হত্যার আনুপূর্বিক ধারাপাত ও কয়েকজন কাল্পনিক ইহুদী প্রৌঢ় <br /> :: পার্থজিৎ চন্দ

হত্যার আনুপূর্বিক ধারাপাত ও কয়েকজন কাল্পনিক ইহুদী প্রৌঢ়
:: পার্থজিৎ চন্দ

There was also whispered stories of terrible book, a compendium of all the heresies, of which Goldstein was the author and which circulated clandestinely here and there. It was a book without title. People referred to it if at all, simply as the book. But one knew of such things only through vague rumors. Neither the Brotherhood nor the book was subject that any Party member would mention if there was a way of avoiding it.             (1984/ George Orwell)

 

রাষ্ট্র ও ক্ষমতা তার সামরিক শক্তি নিয়ে ঘুমাতে যায়, কিন্তু জেগে থাকে এক স্ট্রাকচারড টেক্সটকে আশ্রয় করে। একটি ক্ষমতার কাছে তার স্বপক্ষে বা বিপক্ষে গড়ে ওঠা টেক্সট অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতা ও রাষ্ট্র নিজের স্বপক্ষে টেক্সট নির্মাণ করে। লিপি ও তার খোদিত রূপ হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের সংস্কার ও মননে গভীর ছাপ রেখে গেছে। সম্ভবত কোনও দিনই মানুষ খোদিত লিপি(বর্তমানে প্রিন্টেড টেক্সট) ও ‘সত্যের’ সমনাম হয়ে ওঠার ধারণাটিকে অতিক্রম করতে পারবে না। এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সময়ে ‘ভয়েস মেসেজ’ নিজেই একটি ধারা হয়ে উঠেছে। কিন্তু টেক্সট মেসেজের গ্রহণযোগ্যতা ও তার sanctity গ্রহিতা ও প্রেরক – উভয়ের কাছেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।

লিপির প্রাথমিক রূপের মধ্যে যে inscripted হবার পদ্ধতি তার সঙ্গে সময়কে পরাজিত করা, সত্য-ব্যতিত-আর কিছুই মানুষ দীর্ঘদিন লিপিবদ্ধ করে রাখতে চায় না, একবার খোদিত (বা মুদ্রিত) অক্ষর চিরস্থায়ী এবং দেশ-কাল নিরপেক্ষ ইত্যাদি বেশ কিছু জটিল ধারণা প্রথমে লিপিকে ও পরবর্তীকালে মুদ্রিত অক্ষরকে ‘সত্য’-র সমনামে পরিণত করেছে। ক্ষমতা যেদিন এই পদ্ধতির সন্ধান পেয়েছিল সেদিন থেকেই বই, অনেক সময়ে সেই বই – নাইন্টিন এইট্টিফোর উপন্যাসে গোল্ডস্টেইনের নামহীন বইয়ের মতো বই’ও – তার কাছে সব থেকে বড় অস্ত্র হয়ে ওঠে। ক্ষমতা ও রাষ্ট্রের হাতে এমন অনেক বই নির্মিত হয়েছে যার প্রতিটি শব্দের মধ্যে জেনোসাইডের বীজ পোঁতাচ রয়েছে। একটি জাতিকে হলোকাস্টের মধ্য দিয়ে নির্মুল করে দেওয়ার আগে দরকার একটি তাত্ত্বিক ভিত্তি এবং একটি গ্রন্থই পারে সেই তত্ত্বের সন্ধান দিতে।

নির্দিষ্ট একটি জেনোসাইডের স্বপক্ষে যদি কোনও লিখিত ও পাথুরে ‘প্রমাণ’ না-থাকে তা হলে সেটিকে নির্মাণ করে নেওয়াই দস্তুর। গ্রন্থ ও ‘সত্য’ ম্যানুফ্যাকচার করবার সব থেকে ‘শৈল্পিক’ পদ্ধতি, আত্মপক্ষ সমর্থনেরও আগে গ্রন্থ ও কাল্পনিক ‘সত্য’র মধ্য দিয়ে এমন এক ‘বাস্তবতার’ নির্মাণ করা যার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনটিও বাহুল্য মনে হয়, ন্যাচারাল জাস্টিসের মতো ‘ন্যাচারাল’ ইনজাস্টিসও অতি স্বাভাবিক মনে হতে পারে।

নাইন্টিন এইট্টিফোর-এ গোল্ডস্টেইনের বইটির কথা মানুষ শুধু ‘গুজব’ আকারে শুনেছে। কিন্তু বইটির সঙ্গে এমন একটি ধারণা যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে সচেতনভাবে, যে বইটি পাঠের আগেই মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে ভয়ংকর এক ‘টেক্সট’।

The Protocols of the Meetings of the Learned Elders of Zion এমন একটি অ্যন্টিসেমেটিক বই যেটিকে অনায়াসে পৃথিবীর সব থেকে ঘৃণ্য ‘ফ্যাব্রিকেটেড’ টেক্সট হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে।

ইহুদীদের নিয়ে কয়েক-শো বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন শক্তির মাথা ব্যথার অন্ত নেই। কিছুটা এই কারণেই হয়তো উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের হাতে সুদখোর ও রক্তপিপাসু শাইলক অনিবার্যভাবে একজন ইহুদী।

এক ঘৃণ্য জালিয়াতির লিখিতরূপ – এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় সোভিয়েতে। তখনও বিপ্লব সংঘটিত হতে চোদ্দ-বছর দেরি, কুলাকদের রমরমা চলছে। সোভিয়েতের শীত ও গ্রীষ্ম পথ চেয়ে আছে, ক্রমশ প্রস্তুত হচ্ছে এক বিপ্লবের।

১৯০৩ সালে সোভিয়েতে প্রকাশিত হল একটি বই, বইটির নাম বলাইবাহুল্য The Protocols of the Meetings of the Learned Elders of Zion।

ইতিহাসের খেলা অদ্ভুত, এখানে কিছুই আকাশ থেকে পড়ে না। কোনও এক অদৃশ্য হাত নিয়ন্ত্রণ করে সব কিছু। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে যিওনিজমকে রাজনৈতিক এক স্ট্রাকচারে বন্দি করে ক্ষমতায়নের স্বপ্ন দেখার মূল কাণ্ডারী ছিলেন থিওডোর হার্জেল। অবিরাম তাড়া খাওয়া একটা জাতি, নস্টালজিয়া ব্যতিত যাদের কাছে মাতৃভূমীর কোনও স্মৃতি নেই – সে জাতি যে এই ধরণের প্রচেষ্টাকে আঁকড়ে ধরতে চাইবে সেটিই স্বাভাবিক। এই পথ ধরেই ইহুদীদের সঙ্গে বেশি বেশি করে যুক্ত হতে শুরু করল Conspiracy Theory-র ছায়া। এবং কে না জানে, বহুদিন ধরেই হহুদীদের গুপ্তসংগঠনের প্রতি আস্থশীল বলে মনে করা হয়।

এই বইটি যার হাত ধরে প্রকাশের মুখ দেখে তিনি সার্গেই নিলাস।

সার্গেই নিলাস কী ভাবে এই ‘গোপন’ পুস্তকের হদিস পেয়েছিলেন এবং কী ভাবে বারবার তার বয়ান পরিবর্তিত হয় সে প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। ইহুদীরা যে পৃথিবী দখল করার এক গোপন অ্যজেন্ডা তলে তলে বহন করে চলে সেটা মোটামুটি ক্রিশ্চান ও মুসলিম দুনিয়া মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। বারবার যাকে Jews plan for global domination হিসাবে উল্লেখ করা হয় তার সঙ্গে সার্গেই নিলাসের ‘আবিস্কৃত’ প্রোটোকলগুলি চমৎকার খাপ খেয়ে যায়। একটি চূড়ান্ত ফ্যাসিস্ট শক্তি কোন পথে ক্ষমতা দখল করতে চায়, তার পথ কতটা গূঢ় ও ধূর্তামিভরা হতে পারে তার যেন এক প্রামাণ্য দলিল সামনে চলে আসে নিলাসের বইটির হাত ধরে।    চব্বিশটি প্রোটোকলে সমৃদ্ধ এই বই ক্ষমতা দখলের এক সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। ইহুদী জ্ঞানী প্রৌঢ়দের দ্বারা সৃষ্ট প্রথম যে প্রোটোকল সেখানে প্রতি ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে রয়েছে একটি সিস্টেমকে দু’দিক থেকে বিশ্লেষণ করার পদ্ধতি – একটি ইহুদীদের জন্য এবং একটি ‘গোয়িম’ বা অ-ইহুদীদের জন্য। রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলে যে আসলে কিছু হয় না এবং তা যে সোনার পাথরবাটি সেটি প্রথমেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই প্রোটোকলে, ‘Every man aims at power, everyone would like to become a dictator if only he could…Political freedom is an idea but not a fact.’ যে রাস্তা একদিন বেঁকে যাবে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের দিকে, যে যুক্তিতে হত্যাকে কম কষ্টদায়ক করে তো্লার পদ্ধতিতে আস্থা জ্ঞাপন করবেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মেধা-সম্পন্ন বেশ কিছু মানুষ সে রাস্তারই যেন একটা রেখা দেখা যাচ্ছে এই প্রোটোকলে, ‘Our state, marching along the path of peaceful conquest, has the right to replace the horrors of war by less noticeable and more satisfactory sentences of death, necessary to maintain the terror which tends to produce blind submission.’ প্রথম প্রটোকলেই ইহুদী জ্ঞানী প্রৌঢ়রা লিবার্টি ইক্যুয়ালিটি ও ফ্র্যাটারনিটির ধারণাটিকে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন।

দ্বিতীয় প্রটোকলে তারা অভ্রান্তভাবে নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন অর্থনৈতিক যুদ্ধ গোপন পরামর্শদাতা ও সংবাদপত্রের ভূমিকা। ইতিহাসের যে অংশ ইহুদী আধিপত্যবাদকে সমর্থণ করবে শুধু সে অংশটুকুই ইতিহাস বলে গণ্য করা হবে। আসলে ইতিহাস বলেও কিছু থাকবে না, যা থাকবে তা হলে ঘটনাপ্রবাহকে ডমিন্যান্ট শক্তির সাপেক্ষে ইচ্ছামত বিশ্লেষণ করবার পদ্ধতি, ‘…these specialists of ours have been drawing to fit them for rule the information they need from our political plans form the lesson of history, from observations made of the events of every moment as it passes.’

ফ্যাসিস্ট শক্তির একটি বড় ক্ষমতা একটি প্রতীককে ক্রমাগত গ্লোরিফিকেশনের মধ্য দিয়ে ‘সুপারলেটিভ’ করে তোলা। প্রতীক বা চিহ্ন কোনও ফ্যাসিস্ট শক্তির কাছে নিছক একটি চিহ্ন বা প্রতীক নয়, তা আধিপত্যবাদের চূড়ান্ত অবয়ব। নাৎসিদের কাছে স্বস্তিকা যা হয়ে উঠেছিল আমরা তৃতীয় প্রটোকলে এসে দেখলাম ইহুদী প্রৌঢ়রা ঠিক তেমনই তাদের প্রতীক ‘কুণ্ডলীকৃত সাপ’কে অমোঘ করে তুলতে চাইছেন। আর মাত্র কয়েক কদম দূরেই সেই বিশ্বজোড়া ইহুদী আধিপত্য এবং সেখানে প্রতীকের ভূমিকা অসীম, ‘Today I may tell you that our goal is now only a few steps off. There remains a small space to cross and the whole long path we have trodden is ready now to close its cycle of the Symbolic Snake, by which we symbolize our people. When this ring closes, all the States of Europe will be locked in its coil as in a powerful vice.’ আজ থেকে প্রায় তেইশ-শো বছর আগে কৌটিল্যের হাতে রাষ্ট্র-পরিচালনার যে স্ট্রাকচার নির্মিত হয় সেখানেও গুপ্ত-কর্মপদ্ধতির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল।

রাষ্ট্র বা শক্তির এই চিহ্ন খৃষ্টধর্মের হাতিয়ার হিসাবেও ভূমিকা পালন করেছে। পর্তুগালের রাজা দ্বিতীয় জন দিওগো কাও’কে সমুদ্র অভিযানে পাঠান, নতুন আবিষ্কৃত অঞ্চলগুলিতে দখলদারি কায়েম করবার জন্য তিনি ব্যবহার করতে শুরু করেন পাথরের একটি করে ঘনক, যার উপরে ক্রশচিহ্ন আঁকা। এই পেড্রো ইউরোপ ও খৃষ্ঠান আধিপত্যবাদের চূড়ান্ত সিলমোহর।

ক্ষমতা কী ভাবে জনমত নির্মাণ করবে তার এক অনুপম ভবিষ্যত-রূপরেখা পঞ্চম প্রোটোকলে লিপিবদ্ধ রয়েছে, ‘In order to put public opinion into our hands we must bring it into a state of bewilderment by giving expression from all sides to so many contradictory opinions and for such length of time as will suffice to make the Goyim lose their heads in the labyrinth and come to see that the best thing is to have no opinion of any kind in matters political, which it is not given to the public to understand, because they are understood only by him who guides the public. This is the first secret.’ জনগণকে বিভ্রান্ত করে সিদ্ধানহীনতার দিকে ঠেলে দিয়েই তৃপ্ত থাকবে না ‘স্টেট’। ভবিষ্যতের সেই ক্ষমতা নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েম করবে সংবাদমাধ্যম ও তথ্যের উপর। বেশ কয়েকটি প্রোটোকলে এই বিষয়টি ঘুরেফিরে এসেছে। যেমন বারো নম্বর প্রোটোকলে ‘বিশ্বজোড়া ইহুদী রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ’ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে এভাবে, ‘Not a single announcement will reach the public without our control…These agencies will then be already entirely ours and will give publicity only to what we dictate to them.’

একটি হত্যাশালা গড়ে তুলতে যে হনন দক্ষতা ও নিরাপদ পথ নির্মাণের প্রয়োজন হয় তার সবগুলিই প্রায় লিপিবদ্ধ রয়েছে এই প্রোটোকলগুলিতে। ছাপা অক্ষর সংবাদপত্র ক্ষমতার বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তাকে বরফের ছুরি দিয়ে হত্যা করবার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি ছিল এখানেও, ‘We turn to the periodical press. We shall impose on it, as all printed matter, stamp taxes per sheet and deposits of caution-money, and books of less than 30 sheets will pay double. We shall reckon them as pamphlets in order, on the one hand, to reduce the number of magazines, which are the worst form of printed poison, and, on the other, in order that this measure may force writers into such lengthy productions that they will be little read especially as the will be costly.’

সমস্ত ধর্মই আসলে chosen few-এর ধারণায় বিশ্বাস করে, ইহুদী প্রৌঢ়রা সেটিকে গোপন করেননি, লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন প্রোটোকলে, ‘The King of the Jews will be the real Pope of the Universe, the patriarch of an international church.’

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে গূঢ়পুরুষের (গুপ্তচর) ভূমিকায় অতীব গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সন্ন্যাস থেকে বিচ্যুত গুপ্তচর উদাস্থিক, কৃষিকর্মেরত গুপ্তচর গৃহপতিক, জীবিকার বশে গুপ্তচরবৃত্তি বেছে নেওয়া গুপ্তচর তাপসব্যঞ্জক, অদম্য সাহসী গুপ্তচর তীক্ষ্ণ, বিষপ্রয়োগে দক্ষ গুপ্তচর রসদ এবং ভিক্ষুকের বেশে ঘুরে বেড়ান গুপ্তচর ভিক্ষুকীর উল্লেখ করেছিলেন কৌটিল্য। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে আরও পাওয়া যাচ্ছে, ‘প্রজাদের মনোভাব জানতে সত্রিনামের চরেরা বিভিন্ন জন্সথানে, যথা- তীর্থস্থান, সভাগৃহ, ভোজনালয়, দোকান জনসংঘ প্রভৃতি স্থানে কৃত্রিম বিতর্ক শুরু করে দেবে।’

সময় বদলায়, হত্যার কৌশল ও ক্ষমতার গতিপথ বদলায় না। সে নিরঙ্কুশ আধিপত্য ও আনুগত্য চায়, তার এজেন্ট প্রয়োজন। সত্রিরাই যেন প্রোটোকলের পৃথিবীতে এজেন্ট নামে ফিরে এসেছে, ‘Our agents will be taken from the higher as well as the lower ranks of society, from among the administrative class who spend their time in amusements, editor, printers and publishers, booksellers, clerks, and salesmen, workmen, coachmen, lackeys, et cetera…verification of their reports and arrests will depend upon a responsible group of controllers of police affairs…’

ক্ষমতা সম্পর্কে মিথ তৈরি করা তাকে সুরক্ষিত রাখবার একটি প্রচেষ্টা, গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা। এই দিকেও সতর্ক দৃষ্টি ছিল ইহুদী প্রোটোকল প্রস্তুতকারী প্রৌঢ়দের, ‘I pass now to the method of confirming the dynastic roots if King David to the last strata of the earth…

শাসক যে আর কেউ নন, তিনি যে জন্মসূত্রেই শাসন করবার পবিত্র ক্ষমতার অধিকারী এটি মানুষের কাছে প্রতিপন্ন করা জরুরী, প্রায় সব শাসকই এ পথ অনুসরণ করে। ভবিষ্যতের যে পৃথিবীজোড়া ইহুদী সাম্রাজ্য স্থাপিত হবে সেখানেও এই ফর্মুলাই প্রয়োগ করা হবে বলে লিপিবদ্ধ হল।

 

 

The Protocols of the Meetings of the Learned Elders of Zion রাশিয়ায় প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি। কারণ এ ধরণের বহু ষড়যন্ত্রমূলক টেক্সট ঘুরে বেড়ায়। এই প্রোটোকলগুলি অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল রাশিয়ার বিপ্লবের পর। বলশেভিকদের সঙ্গে যেহেতু বেশ বড় সংখ্যক ইহুদী যুক্ত হয়ে ছিলেন, অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করলেন রাশিয়ান বিপ্লব আসলে ইহুদীদের পৃথিবীজোড়া ক্ষমতা দখলের একটি ধাপ। ইউরোপ ও আমেরিকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল এই প্রোটোকলগুলি। অতি-উৎসাহী কিছু ইহুদী প্রোটোকলগুলি বিশ্বাস করতে শুরু করল এবং ইহুদী বিদ্বেষীদের কাছে এটি হয়ে উঠল ইহুদী নিধনের স্বপক্ষে মত তৈরি করার অমোঘ অস্ত্র।

রোম একদিনে তৈরি হয়নি; জেনোসাইডও একদিনে হয় না। বহু আগে থেকে ক্রমাগত চলতে থাকে ভিত্তি নির্মাণ করার কাজ। হলোকাস্টের প্রস্তুতি ছিল প্রোটোকল-সমৃদ্ধ এই বই।বইটির নির্মাণের পিছনে ইহুদী নিধনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করাই উদ্দেশ্য ছিল। ১৯২১ এর ১৮ অগাস্ট ‘দ্য টাইমস’ বাধ্য হয়ে একটি খবর প্রকাশ করে, সেখানে উন্মোচিত হয়ে যায় ইহুদী বিরোধী এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের মুখ, ‘We publish to-day the last of the articles on the so-called “Protocols of the Elders of Zion,” from our Constantinople Correspondent, who has effectively exposed a remarkable forgery. We have, of course, no political object in making this discovery known. On the general aspects of the Jewish problem our attitude is known to be impartial, and we have no intention of taking sides in those political controversies on this question which too frequently engender excessive passion and obscure its real character. In the interests of objective truth, however, it was of great importance that a legend like that so long connected with the “Protocols of the Elders of Zion” should be exposed at the earliest possible opportunity’

সার্গেই নিলাস জারপন্থী রাশিয়ান সিক্রেট পুলিশের এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছিল। মরিস জলি নামে এক লেখকের ম্যাকিয়াভেলি ও মন্তেস্কুর কাল্পনিক কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল বহু আগে। সার্গেই নিলাস সেই বইটি থেকে কুম্ভীলক বৃত্তির মাধ্যমে আরেকটি বই নির্মাণ করেছিলেন মাত্র। এই কাল্পনিক টেক্সটিকে সামনে আনার ফলে এক সঙ্গে বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছিল। জারপন্থীদের প্রাথমিক কাজ ছিল বিপ্লবের বিপক্ষে  মত তৈরি করা। রাশিয়ার জারবিরোধী বিপ্লব  আদপে তেমন ‘গ্লোরিয়াস’ কিছু নয়, এবং এটি যে আদপে জারবিরোধী কোনও বিপ্লবই নয়, এটি যে  ইহুদীদের ক্ষমতা দখলের একটি গূঢ় ষড়যন্ত্রের প্রকাশ – এই কথাটি সুকৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।

পৃথিবীর সব ক্ষমতার ভিতর একটি কমন ফ্যাক্টর লুকিয়ে থাকে – তার কোনও বন্ধু নেই, সন্দেহ আছে। ১৯২১-এ প্রোটোকল নিয়ে দ্য টাইমসে সংবাদ প্রকাশিত হবার পরেও, বইটির উৎস সম্পর্কে নিলাসের বারবার অবস্থান বদল করা সত্ত্বেও বইটি নিয়ে অবিশ্বাসের বাতাবরণ কিছুতেই ঘুচল না। এই বইটির লক্ষ লক্ষ কপি আমেরিকায় প্রচারিত হয়, হেনরি ফোর্ড অর্থ ব্যয় করেন ইহুদীদের এই কল্পিত সাম্রাজ্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টার মুখোশ খুলে দিতে। ফোর্ড কয়েক বছর পর এই ধারণা থেকে সরে আসেন। কিন্তু ব্যক্তি সরে এলেও সমষ্টি তার ইহুদী বিদ্বেষকে আরও শান দিতে থাকে এই বইটির সূত্র ধরে। হিটলার এই বইটিকে প্রায় লুফে নেন, রাশিয়ায় পরবর্তীকালে এই বইটির সূত্র ধরে ইহুদীদের বেশ সন্দেহের চোখে দেখা শুরু হতে থাকে। বিপ্লবের বন্ধুর যদি গোপন উদ্দেশ্য থাকে ক্ষমতা দখল করা, তখন তাকে ছুড়ে দেওয়াই দস্তুর।

অ্যন্টিসেমেটিক ও রেসিস্ট লিটারেচর নামে যে ধারার সাহিত্য জেনোসাইডের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে এই বই তার মধ্যে অন্যতম।

পোস্ট ট্রুথের পৃথিবী থেকে প্রোটোকলের পৃথিবী ও কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের পৃথিবী ঠিক কতদূর?

প্রয়োজন ও নৈতিকতার মধ্যে পড়ে থাকা সীমারেখাটিকে মুছে দেবার কাজ প্রথমেই করে নেয় ক্ষমতা। যে যুক্তি ও পথ আমার, সেটিই একমাত্র ও নৈতিক পথ। রাজপুত্রদের প্রাণ রক্ষা করতে পাঁচ-পুত্র সহ এক নিষাদীকে সুরা ও খাদ্যের প্রলোভন দেখিয়ে জতুগৃহে প্রবেশ করিয়ে মেরে ফেলার ঘটনাটি তো সেই কবেই মাণ্যতা পেয়ে গেছে মহাকাব্যে। কী আশ্চর্য, স্ট্যালিন স্বয়ং তার Marxism and the National Question-এ লিখছেন, ‘In the middle of the nineteenth century Marx was in favour of the secession of Russian Poland; and he was right, for it was then question fo emancipating a higher culture from a lower culture that was destroying it. And the question at that time was not only a theoretical one, an academic question, but a practical one, a question of actual reality…’

সব ক্ষমতা এই যুক্তিতেই নিজেকে সাজায়, বর্ম পরায়। চূড়ান্ত রেসিস্ট এক ভাষ্য নির্মাণ করার সময়ে তাই এই কালচারাল প্রশ্নে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ইহুদীদের ‘কাল্পনিক সত্য ঘটনা’র মতো প্রোটোকলগুলিকে বিশ্বাসযোগ্য রূপ দিতে এই বিষয়টির দিকেও তাই বারবার আলোকপাত করা হয়।

পোস্ট ট্রুথের পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে অনিবার্য এক উপলব্ধি দেয় The Protocols of the Meetings of the Learned Elders of Zion। তত্ত্ব বহু পরে এসে আবিষ্কার করে বাস্তবতাকে। যে disinformation শাসন করছে পৃথিবীকে সেই ডিসইনফর্মেশন বহু আগে থেকেই শাসকের হাতে অমোঘ অস্ত্র। এক অনন্ত রিলেটিভিজমের মধ্যে জনগণকে ছুড়ে দিয়ে তাকে বিভ্রান্ত করে রাখার পদ্ধতি লিপিবদ্ধ রয়েছে প্রোটোকলে। হলোকাস্ট তৈরির স্বপ্ন দেখা কারিগররা পোস্ট ট্রুথের পৃথিবী থেকে বহুদূরে দাঁড়িয়ে সে ধারণাই ছড়িয়ে দিয়েছে। পোস্ট ট্রুথের পৃথিবীতে রিলেটিভিজম ও ডিসইনফর্মেশন কাজ করে এ ভাবে, ‘These campaign of disinformation have paved the way for the Post Truth era. Their purpose is invariably to sow doubt rather than to triumph outright in the court fo public opinion (usually an impractical objective). …Accordingly the normal practice of adversarial debate is morphing into an unhealthy relativism, in which the epistemological chase is not only better than the catch – but all that matters. The point is simply to keep the argument going, to ensure that it never reaches a conclusion’.

পঞ্চম প্রোটোকলে ঠিক এভাবেই কল্পিত ইহুদী সাম্রাজ্যে জনগণকে বিভ্রান্ত করে রাখার কথা বলা হয়েছিল।

পোস্ট ট্রুথের পৃথিবীতে ঠিক এই পথ ধরেই কোথাও কি তৈরি হয়ে চলেছে হলোকাস্টের ভিত্তিপ্রস্তর? Something is rotten in the state of Denmark… পোড়া চামড়ার গন্ধ নিয়ে হয়তো হলকাস্টের ছায়ায় ঘুমাতে চললাম আমরা।

CATEGORIES
TAGS
Share This
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
410 Gone

410 Gone


openresty