অসীম মণ্ডলের কবিতাগুচ্ছ
কবিতা কথামৃত
১
বহুদূর যেতে চাই
যেখানে মাটির গন্ধে মেতেছে সাগর
নদী ছুঁয়ে ফেলে তোমার চিবুক
নেমে গেছে পায়ে পায়
বহুদূর হেঁটে যাবো
যেখানে সময় হয়েছে মেদুর
বালির চড়ায় বাঁধা নৌকাখানি
হাতছানি সুদূর
হেঁটে যায় সংসার
সাধের ঘর
জোয়ারের জল
আমাদের আদরের কাগজের নৌকা
উথাল পাথাল
চল
২
কেউ থাকে না
কেউ কথা রাখেনি
কেউ কথা রাখে না
কেউ কথাকে রাখে না
কেউ আসে না
বেলে মাছের মত চুপিসাড়ে
বেলা নেমে আসে
পুরীতে
এই সামুদ্রিক বালুকা তটে
বৃষ্টি মেঘের ছটা প্রিজম আলো ভাঙে
ক্যানভাস
বুকের ভেতর মেঘ সমুদ্র রঙা
শ্রাবণের গান শোনায়
বাদলের ধারা
ভিজুক চড়ুই আর ভিজুক আমি পাখি
উড়ছে হাওয়ায় নতুন আলোয়
নারকোলের পাতা চুঁইয়ে পিছলে যায়
সুগভীর জগন্নাথ সংস্কৃতি
আকুতি
৩
আমরা সবাই একদিন প্রাচীন হব
আমাদের মৃত হাড়গোড় পড়ে থাকবে
এদিক ওদিক ছড়ানো ছিটানো
শ্রাবণের বিকেলের স্মৃতির মতো
আজ বৃষ্টি নেমেছে
ইছামতির বুকের উপর টিপ টিপ
খেয়া নৌকার মাঝি নেই
নোঙর খোলা
দুলছে বর্ষা হাওয়ায়
ঘাট হতে ঘট ভেসে চলে যায়
কালো মেঘের আড়ালে
ভেজা নদী আর নৌকা অভিসারী
আজ বেস্পতিবার
জেলেরাও নেই
ইছামতি ভাঙনের গান শোনে
খেয়া নৌকার কোলের ভেতর
ধারাপাত
৪
এক এক দিন কম কাজ হলে
মানে ওই দৈহিক ক্লান্তি কম হলে
রাতে ঘুম আসে না চোখে
জেগে থেকে সাত পাঁচ কতকিছু ভাবি
বৈঠকখানার ভেতর কতো রাস্তা গেছে চলে
ডাইনে বাঁয়ে
আবার কোথাও বা একটা ঘরের ভেতর
হাজারখানা ঘর
বেডরুম ড্রয়িংরুম সব একাকার
দেওয়াল নেই তাই জানলাও নেই কোথাও
সবাই হাঁটছে
এইতো কয়েকটা বোমারু বিমান নামলো
পশ্চিমের বারান্দা দিয়ে
বুকসেলফকে পাশ কাটিয়ে
সটান রান্নাঘরের সিঙ্কে
তারপর খাবি খেতে খেতে হারিয়ে গেলো
শ্যাম্পুর বোতলে
নামটা অস্পষ্ট
ভোরের দিকে মাথার উপর সিলিংটাকে
ফুটবলের মতো হেড করলাম
এখন সিলিং আমি ফুটবল তিনজনে
শুয়ে আছি
সাদা তুলতুলে দুধের ফেনার মতো
বালতির ভেতর
এক অপসৃয়মান আলোয়
ঘুম আসে
বড়ো ক্লান্তিকর অশালীন অশ্রাব্য ঘুম
এই জেগে থেকে থেকে
এক অপরিসীম প্রশ্রয়ে
৫
কর্ম
রবিবার
বন্ধুর বাইকে সওয়ার বাইপাস
পিঠে কাঁঠাল সংসার
কথামৃতকার
অপেক্ষা
রবিবার
ব্যবসাদার বাইকে সওয়ার বাইপাশ
উল্টানো পিছনে বাঁধা সারসার
ব্রয়লার চিকেন পরিবার
যাত্রা
রবিবার
স্বর্গ বাইকে সওয়ার বাইপাস
ধুনো ফুল চন্দন এপার ওপার
এক নিঃসঙ্গ অসহ সওয়ার
মোক্ষ
রবিবার
স্বর্গদ্বার বাইপাস সওয়ার
রথের রশিতে পড়ে টান এবার
শিশুদের খেলনার
৬
অনেক মন খারাপি অন্ধকারকে বালিশ বানিয়ে শুয়ে পড়ি
মশারির ভেতর সাজিয়ে নি রেলগাড়ি সময়কে থরে থরে
গাছেরা সরে যায় পদব্রজে ধানের মাঠে শাপলার জলে
ধীর লয়ে বয়ে চলে কালিন্দির ঢেউ পরপারে আলো ছায়ায়
কতদিন কেটে গেছে
কতদিন কেটে গেছে এই কলকাতায় কায়দায় গলিতে
গাঁয়ের রাজপথ নেমে যায় উঠোনের মাঝে তুলসির তলায়
আজানের আওয়াজ অ্যালার্ম বেলের মতো বাজে শিশুদিন জুড়ে
তবুও হারায় যা কিছু হারানোর যতনে অযত্নে ক্ষয়াটে চাঁদের মতো
সবই ফুরায় আমাদের
সবই ফুরায় আমাদের কঙ্কাল সব গুনে নেয় আঁধারের বন্দর
ভাঁটির টানের ঘর ভেসে যায় কচুরিপানা আলো মেখে
নীলাভ পাখির পেট জেগে থাকে নীড়ের ভেতর ডিমের উপর
তবুও মনে পড়ে
তবুও মনে পড়ে সেই সব গাঢ় দিন গোটা গোটা
সুন্দর হস্তাক্ষরের মতো আজ মলিন
আভা নেই
বাঘের চোখের মতো অন্ধকারে অরণ্যের মাঝে
নরম নরম তার পশমি আলাপ
বালিশের খোলে
তবু মনে পড়ে
৭
আজ এই রাতের শেষে
ঘুম আসে ঘাটের কিনারে
ঢেউয়ের মতো
কোনো এক মাছপরীর চুলের নোনা গন্ধ ভাসে বাতাসে
ছোটো ছোটো পায়ের খোদল
যতি চিহ্নের মতো
কবিতা আঁকে পাঁকে
মরমিয়া তীর ভাসে আলোর পুতুল যেন
বিজয়ার গাঙে ভাসে সাধের কলস
শূন্যহীন শব্দহীন ঝুরির মতো