অজিত সিং বনাম অজিত সিং <br />  বিংশতি পর্ব <br />  তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
বিংশতি পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি।’ ‘বেওয়ারিশ’ গল্পের চানাচুরওলা এবার ঢুকে পড়েছে বাংলার শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষাজগতের ক্ষমতার অলিন্দে।খুন, যৌনতা, প্রতিশোধ, নিয়তিবাদের রুদ্ধশ্বাস সুড়ঙ্গে সে টের পাচ্ছে- -বহুদিন লাশের ওপর বসে বারবার হিক্কা তুলেছি আমরা -বহুদিন মর্গের ভেতরে শুয়ে চাঁদের মুখাগ্নি করেছি আমরা -অন্ধ মেয়ের মউচাক থেকে স্বপ্নগুলো উড়ে চলে গেছে (জহর সেনমজুমদার) এই সবের মধ্যে বাংলার কি কোন মুখ আছে আদৌ? থাকলে কি একটাই মুখ? না অনেক মুখ, সময়ের বিচিত্র রঙে চোবানো? বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাংলার অজস্র মুখের ভাঙ্গাচোরা টুকরো খুঁজে চললেন তৃষ্ণা বসাক, তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এ । সব কথনই রাজনৈতিক, সেই আপ্তবাক্য মেনে একে কি বলা যাবে রাজনৈতিক থ্রিলার? সিটবেল্ট বাঁধুন হে পাঠক, ঝাঁকুনি লাগতে পারে। প্রকাশিত হল উপন্যাসের বিংশতি পর্ব। এই উপন্যাসের সব চরিত্র কাল্পনিক।

২০

দোলন দরজা খুলে চমকে গেল ‘তুমি!! ফিরে এলে হঠাৎ?’
প্রদীপ্ত উত্তর দিল না।
দোলন আবার জিগেস করল ‘ভালো আছ তো? শরীর টরীর খারাপ হল না তো? পরশু তো ফিরবে জানতাম’
প্রদীপ্ত চমকে গেল।কত বছর পর এই প্রশ্ন করল দোলন। ‘ভালো আছ তো?’ একদম প্রথম দিনগুলোর মতো। দোলন কি ভালো হয়ে যাচ্ছে?
এত বছর ধরে সে ভেবেছে একদিন সকালে উঠে দেখবে দোলন ভালো হয়ে গেছে, আবার সেই আগের মতো জীবন হবে তাদের, আবার তারা আগের মতো হুটহাট বেরিয়ে পড়বে, নাই বা থাকল সন্তান, অ্যাডপ্ট করারও দরকার নেই, আর বিশ্ববিদ্যালয়ে না হোক, যেকোন প্রাইভেট কলেজে দোলনের মতো রেকর্ডস পেলে লুফে নেবে, মোট কথা, দিব্যি থাকবে তারা, মাঝখানের দিনগুলো মনে হবে সত্যি নয়, একটা দুঃস্বপ্ন ছিল, একটু দীর্ঘ দুঃস্বপ্ন, কিন্তু ওটা শেষ হয়ে গেছে, ও নিয়ে আর ভাবার দরকার নেই। কিন্তু আজ, কি আশ্চর্য, দোলন ভালো হয়ে যাচ্ছে ভাবতেই কী ভীষণ মন খারাপ হল তার। দোলন স্বাভাবিক নয়, এই অজুহাতে তাকে ঘাড় থেকে নামাবার কোন চিন্তা সামান্য হলেও কি মনে এসেছিল?
সে উত্তর দিচ্ছে না দেখে দোলন আবার বলল ‘শরীর ঠিক আছে তো? এখন চা খাবে না একেবারে ফ্রেশ হয়ে খাবে? হালকা কিছু খাবে? স্যান্ডউইচ’
প্রদীপ্ত নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। এইরকম স্বাভাবিক সংলাপ সে কতদিন শোনেনি, কতদিন ভাত বাড়া তো দূরের কথা, এক কাপ চা করেও দোলন তাকে দেয়নি। কাজের লোক না থাকলে সে-ই করে এসব। তার মনে হল দীর্ঘকাল সে দোলনকে ফেলে কোথাও যায়নি। হয়তো এই কদিন সে না থাকার ফল ভালোই হয়েছে, দোলন তার মূল্য বুঝতে পেরেছে।কে যেন বলেছিল দূরত্বে টান বাড়ে! কিন্তু সেটা এই মুহূর্তে তার একটুও ভালো লাগল না কেন কে জানে!
সে জুতো খুলতে খুলতে বলল, ‘এক কাপ চা পেলে তো ভালই হয়।না, না আর কিছু লাগবে না। একেবারে ভাত খাব’ বলেই সে কাচা পাজামা নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। ফিরে এসে কী পরবে, সব সে ঠিক করে রেখেই গেছিল। অনেক আগে হয়তো দোলন তার গেঞ্জি পাজামা গুছিয়ে রাখত, সেসব এখন আবছা হয়ে গেছে। চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিতে দিতে বাথরুমের আয়নায় নিজের ঘাড়ের ওপর সেই আশ্চর্য মুখটা ভেসে উঠতে দেখল। কাননবালা! জামের মতো ত্বক, পাহাড়ি নদীর মতো ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া শরীর। সুখ, চরম সুখ, বহু বছরের উপোসী শরীরে।কাননের জাম রঙের স্তনে মুখ রেখে সে বৃষ্টি দেখেছে। উৎকল ইউনিভার্সিটির গাঢ় সবুজ ক্যাম্পাসে বৃষ্টি যেন তাদের আড়াল রচনা করেছিল। একটি দুপুর আর একটি রাত তারা হারিয়ে গিয়েছিল বৃষ্টির আড়ালে। এ বড় আশ্চর্য ব্যাপার যে তাদের শরীর কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই নিজেদের খুঁজে নিয়েছিল। তার এখন মনে হয়, আলাপ পরিচয়, কোর্টশিপ এগুলো স্রেফ চোখকে ধুলো দেওয়া, সমাজের চাপানো কৃত্রিম জিনিস এগুলো। প্রেম ভালবাসা সব ভাটের জিনিস। জীবনের খাঁটি জিনিস হচ্ছে এই শরীর। অথচ শরীরের কথা কেউ উচ্চারণই করে না, ভয় পায়, বুঝি তাদের ঢোকার টাটি ধসে পড়ল। প্রেম যদি হয়ই, তবে তা হয় শরীরে শরীরে। যখন শরীরের জোড় খুলে আসে, তখন স্রেফ তেতো বিরক্তি পড়ে থাকে, তখন সেই মৃত জিনিসটাকে ভালবাসা, বন্ধন, মায়া এসব নাম দিয়ে জীবন্ত দেখাবার চেষ্টা ছাড়া আর কি। হ্যাঁ, সে কাননের শরীরকে ভালবেসেছে, বেশ করেছে। আবার দেখা হলে ওর শরীরকেই ভালবাসবে, বেশ করবে। ওর দিক থেকে কোন আনুগত্য, দায়বদ্ধতা তার চাই না। সেও কাননকে এইসব ঢপের জিনিস প্রমিস করেনি। কাননবালার শরীরে কেমন নোনতা স্বাদ পেয়েছে সে। সে কি সমুদ্রের মৎসকন্যা? নাকি সে সমুদ্রের দেবী, যারা ঝড়ের রাতে অসহায় মাঝিমাল্লাদের প্রাণ বাঁচায়? প্রদীপ্তও তো অসহায়, কতদিন থেকে ঝড়জলের মধ্যে দিয়ে নিজের জীবন তরী একাই বেয়ে চলেছে। দোলন থাকা না থাকা সমান। বরং না থাকলেই… তার হঠাৎ একজনের কথা মনে পড়ল। সে, সেই পারে তাকে দোলনের হাত থেকে মুক্তি দিতে, সেই পারে তাকে সুখের ঠিকানায় পৌঁছে দিতে। সোমবার ইউনিভার্সিটি গিয়েই অজিতের সঙ্গে দেখা করতে হবে। দোলনকে যে করে হোক লেকচারারশিপে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই তার ছুটি। প্রদীপ্তর কাছে খবর আছে একটা লেকচারারের পোস্ট আছে। ওরা চাইছে এটা নট ফাউন্ড সুটেবল, এন এফ এস করে পোস্টটা জেনারেল থেকে রিজার্ভড করে দিতে। যেটা করে দিতে পারলে দোলনচাঁপা ধর আর কোনদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারবে না।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে প্রদীপ্ত দেখল দোলন চা আর কুকিজ সাজিয়ে বসে আছে, নীল একটা কাফতান পরে আছে দোলন, স্নান হয়ে গেছে মনে হচ্ছে দেখে, কী স্নিগ্ধ সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে। বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যথা করে উঠল। দোলনকে ছেড়ে যাওয়া কি এত সহজ হবে? চায়ে চুমুক দিয়ে প্রদীপ্ত বলে ‘কাজের মাসিরা ঠিকমতো এসেছে? আমি না থাকায় কোন অসুবিধে হয়নি তো?’
দোলন সে কথার উত্তর না দিয়ে উচ্ছসিত গলায় বলল
‘বিদিশা, বিদিশা আমাকে এত দিন পরে মেল করেছে, বুঝলে? ওর সঙ্গেও একইরকম করেছিল, ও আর পেছনে তাকায় নি, এখানে পড়ে পড়ে রক্তক্ষয় না করে বিদেশ চলে গেছে। লাইনই বদলে ফেলেছে।’
বিদিশা নামটা শুনে প্রদীপ্তর মাথায় কিছু ক্লিক করল না। সে শুখনো গলায় বলল ‘কে বিদিশা?’

দোলন যেন শুনতেই পায়নি এমনভাবে উঠে গিয়ে ল্যাপটপ খুলে বসল, মেলে সাইন ইন করে সে বিদিশার মেলটা পড়তে শুরু করল। এটা কি চিঠি? নাকি নিজের সঙ্গেই কথা বলেছে বিদিশা?-

‘Human life occurs only once, and the reason we cannot determine which of our decisions are good and which bad is that in a given situation we can make only one decision; we are not granted a second, third or fourth life in which to compare various decision.
History is similar to individual lives in this respect. There is only one history of the Czechs. One day it will come to an end as surely as Thomas’s life and never to be repeated.

গূঢ় মফস্বল।সদাব্রত ঘাট ছাড়িয়ে একটু গেলে কীর্তনখোলা শ্মশান।তবে মহাপ্রভুই যে এখন ধুলো তা বেশ বোঝা যায় ওরই পাশে পড়ে থাকা মহাপ্রভুতলায় গেলে। রাজ্যের চোর, ভিখিরি, প্রাচীন কর্মহীন বেশ্যারা ভিড় করে যেখানে। আনাজ কেটে স্তূপাকার হচ্ছে, একবেলা খিচুড়ি আর লাবড়া সাপটে নেওয়া যাবে, ও বেলা না হয় জল খেয়ে… ফলসা, লিচু, আঁশফল, গাছে সবুজ অন্ধকার ঘিরে থাকে যে মফস্বল। কিন্তু তার দেওয়ালগুলো দগদগে লাল। এত বিরূপতা সে লালের, যে তাকাতে পারি না।অথচ লাল তো সর্বত্র। শুধু মূল সড়ক নয়, পাড়ার গলি-ঘুঁজি দিয়ে প্রায়ই যায় মিছিল। ছেলেরা একা নয়, মেয়েরাও থাকে সেসব মিছিলে। কেমন খয়া-খপ্পুরে, গামছা নেংড়ানো চেহারা তাদের। অপুষ্টি কেড়ে নিয়েছে শ্রী। ওদের ডাকা হয় ‘পার্টি করা মেয়ে’। একবার আমাদের এক চেনাশোনা কম্যুনিস্ট পরিবারে বাড়ির সবচেয়ে রূপবান ছোট ছেলেটি তেমন এক পার্টি করা মেয়েকে বিয়ে করে আনল। খুব রেখে ঢেকে বললেও, মেয়েটি বড় কুশ্রী। আমরা দেখতে পেলাম দরিদ্র ঘর থেকে আসা, অসুন্দর সেই মেয়েটিকে পদে পদে কীভাবে অপমানিত হতে হচ্ছে সেই সাম্যবাদী পরিবারে, প্রান্তিক মানুষের মতো সে বেঁচে রইল, এমনকি তার প্রগতিশীল স্বামীও তাকে উপেক্ষা করত।
আহা, সেই অকালে বুড়িয়ে যাওয়া মেয়েটি, মেয়েগুলো- যে কোন অনুষ্ঠানের শুরুতেই যারা গাইত ‘সাথিদের খুনে রাঙা পথে পথে হায়নার আনাগোনা’ সেইসব মিছিলে একই কথা বারবার, একইভাবে মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশে ছোঁড়া! কেমন বমি পেত আমার। সবার মাথা দুরমুশ করে সমান বানাবার এই পদ্ধতিটা চূড়ান্ত বোকা বোকা লাগত। তাই আমার বুঝতে অসুবিধে হয় না কুন্দেরার এই উপন্যাসের সাবিনা, চিত্রশিল্পী সাবিনা কেন মে দিবসের প্যারেড থেকে পালানোর জন্যে শৌচালয়ে লুকিয়ে বসে থাকত। তার অস্বস্তিটা রাজনৈতিক নয়, বিশুদ্ধ সৌন্দর্যবোধের। সেই সৌন্দর্যচেতনায় কোন চরমপন্থার স্থান নেই।
Extremes mean borders beyond which life ends and a passion for extremism, in art and in politics, is a veiled longing for death.

সাবিনা আসলে বলতে চাইত ‘Behind communism, Facism, behind all occupations and invasions lurks a more basic, pervasive evil and that the image of that evil was a parade of people marching by with raised fists and shouting identical syllables in unison’

এক কথা, এক শব্দ –‘নিপাত যাক’ ‘কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ ‘চলছে না চলবে না’ ‘মানছি না, মানব না’ শুনতে শুনতে আমরা বড় হলাম, দেখলাম প্রতিমার খড়ের পা, দেখলাম ডান কিংবা বাম, যে যায় লংকায়, সেই হয় রাবণ। আর বিশ্বায়িত দুনিয়ায় রাবণের সহস্র মুণ্ড। যেদিকেই হাঁটি, গ্লোসাইন হোর্ডিং থেকে সেই মুখ তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। দেওয়ালের লেখায় এখন নিপাত যাক–র বদলে মা-মাটি-মানুষের ক্লিশে। বিজ্ঞাপনের রাবণ মাঝে মাঝে দু-একটা নতুন বুলিও বার করে। ‘ভি সি কে O L X-এ বেচে দাও।’ মজা লাগে। কলরব কোলাহলের মিছিলের সামনের সারিতে জিন্স-টী শার্টে উজ্জ্বল তরুণীরা। হঠাৎ তারা ফেড আউট হয়ে যায়, দেখি অন্ধকার গ্রাম মফস্বলের মঞ্চ জুড়ে একটা মান্ধাতার হারমোনিয়াম, তার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে ক্লান্ত, অসুন্দর, ছাপা শাড়ি আর শক্ত বিনুনির একদল মেয়ে শির খিঁচিয়ে গাইছে ‘সাথিদের খুনে রাঙা পথে পথে হায়নার আনাগোনা’

আমার চাকরিতে আমি সুখী ছিলাম না দোলন। তুইও ছিলি না। আসলে আমাদের মানুষ করার মধ্যেই একটা ত্রুটি ছিল রে। আমাদের বড্ড ভদ্র আর নরম করে মানুষ করা হয়েছিল, এই বাংলায় একজন অরাজনৈতিক মানুষ হিসেবে, একজন যোগাযোগহীন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার, উঠে দাঁড়ানোর, পালটা মার দেওয়ার জন্যে যে মানসিকতা দরকার, আমাদের রাবীন্দ্রিক মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক গ্রুমিং আমাদের তা দিতে পারেনি, তাই আমরা দুজনেই ভেবেছি ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে অ্যাকাডেমিক্সে আসব। আমরা ভাবতেও পারিনি, এখানে আরও বড় বড় ভয়ঙ্কর হাঙর, কুমীর অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্যে। আমার তো কমফোর্ট জোন ছিল বই। তোরও তাই, তবে আমার পড়ার বই ছাড়াও অন্য জগত ছিল। প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিল চাকরি ছেড়ে গবেষণা করতে। মনে হত গবেষণার জগতটা তপোবন টাইপ। তাই সাদা চুলের মনোজিত কুমার মাল, এম কে এম কে ঋষিকল্প মনে হয়েছিল প্রথম দেখায়। আমার আবার অন্য সমস্যাও ছিল। ছোট থেকেই তো নানা দিকে টান। শুধু টান নয়, ক্ষমতাও। অংকেও যতটা ভালো, বাংলাতেও, ফিজিক্সে যতটা ভালো, ইংরেজিতেও। তাই যেকোন লাইনেই যেতে পারি, এই ফ্লেক্সিবিলিটিটাই আমাকে কোথাও যেন অস্থির করে তুলেছিল, যদিও এর মধ্যে একটা গভীর ঘন নোঙর ছিল আমার, খুব ছেলেবেলা থেকেই মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম সেটা। কিন্তু সেটা যে পূর্ণ সময়ের পেশা হতে পারে, তা ভাবিনি কখনো। কেই বা ভাবতে পারবে যে মেয়ের অত ঝকঝকে রেজাল্ট? জয়েন্টে ডাক্তারি এঞ্জিনিয়ারিং একসঙ্গে পেলাম, মার জন্যে ডাক্তারি পড়া হল না, মা চায়নি আমি হস্টেলে থাকি, যেন মেয়েকে চিরদিন আঁচলের তলায় রাখতে পারবে। সেই আমিই কতদূরে চলে গেলাম, মার মৃত্যুর সময়ও আসতে পারলাম না। মার ইচ্ছেয় ডাক্তারি পড়া হল না, যদিও মেডিকেল কলেজে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ধৃতিদীপা লাহিড়ী বলে একজনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, উত্তরবঙ্গের মেয়ে, এত ভাব হয়ে গেল যে ঠিক করে ফেলেছিলাম ডাক্তারিই পড়ব, সেদিনই ভরতি হয়ে যেতাম, কিন্তু কাউন্টারের লোকটা বলল আগে ইঞ্জিনিয়ারিংর টা ক্লিয়ার করে এসো, অনেকে দু জায়গায় ভরতি হয় কিনা, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে আমার যে কী হল, ক্যাম্পাসটার প্রেমে পড়ে গেলাম। আর মনেই রইল না ধৃতিদীপার কথা, ওকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি, দুজনে একসঙ্গে মেডিকেল পড়ব, হস্টেলের এক রুমে থাকব। কেন থাকল না? জীবন এমন হঠাৎ হঠাৎ বদলে যায় কেন? বলতে পারিস দোলন?
এই ক্যাম্পাসে এসেও যখন আমাদের ডিপে ঢুকলাম, কেমিকাল, আর্কিটেকচার ছেড়ে এই নতুন স্ট্রিমটায়, এসে দেখলাম, তুই একমাত্র মেয়ে, আমার একটু সংকোচ ছিল, তুই কেমন ভাবে নিবি আমায়, আমি কলকাতার নই, মফস্বলের মেয়ে, কিন্তু তুই, একমাত্র তুইই আমাকে আপন করে নিলি, তুই আমাকে গড়িয়াহাট চেনালি, গোলপার্কের ফুটপাথ থেকে বই লোন নেওয়া যায়, সেটাও তো তোর জন্যেই জানতে পারলাম, সোনালি বলে একটা সাউথ ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট ছিল মনে আছে? দারুণ দোসা বানাত, তুই নিয়ে গেছিলি আমাকে। আর একবার এক বাবাঠাকুরের কাছে, মৌচাকের পেছনে, আমাকে দেখে বলেছিলেন, ‘তোমার মধ্যে অসম্ভব শক্তি আছে, জাগাও’। আমার প্রথমে বিচ্ছিরি লেগেছিল, এইসব বাবাঠাকুর টাকুর, হাত জোড় করে বসে থাকা, আমি মাথা নিচু করতে শিখিনি তো, কিন্তু বহু পরে একদিন স্বপ্নে দেখেছিলাম ওঁকে, সেসময় আমি প্রায় ভাঙ্গাচোরা একটা মানুষ, বিরাট শক্তি পেয়েছিলাম জানিস। কিন্তু তাও আমি এগুলো মানতে পারি না। কেন বলতো? কারণ এই তত্ত্ব গুলোর বিজ্ঞানে ব্যাখ্যা নেই বলে নয়, কারণ এই লাইনে সব বুজরুকেরা ঘোরে জানিস। সেই যে একবার তোর মা তোকে একজনের কাছে নিয়ে গেছিল। ভবানী শাস্ত্রী না কি! সে তো তোকে আরও খাদের দিকে ঠেলে দিল। পরে শুনেছি আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে তার ওঠা বসা। আর একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস শুনেছিলাম ওই লোকটাকে নিয়ে, এখুনি মনে পড়ছে না। মনে পড়লে বলব। যাক এখন যা যা মনে পড়ছে বলি। ঢপের চপ। এটা যে আদৌ চপ নয় খেতে গিয়ে বুঝি। একটা ফুচকার মধ্যে আলুর দমের আলু, ইয়া বড়, ঝাল ঝাল, যদিও আমি তোর মতো এত ফুচকা প্রেমী নই, তবু দারুণ লেগেছিল খেতে। তুই চিনিয়েছিলি। আর ক্যাম্পাসে পাঁচিলের গায়ে পুরনো বইয়ের দোকান গুলো, টাইপরাইটার নিয়ে বসে থাকা লোকগুলো, ফাইনাল ইয়ারের প্রজেক্ট টাইপ করাচ্ছি দুজনে একটা টুলে বসে। একদিন ঝিলপাড়ে বসে আছি দুজনে, দুটো ছেলে আওয়াজ দিয়ে গেল ‘মালদুটো হোমো নাকি?’ সব পালটে গেল তোর জীবনে প্রদীপ্তদা আসার পর, আমি ফেড আউট হয়ে গেলাম, একা হয়ে গেলাম, ছেলেগুলো তো বরাবর ট্রোল করে গেল আমাকে, আর আমি যাকে চাইলাম, সে তো আমার দিকে ভালো করে তাকালই না!

চমকে ওঠে দোলন। হাজার জিজ্ঞেস করেও বিদিশার কাছ থেকে জানা যায়নি ওর কোন বিশেষ জন ছিল কিনা। কে সে?

(ক্রমশ)

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes