জুয়েল মাজহারের কবিতা
অপ্রীতিসম্ভব গ্রহে
১.
কুষ্ঠদেহ বয়ে চলি; আধখানা খ’সে গেছে জিভ
ক্ষত থেকে রক্ত চাটি, ক্ষত ফের রক্তে ভরে যায়
পায়ের আঙুল বাঁকা, ঘেয়ো হাঁটু ফুলে আছে পুঁজে
ঘৃণার্হ অচ্ছ্যুত আর জন্মদোষে আজন্মের পাপী
২.
অন্যরা দ্যাখে না, আমি ঘাড়টি ঘুরিয়ে চমকাই
পেছনে দাঁড়ানো এক আবছায়া ডোরাকাটা বাঘ
আর দেখি, মাইনাস তিন ডিগ্রি, চার ডিগ্রি শীতে
আউশ্ ভিৎ্স ক্যাম্পে এক ভয়াকুল কাঁপছে ইহুদি
৩.
আর নীল ভবদ্বীপে সূর্যাস্তে কুরুর মাঠে ধীরে
নামে হননবিরতি। শিবিরে পতাকা ওড়ে শাদা
অসির ঝলক থেমে জ্বলে ওঠে তাঁবুর মশাল
তখন আহত এক উনমানব টলোমলো পায়ে
হাঁ-মুখ খাঁড়ির পাশে আধ খাওয়া চুরুট জ্বালায়
তাকে ঘিরে জমে ওঠে রাতের গোপন চাঁদমারি
নিজেকে পাবে না আর, হাড়িকাঠে তার গলা পাতা;
আর কিছু পরে ঠিক নিখিলের খড়্গ ঝলকাবে
৪.
‘অযোগ্য, তীর্যক ‘ বলে ভরা মঞ্চে তর্জনী উঁচিয়ে
রোঁয়া ওঠা ঘাড় নেড়ে দিলেন অভিধা মহাশয়
( এবঙ্ ঝটিতি তার খুবসুরত মদালস খোমা
দেমাগের আঁচ লেগে হ’লো বাংলা পাঁচ)
ধন্য ধন্য সে-বিধানে বাজল মুখর করতালি
৫.
মোড়লের এই রায় ভাবলেশহীন, চুপে মানি
খর-জিভে-ওগড়ানো বিদ্রূপের এ-বাণ সয়েছি
৬.
ঠকি যতো হেসে উঠি। পাশা যারা খেলছে খেলুক
রথে চড়ে তারা যাক তারাখচা পথে অলকায়
৭.
আমার সামান্য স্বপ্ন! আবছায়া অলীক শহরে
খন্দভরা পথে নেমে কাদামাখা কুড়াবো আধুলি
৮.
গৃহী যদি কৃপা করে এক মুঠো খুদকুঁড়ো দ্যায়
তাতেই আহ্লাদ! তাতে করি নাচ বগল বাজিয়ে
৯.
অথবা কুকুর তার লেজখানি ঘনঘন নাড়ে
মাংসলাগা হাড় নিয়ে যদি কেউ তু-তু বলে ডাকে
১০.
আমি আর সারমেয় আলাদা প্রজাতি তবু এক
প্রভুর পায়ের কাছে সারাদিন জানু পেতে থাকি
পিঠে যদি পড়ে লাঠি মুদ্রার ওপিঠে তবু জানি
অবজ্ঞা-মেশানো ভাত ঈশ্বরী করুণা করে দেবে
১১.
আভোগ-ভণিতা শেষ। বুঝে ফেলি গূঢ় আত্মীয়তা!
অপ্রেমে অরুচি নেই; অনাদর প্রেমের সমাধি
১২.
পচাগলা দেহ নিয়ে শুয়ে থাকি শ্মশানে ভাগাড়ে
অপ্রীতিসম্ভব গ্রহে এর বেশি আর কিবা চাই
কুঁই কুঁই করি আর ঘুমের ভেতরে লেজ নাড়ি
এক ডজন কবিতার প্রত্যেকটিই খুব ভালো।
“আর দেখি, মাইনাস তিন ডিগ্রি, চার ডিগ্রি শীতে
আউশ্ ভিৎ্স ক্যাম্পে এক ভয়াকুল কাঁপছে ইহুদি
৩.
আর নীল ভবদ্বীপে সূর্যাস্তে কুরুর মাঠে ধীরে
নামে হননবিরতি। শিবিরে পতাকা ওড়ে শাদা
অসির ঝলক থেমে জ্বলে ওঠে তাঁবুর মশাল” বাহ!