তিনটি কবিতা
:: শীর্ষা মণ্ডল
স্বর্গাদপি গরিয়সী
সমগ্র পৃথিবীজাতি জানে প্রতিটি বেদনার মধ্যে
কিভাবে ঘুমিয়ে থাকে একখানি মমতার মুখ,
একখানি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়!
ঘাম সেদ্ধ করে সফেন ভাতের গন্ধ
ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যহ রেওয়াজ করে যে মহিয়সী,
হ্যারিকেনের জমাট কালিতে তার
ছায়ামুখ, কণ্ঠার হাড় ঢাকা পড়ে যায় –
রাত্রির উদগ্রীব এপাশ-ওপাশ করা বিছানায় শুধু
অস্থিচর্মসার হাত বুলিয়ে চলে এক টুকরো
শীতল জলীয় বাতাস। নিরলস ঘুমহীন !
সঙ-পূর্বক সারকথা
*
সম্পর্ক বলে আসলে কিছু হয় না।
সম্পর্ক একটা কমলালেবুরঙ –
যার একটা করে কোয়া আত্মসাৎ করে রোজ আমরা
এগিয়ে যাই শূন্যের দিকে।
*
লক্ষ্মীর ঝাঁপি খুললেই সাপ বেরিয়ে পড়ে। কুচকুচে কালো নধর
গোখরো সাপ! তোমার মুখে চিরকাল আমি
লক্ষ্মীর আদল দেখেছি
*
অনেক কিছু লেখার পর আর বিশেষ কিছু বাকি থাকে না।
একঘেয়ে নিবের প্রতি ঘেন্না আসে,
খণ্ড খণ্ড করে দলা পাকিয়ে ফেলি কবিতাকে। গলা টিপে ধরে
থু থু ছুঁড়ে দিই বাইরের নোংরা রাস্তায়।
চল্লিশ বছরের ঘর করা সংসারটা রাস্তার ধুলো মেখে হাসতে থাকে
আর টিটকিরি দেয় আমার ঘেন্নার অভিমানকে
ভিড়বিভ্রাট
পৃথিবীর প্রতিটি ভিড়ে আমি খুঁজতে থাকি তোমাকে।
প্রতিটি চাহনি যেন প্রথম প্রেমের মতো ভাঁজ হওয়া মায়া,
ভ্রুর কোঁচকানি অনন্তরহস্য লুকিয়ে রাখার খাঁজওলা গুহাচিত্র,
নিটোল গালের শিরা যেন ম্যাড়মেড়ে হলদে বিকেল বসে থাকা
ইছামতীর খোলা বুক – সবকিছুতে এই তোমার আদল
বর্ষীয়সী প্রাচীন আদিবাসী দেবতার শিলামুখ! নৈবেদ্য নিবেদন করতে গিয়ে
হোঁচট খাওয়ায় মোজাইক মেঝের মতো জমাট বাঁধা
একটি আদ্যোপান্ত আশ্চর্য ভিড় ! আমার পাশে শুয়ে থাকা তুমি
প্রতিটি রাতে এক একটি আস্ত ভিড় হয়ে ওঠে –
শুধু আমাকে বিভ্রান্ত করবে বলে।