অসাড়লিপি
শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

২৩

যখন গানের মধ্যে ঈশ্বর তৈরি হচ্ছিল তখন কোথায় ছিল কল্পনার ভয়? যখন আমাদের ফসলে ও খামারে মড়ক, তখন কোথায় ছিল কল্পনা? যখন প্রতিটা সুরের উৎসে ছিল তাড়না, সমস্ত দেবদারু ও সুপারির, চৈত্র বাতাস লেগে, আকাশের দিকে বেড়ে ওঠাকে মনে হত ঈশ্বরপ্রকাশ, তখন আমাদের কল্পনা কোন দিকে বাঁকছিল? আমরা তৈরি করে নিচ্ছিলাম আমাদের মত স্বদেশ, আমাদের মত বিভাজন রেখা বরাবর তৈরি হচ্ছিল সাংকেতিক ব্যকরণ, আমরা বুঝতে শিখছিলাম বাংলা আসলে আমাদের। মানে আমরা যারা পালাগান, আমরা যারা তাঁতি ও ধীবর — রাজার ভাষার সঙ্গে দূরত্ব ছিল ঠিক বিশ্বাসের সঙ্গে নদীর যতটা। কবে থেকে রাজার লোক আমাদের ভাষা বলতে শুরু করল? কেন জিভের মধ্যে মিশতে শুরু করল বালি? আমরা যারা মুখে জোনাকির আলো নিয়ে গান রচনা করেছি, আমরা যারা জ্যোৎস্নার নদীতটে মিশিয়ে দিয়েছি তাঁতের নকশা, তারা তো বাতাস বোনা রাজশিল্পীদের থেকে দূরে ছিলাম — তবে কেন গান পুড়ে যায়? কেন সুর শুধুমাত্র ঈশ্বরকল্পনায় মাতে বারবার? আমাদের শরীর থেকে ছাই গিলে নদী কেন বারবার ফুলে উঠে গিলে নেয় গ্রাম? মুখের শব্দ যখন কেবল স্মৃতি, বলার মত শুধু কয়েকটা বাজার — তখন আমাদের সামনে হাতির মত উঁচু হয়ে উঠেছিল ধর্ম যাকে ব্যাকরণ বলে জেনেছি; যতিচিহ্ন তৈরি হয়েছে মন্দির বা মসজিদের আদলে, এখন তাকে কি উপড়ে ফেলা যাবে?

ভাষা রক্ষা করে যাও, ভাষা ও সৌন্দর্য নিয়ে ভেবে যাও, সুন্দরের শরীর জুড়ে টানটান মেলে রাখো ঘরে ফেরার অনন্ত রাস্তা — তার বেশি নয়

লেখো তোমার ভাষার আরোপিত ব্যকরণ আসলে শাসকের আরোপিত ধর্মের বিরুদ্ধে নিজেদের ধর্মের চোরাগোপ্তা ছুরি। লিখোনা বর্জনের শতাব্দিগুলো, কীভাবে তারা জমিয়ে রাখছিল প্রতিহিংসার পুরনো ছুরি। পরপর মুখের কথাগুলো অভিধান থেকে কেটে বাদ দেওয়া। পরপর সাদা টুকরো উড়ছে বৃষ্টি আসার আগের হাওয়ায়, পাখিদের দুর্বল পায়ে ভর দিয়ে ছাপ রাখছে কাদায়। প্রতিক্রিয়ার পর প্রতিক্রিয়া। ক্রিয়া ও বিশেষ্য। তোমার শুকনো কবিতা ভরে উঠুক বিশেষণে।

মাটি পায়ে চলার ভিজে ছাপ অথচ কোথাও কোনও চইচই শোনা যাচ্ছে না, সুরের আবহে এই বুঝি তোমার ঘরে দপ করে জ্বলে উঠবে হংসধ্বনি — জলের দাগ মিল্যে যাবে না এমন আদ্রতা, এই মধ্যে জ্বলে উঠবে সন্ধে, যাবতীয় সান্ধ্য মাঙ্গলিকতা > কোথাও কি নিজের বাইরে কল্পনা করা যায়? এই তারিখ উপচে পড়া বছরে কল্পনা কতটা গুরুত্ব রাখে?

সমস্ত রাগ ও বন্দিশ ভরে আছে রক্তের ছিটেয়
সমস্ত রাস্তা ও পাথর নির্দেশিত ঘরে ফেরা
রক্ত ও ভিনভাষা চলন ও অভ্যাসে
সম্পূর্ণ অন্য ভাষা মিশে যায়
শুরু হয়ে যায় মিলন সন্ধান
শুরু হয়ে যায় যুবতির কলহাস্যের মত
ব্যাকরণ মিলিয়ে দেখতে চাওয়া
কল্পনার নির্মাণে বড় হয়ে ওঠে
ভাষা পরিবার নামক মাইল ফলক

আর এভাবেই পরপর হাসি শুরু হয় আমাদের
শুকনো এপ্রিলের জঙ্গলে
ভিজে ভাষা পরিবারের শ্রাবণে
মেঘ-টকটকে সূর্যাস্তের কম্পমান ধুলোয়
মিশে যেতে থাকে আমাদের মেয়েদের অকারণ হাসির পর্দা
মিলে যায় বৃষ্টি-রঙা পুরাতন হৃদয়ে
কেন চাইবো না আমরা সিনেমায় নাচা-গানা চলতেই থাকুক?
কেন চাইবো না আমরা দমবন্ধ করা পরিবেশে
ক্রমাগত অপচয়ের ঘাম জমে উঠুক সমস্ত প্রার্থনায়?
প্রার্থনা কী?

আমাদের ক্রমশ অ্যাসিডের ঝাপটা লাগা হাজার বছরের অস্তিত্ব হাত-পা মেললো একটা কাল্পনিক চারিত্র্যে — যাকে কৃষ্ণ বলে ডেকেছি আমরা সেটাই প্রার্থনা! ধাপে ধাপে নির্মিত হল নতুন কল্পনা যাকে ব্রজবুলি বলে ডাকা। ধাপের গায়ে চিহ্নিত হল অন্য প্রভাবের ভয় খাড়া হল দেয়ালের কথা, অধর্ম বোঝার ছাঁকনি ব্যাকরণ!

তুমি বলছো নিজের কথা, তুমি দেখেছো কীভাবে কুমারী বুকে ফুটে ওঠা দুধের শিহরণ তোমাকে টেনেছে, তুমি জানো কীভাবে যৌনতাহীন বিবাহ বাক্যের গঠন বদলে দেয়। তুমি জানো কী সম্ভাবনা থেকে তোমার বা তোমাদের ভাষায় প্রেম বলতে শুধু পরকীয়া!

যাত্রাটা ধ্বংসের ভিতর দিয়েই হোক
যে শরীর নিদ্রাসর্বস্ব, বাকপটু
যে শরীর শোক ও কাতরতা
কোথাও কোনও কোষের অকষ্মাত ফুলে ওঠা

আমরা খুঁজে চলি নতুন ভাষার সম্ভাবনা
অথচ আমল দিইনা কখন বৈষ্ণবের কোটরের ওম
বদলে গেছে তান্ত্রিকের হ্রিং-এ

আমরা অভ্যাসের সামনে বলি মুক্তি হোক
বলি আবহাওয়া দপ্তরের সামনে উল্টে যাক
সমস্ত শুষ্কতার পূর্বাভাস
বলি লোদি বাগানের গায়ে ফিরে আসুক ১৪ শতক
বলি আমার আদি গঙ্গা ফের নাদ্য হয়ে যাক
স্পষ্ট এক আলা হয়ে উঠুক তার নৌ-চলাচল

সূর্যাস্তের চাপে ধেবড়ে গেছে রং
তবুও চেনা যাচ্ছে আমার চাহিদা
কোথাও বাড়ি নেই শুধু রং —
চাপা গঁদরঙা পাড়া
নিঃশ্বাস ও আকাশ ভরা ফসল
চকিতে লিখে ফেলা যায় এমন উড়ানে
ভর করে পাখি-কর্কশ কিছু দিন
তোমার শরীর বলে কিছু নেই শুধু মন
কুসুমের মত কিছু উপমায় নতুন ভাষা
একটা সাদা দেওয়াল তার গায়ে প্রতিবিম্বিত

পোস্টারগুলো উপড়ে আসছিল যেভাবে সমস্ত পুরনো দলিল> প্লাস্টার রং বদলানো> “অল ওয়াল” তারপর লেখা রাজনৈতিক দলের নাম যা বদলে যায় সরকার বদলাতে পারলে। তুমি জানো কবিতায় এসব কথা লেখা অনর্থক। সেখানে সমগ্রতার অর্থ নিঃশ্বাসের অভাব, যেখানে অন্ধকার এক স্থায়ী মানচিত্র। সেখানেই সাদা অক্ষরের একটা অক্ষ তৈরি হয়, তুমি তাতে ভয় করে ঘুরপাক খাও শহরান্তরে। তার প্রতিবিম্বময় দীর্ঘ জলাশয়ে সব পথ খালি হয়ে হয়ে গেছে। সব চৌকিদার শীতাপ্লুত। পরপর উঁচু হয়ে উঠছে অক্ষ। শব্দ তৈরি হচ্ছে আর ভাষাহীনতায় ভোগা অভিধান জড়ো হচ্ছে। অক্ষ জাপটে ধরে সত্যের জয় হবে মার্কা হিন্দি সিনেমা ছড়িয়ে যাচ্ছে, গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে রঙিন গানের টুকরো। আমাদের মাথার নাম বিচ্ছিন্ন স্বদেশ। এইখানে ঘর হিসেবে জেগে ওঠা গানের দিকে ছুটে যাচ্ছে সবাই। ফসলহীন মাঠগুলো জুড়ে পড়ে থাকছে অসমাপ্ত নাচের টুকরো। তাদের কুড়িয়ে নেবার নামই হোক, আচমকা রোদ ঝলসে ওঠা পৌষ ও বিশ্বাস।

প্রতিটা সূর্য ওঠায় তুমি খুঁজে নিয়েছো ইউরোপের শান্তি। প্রতিটা সূর্যাস্তে তুমি চিহ্নিত করেছো ফার্সি কারুকাজ। ধুলো ও প্রান্তর ঘেঁষে জেগে উঠেছে গবাদি পশুর মত ঘরে ফেরা।

বিশ্বাস শুধু শান্ত হতে শেখায়। এই প্রতিনিয়ত উদাস ভিন্তার দেশে অসাড়ের ছিন্ন ভিন্ন রশ্মি বুকের ভিতর পাঠিয়ে দেবার আকুলতায় জন্ম হয় শুধু নতুন রকমের শান্ত হতে শেখা। যে গাছ নিষ্পত্র গোধূলির গায়ে সিল্যুয়েৎ তৈরি করছে তার শিকড়ে গিয়ে ছটফটানি পুঁতে আসো তুমি আর বিবাহবার্ষিকীহীন নারী-পুরুষের দীর্ঘ ছায়া সন্নিকটস্থ জলাশয়ে বিকেলকে আরও বেশি ছায়াময় করে তোলে। তুমি শান্ত হতে থাকো, তুমি শান্ততর হতে শেখো বিশ্বাসের এই উদাত্ত জঙ্গলে

২৪

সাড়া ভাবো। এই রাতের শেষতম জীবিত কণা। মহাকাশচারীর মত একঝলক দূর থেকে পৃথিবী দেখা শেষ করে আনো সমস্ত শেষের মধ্যে পুরে দাও তোমার বন্ধুত্ব চাহিদা। জানি তোমার ঘাসজন্ম জানি তোমার গলার শিরা ফুলে ওঠে নিঃস্বর জানি তোমার প্রতিটা রোমকূপ কতা ব্যাকুল শুধু জঙ্গলে জানুয়ারি মাসের শব্দ শোনে। জানি তোমার অর্থচিন্তা নিরর্থ জীবন থেকে দূরে তুমি চাও সে বদলে যাক আচমকা উন্নততর বেঁচে থাকার দিকে অথচ তেমন কিছু ঘটে না। এখানেই জানতে চাই কোথায় গিয়ে আমাদের যোগ কেটে গেল কোথায় রাস্তার কোণে শুধু পড়ে থাকল ব্যবহার-চিহ্ন। অথচ এখনও রাত জাগার মধ্যে ঢুকে পড়ে আফ্রিকা মহাদেশ যেখানে পশ্চিম দিকে বাঁক নিচ্ছে ফুলে উঠছে তার মাথা সেখানকার সমুদ্র পেরোতে চাওয়া ভেলা।
অন্যপারে সেই চিরকাঙ্খিত শীত। আনন্দ উজাড় করে দেবে এমন সব আলোর দিকে আমিও মাথা বেঁকিয়ে নিবিড় কালো কালিতে সাদা পাতার দিকে অবিশ্বাস্য কোনও পরিবর্তনের দিকে, যেন চমকে বিশ্বের মত কোনও দরজা খুলে যাবে আর গোছানো থাকবে একটা বাড়ি। যে কোনও দিনই আমাদের অবিবাহ-বার্ষিকী, যে কোনও দিনই যেন আমাদের ফাঁকা বসার ঘরে উড়তে থাকা পতঙ্গের ডানায় ভর করে ভোর আনতে চাওয়া

নিজেরই মাংস কেটে রেখে দিচ্ছি ভারি পাটাতনে মোটা কাটারির ভারে টুকরো হয়ে যাবে এতগুলো বছর আর কোথাও সাড় বলে কিছু অবশিষ্ট নেই সমস্ত কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু পেশি-পাথরের ডেলা স্পর্শ করছে সমস্ত রকম উৎসবের ফেলে যাওয়া রঙিন ফিতে

শুধু জলের দিকে চলে গেছে আমার মাতৃভাষা সঞ্চয় করেছে জলীয় ভূপ্রকৃতি
নদী-খাল-বিল-দীঘি-পুকুর-খাঁড়ি-হাওড়-নয়ানজুলি-সাগর-দরিয়া
ঘর ছাড়ার অছিলা নৌকা ও অন্যান্য জলযানের নাম
অথচ এখন তেমন কোনও জল বেঁচে নেই শুধু উঠে আসা আচমকা ঢেউ
বা ঝড় নামক পালিয়ে যাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে গ্রাম
পালাচ্ছে অজুত মানুষ ও তার অভ্যেস ভাষা ও ব্যবহার্য তৈজসপত্রে
ভরে উঠছে নতুন দুনিয়া

অথচ আমি বা আমার তৈরি করা ভাষা তা টের পাচ্ছে না শুধু অভ্যেসের দায় এভরিয়ে তুলছি সমস্ত রকম রাস্তা ও বইয়ের দোকান, কোথায় চলেছি আমরা? তোমরা, তোরা বা সমস্তরকম সম্বোধন? যে নামহীন জল ভরে দিচ্ছে সমস্ত দুনিয়া, যে জল আমাকে একা পেয়ে ঠেসে দিয়েছে সমস্ত রকমের পিপাসা তাকে কী বলে ডাকব? কী পৃথিবী রেখে যাব? ভাষাহীন জলের দাপটে লুপ্ত হয়ে যাবে সব ভার ও ভবিষ্যৎ।

জড়ো হচ্ছে সমস্ত রকমের প্রাণ ও অপ্রাণ
চিন্তা ও তার সূত্র ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবার জায়গাহীনতা
পিঠ ঠেকাবার জন্য দেয়ালহীনতা
শুধু উচ্চকিত বিষয়হীন একধরণের খোলসপূর্ণ হাসিতে ভরে যাচ্ছে চারপাশ
শোনা যাচ্ছে পাহাড় উপড়ে আসার আওয়াজ
শিশু চিৎকারের মত তীক্ষ্ণ কিছু শিস
জল গিলে ভারি হয়ে থাকা সমস্ত হাসপাতালের উপড়ে আসার আওয়াজ
সমস্ত দরজা ভেঙে আমাদের ধ্বংস
শেষপর্যন্ত ভেসেই থাকতে চাইছে
চারপাশে পচা মাংস, ভিজে ফেঁপে থাকা দামি পান্ডুলিপি
পচা কাঠ, আর কোনওদিন ভাসবে না!

কতদিন বেরিয়ে আসতে বলেছি নিজেকে এই অশ্রাব্য খিস্তির সামনে দাঁড়িয়ে
অসাড়ের চোখা ধাঁধানো তীর বেঁধা পেশিতে চকচক করে উঠেছে আমাদের ইচ্ছে
তার মায়ায় স্তব্ধ আমরা শুনিনি মধুশিকারির কথা তার দেয়ালে ঝোলানো
বাঘের মুখোশ আমরা দেখতে চাইনি, দেখিনি কোথায় গিয়ে নদী হারিয়ে গেছে
কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়ে উঠেছে টানটান সুন্দরী গাছের শিকড় ও তাদের সংকেত
ক্রমশ বদলে গেছে অসাড়ের নিজস্ব মিনারে

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes