চিন্তার চিহ্নমালা ১৮ <br /> সন্মাত্রানন্দ

চিন্তার চিহ্নমালা ১৮
সন্মাত্রানন্দ

কিন্তু কী দিয়ে গড়া ওই পাঁচিলটা? সিমেন্টের মতন কিছু? এত শক্ত সেটা যে, কখনই ভেঙে পড়ছে না, টসকাচ্ছে না একটুও। আর টসকাচ্ছে না বলেই এসব বিপদ ঘনিয়ে উঠেও ঘটে উঠছে না। সিমেন্টের দেওয়ালেও ড্যাম্প লাগে, স্যাঁতা পড়ে, বেশি পুরোনো হলে ঝুরঝুর করে বালি সিমেন্ট খসে পড়তে থাকে। অথচ স্বপ্ন আর জাগ্রতের মাঝখানের এই পাঁচিলটা একেবারে নিরেট শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এদিকের জিনিস ওদিকে আসতে দিচ্ছে না, দুই প্রকার অভিজ্ঞতা গুলিয়ে যাচ্ছে না একেবারেই—কী দিয়ে তৈরি এই আজব পাঁচিলটা? খুব শক্ত কিছু? হিরের মতন শক্ত? সিসার মতন কিছু? চিন্তার চিহ্নমালা। অষ্টাদশ পর্ব। সন্মাত্রানন্দ

অভ্র কা দর্ভ

কাল ভোররাতে অনিমেষ আমাকে কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করে গেল।

বস্তুত, স্বপ্নে। ঘুম ভেঙে উঠে খানিকক্ষণ বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল, আমি বেঁচে আছি কিনা। স্বপ্নে আমার বিছানা, বালিশ রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। একেবারে ফালা ফালা করে কেটেছে অনিমেষ। আমার কিছুই করার ছিল না। আসলে আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, অনিমেষ! সেই অনিমেষ, যাকে আমি কলেজ-লাইফ থেকে প্রিয় ভাইটি বলে জেনে আসছি, যার সঙ্গে একই অফিসে কাজ করি আমি আজকাল, নতুন পড়া বই বা নতুন দেখা সিনেমা নিয়ে যার সঙ্গে রোজ ঘোর তর্ক না করলে আমার পেটের ভাত হজম হয় না, সে আমাকে এইভাবে…

আত্মরক্ষার চেষ্টাই করতে পারলাম না। তার আগেই বিছানায় শায়িত আমাকে অনিমেষ একটা ড্যাগার দিয়ে পর পর কোপাতে লাগল। বিস্ময়ে, আতঙ্কে, যন্ত্রণায় অসহায় আমি চেঁচিয়ে উঠতে গেলাম। বলতে চাইলাম, এই অনিমেষ! এ কী করছ আমায়? কী করছ? কিন্তু একটা কথাও বলতে পারলাম না আমি; অনিমেষের শক্ত তামার পাতের মতো হাতের পাতা আমার মুখ চেপে ধরেছে। আমি বু-বু করে গোঙাতে লাগলাম। উঃ!

ঘুম ভেঙে বিহ্বল ভাবে খাটের উপর বসে থেকে, জল খেয়ে নিজেকে বোঝালাম, যা দেখেছি, ওসব সত্যি নয়। স্বপ্ন। ঘরের দরজা বন্ধ, অনিমেষ আসবে কোথা দিয়ে? তাছাড়া, অনিমেষ… আমাদের অনিমেষ—সে কত ভালো বন্ধু আমার, কত ভালো ছেলে, সে কেন আমাকে…? না, না, দূর! আজাইরা স্বপ্ন যত সব অভ্র কা দর্ভ! আকাশের ঘাস! ধীরে ধীরে মন বুঝল কথাটা। মেনে নিল।

হ্যাঁ, ঠিক। যা দেখেছি, স্বপ্ন সেসব। এখনই ভুলে যাওয়া চাই। হ্যাঁ, এখনই।

ভুলে গেলাম। স্নান করে, প্রাতরাশ সেরে, জামাজুতো পরে, বাসে-মেট্রোতে-অটোতে বেবুনের মতো লাফিয়ে উঠে-নেমে অফিস পৌঁছে, অফিসের প্রাথমিক রিচুয়াল ফুরিয়ে ফেলে, জমে থাকা কয়েকটা কাজ সবে মেরে এনেছি, এমন সময় অনিমেষ আমাদের ঘরে এল। অন্যদিনের মতই স্বাভাবিক স্বরে বলল, ‘চলুন, দাদা! চা-ফা খেয়ে আসি।’ আমিও বললাম, যেমন উত্তর দিই রোজ, ‘হ্যাঃ! চলো, বহুত কাজ হয়ে গেছে।’

চায়ের দোকানে দুজনে মুখোমুখি পেপার কাপের লাল চায়ে চুমুক দিতে দিতে হঠাৎ অনিমেষের মুখের দিকে চেয়ে আমি চমকে উঠলাম ভেতরে ভেতরে। অনিমেষও কি টের পেল? নাহলে বলল কেন, ‘কী হয়েছে আপনার, দাদা? শরীর খারাপ নাকি? কিছু কি ভাবছেন?’… তারপর আবার ওর স্বভাবসিদ্ধ মুদ্রাদোষে নিজের গলার উপর ডানহাতের তালু ধীরে ধীরে মসৃণভাবে ঘষতে ঘষতে বলল, ‘তারপর? ডায়াল এম ফর মার্ডার দেখলেন? লিংক পাঠিয়েছিলাম। হিচককের এত বিখ্যাত সিনেমা, এত পুরোনো, আপনি এতদিন দেখেননি জেনে অবাক হয়ে যাচ্ছি।’

অনিমেষের আঙুলে স্যাফায়ারের আংটি, নখগুলো মসৃণ করে কাটা দেখতে দেখতে আমার মনের ভিতর থেকে একটা বাচ্চা ছেলে হঠাৎ আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল, ‘ওই তো, ওই তো! ওই হাত দিয়েই তো কাল ও আমাকে…’

ভাগ্যিস, মনের চিৎকার বাইরে থেকে শোনা যায় না। আমি তখনই ওই বাচ্চাটার মুখগহ্বরের উপর কিছুটা সিমেন্ট-জল দক্ষ রাজমিস্ত্রীর মতন কর্নিক দিয়ে ছিটিয়ে সমান করে দিতে দিতে মনে মনে বললাম, ‘চুপ! চুপ! একটাও কথা বলবি না আর! ওসব স্বপ্ন। স্বপ্ন। সত্যি নয়। সত্যি নয়।’

কিন্তু ধরা যাক, যদি আমি ঠিক সময়ে বাচ্চাটার মুখ বন্ধ করতে না পারতাম, যদি রাজমিস্ত্রী না থাকত, কিংবা যদি সিমেন্ট খুঁজে না পেতাম, অথবা সিমেন্ট থাকলেও যদি কর্নিকটা তখনই খুঁজে না পেতাম, তাহলে কী যে ভয়ানক কাণ্ড করে বসতাম! ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বসতাম আমি। অতর্কিতে হয়তো ঝাঁপিয়ে পড়তাম অনিমেষের উপর, ওর চায়ের কাপ থেকে চা চলকে পড়ত ওর জামায়, ওর টুঁটি চেপে ধরে আমি ততক্ষণে ওর শ্বাসরোধ করে স্বপ্নজগতের হত্যার প্রতিশোধ নিতাম। নিতামই। চারিদিকে লোক জমে যেত। তারপর থানা, পুলিশ, হাজত, কোর্ট-কাছারি… উঃ, আর ভাবতে পারছি না!

শুধু যদি স্বপ্নকে এই জাগ্রতের অভিজ্ঞতার মতই সত্য বলে জানতাম, যদি স্বপ্ন আর জাগ্রতের মাঝখানের এই পাঁচিলটা কোনোভাবে আলগা হয়ে ধ্বসে পড়ত, তাহলেই এসব হত।

কিন্তু কী দিয়ে গড়া ওই পাঁচিলটা? সিমেন্টের মতন কিছু? এত শক্ত সেটা যে, কখনই ভেঙে পড়ছে না, টসকাচ্ছে না একটুও। আর টসকাচ্ছে না বলেই এসব বিপদ ঘনিয়ে উঠেও ঘটে উঠছে না। সিমেন্টের দেওয়ালেও ড্যাম্প লাগে, স্যাঁতা পড়ে, বেশি পুরোনো হলে ঝুরঝুর করে বালি সিমেন্ট খসে পড়তে থাকে। অথচ স্বপ্ন আর জাগ্রতের মাঝখানের এই পাঁচিলটা একেবারে নিরেট শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এদিকের জিনিস ওদিকে আসতে দিচ্ছে না, দুই প্রকার অভিজ্ঞতা গুলিয়ে যাচ্ছে না একেবারেই—কী দিয়ে তৈরি এই আজব পাঁচিলটা? খুব শক্ত কিছু? হিরের মতন শক্ত? সিসার মতন কিছু?

কিন্তু উলটোটাই মনে হয় আমার। খুব নরম জিনিস শক্ত হয়ে জমে গেলে সে যে কী ভীষণ দুর্ভেদ্য হয়ে যায়! যেমন মোম। যখন গলে গলে পড়ে, কী নরম, কী নরম! কিন্তু ঠান্ডা মেরে শক্ত হয়ে গেলে নিভন্ত মোমদানিতে জমে থাকা শক্ত মোম ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে কেটে বের করতেও কী প্রচণ্ড প্রয়াস চালাতে হয় যে!

যেমন প্রেমিক বা প্রেমিকার মন। কী নরম, কী নরম! ভোরবেলা গাভীর বাঁটে যে দুধের ফেনা ওঠে, তার থেকেও নরম, তার থেকেও কোমল প্রেমাস্পদ, প্রেমাস্পদার মন। প্রেমিক লোকের স্বভাব আতান্তর—কালিকাপ্রসাদ গাইতেন যখন, আহা! কিন্তু সেই প্রেমিকের মন যখন প্রেমিকার প্রত্যাখ্যান পায়, অপমান পায় অথবা উলটোটা— প্রেমিকা যখন পায় প্রেমিকের প্রত্যাখ্যান, তখন সেই অসম্ভব সংবেদনশীল মন বেদনায় ব্যথায় কষ্টে অভিমানে শক্ত হয়ে যায়। এত শক্ত যে তার মনের নাগাল আর পায় না কেউ কোনোদিন।

তাহলে এই যে স্বপ্ন, যা কিনা অবচেতন মনের ফল, আর এই যে জাগ্রৎ, যা কিনা সচেতন মনেই প্রতিভাসিত; এই দুয়ের মাঝের পাঁচিলটা ওইভাবেই তৈরি হয়েছে নাকি? একদিন হয়তো ওদের মধ্যে প্রেম ছিল। সে বহুকাল আগে। মানুষ তখন আদিম। আদিম মানুষের সচেতন মন আর অবচেতন মনের মাঝখানে কোনো বিভাজক প্রাচীর গড়ে ওঠেনি তখনও সম্ভবত। এখনও শিশুরা স্বপ্ন আর জাগ্রতের তফাৎ বুঝতে পারে না সব সময়। স্বপ্নে দেখে, মাসী মরে গেছে। ঘুম থেকে উঠে কাঁদে। শেষে মাসী এসে শিশুটিকে জড়িয়ে ধরে যখন বলে, আরে, এই তো আমি, এই তো আছি, তখন বেশ খানিক কান্নাটান্না করে বাচ্চা বুঝ মানে।

যখন মানুষ ভয়ংকর কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়, হয়তো ভয়ানকভাবে অপমানিত হয়, তখনও চটজলদি সেই দুঃস্বপ্নের মতো অভিজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না সহজে। কিছুক্ষণ ব্যোমকে যায়, গুম মেরে যায়। ধরা যাক, হয়তো চোখের সামনে আরেকটু হলেই কোনো আততায়ীর হাতে আমার কোনো বন্ধু খুন হয়ে যেতেন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গেলেন। তখনও দুঃস্বপ্নের মতো সেই অভিজ্ঞতার রেশ, সেই মানসিক ট্রমা আমাকে এমনভাবে অধিকার করে রাখে যে, আমার মনে হয়, প্রিয় বন্ধুটি হয়তো বেঁচেই নেই আর। তখন সেই ট্রমা থেকে আমাকে বের করে আনার জন্য, দৈবক্রমে বেঁচে যাওয়া আমার সেই বন্ধুটি আমাকে আশ্বস্ত করার জন্য, আমাকে সুস্থ করার জন্য বারবার বলতে থাকেন, ‘আরে মশাই, এ ভবিতব্য! ললাটের লিখন! আরে আমি তো বেঁচে আছি! অক্ষত! হ্যাঁ-অ্যাঁ! আজকের ঘটনা, ফেলুবাবু, আপনি মন থেকে মুছে ফেলুন!’

মোদ্দা কথাটা আমার এই, শিশুরা প্রায়ই স্বপ্ন আর জাগ্রতের তফাৎ করতে পারে না। এমনকি পরিণত মানুষও খুব আঘাত পেলে স্বপ্নের মতন অভিজ্ঞতা থেকে সহজে বেরিয়ে আসতে পারে না; যদিও তার চারিপাশে তখন স্বাভাবিক বহমান জীবনের প্রবাহ চলছে, তবু সে সেই বহতা ঘটনার স্রোতে গা ভাসাতে পারে না কিছুক্ষণের জন্যে। খুব জ্বর হলে, অসুস্থ থাকলেও এসব স্বপ্ন-জাগ্রৎ গোলানো ব্যাপার হয় প্রায়শই। এই সব অবস্থা আসলে মানুষের মনের সেই আদিম যুগের অবস্থারই স্মারক, যখন আদিম মানুষ স্বপ্ন আর জাগ্রতকে বড়ো বেশি আলাদা করতে পারত না। তখন চেতন আর অবচেতন মনের গভীর প্রেম চলছিল। আর তাই তো সেই আদিম মন থেকে বেরিয়ে এসেছিল আশ্চর্য আশ্চর্য সব মিথ, প্রাকপুরাণিক কত কল্পনা, কবিতার প্রথম উৎসার, টোটেমের কত বিস্ময়কর ধারণা। কিন্তু তারপর?

তারপর বোধহয় একদিন মানুষের চেতন মন প্রত্যাখ্যান করল অবচেতন মনের এতদিনের সজীব ভালোবাসাকে, অপমান করে বলল, ‘আমিই বাস্তব, আর তুমি অবাস্তব। আমি বুদ্ধিমান, আর তুমি? তুমি নিতান্তই যুক্তিহীন, আনপড়, গেঁয়ো! আমাকে তুমি আবার কি ভালোবাসবে? আগে আমার যোগ্য হও, যাও, যোগ্য হয়ে ওঠো!’

আহত, অপমানিত অবচেতন মন বোবা জন্তুর মতন তার যাবতীয় কান্না, যাবতীয় অভিমান নিয়ে সরে গেল চেতন মনের থেকে অনেক দূরে। মনে মনে সে যেন বলে গেল, ‘থাকো তুমি তোমার যুক্তির স্বর্গ নিয়ে। তোমার মেধা, তথ্য, তত্ত্ব, অন্বেষা প্রভৃতি সব সুন্দরী বান্ধবীদের নিয়ে। আমার বয়ে গেছে তোমার যোগ্য হয়ে উঠতে। আমি গাঁয়ের মেয়ে। গাঁয়ের মেয়ে হয়েই থাকব। আর কোনোদিন আসব না তোমাদের সুচারুচর্চিত মেধানির্মিত কৃত্রিম এনামেল করা প্রাসাদে।’

এত যে নরম ছিল, নমনীয় ছিল সেই অবচেতন মন, অভিমান করে, গোঁসা করে যেই সে মুখ ঘুরিয়ে বসল, অমনই সেই অতি নরম, অতি কোমল গ্রাম্য রমণীর মন ইস্পাতের থেকেও কঠিন হয়ে গেল। সেই কঠিন পদার্থ দিয়েই বুঝি তৈরি হল তার ঢাকনা, যাকে খোলে সাধ্য কার? এই ঢাকনাই সেই টানা প্রাচীর, যা আমাদের অবচেতন আর চেতনের মাঝখানে, আমাদের স্বপ্ন আর জাগ্রতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থেকে এই দুইকে আলাদা করে রেখেছে। আলাদা করে রেখেছে বলেই সুস্থিত হয়ে আছে আমাদের কৃত্রিম সামাজিক জীবন, স্বপ্নের আততায়ীকে জাগ্রতে উঠে এসে আমরা খুন করে ফেলছি না সেই কারণেই।

সেকথা সত্য। কিন্তু অন্যভাবে ভাবলে, ওই প্রাচীরটা থাকার জন্যেই আমাদের শিল্প থেকে, সাহিত্য থেকে হারিয়ে গেছে জ্যান্ত কল্পনার নির্মাণ, স্বতঃস্ফুর্ত ভাবনার স্বাভাবিক উৎসার।

প্রাচীরের গায়ে একটু ফাটল না ধরাতে পারলে, অবচেতন আর চেতনের মধ্যে একটু গোপন ভালোবাসাবাসি না হলে শিল্পের মুক্তি কোথায় আর? তাতে হয়তো পাগল বলবে শিল্পীকে কেউ কেউ, সমাজ থেকে সংসার থেকে সঙ্ঘ থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেবে। তা দিক। সুস্থ, সামাজিক থাকা যাবে না আর না হয়! কিন্তু পাগল না হয়ে কেউ ভালোবেসেছে কবে? সৃষ্টি করেছে কবে?

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS Wordpress (2)

  • comment-avatar
    Piyali Bhattacharya 3 years

    বডড ভালো লাগলো মহারাজ । আসলে আপনার সব রচনাই অপূর্ব । এতো গভীর এতো অনুভবের যে বারবার পড়তে হয় ।

  • comment-avatar
    sharmistha biswas 3 years

    কি বলবো!আপনার লেখা পড়ে সত্যিই আপ্লুত হলাম।এত সুচিন্তিত গাম্ভীর্যপূর্ণ অথচ অবলীলায় যা এতটাই সরল সহজ দূরন্ত চঞ্চল শিশুর মতো। এই শিশুকে আদর করতে খুব ইচ্ছে জাগে।কিন্তু ও যে চঞ্চল!
    ভালো থাকবেন আপনি।পরবর্তী পাঠের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকলাম।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes