অনুপ সেনগুপ্ত- এর কবিতাগুচ্ছ
নাম
তোমার নামের মধ্যে
মুখ ডুবিয়ে দেখি:
এখানে সবকিছুই শাদা
এমনকি, অন্ধকারও
উন্মোচন
তোমার হাঁটার মধ্যে
অন্য পথ লুকিয়ে থাকে
একটি পাখির ওড়ায়
লুকিয়ে থাকে অন্য আকাশ
সেই পথ একদিন
গোপন ডানা বের করে
সেই আকাশ নেমে আসে
তোমার পায়ের নীচে
এভাবেই অস্তিত্ব
অস্তিত্বশীল হয়
রাত্রি
নক্ষত্রখচিত টি-শার্ট পরে
রাত্রি আমার পাশে এসে বসে
আমি ওকে একমুঠো রৌদ্র দিই
দুটো স্বপ্নের মধ্যে জাগিয়ে রাখি
আর ও আমাকে অন্ধকারে, আরও অন্ধকারে
টেনে নেয়
আমাদের এক-হাত দূর দিয়ে
বয়ে যায় অন্য সময়
কোনও বাতাস অন্য বাতাস থেকে
শ্বাস নিয়ে বেঁচে ওঠে
অস্তস্পর্শ
প্রতিটি সকালের গহিনে
একটি সূর্যাস্ত অপেক্ষা করে
বিকেলের সূর্যাস্তে সে
এমনভাবে মিশে যায়
কেউ দেখতে পায় না
যে আসলে দুটো সূর্য অস্ত যাচ্ছে
মাঝে মাঝে এই অস্তস্পর্শে
আমাদের নৈঃশব্দ্যের
অনন্ত বিকেলে
সূর্যোদয় হয়
ব্যাপ্তি
আমাদের মধ্যবর্তী ব্যাপ্তি
যখন বেঁকেচুরে যায়
আমরা কাছাকাছি আসি
কিছু ক্ষত তৈরি হয়
ক্ষত ক্ষতকে ভালোবেসে কাছে টানে
এই গহ্বরে
চুম্বন ও বিদায়
দিন ও রাত্রি
ফুল ফোটা, ঝরে পড়া
সব, সবকিছু একসঙ্গে ঘটে
অবলোকন
দুটি নিশ্চুপ চোখ
দূর থেকে কাছে এসে
আমার চোখে বসে যায়
সেই নতুন চোখ দিয়ে দেখি –
তারা থেকে তারায়
কালো মেয়েটি ঘুরে বেড়ায়
আর ঘুমিয়ে পড়ে রৌদ্রশয্যায়
ঘুমের মধ্যে দিনরাত্রি মিশিয়ে
সৃষ্টি করে ঊষা ও গোধূলি
দেখি – বাতাসের উদ্বাস্তু শিকড়
আশ্রয় নেয় জলের ঢেউয়ে
যেভাবে একাকিত্ব শিকড় চারায় প্রেমে
আর সেই একাকিত্ব কঠিন হতে হতে
একদিন পাথর হয়ে যায়
কথার পর কথা যে জমিয়ে রাখতাম
বাক্স খুলতেই দেখি –
সব কথা মিলে
অমেয় নৈঃশব্দ্য তৈরি করেছে
হয়তো এই নৈঃশব্দ্য
অন্য কোনও নৈঃশব্দ্যে শব্দায়িত হবে
জীবন
অনন্ত তাড়া করলে
ঢুকে পড়ি অসময়ে
এমতাবস্থায় নদী, বাতাস, বৃষ্টি
আগুন ও ধোঁয়া
সবই নিশ্চল
শুধু সীমান্তের ওপারে
সময়ের দেশে
মৃত্যু ও সূর্যাস্তের সৌরভ ছড়িয়ে
হেঁটে যায় কেউ – কোনও জীবন
অভিযাত্রা
অতীতের উত্তরদিক থেকে
একটি প্রজাপতি উড়ে এসে
আমাকে ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে
ভবিষ্যতের দক্ষিণে
ভবিষ্যতেই রেখে এসেছি বাগান
সেখানে নিজের রূপ-অরূপের মাঝে
বিশ্রাম নেয় গোলাপ
ব্যঞ্জনার রোদ্দুর মুছে দেয়
শব্দ-কুয়াশার কুয়াশাত্ব
এখন তো ভরদুপুর
পৌঁছোতে সেই ভোর
বর্তমানে মৃত কোনও আত্মজন
তখন হয়তো শুনতে চাইবে
কতটা তীব্র হয়েছে অস্তিত্বভার
শুনতে চাইবে কতটা নৈঃশব্দ্য
রেখে আসতে হল পথে
এবার সব আমিকে মিলিয়ে
জোরে হাঁটতে হবে
অতীত এখনও মাইল দশেক