকে ছেড়ে যায় না; শিল্পী ভীতরের সে বিষয়ের জন্য সচেতনভাবে কিছু করেন না, তিনি নিজেই তার যোগ্য ও সমান হয়ে ওঠেন।কোনও এক অজানা ঝরনা থেকে উৎসারিত হয় শিল্পের সে আনন্দ।
শিল্পে সিদ্ধ হওয়ার পথ বেশ দুর্গম, অনেক সময়ে শিক্ষকের প্রতি অকুণ্ঠ ভক্তি আর বিশ্বাস শিক্ষার্থীকে দিনের পর দিন কঠিন পথে থিতু থাকতে সাহায্য করে। গুরুজিই একজন শিক্ষার্থীর কাছে ভীতরমহলে অবস্থান করা প্রকৃত চালিকাশক্তি; গুরু তাঁর নীরব উপস্থিতি দিয়ে নিজের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেন।
একজন ছাত্র কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা নিয়ে গুরুজি একদমই ভাবিত থাকেন না; তিনি শিক্ষার্থীকে প্রকৃত রাস্তা দেখানোর থেকেও একলা-পথের পথিক হতে বেশি সাহায্য করেন। গুরুজি ছাত্রকে একলা পথের নিঃসঙ্গতা সহ্য করবার শিক্ষা দেন; তিনি শেখান গুরুজির থেকে, এমনকি নিজের থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে একলা হেঁটে যেতে। তিনি এতদিনে যতদূর হেঁটে এসেছেন ছাত্রকে তার থেকে বেশি দূর হেঁটে যেতে প্ররোচিত করেন, চান ছাত্র যেন তাঁকেও ছাপিয়ে যায়। সে পথ ছাত্রকে কতদূর নিয়ে যাবে কেউ জানে না; হয়তো সেখানে গিয়ে সে আর গুরুজিকে দেখতে পাবে না। কিন্তু গুরুজিকে সে কোনও দিন ভুলতে পারবে না।
শিক্ষার্থীও প্রথম দিনের মতো প্রণত আর শ্রদ্ধাশীল থাকে গুরু’র প্রতি; শিল্পীর বিশ্বাস নিয়ে সে ধীরে ধীরে গুরুজির স্থান অর্জন করতে থাকে। সাধারণ মানুষের সাধারণ শ্রদ্ধাবোধ থাকে, শয়ে শয়ে উদাহরণ দিয়ে দেখানো যায় একজন তিরন্দাজের গুরু’র প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি সাধারণ মানুষের থেকে বহুগুণ বেশি।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
410 Gone

410 Gone


openresty