দীর্ঘ কবিতা <br /> উপনিবেশের দিকে  <br /> পার্থজিৎ চন্দ

দীর্ঘ কবিতা
উপনিবেশের দিকে
পার্থজিৎ চন্দ

উপনিবেশের দিকে

সে কবে দেখেছি গথিক-গির্জার চূড়া ফুড়ে চলে গেছে নরকের মেঘ
ড্রাকুলার হাসি নিয়ে নেমেছে সন্ধ্যা। খামারবাড়ির দিকে ভেসে আসছে
সমুদ্র বাতাস, কাঠের গেটের কাছে দুলে উঠছে লতানে গাছের সার
কেন সেই গেটের সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে আমি দেখতে পাইনি
পিয়ানোর কাছে বসে কোনও তীব্র করসেট, বুক চেপে বাঁধা
আছাড়িপিছাড়ি করা সমুদ্রের ঢেউ, সার্ফ, বুদবুদ যেন ক্ষণিকের
অভিমান রেখে চলে যাচ্ছে, ফুরিয়ে আসছে জীবনের মায়া
মায়ার ভিতর ছোট টমটম, ভোরবেলা ঘাসে ঢাকা
ঢালু জমি বেয়ে উঠে যাচ্ছে শুয়োরের ছানা, দুধের ফেনার মতো
ভোর, আশ্চর্য ভোরের দিকে ডেকে উঠছে মোরগের দল
ভেড়ার পশমে লেগে থাকা মায়া… কেন আমি দূর গির্জার থেকে
একা একা ফিরে আসবার সন্ধ্যাবেলায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থেকেছি
অন্ধকার-মাখা আটপৌরে বাড়ির সামনে। হাওয়া ছুটে এসেছিল কেন?
কেন বারবার ছুটে আসে আর কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে তোলে
অচাডের তুমুল বিষাদ, পাতাবাহারের ঝোপে ঝরে পড়ে
বৃষ্টির ফোঁটা। কারা যেন কথা বলে ঘরের ভেতর, বৃষ্টি ও
ফসলের কথা। কারা যেন আগামী মাসের শেষ রবিবার
প্রার্থনার শেষে পনেরো মাইল দূরে আত্মীয়ের বাড়ি যাবে বহুদিন পর
মৃদু ল্যাম্পের আলোয় তাদের অপার্থিব দেবদূত কিন্নর-কিন্নরী মনে হয়
পুরানো মোজার ফুটো মেরামত করছে মেয়েরা, জ্যাকেটের ধূসর বোতাম
গড়াতে গড়াতে চলে গেল ড্রেসিং-টেবিলের দিকে। মনস্টার…
ভয়ানক মনস্টারের গল্প শুনছে সাত-আট বছরের ছেলে
আমার মাথার কাছে ভেসে ওঠা মনস্টার মেঘ, বৃষ্টি নামে
অঝোর ধারায়। চামড়া ভেদ করে শৈত্যপ্রবাহ ঢুকে যায় হাড়ের ভেতর
আমি জানি, আমি একটু একটু করে বুঝতে শিখেছি আমার স্নায়ুর
ভেতরে বেড়েছে অন্য রকম এক সাপ। এই বৃষ্টি আর বরফকুচির দিনে
সেই সাপ নড়েচড়ে ওঠে। আমি দেখি আটপৌরে বাড়ির সামনে
আধ-ভাঙা ঘোড়ার গাড়ির চাকা, সন্ধের চুলা আর বৃষ্টি-গন্ধের
মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া একটি রাস্তা শেষ হল জেসাস-মূর্তির কাছে
গরীবের দেয়ালে ঝোলান ভাঙাচোরা ক্রুশকাঠ, টপটপ করে রক্তের ফোঁটা
মেঝেতে পড়ছে আর গড়িয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে, সেখানে অনেক
বাণিজ্য-জাহাজ, যাজক-জাহাজ; প্রতিটি নাবিকের হাতে ক্রুশকাঠ
প্রতিটি বণিকের হাতে ক্রুশকাঠ। কোনও-কোনও রবিবার আমি
গির্জাতে যাই, শুনি পাথরের ফাঁক থেকে কে যেন বলছে, লেটস
দেয়ার বি লাইট… জ্বলে উঠছে আলো উত্তমাশা অন্তরীপে, পেড্রো পুঁতছে
কারা ভারত ভূ-খণ্ডে। আমার মাথার একটি হেমিস্ফিয়ার থেকে
আরেকটি হেমিস্ফিয়ারে রহস্যজনক গুহাপথ আছে, এই
বৃষ্টি আর বরফকুচির দিকে গোলার্ধ বদল ক’রে সাপ
মনে পড়ে যায় সেই কবে থেকে আমাকে তাড়িয়ে ফিরছে এই সাপ;
যেন ঘুমন্ত আমাকে কোনও নির্বান্ধব দ্বীপে ফেলে রেখে চলে গেছে
আত্মীয়-স্বজন। ঘুম ভেঙে দেখেছি শার্কের ছায়া জলের কিছুটা নীচে
স্থির হয়ে আছে, ভাবতে চেষ্টা করেছি কারা ছিল আত্মীয়-স্বজন
কাদের সঙ্গে আমি শুনতাম চার্চে ঘণ্টা বাজছে, মায়াবী ক্যারল
নভেম্বরের বনে সিলভার বার্চ, ওক, হথর্ন, হ্যাজল… পাতা ঝরানোর বনে
আমরা ক’জন ভাইবোন পাইরেট… খেলা শেষ হ’ত, সে নিশ্চয়
কোনও গতজন্মের সন্ধেবেলায়। বাবা থাকতেন দূরের শহরে,
সে এক আজব শহর, সেখানে সন্ধেবেলায় লোকে নাটক দেখতে যায়
রাস্তায় মানুষের ভীড়, ক্যাথিড্রালের মাথা ছুঁয়ে থাকে
আকাশ-চাঁদোয়া, গতজন্মের সন্ধেবেলায় বাবা ফিরতেন ঘোড়ার গাড়িতে চেপে
তিনি নামতেন আর মনে হত যেন কোনও এক দেবদূত, যেন
কোনও রাব্বি বেড়াতে এসেছে আজ স্টেক-এর বাড়িতে। আমাদের
স্টেক-এর বাড়িতে উৎসব, করিডোরে বুটের শব্দ, বাবা আমাদের গা’য়ে
ও মাথায় হাত বোলাতেন, পড়শিরা উঁকি মেরে যেত, আমাদের মা-
ভাই-বোনেদের জন্ম দিতে দিতে যার রক্ত শুকিয়ে এসেছে- যার
গাউনের ফাঁকে আমি ঘুরতে দেখেছি ভয় আর এক আজব সংশয়
আমাদের ঘুম পাড়িয়ে দিতেন বড় হল ঘরে। ঘুমের মধ্যে
আমরা বুঝতাম উৎসব শেষ হল বিশাল বাড়িতে,
যে ছিল সন্ধের দেবদূত তার মাথার ভেতর ঢুকে যেত দানবের ছায়া,
করিডোরে, শুনতে পেতাম আছড়ে পড়ছে মদের গেলাস
যেন কোনও হ্রদ থেকে উঠে এসে প্রাচীণ গোসাপ
তার লেজ আছড়ে চলেছে। কয়েকটি শান্ত মুহূর্ত। তারপর
আবার নিয়ম করে ক্রদ্ধ গর্জন, মাতালের তীব্র প্রলাপ আর
ফোঁপানো কান্না…। অথচ সকালে কারা যেন সরিয়ে ফেলত
সে সব কাচের টুকরো, টুকরোর গায়ে লেগে থাকা হালকা রক্ত
আমাদের পরিচ্ছন্ন ফলের বাগানে ভেসে আসত পড়শিদের
ঘোড়া, গিনিপিগ, নধর-শুয়োর, আর কুকুরের বিষ্ঠা-গন্ধ
এক লহমায় আমার বুকের মধ্যে ঢুকে যেত সকালের কাক ও
পায়রার বকমবকম। হাওয়া মোরগের মুখ ক্রমশ ঘুরেছে
কান্ট্রি-হাউসের মাথার উপর, চিমনির ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে গেছে
জলকণাদের ঘ্রাণ, মায়ের অশ্রু, আর বাবার মাথার থেকে
একখানা সাপ, আদি-পুস্তক থেকে উড়ে এসে একখানা সাপ
ঢুকে যেত আমার মাথায়। আজ এই নির্বাসিত দ্বীপের জীবনে আমি
নিজেকে কামড়ে সব বিষ উগরে দেবার প্রণালী চালাই, ভাবি
কারা ছিল আমার আত্মীয়-স্বজন;
কারা…
কারা…
কারা?
কেন একাধারে আমার ভিতর তীব্র বিষাদ আর স্ফূরিত শয়তান –
এক সঙ্গে পাতাঝরা বনে বেড়াতে বেরোয়! সেই স্টেক-এস্টেট থেকে
এই ম্যানচেস্টার কত দূর? কত দূরে নিয়ে এসে
আমাকে আপাদমস্তক বেঁধে আরব-ম্যাজিকের মতো বলা হয়েছিল
ওড়ো, এই জাদুকার্পেট, ওড়ো আর উগরে উগরে ফেল
তোমার দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা বিষ

!!

স্কুলগুলি পাথরের থেকে ভারী, মাস্টার ড্রাকুলা। সারা ম্যানচেস্টার
রোদ ঝলমলে দিনে রাস্তায় নেমে আসে, খোলা, নোংরা, উপচে পড়া
ড্রেনের এক পাশে শুয়ে থাকে আমুদে-মাতাল, ম্যানচেস্টারে এসে
আমি প্রথম গরীব দেখেছি, নোংরা জ্যাকেট, ছেঁড়া পাতলুন
খনি আর সুতোকল, সার-সার মজুরেরা সকালে বেরিয়ে পড়ে,
যেন পিপড়ের দল চলেছে খাদ্য-সন্ধানে। বস্তা-বস্তা
উল আসে, বাহারি পোশাক সারা ইউরোপ ছোঁ-মেরে তুলে নেয়,
খনির ভেতর ধস নেমে মরে যায় যারা ‘তাদের আশ্রয় স্বয়ং
মা-মেরি’র কোলে হইয়াছে’ বলে যাজকেরা বিড়বিড় করে
আমেন শোনায়। শুধু স্টেক-এস্টেট আর ম্যানচেস্টারে একটি বিষয়ে
অদ্ভুত মিলঃ যারা জন্মায় তাদের অনেকে যেন শরতের শেষে
খামারবাড়িতে বেড়াতে এসেছে। তড়িঘড়ি করে বাড়ি ফিরে যেতে হবে
এমন দ্রুততায় মরে যায়। আমার ছয় ভাইবোন, এভাবেই
চলে গিয়েছিল। এখানেও প্রায় প্রতিদিন দেখি শাদা কাপড়ে জড়ানো
শিশুটির দেহ নিয়ে রাস্তার এক পাশ দিয়ে বাবা যায় কবরের দিকে
গলির ভেতর সূর্য ঢোকে না, সেখানে মৃত্যু ঢোকে। কত কিসিমের
মৃত্যু আয়োজন, আর এর মাঝখানে আমাকে সকাল থেকে রাত
খ্যাপা-কুকুরের মতো তাড়া করে ফেরে দু’টি চোখ। মা’র স্নেহ থেকে
আমাকে উপড়ে এনে মাসির নরম কোলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে আছেন
মাসির দয়িত, ডানিয়েল; আমি এক একটা স্কুল ছেড়ে চলে আসি
আর ডানিয়েল মুচড়ে দেয় আমার কবজি। ড্রাকুলা মাস্টার চিঠি লিখে
অভিভাবকের সাক্ষাৎ চান। আমিও জানি না কেন যে আমার মাথায়
খুন চেপে যায়, রক্ত উঠে যায় রগে, স্কুলের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলে
শুনি ভ্যাম্পায়ার ডানা ঝাপটাচ্ছে এখানে-ওখানে।
একদিন ভোঁতা-মুখ তেলের পিপের মতো নাদুসনুদুস, চেয়ারে ঘুমন্ত
মাস্টারের মুখে ছুড়ে দিয়েছিলাম কাগজের গোলা…
বেত খেতে খেতে জুটে গেছে বন্ধু আমার
একদিন অবিকল শেয়ালের ডাক ডেকে ভাঙিয়ে দিয়েছি দুপুরের নিস্তব্ধতা
বেত খেতে-খেতে জুটে গেছে বন্ধু আমার, দুপুর গড়ালে
ঘুরে-ঘুরে চিহ্নিত করি কারা-কারা বন্ধু আমাদের, কোন দোকানদারেরা
নিয়ম মানে না… আমাদের বিনা পয়সায় টফি’ও দেয় না
ক্যাঙারু কোর্টের বিচারে নিখুঁত পাথরের ঘায়ে
ঝনঝন করে ভেঙে পড়ে কাচের শো-কেস, মাথা ফাটে বিরুদ্ধ গ্যাং-এর
শহরের সব থেকে উঁচু গির্জার বেলফ্রে টাওয়ারে ওঠবার নেশা চেপে যায়
ইচ্ছা করে তাকিয়ে দেখতে খনি আর কাপড়কলের সার বুকে নিয়ে
মরা-শ্যাওলার মতো এ-শহর। লিলিপুট মানুষের দেশে
জেগে থাকা আমার ইস্কুল, সান্ধ্য ল্যাটিন, পাহাড়-প্রমাণ থিওলজি…
একদিন শহরকে স্তম্ভিত করে সেখানে উঠেও গিয়েছি। দেখেছি মাসির
সদ্য কবরের কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক দীর্ঘ গাছ, যে কবর
গাছের ছায়ায় সে নিশ্চয় শান্তি ও ভালবাসা পায়, কিন্তু
ডানিয়েল, তোমাকে তীব্র অপছন্দ করি; ডানিয়েল তুমি যে কোথায়!
নয়-নয় করে এ-শহরে কেটে গেল বেশ কয়েক বছর, ঘৃণা
করতে-করতে শহরের ড্রেনে, মাংস-বাজার, সস্তা মদের দোকানে
মারপিট করা কুলি, কালিঝুলি মেখে ঘরে ফেরা মানুষজনের মাঝখানে
অজান্তে আমিও শিকড় চালিয়ে দিই। কিন্তু আবার সেই
শিকড় উপড়ে ফেলার দিন, আবার আমাকে চলে যেতে হবে অন্য শহরে
আবার ফ্যাকাসে ভোর হবে, আবার ফ্যাকাসে সন্ধ্যা নামবে
দু-মেরুর মাঝখানে কিছুদিন আমাকে কাটাতে হবে শিলাকান্থ মাছের মতো
তারপর দেখা যাবে দেবদূত ও শয়তান, দু’জনেই আমার জন্য অপেক্ষারত…
মনে রেখো ম্যানচেস্টার, আমি যদি বাম-দিকে যাই
সে-পথ আমার ছিল না, মনে ক’রো রাহু-কেতু দাবা খেলতে বসেছিল;
আমি যদি ডান-দিকে বেঁকে যাই তবে তাও নিয়তিতাড়িত
আমার রক্তের ভেতর মিশে আছে আগুন-রঙের বিষ, আপাতত
বিদায় ম্যানচেস্টার, বিদায় খনি-শহরের মাতাল-প্রলাপ, বহুদূরে যেত হবে একা।
রূপকথার গল্পে শুনেছি মানুষের শরীর ধারণ করা সেই দানবের কথা
যার হাতের তালুতে রোম গজিয়ে উঠত প্রতিদিন, কাল রাতে
আমিও স্বপ্নে দেখলাম হাতের তালুতে গজিয়ে উঠছে দু’একটা করে রোম
বিদায় ম্যানচেস্টার, ধরে নাও তুমি বিদায় জানালে নিয়তিতাড়িত
কোনও এক একরোখা, জেদি, বিষণ্ন ও স্ফূর্তির
সমাহারে গড়ে ওঠা অবাধ্য প্রাণীকে


!!
সতেরো-শো তেতাল্লিশ সাল শেষ হয়ে এল, স্টিল-চাদরের মেঘ
ভেসে থাকে লন্ডন শহরে। দিনে-দিনে আমি অসহ্য হয়ে উঠছি
সবার কাছেই, এমনকি নিজের কাছেও… শুধু ভোরে ফোটা লাজুক ফুলের মতো
এক গোপন গোধূলিবেলা ছিল, শহরের রাস্তায় ঘুরতে-ঘুরতে
আমি এসে দাঁড়াতাম সে-গলির মুখে
যেখানে সে প্রতিদিন মায়ের সঙ্গে বেড়াতে বের হয়…
স্টেক-এস্টেটে মাঝে-মাঝে প্রতিবেশীদের গিনিপিগ বুকে চেপে
আদর করতাম। আমি জানতাম দুধ-শাদা পোশাকের নীচে
স্তনবৃন্ত-দুটি গিনিপিগ-চোখের মতো ভীরু ও লালাভ।
প্রতিদিন ঘরে ফিরে এসে, নির্বান্ধব, বিরাট শহরে
আমার ভেতর ঢুকে যেত বিষণ্নতার আটলান্টিক
তারপর আমার স্বভাব মতো আমি খেপে উঠতাম
নিজেকে আঁচড়ে-কামড়ে এক অদ্ভুত মর্ষকামের দেশে ছুটে যেত
আমার ট্রিগার। ঠোঁট কামড়ে ধরলে যে একফোঁটা নোনতা রক্ত…
ঘুরে-ঘুরে নেমে যেত শরীরের কালো গহ্বরে, এই লন্ডন’ও
এক দানবের অবাক শরীর, তার অতিকায়
যোনির মধ্যে আমি দাঁড়িয়ে থেকেছি সারাদিন, অভিজাত পুরুষের দল
রাজার প্রতীক নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। অভিবাদনের পর অভিবাদনের
রাজসিক মহার্ঘ্য প্রবাহ তাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে পার্লামেন্টের দিকে
তারাই ক্ষমতা… তারাই শাসক আর আমার রিফু-করা পাতলুন বেয়ে চুঁইয়ে পড়েছে
রাস্তার জল, একদিন আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমার হ্যাট’টি
রাখা ছিল পাশে; ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখেছি এ-শহরে মরে গেছি আমি
আমার চোখের মণি কামড়ে-খুবলে গর্তের দিকে হেলেদুলে চলে যাচ্ছে
নধর ইঁদুর, শহরের মাতাল সুইপার জুতো দু’টো খুলে
ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে ওপচানো, মল-ভাসা ড্রেনের ভেতর
দু’জন জুয়াড়ি আমার মাথায় লাথি মারতে-মারতে চিৎকার করে বলতে চাইছে,
এ-শালা কোথাকার কোন বেজন্মার ছেলে, এ-শহরে কেন মরতে এসেছে?
কেন মরতে এসেছি আমি লন্ডন শহরে? শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যায় হিম স্রোত
ঘুম থেকে উঠে তাকিয়ে দেখেছি আমার মাথার কাছে, টুপির ভেতর
পড়ে আছে দু-চার শিলিং। এই ভিখারির জীবন-মৃত্যু আমিতো চাইনি
এ-জীবন আমার ছিল না কোনও দিন, দূরে রাস্তার পাশে
গম্ভীর মুখ সব মার্চেন্ট-ফার্ম, বাণিজ্য ইশারা
আঠারো বছর শেষ হয়ে যাবে, জীবনের আঠারো বছর
কী যেন করার ছিল, কী যেন করতে পারিনি, তবে মরব না এইভাবে, আজকের পর


!!

বসে আছি ফার্নেসের মধ্যে। বসে আছে ইবশিস
চোখে চোখ রেখে। এটা সতেরো-শো চুয়াল্লিশ

ম্যাড্রাসের কাছে এই ছোট্ট ঘর, বিপর্যস্ত হিন্দুস্তান
মে-মাসের রোদে ভাসছে, অচেনা পাখির গান

বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পের স্রোত সন্ধেবেলা
ঝড়বৃষ্টি আনে, সোঁদাগন্ধ, সাহেবেরা বাজায় বেহালা

এ-দেশের তামাটে মানুষ ভয়ার্ত, জন্মায়
মরে, মাঝে-মাঝে শুধু গোরা সৈন্য দেখে ভয় পায়

রণকুশলতা থেকে বহুদূরে একবস্ত্র পরিহিত গ্রাম
পিতৃভূমি ছেড়ে আসা, পিতৃভূমি তোমাকে প্রণাম

আর ঘৃণা করি এই উপকূল… রাইটার-জন্ম, নির্বাব্ধব দিন। রাখি
টেবিলে বন্দুক। মাথার ভেতর ঘোরে আত্মহত্যা-পাখি

পেনিলেস, শ্রান্ত অবসন্ন, স্বজাতিরা হাসে
প্রতি ভোরে মৃত্যু দেখি ব্যর্থতার রক্তমাখা ঘাসে

গ্রীষ্মের বিকেল শেষে সন্ধ্যা নামে মদ খায় সফল মানুষ
দেশ থেকে বহুদূরে বণিকেরা গান গায়, ওড়ায় ফানুস

কোম্পানির রাইটার, তাকে কেউ পাঠায় না ডাক
বহুদিন একা-একা হিম-নল মাথার খুলিতে তাক…

সামনে সমুদ্র, আর পিছনের পথে যেন কালাহারি-মরু
পালাবার পথ নেই। দরজা বন্ধ। জানালার ফাঁক দিয়ে সরু

পথ দিয়ে, দেখা যায়, চলে যাচ্ছে দেশিয় মেয়েরা, হেসে
এটুকুই যেন দণ্ডিতের পথ্য, পাপগত দিনক্ষয় শেষে


!!

ঘুমাও বাঙলার গ্রাম সুপুরির সারি
ভোরবেলা জেগে ওঠা দেউলের মায়া
বাঁশ বাগানের পাশে হাজামজা ডোবা
জেগে আছে তীরে তার ধর্মপ্রাণ বক
উড়ে যাচ্ছে খণ্ড মেঘ বৃষ্টিহীন ঋতু
চাষির মাথায় টোকা, চাষা বউ আলো
শ্রাবণে অঝোরপাত ডিঙি নৌকা ভাসে
শ্যামের সমান মৃত্যু খলবলে কই
জল থেকে উঠে আসে, তাল বনে ধায়
গুড়ের কলস পূর্ণ বণিকের হাসি
গুড়ের কলস ফাঁকা ফিরে যাচ্ছে মাছি
মাকুর তুমুল শব্দ তাঁতিবউ হাসে
যেতে কাটে, আসতে কাটে শাঁখের করাত
আমানির পাশে ফোটে শুভ্র কুন্দ… নুন
মায়ে ঝি’য়ে দিন গোনে তাল-নবমীর
আতা গাছে তোতা পাখি ডাহুকের ডাক

জেগে থাক বঙ্গ-রাত যোনি মেলে রাখ
বর্গি আসে দেশে তারা লুণ্ঠনের রাজা
কচু-কাটা মুণ্ড-দেহ গড়াগড়ি খায়
ধর্ম-ধর্ম করে মা’য় ধর্ম মাত্র নাম
আসে তারা ঘোড়া চেপে হাসি-হাসি মুখ
রেশম মসলিন সোনা নাও ঝোলা ভরে
লুণ্ঠনের খুল্লতাত অগ্নি-সংযোজনা
লুণ্ঠনের পিতৃদেব যোনি খুবলে খায়
ছোট-ছোট কসবায় প্রাগজ্যোতিষপুরে
লুঠ শেষে মারাঠারা যোনি খুঁজে মরে

কুলধর্ম, নারীধর্ম রক্ষণ জরুরি
শালগ্রাম-শিলা বুকে ব্রাহ্মণেরা হাঁটে
ভীত কারা হেঁটে যাছে কলকাতা-গ্রামে
লক্ষ্মী ককিয়ে কাঁদছে ঝাঁপির ভেতর
বুলবুলি আলে বসে ভবিতব্য ভাবে
সব পাখি মাছ খায় মাছারাঙা দোষী
আয় ঘুম যায় ঘুম পোড়া রাস্তা দিয়ে
নিভু-নিভু আলো জ্বলে গোখুরের বিষে
খোকা ঘুমে পাড়া ঘুমে বর্গি এল দেশে
রোগা-পাখি ধান খায় খাজনা দেব কিসে


!!
দাসানুদাসের জীবন কেটেছে, হে জীবন তোমাকে প্রণাম। দাসানুদাস হয়ে পারস্য গোলাপ দেখেছি, দেখছি সারা গা’য়ে চাবুকের দাগ। প্রতিটি কষাঘাত থেকে নতুন সফর শুরু হতে পারে, প্রতিটি সফরকালে ঠান্ডা রাখতে হয় মাথা। এই যে ভাগীরথী- তীর, এই যে প্রাসাদজীবন আমি এর প্রতিটি পাথর, প্রতিটি দালান, জাফরির কাজ, মিত্র-আমাত্য অবিশ্বাস করি। দেখেছি ওপরওয়ালার কাছে সমর্পণের পর তোমার প্রতিটি কাজের পিছনে তুমি তারই করুণায় খুঁজে পেয়ে যাবে অকাট্য যুক্তির রাশি। দুর্গ-বন্দি বাবার কান্না, ভাইয়ের মুণ্ড-কাটা দেহ, এমনকি সন্তানের গুপ্তহত্যা – কিছুই তোমাকে আহত করবে না। তবু এই মরণশীলতার দিকে চেয়ে মনে হয়, জীবন প্রতিটা মুহূর্তে সম্ভাবনাময়, সে তোমার হাতে তুলে দিতে পারে সোনার কিরিট, তবু উলুবনে কেউ সত্যি-সত্যি মুক্তো ছড়িয়ে রাখে না। কুকুর যে কুকুরের মতো মরে যায়, তার একটাই কারণ– সংস্কারের বশে সে কোনও দিন শার্দুলের গুহায় গেল না; খচ্চরের সঙ্গে থাকতে-থাকতে তুমিও খচ্চর, সিংহের সঙ্গে থাকতে-থাকতে তুমিও সিংহ। তোমার কাঁধেও নেমে আসতে পারে সিংহের থাবা, তবু মনে রেখো সে থাবা সিংহের। দাসানুদাসের জীবন কাটিয়েছি, দেখেছি প্রতিটি পথের শেষে আলমগীরেরা দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে বিষধর সাপের থেকেও ভয়ানক সাপের বাচ্চারা, তাদের অনন্ত খিদে… তাই তাদের থেকে দূরে এই ভাগীরথী-তীরে আমি পালিয়ে এসেছি। গোলাপকে যে নামেই ডাকো সে গোলাপ, ক্ষমতাকে যে নামেই ডাকো সে’ও তো ক্ষমতা। নবাব-বাদশার বদলে এই যে আমি নিছক সুবেদার, আমিও তো মনে-মনে রাজা। দিল্লি’তে বাদশা সত্য, মুর্শিদ সত্য ভাগীরথী-তীরে; কে কাকে খাজনা দেয় ভাবি… সব খাজনা আসলে খোদার, মানুষ নিমিত্তমাত্র… নিমিত্ত রেজা খান, যে বেয়াদপ জমিদার ধরে ‘বৈকুণ্ঠ’-এ পাঠায়। আমি মদ ছুঁয়েও দেখি না, নারীমাংসে লোভ নেই… তাঁর কাছে মাথা নিচু করে রাখি সর্বদা। আমার সমস্ত ক্ষমতা জায়েজ, আমার সমস্ত খাজনা জায়েজ


!!
জীবন্ত কবর দেবার আগে যা যা জরুরি –
বাঘ সর্বপ্রথম হরিণের পাল থেকে বেছে নেবে একটি হরিণ
তারপর তাড়া করে পাল থেকে তাকে আলাদা করাই তার প্রধান লক্ষ্য
ঠিক এভাবেই কারা যেন রটিয়ে বেড়াবে
তুমি সন্দেহজনক, তোমার ড্রাগন-মুখে মাঝরাত্তিরে আগুন-ফোয়ারা দেখা যায়
তোমার রক্তমাখা দাঁত জেগে ওঠে প্রাসাদ-মিনারে
তোমার প্রতিদিন নতুন নতুন পুরুষমানুষ চাই, কিন্তু এ যৌন-কল্পনায় কাহিনি জমে না
তাই প্রতিটি সংগমের শেষে তাদের কলিজা তুমি দু’হাতে উপড়ে খাও
না না, এতেও জমে না; কারা যেন রটিয়ে বেড়াবে
তুমি নিশ্চিত কলিজা উপড়ে খাও, তবে তা নরম শিশুর
এবং এ সব তোমার যৌনতাবর্ধক ওষুধ
তারপর তোমাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে গুপ্ত এক কুটুরির দিকে
তোমার পুরুষের দিকে চেয়ে ধন্য-ধন্য করে উঠবে লোকজন
কারণ সে’ই তোমায় জীবন্ত কবর দিয়েছে।
একটু-একটু করে মাটির তলায় পুঁতে যাবে তোমার কবর
যেন পুঁতে যাচ্ছে তামাম বাংলা। প্রতিদিন ধর্ষন, প্রতিদিন বাংলার রক্তমাংসহাড় চুষে খেতে
এই কলিজাখাকির নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি
তুমি যে ডাইনি তার পুরুষ প্রমাণ

আজিমউন্নিসা, তোমার শোনার কথা নয় জোয়ান-অফ-আর্কের নাম


!!
মরুঝড় পার হয়ে কুবেরের নামে
আমরা এসেছি পূর্ণ বাংলার গ্রামে

ঘোড়া ছোটে, ঘোড়া মরে, ঘোড়া নিদ্রা যায়
আমাদের তেজারতি। কুবের সহায়

সঠিক ঘোড়ার পিঠে অর্থলগ্নি করে
ঢলো-ঢলো ভাগীরথী, মাথার ওপরে

সূর্য-চন্দ্র-তারা সাক্ষী, বেনিয়ার হাত
সঠিক চিনেছে শুধু অনুকূল রাত

রাত্রি ফুঁড়ে হুন্ডি যায় দিল্লি-আগ্রা দূর
বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী, মোহর মধুর

আমরা কারও নই, কেউ আমাদের নয়
রাজা ক্রমে ক্ষীণ হচ্ছে, ফিরিঙ্গি সহায়

ডালে-ডালে মধুচাক, প্রস্ফুটিত বনে
অর্থ শুষে স্ফিত হও, শোনো একমনে

সুবেদার হোক লোকে, হোক পঙ্গপাল
আমাদের হাতে থাক মহা-টাঁকশাল

মৃদু-মৃদু হাওয়া দিক, শান্ত ধুলিয়ান
মুদ্রা গড়ি, বখরা নিই, ভাঙি বুলিয়ান

কারা যেতে কারা হা্রে, কে কাকে হারায়
তীক্ষ্ণ চোখে অর্থ ধর সঠিক ঘোড়ায়

তবু মাঝে লক্ষ রেখো, অক্ষ কোন দিকে
কার চোখ রক্তবর্ণ, কার চোখ ফিকে

সব দিকে চোখ রেখো, সব দিকে কান
মনে রেখো ভূ-ভারত বৃহৎ দোকান

শহরে-শহরে আছে খুল্লতাত, ভ্রাতা
সংকটে পড়লে রাজা অর্থ তারা ত্রাতা

শত্রু নেই মিত্র নেই, কুবেরের পেট
প্রতিদিন অর্থ চায়। জগতের শেঠ

রক্তমাংসব্যক্তি নয়, শমীবৃক্ষ ভবে
নিরুদ্বেগে সোনা রূপা কাঁচা-টাকা খাবে

লক্ষ টাকা কোটি টাকা। নম টাকা-মন্ত্র
মাঝে-মাঝে কানে আসবে গুপ্ত-ষড়যন্ত্র

পাশা খেলতে আসে লোকে, পাশা খেলা শেষে
নতমুখে চলে যায় ভিখিরির বেশে

তুমি থেকো পর্দাশীল, অদৃশ্য আঙুল
নাচায় পুতুল মঞ্চে, আছড়ায় লাঙ্গুল

বাঘ সিংহ শ্বাপদেরা, স্তব্ধ বঙ্গদেশে
মহারানী নিদ্রা যায় টাকার আবেশে


!!
যেভাবে পাখির দিন শুরু হয় সে ভাবে আমারও…
ভোর রাত্রে উঠে দেখি একফালি মৃদু চাঁদ জেগে আছে
মেঘেদের ফাঁকে, আজানের সুরে মনে পড়ে ফের
আমি খোদার আশ্রয়ে বেঁচে থাকা এক তুচ্ছ মানুষ
এ-নবাবি জরির পোষাক। একদিন ফেলে চলে যেতে
হবে বান্দাকে, নীরবে একাকী, কোরানের প্রতিটি আয়াতে
আমি খুঁজে পাই আলোর ঝরনা। এ-ঝরনার কাছে
মদ ও নারীর ছলাকলা শয়তান-সম
মাঝে-মাঝে তারা এসে ভীড় করে এই দরবারে
কে যেন তাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে নরকের দিকে
এ-তুচ্ছের ডাকে যারা পোকামাকড়ের মতো জীবন সঁপেছে
তাদের দিই না বাধা, ভাবি এ’ও আল্লাহতালার এক খেলা
আমার সমস্ত বেলা কাটে শর্ফউন্নিসাকে ঘিরে। সে আমার
একমাত্র আলো, যখন দুপুরে কথকেরা এসে
আমাকে গল্প শোনায়, দূরদূরান্তের রূপকথা, পাহাড়ের সারি
আমার স্বপ্নের কাছে জেগে ওঠে নীলাভ প্রদীপ, শর্ফউন্নিসা
তবে মাঝে-মাঝে ভয়ের রেশ শিরদাঁড়া
নেমে যায়, নামতেই থাকে। দেখি আসমানে ভেসে থাকা এক ছেলে
এই বিপুলা পৃথিবী… আমার প্রাণের ধন, পরিন্দার মতো সাজ
ষড়যন্ত্র রক্তপাত এত গুপ্ত-হত্যাচক্র – কী করে বাঁচবে আমার সিরাজ

১০
!!
গ্রীষ্মে শুকিয়ে আসে ভাগীরথী। মাঝে-মাঝে চর
দূরে কাঁপে বাষ্প-সন্ত্রাস, কারা মাথায় করে গোপালের মূর্তি নিয়ে
নদী-বাঁধ ধরে, বাঁশবন, বাবলার ছায়াটি মাড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছে বীরেশ্বর-থানে
কোলে ছেলে, দূরে জেগে ওঠা চর, হাহাকারের মতো কাঁপছে কার অশ্রু?
সে অশুভ অশ্রুর দিকে তাকিয়ে দেখতে নেই তীর্থযাত্রীদের, তারা
মুখ ফিরিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, গোপালের হাতে ধরা নাড়ু
যেন এই জামগাছের ছায়ার নীচে সে টুক করে মুখে পুরে নেবে
আনন্দনাড়ুটি… বাজনা বাজছে, গ্রীষ্ম-দুপুরের আঙিনায়, দরমার পাশে
একটা ছোট্ট মাদুরে ল্যাংটাপুটো শরীর ছড়িয়ে বসে আছে গৃহস্থের ছেলেমেয়ে
পৃথিবীর ধুলোমাখা, পৃথিবীর আনন্দমাখা সন্তানের হাসি
কিন্তু হে, ভাগীরথী আমাকে সন্তান দিলে না, আমার পেটের মধ্যে
ঘুরে-ঘুরে মরে গেছে মরিচীকা, বাষ্প-সন্ত্রাস
নবাবের মেয়ে বন্ধ্যা হয় না, নিঃসন্তান হয়
তবু যাকে, পেটের না-হোক, মিছিমিছি শুকনো স্তন পান করিয়েছি
মাঝরাতে যার মুখের দিকে তাকিয়ে ভেবেছি এ নূরের দান
তাকেও কেড়েছে শয়তান। আমি স্পষ্ট দেখছি ওই ভাগীরথী-চরে
বসানো রয়েছে নবাব-তখত, যে তখতে ইকরম নেই
সে-তখত আমি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে চাই। বীরেশ্বর-থানে
নাড়ুগোপালের মূর্তি মাথায় নিয়ে চলে যাচ্ছে যাত্রীদল, ভাবি
কে চেয়েছে নবাবের মা হতে! আমি শুধু একবার চেয়েছি মাত্র
ইকরম যেন পায় বাংলার নবাবি
১১
!!
পাথরের মন্দির
ভিতর পেরুমল
চোখ জ্বলছে, পাথরের
দেয়ালে বিস্ফারিত
স্তন, জঙ্ঘা, নাভি
যেন পাথর ফাটিয়ে
ফুটে উঠছে আভা
মৌসুমি বাতাস এসে
ঝাপটা মারছে, বৃষ্টি
ধুইয়ে দিচ্ছে পাথরের
নর-নারী। অগাস্ট-দুপুরে
একখানা চিল ঘুরে-ঘুরে
নেমে গেল। দূরে
চান্দা-সাহিবের দুর্গ
পাথরের পিরুমল…
যুদ্ধের কৌশল
অতর্কিত আক্রমণ
অবরুদ্ধ করে রাখা
আরকুট-ফোর্ট।
কেন যুদ্ধ, কেন রুদ্ধ
ভুলে যাও
গেরিলা-কায়দা ধরো
ছোবলের পর আবার
ছোবল। কলোনেল
এভাবে একান্নদিন
দাঁতে দাঁত চেপে
লড়ে যাও। খাও
বারুদ গন্ধ, আড়-চোখে
যুদ্ধ বিশারদ
একটু হাসুক। তবু
অনিবার্য বেল
বাজবে নাটকের
শেষে। একমাত্র জয়ী
স্থির করে সঠিক পন্থা
সমর কৌশল আচম্বিতে
পালটে যেতেও পারে। আজ
যেন রেজারেকশন
আজ যেন পাহাড়-প্রমাণ
ব্যর্থতা সরিয়ে, অনেক
শত্রুর মুখে ছাই
দিয়ে ফিরে আসছ তাই
তোমাকে অভিবাদন
কলোনেল
প্রথম সাফল্য যেন
প্রথম সংগম

আজ তুমি ফিরে আসছ
হারা যুদ্ধ জিতে

১২
!!
মার্গারেট, ছিল নরকের দিনরাত, আত্মধ্বংসের খেলা
মর্ষকামের ভিতরে ঢুকেছে ভয়াল স্যাটান, কালো
গেট থেকে যতদূর দেখা যেত মৃত নগরীর সার। তার
মাঝখানে আমার কামান নতমুখে রাখা। লক্ষ্য-
হীনতার দিনে মাটির ভিতর সেল ফোঁড়বার ব্যর্থ ও
অসফল প্রাণান্ত প্রয়াস… থকথকে সমুদ্রের ধারে
প্রভু জেসাসের শান্ত গির্জা আমায় বিন্দুমাত্র শান্তি
দিত না, তাকিয়ে দেখতাম জেলিসমুদ্রের থেকে শ্রান্ত
জেলেরা মাছ ধরে ফিরে আসছে। ছিন্ন হাঙরের
মাথা নিয়ে ফিরে আসছে আর শুকাতে দিচ্ছে
বালির ওপর। ইভের স্তনের বৃন্ত দাঁতে চেপে হেসে উঠছে
আদমের চোখ, ছিল নরকের দিনরাত মার্গারেট
প্রতিটি ক্যারলে তীব্র বমনেচ্ছা হত, রক্ত-মাখা মাংসের স্তুপ
নুনে জারিত রয়েছে, যখন গির্জায় এই প্রবাসের
দিনে ঘণ্টা বাজতো মনে হতো হাতে-গোনা কয়েকটি দিন
কুকুরের বমির ভেতর রয়ে যেতে হবে। তবু তুমি কেন
মার্গারেট, ক্যান্ডেলমাস শিখাটির মতো জ্বলে উঠেছিলে?
তোমার স্তনের দিকে ছায়া ফেলেছিল ভারতের মেঘ
পাতার আড়াল থেকে ডেকে ওঠা মালাবার হুইশেলিং-থ্রাশ
ঢুকে গিয়েছিল বুকে, যেন কোনও রহস্যময় দ্বীপে
এসে দাঁড়িয়েছে সফেদ জাহাজ, আর আমি জন্মভোর দ্বীপান্তর
শেষে উঠে পড়ছি আশ্রয়ের বুকে। মার্গারেট

একদিন দেখা তেলরঙ, পোর্ট্রেট আর অবিশ্বাস্য শাদা নেকলেস
আজ দেখি তোমার ক্লিভেজ চোখ আইভরি দু’টি হাত। আর শুনি
আজ রবিবার, গির্জার ঘণ্টা বাজছে, যাজকের শাদা পোশাকের মতো
শান্ত সকাল। প্রিয় মার্গারেট, দলে-দলে ব্রিটেনের মেয়ে এসে নামে
ভুঁইফোঁড় ধনী-পাত্র খোঁজে; শুধু আমি জানি
তুমি সমুদ্র পেরিয়ে এসেছো, নেশাতুর পাখিটির মতো
মাঝরাতে একা জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে দেখেছ
বহুদূ্রে উপকূল… একটি-দুটি আলো। কোনও তুচ্ছ টেম্পটেশন
তোমাকে তাড়িয়ে আনেনি। তুমি সেই আলোকিত ইভ
যে নিজের ইচ্ছায় আপেলে কামড় দিয়েছে, আর রাত্রে স্বপ্নে দেখেছ
রাত্রি-সমুদ্রের ধারে অস্থির পায়চারি করে তোমার ক্লাইভ

১৩

!!

খাবারের সময় ঠিকঠাক খাবার আসছে রুপোর থালায়
হুঁকো আসছে, (মদও আসছে), প্রাসাদের মেঝেয় পিছলে যাচ্ছে রোদ
খুশবু-আতরে আমাদের যত্নের কোনও ত্রুটি রাখা হচ্ছে না
মাঝে-মাঝে সে এসে দেখে যাচ্ছে, তার দীর্ঘ ছায়া বারান্দায়
আমাদের ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে দেখানো হচ্ছে মহলের পর মহল। প্রাসাদের
দরজার কাছে গেলেই আমাদের আবার
হাসিমুখে টেনে নিয়ে চলে আসা হচ্ছে অন্দরমহলে
আবার হুঁকো, মদ, আতর
আতর, মদ, হুঁকো
আমার সঙ্গে পারিষদবর্গ। তারা হাসি মুখে এ-অত্যাচার
সহ্য করছে, কারণ এ-অত্যাচার সহ্য করতে তারা বাধ্য, ঘুমিয়ে পড়েছে
দু’একজন। মাঝে-মাঝে সে এসে হাসছে, এ-প্রাসাদের
প্রতিটি ইটের গায়ে লেগে থাকা গন্ধ চিনে নিতে দিনের পর দিন
বছরের পর বছর কেটে যাবে। আমাদের জন্য সময়ে-সময়ে খাবার
চলে আসবে, মদের পর মদ; কিন্তু সে আমাদের কিছুতেই বেরোতে দেবে না
আর একান্ত বেরোতে চাইলে এই মজার খেলায় হেরে গেছি ভেবে
দিতে হবে লক্ষ-লক্ষ টাকা। এ-টাকা মুক্তিপণ নয়
এ-যেন বালককৃষ্ণের ঠোঁটে লেগে থাকা মাখনের দাগ আর
চেয়ে আছেন স্বয়ং যশোদা।
মারাঠারা আমার কেউ নয়, তাদের চারভাগের একভাগ –
আর এ তো আমার পাঁজরের হাড়। মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা, মাত্র
পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে আমি আর আমার পারিষদবর্গরা বেরিয়ে পড়েছি
হীরাঝিলে কাঁপছে অন্ধকার, পারিষদবর্গরা চুপ, আমি বাংলার বৃদ্ধ নবাব
দৌহিত্রের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্লান্ত পায়ে ফিরে যাচ্ছি প্রাসাদের দিকে

১৪
!!
পরিখা ছলনা মাত্র, আসলে ক্ষমতা
প্রাচীর ছলনা মাত্র, আসলে ক্ষমতা
ভয়ংকর রাত্রি-জুন, গন্ধ বারুদের
চায় শুধু প্রানপণ পূর্ণ অধীনতা

সে আমি সিরাজ কিংবা জন হলওয়েল
ক্ষেত্র ভেদে পালটে যাবে আমার ভূমিকা
পাত্র ভেদে উলটে যাবে ভাষ্য, ইতিহাস
রক্তপাত হতে পারে রক্ত-জয়টিকা

আমি যদি হলওয়েল ক্ষমতা আমাকে
মান্যতা দিয়েছে রোজ রক্ত চুষে খেতে
নেটিভের রক্ত চোষা শাস্ত্রসিদ্ধ কাজ
কেটেছি নেটিভ মুণ্ড ধর্মসিদ্ধ মতে

আর আমি সিরাজের ছায়া মাত্র হলে
প্রতি ইঞ্চি বুঝে নেব সকাল বিকাল
শত্রুসৈন্য পিপিলিকা, যুদ্ধবন্দি পোকা
হত্যা করা যেতে পারে সরল কৌশলে

সংখ্যা ঠিক ছিল কত বলো রাত্রি-জুন
খুলি ফুঁড়ে গেঁথে দাও হাড়-কাঠি ধুপ
বামে রেখে কলকাতা ধেয়ে যায় নদী
কাঁদে রাত্রি কাঁদে ফোর্ট, স্তব্ধ-অন্ধকূপ

১৫
!!
ঝাড়বাতি জ্বলে, হীরাঝিল
কেঁপে ওঠে অন্ধকার নীল

শরীরে শরীর মিশে যায়
আমাকে ডেকেছে যমুনায়

একই সঙ্গে রাধা-বনমালী
অবিশ্বাস্য আমার প্রণালী

হীরাঝিল, নীল দুটি আলো
সারারাত আমাকে ভেজালো

বঙ্গভূমি, বাজে পাখোয়াজ
ঘূর্ণিময়, নবাব সিরাজ

১৬
!!
:আমি মাধবীলতা, আমি পৃথিবীজোড়া আলো, তাম্বুল রঙ নেমে যায় আমার গলা বেয়ে আর ফুটে ওঠে নীল-নীল শিরা
:পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মাধবীলতাটি আমি আপনার হাতে তুলে দিতে চাই, দয়া করে এ- হাতের পাঞ্জাটিকে মনে রাখবেন, ভগ্নি’কে নিশিরাতে আপনার হাতে তুলে দিল যে ভাইয়ের হাত
:মনে রেখো মাধবীলতার কোনও ভাইবোন নেই, সে শুধু মাধবীলতাই। তবে তোমাকে মনে রাখবই…
:তুমি হীরা, বর্ষার মাধবীলতাটি, কিন্তু তুমি জগতের শ্রেষ্ঠ কুকুরে-বেশ্যা। ভাদ্র-মাসে কাকে কাকে টেনে নিয়ে গেছ দোজখের দিকে
:আমি মাধবীলতা, আমি রাই; নাচনেওয়ালির গায়ে নাছোড় জোঁকের মতো লেগে থাকা ‘বেশ্যা’ শব্দটিকে আমি জড়িয়ে ছিলাম, জড়িয়ে থাকব। শুধু আপনার মা’কে জিজ্ঞেস করবেন, কেন স্বেচ্ছায় তিনি এ-পথে এসেছেন?
:এবার তা হলে তোমার প্রাণদণ্ড হল, যৌনতার পর আমি পাথরের দেয়াল তুলে মুছে দিই যত বেয়াদপ স্বর

১৭
!!
৫ অক্টোবর, ১৭৫৬

বাবা তোমাকে আমি এ-চিঠি লেখবার শুরুতেই কলম থামালাম
কেন আজ আমি তোমাকে এ-সব লিখছি? কেন আজ এ-অক্টোবরে
যখন সন্ধেবেলায় হিম পড়ে, আমাদের দেশের মতই
ধূসর আবছা হয়ে আসে সব, ঠিক তখনই আমার তোমার হতাশ মুখ আর
অসহায় ক্রদ্ধ গর্জনের কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে আমাকে নিয়ে বিব্রত তুমি
স্কুলে-স্কুলে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়েছিলে। কোম্পানির রাইটার থেকে
আজ আমি কলোনেল, এখন আমাকে খাতির-যত্ন করে দেশোয়ালি ভাই
যদিও আমার এ-উত্থান ওয়াটসন-সহ আরও কয়েকজন বিষবৎ দেখে
কিন্তু একদিন তোমার মাথার থেকে উড়ে এসে একখানা সাপ ঢুকে যায় আমার মাথায়-
সেই থেকে বারুদের গন্ধ পেলে ঘুম উড়ে যায়, ক্ষিপ্রতায় শীর্ষে উঠে বুঝি
কখন কামড় আর কখন ঝোপের অন্ধকারে ঢুকে যেতে হবে; বাবা
এই প্রবাসের আলো-অন্ধকারে বসে তোমাকে জানাই বিপুল অর্থ চিন্তা
আমাকে পাগল করে দেয়। কিন্তু এই অক্টোবর আমাকে হয়তো
বাংলার দিকে টেনে নিয়ে যাবে, এ-আমার সুবর্ণ সুযোগ
আমি জানি তুমি এই চিঠি পেয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হবে, মনে-মনে আমি রোজ
রণকৌশল সাজিয়ে চলেছি; এই প্রবাসের থেকে তুমিও আমার
বারুদের গন্ধমাখা প্রণাম গ্রহণ করো। শুধু জেনো, আপাত কুশল সব
মার্গারেট ভাল, আর থরথর করে কেঁপে উঠছে ক্লাইভ-সংসার

১৮
!!
২৭-২৮ ডিসেম্বর, ১৭৫৬

নদীর দু’পাশে শুয়ে ভরা পৌষমাস
ভোরের কুয়াশা মেখে উড়ে যায় বক

শীতে কাঁপা গ্রামগুলি এখনও নিথর
সাবধানে ঢুকছে শুধু কোম্পানি-জাহাজ

কামানের পেটে ঠাসা বারুদের স্তুপ
চিত্রনাট্য তৈরি আছে, কাজ করবে ধীরে

দ্বিতীয় তৃতীয় পথ, কোনও সম্ভাবনা
বাকি রাখা অসম্ভব, শীর্ষে উন্মাদনা

ডানদিকে বজবজ, বামে লক্ষ্মী-গ্রাম
অর্ধ-যুদ্ধ জয় হয় প্রথম আঘাতে

মাণিকচাঁদের ছায়া দুর্গ ছেড়ে যায়
নতুন বছর, সূর্য উঠছে সুবে-বাংলায়

১৯
!!
শামিয়ানা খাটিয়েছে এ-আকাশ নিদ্রাতুর গ্রাম
পুথি লিখে নেটিভ-সন্তান ঘুমিয়ে পড়েছে, শান্ত চারপাশ
সে শুধু বুঝেছে বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী, অথচ লক্ষ্মীর
পায়ে শিকল পরানোর কথা ভুলে গেছে বারংবার
শাক্ত-বৈষ্ণবের দেশে ফসল ফলেছে যেন সদ্যজাত
সুঠাম সন্তান। আজ এই শান্ত মোহনায় ভেসে ওঠা আরও শান্ত
গাঙ্গেয় শুশুক। একটা দু’টো শালিকের ঝাঁক, শাদা ধর্মবক
সুযোগের কাছে বসে আছে, নদীর দু’পাড়ে আখড়া
ভোরবেলা ভেসে আসছে আগমনী সুর, ভাব-তরঙ্গের
ছোট-ছোট ঘাত ভেসে যাচ্ছে নদীর ওপারে
কে কার বাদশা বল এমন সকালে? কে কার নবাব?
রক্তশূন্য ফ্যাকাসে কড়ির মতো ক্ষুৎকাতরতা নিয়ে
জেগে উঠে ঘুমিয়ে পড়েছে দূরে-দূরে গ্রাম। মালঞ্চের কাছে
ভীরু প্রদীপের আলো, ভেসে আসে আজানের সুর, নিরাকার
সাধনার কাছে ফোটা চাঁদ, একফালি, ভাঙা সানকির
জলে ভেসে উঠছে চণ্ডীমণ্ডপের ছায়া; দক্ষিণ রায়ের দেশে
তবু মধুভাণ্ড লুকিয়ে রেখেছে অন্নপূর্ণা নিজে হাতে
জাহাজের সার যায় কলকাতা…চন্দননগর, মুখে-হাতে রুজ
মেখে সেখানে মেয়েরা নাচে। নতুন সাহেব আসে। নতুন বন্দুক
একটা-দু’টো গ্রাম, ভূতের শরীর নিয়ে জেগে থাকা
একটা-দু’টো মাটির বুরুজ

২০
!!
পরিত্যক্ত শিকারঘরের পাশ থেকে উঠে আসছে ইবলিশ
বর্ষা নেমেছে বঙ্গে, ফুঁসে উঠছে ভাগীরথী, ফুঁসে উঠছে কাদের খোপিশ-শরীর
তাদের অর্ধেক দেহ মানুষের আর অর্ধেক পশুর। সোঁদা মাটি, রক্তে ভেজা মাটি থেকে
উঠে আসছে ইবলিশ, এই আমি তোমার পায়ের কাছে খুলে রাখছি আমার কিরিট
ধানচারাদের বুক ছাপিয়ে ছুটে আসছে অন্ধকার জল
এ-মাটির নীচে পোঁতা আছে তাল-তাল সোনা
আর আমার সোনা ও ক্ষমতার কোনও লালসাই নেই, শুধু
এই বাংলায় এক তুচ্ছের স্বাধীন জীবন যেন বহমান থাকে
আমি জানি, সারা জীবনের বহু ত্রুটি-বিচ্যুতি আমাকে এখানে এনেছে
আমার ভিতর অবিশ্বাস্য ক্রোধের বিকেল জেদ বেপরোয়া আলোর শিবিকা
চেপে বেড়াতে বেরিয়েছিল, তবু জেনো
তোমার পায়ের কাছে নামিয়ে রেখেছি আমার কিরিট
মধ্যরাত, শিকারঘরের দিকে কারা যেন ষড়যন্ত্র করছে, কারা যেন
বেচতে চাইছে এই বাংলার ধানমাটিনদী আর পাখিদের গান
একে তুমি রক্ষা করো, আমার সঙ্গে নয়, বাংলার সঙ্গে থাকো
আপাতত এ-কিরিট নাও, হিস্যা বুঝে নিও তারপর

তোমার ফেরানো মুখ, বুঝে গেছি তলে-তলে তুমিও একলা নও ধূর্ত মিরজাফর

২১
!!
যখন আমার কান কেটে নেওয়া হচ্ছিল
যখন আমার নাকের ওপর নেমে আসছিল ঝকঝকে ক্ষুর
যখন আমার বুক ভাসিয়ে দিয়ে ঝরে পড়ছিল গরম রক্ত
তখন আমি কিছুই করিনি, শুধু মনে রাখবার চেষ্টা করছিলাম
সেই হাত আর সে-ক্ষুরের অমোঘ চিহ্ন
আজ তেরো-মাস পর আমি তোমার সামনে
বেড়ে দিচ্ছি গরম খিচুড়ি, রাজমহলের দিকে ভেসে আসছে
আষাঢ়ের মেঘ, ভেসে আসছে তেরো-মাস আগের হাহাকার
তিনদিন পর তোমার গলা বেয়ে নেমে যাচ্ছে খাবারের দলা
তোমার তানাশাহি শেষ, তোমার কাছেই বসে আছে দানা শাহ
তিনি এক ফকিরের দিকেও তাকিয়ে দেখেন প্রতিদিন প্রতি সন্ধেবেলা
ওপরওয়ালার অসীম করুণা
প্রতিশোধ নয়, সে অতি হারাম, আমি শুধু দু-একজন’কে বার্তা দিয়েছি
শ্রান্ত নবাব আজ আমার কুটিরে দু-মুঠো অন্ন চেয়েছেন

প্রতিশোধ নয়, সে অতি হারাম, এ-সব দীনদুনিয়ার মালিকের খেলা

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes