দীপক রায়ের দশটি কবিতা
রাস্তার গল্প শেষ হবার নয়
হাইওয়ে থেকে যে পিচরাস্তা বাঁ দিকে চলে গেছে
সেই রাস্তা ধরে যেতে যেতে
যে পিচ রাস্তা থেকে ডানদিকে মোরাম বিছানো রাস্তায় চলে গেছে সেই রাস্তা ধরে যেতে যেতে
যে মাটির রাস্তা জঙ্গলের দিকে চলে গেছে আর
সেই রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে যে রাস্তা
দশদিকে চলে গেছে তার একটার সামনে
এক মস্ত দীঘি ।
কে আমাকে নিয়ে এলো এখানে ?
কার সঙ্গে আমার দেখা হবার কথা ছিল?
কেন অসময়ে এখানে আসা?
গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারে
কিন্তু সামনে একটা একা তালগাছ
ওর সঙ্গে কথা বলা দরকার …
২
রাস্তার গল্প যে কোনো জায়গা থেকে শুরু হতে পারে
রাস্তার গল্প যে কোনো জায়গায় শেষ হতে পারে
রাস্তার গল্প শেষ হবার নয়
৩
একদিন যে রাস্তায় হারিয়ে গিয়েছিলাম
সেখান থেকে ফেরা হয়নি।
স্বপ্নে ফিরে আসার চেষ্টা করি
খুব চেনা চেনা রাস্তা তবু হারিয়ে যায়
চিনতে পারি স্থলপদ্মের গাছ , কচুরিপানায় ঢাকা পুকুর – ভেঙে পড়া মন্দিরের সামনে হাড়কাঠ
হারিয়ে যাওয়া রাস্তা হারিয়ে যায়
ফেরা হয় না
৪
হারানো পথ – চেনা পথ ।
তবু ফিরতে পারি না । চেনা মহিষ হেলতে দুলতে রাস্তা পার হয়। চেনা চিল আকাশে ওড়ে
চেনা ঘুঘু ডাকতেই থাকে । নিরীহ সাপ
রাস্তা পার হয়ে দীঘিতে নামে।
চেনা রাস্তা ফুরোয় না
বাড়ি ফেরা হয় না
ঘুম ভেঙে যায়। উঠে বসি । জল খাই।
কোথায় আমাদের বাড়ি
৫
এখানে যে রাস্তা ছিল একদিন তা এখন
ঘাসের নিচে চাপা পড়ে গেছে
রাস্তাও তবে হারিয়ে যায়
যা একদিন ছিল , তা থাকে না
মানুষ তখন কোনদিকে যাবে
নতুন রাস্তা না পেলে
মানুষ কি উন্মাদ হয়ে যায়
কোথায় তখন তার ঘর
কোথায় সে যাবে
৬
কারা রাস্তা আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে
রাস্তা ছাড়বে না ওরা
রাস্তা কারো একার নয়, বলি, তবু
রাস্তা ছাড়ে না ওরা। ওরা গল্প করে ।
অন্য কোন রাস্তায় যেতে হবে আমাকে
ওরা জানে না
৭
বাস থেকে নেমে এই রাস্তা ধরে তার হাত ধরে হেঁটে গেছি একদিন। সে একটা দিন ছিল বটে ।
আমার চব্বিশ আর সে ছিল উনিশ কুড়ি।
দু’পাশে ধানক্ষেত, মাঝখানে মেঠোপথ।
ময়নামতির পথের ধারে দেখা হয়েছিল
৮
তার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে একটা বড়ো বাগানের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম। একটা পাড় বাঁধানো দীঘি ।
দীঘির পাড়ে বসে গল্প শুরু করতেই
একটা লম্বা ফর্সা লোক ছুটে এল – দেখতে পাচ্ছ না , কী লেখা আছে এখানে?
গাছের গুঁড়িতে লেখা – Trespassars will be
prosecuted
বললাম চোখে পড়ে পড়ে নি ঠিক।
রাগী লোক বলে চললেন — ভারতীয় দণ্ডবিধির
এত নম্বর ধারা…
বাগান ছেড়ে আমরা আবার রাস্তায়
রাস্তা কারো একার নয়।
৯
বব ডিলান গাইলেন –
কতটা পথ পেরোলে মানুষ পথিক বলব তাকে ?
কত সমুদ্র পার হলে পাখি ঘুমোয় বালির ওপর ?
উত্তরগুলো কতই সহজ কতই কঠিন ছিল
যেভাবেই হোক ডিলান তুমি পথের কথাই বল
১০
কী লেখ তুমি আর কী মুছে ফেল
কেন মুছে ফেল
যা তুমি লিখেছ তা কদিন লেখা থাক
হাওয়া এসে মুছে দেবে
বৃষ্টি এসে মুছে দেবে
ঝড় এসে মুছে দেবে
বন্ধ রাস্তার সামনে দাঁড়াতে হবে তোমাকে
অপেক্ষা করো তুমি অপেক্ষা করো …
এটাই একমাত্র কাজ তোমার
তিনি আসবেন
আর না এলেই বা কী
রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করো
ওয়েটিং ফর গোডো …
বাঃ।গতানুগতিকতা থেকে অন্য ভাবে ভাবিয়ে তুললো।