
অর্ঘ্যকমল পাত্র-র কবিতা
প্রস্তাব
যাই বলো, সতর্ক শোনায়
পরিকল্পিত পাখির ডাক, ক্রমশ ঝলসে মারে
পুরোনো গানের সব সূত্রে—
নিছক আনন্দ নয়, রক্তে ছলাৎ
উঠতে-বসতে এত দোস্তি, হাসি—
এভাবেও সম্পর্ক গড়ে রহস্যবিহীন?
নিজেকেই প্রশ্ন করে মন
চিনি দীর্ঘকাল, তবু দ্বিধা, বলে ওঠা হয় না কিছুই
তুমি কি আমাকে করবে না, গ্রহণ?
প্রস্তাবোত্তর
তারপর নিয়মমাফিক, ফিরে আসা চেনা ঘরে
প্রশ্ন তো করেইছি ইশারায়;
জবাব বলতে, শূন্য-মন… নির্বাক থাপ্পড়ে
অথচ, পারি না স্রেফ ঘুম। ফের
আবার বাড়িয়ে দিই গাল
অক্ষরের ভিতর, নতজানু হই…
ব্যর্থতায়, গলায় গলিয়ে নিই ফাঁস
শুধু, এ-সামান্য জীবন। সাফল্য বলতে
প্রত্যেক কবিতায় তোমাকে প্রকাশ
অগত্যা
বন্ধু স্বভাবের পাশে দাঁড়িয়েছে আহত বয়স
চেনা রাস্তা শুনশান। দেয়ালেতে পিঠ রাখে জেদ।
না, দুপুরে ঘুম নয়। ঘুমের অভ্যাস ঝেড়ে ফেলে
এবার শিখব ব্যূহ, দেশীয় আদবে দেব ত্যাগ
তারপর সন্ধেবেলা, আটকে দাঁড়াব রাস্তা তার—
সমস্ত উত্তর চাই, আমার সে প্রতিটি কথার!
বাকি যা বৃথাই হোক, ‘একত্র’ চাইলে শুধু প্রেম
নইলে
কোনোদিনই, কোনোরকম সম্পর্ক রাখব না আর!
উত্তর-কিশোর
১.
তোমার আক্রান্ত হয়ে পথে পথে ঘুরে
চিনেছি নতুন আলো, মৃদু মুগ্ধবোধে।
সম্পর্কের চারিপাশে অবলীলা রোদে
যেমন সেদিন ভাঙা, আত্ম-ক্লান্ত সুরে
পাথরে পাথর ঘষে উঠে আসে ক্ষয়
সঙ্গীত ভালোই জানে, পদ্যও নিশ্চয়…
জল থেকে জল তুলে উঠে আসে স্থির
ডাঙাও অতল এই বয়স গম্ভীর!
বিকেলে রেওয়াজ; আর দূরে, বহুদূরে
সবুজ ক্যাম্বিস থামে শ্রান্ত অভিনয়ে।
আশ্চর্য এ সম্মোহন! ব্যথা-শর্ত খুঁড়ে—
গোধূলিতে চাঁদ নামে; মিথ, জলাশয়ে
সবই সিনেমায় প্রিয়, আপন মফস্বলে
জল থেকে ওঠে স্রোত; হারায়ও তা জলে
২.
একাই হেঁটেছি ওই বনের ভিতরে।
জলের গভীরে পেয়ে আত্মঘাতী জল
ভেবেছি হৃদয় বড় সস্তা কথকতা।
পাহাড়ে মেঘেরা থাকে। পার্কে পাখিদল
সবই তো নরম দিন৷ আগুনমুখর
আকাশেতে ছুঁড়ে দিয়ে তীব্রতা-নিটোল
ঘুমের অঘোরে ঘুমে, অচেনা হিল্লোল;
গানেরা অনিবার্য গাঁথে —শব্দেতে প্রখর…
তবু তো ছন্দের ভুল, ছুঁয়ে দিয়ে হাত;
অযথা বিড়ম্বনায়, ক্ষয়ে, বিজ্ঞাপনে
দূর থেকে দেখি শুধু — আত্মঘাতী জল
পান করে গান ধরো…মেঘ চিহ্নায়নে
গান শুনি। হাঁটু কাঁপে। মনের বিভ্রমে
ওষুধ শিখেছি গানে। ঘুমে, উপশমে
৩.
বৃষ্টিপাত এখনও করুণ। পরিচিত ঠোঁটসম
হৃদয়েতে মেঘেরা জমেই, আর্তনাদ রক্তে ঘন…
ভাষাজ্ঞান যেটুকু-দুপুর, তোমাকে সন্দেহ করি
গোপনে ছুঁয়েছে নাকি কেউ, ওই বিস্তীর্ণ শরীর?
পুঁজিবাদ খুব জানি আমি; ঘাড় ধরে টেনে এনে
সিঁদুর ও দ্বার দেব। ছুঁড়ে দিয়ে চির-কামনায়
প্রেম এক ক্ষত-উৎসব। ক্লান্তিকর ভোগময়—
উরু থেকে স্রোত জাগে আজ, ভয় থেকে নিরাময়
দোষ
মাত্র কয়েকবার-ই, ঘুম ভেঙে
তোমার মুখ মনে পড়েছে আমার
ততবার, ঘুম থেকে উঠে
ফের ঘুমিয়ে পড়েছি আমি
যেহেতু, স্বপ্নে প্রতিবার
আমি জেগে উঠেছি।
জ্বলে উঠেছি৷ হয়েছি নরকগামী!
অ্যাক্সিডেন্ট
বেপরোয়া মেয়ে
লিরিক বদলে ফ্যালে…
এমন সাডেন-টেস্টে
জমে ওঠে পাপবোধ।
পিছু ফেরার দায়
দেখে লিখব? ধরা পড়লে?
অনুকরণে এসব মার্কস
ধরে রাখা যায়?
নইলে
পরে কিছু হয় না; করতে হলে আজ
যাবতীয় ভূতে পাওয়া। হাস্যকর। গ্লানি।
যাবতীয় ক্লান্তিময়, দীর্ঘদেহী কাজ
অথবা ভুলতে শেখা অবশ মুখখানি…
শিখতে হলে এখন-ই; লেখার আগে গ্রামার।
অন্যথায়, যেমন প্রেম,
আজ অবধি হয়ে ওঠেনি আমার…
“ঘাড় ধরে টেনে এনে
সিঁদুর ও দ্বার দেব। ছুঁড়ে দিয়ে চির-কামনায়”
অনবদ্য..
তোমার লেখার অন্যরকম আস্বাদ পেলাম। অক্ষরের ভিতর, নতজানু হই ❤️❤️❤️
দুর্দান্ত! দুর্দান্ত! এমনিতেই অর্ঘ্যের কবিতার ফ্যান আমি