নন্দিনী সঞ্চারীর কবিতা
চারটি কবিতা
শীত
আমি কি ভেবেছি এই কাল
এই শীত চাবুকসম
খোলা ছাদে একা পশ্চিমে হাওয়া
এইসব মুখোমুখি রেখে
অনল ছড়িয়ে যাবো?
মনোরম উষ্ণতা ছেড়ে এই ধূমানল?
বিছানা বালিশ ওষুধের স্ট্রিপ
ক্ষয় রেখে গেছে।
কাশি, গুঞ্জরিত কাশি, তুমি জানো
সেইসব অভিলাষ।
আচার বয়ামে তেজ আচ্ছাদিত করে
রোদ খেলে গেছে, ছত্রাকজীবনে।
শেষ দুপুরের রোদ, খোলা বাতায়ন ঘুরে
ঘরের মেঝেতে বসে আছে।
সুখ অ-সুখ
ক্লীবদেহ খুঁড়ে বেদনা জাগিয়েছে
যেসব অসুখ
তার মাঝে তুমিও তো ছিলে
শীতের স্নানের মত
অথবা বৃহৎ ক্যাপসুল
পার হতে চায় না যা আলজিভ সেতু
আমি সরে আসি, পিছপায়ে
খুঁজে দেখি এতটুকু প্রাণ
আছে কিনা দেহের ভিতর
খুঁজি, দেখি, পিঠ রাখি পাঁচিলের গায়ে
ভাবি তোমারই অসুখ গিলেছে আমায়
ওটুকু তো আছি
এই নীল রং পরাজিত দিনে
ওটুকু তো আছি।
পীড়ন
এইসব আত্মপীড়নের দিনে
কিছু চার অক্ষর, ঘৃণাজাত শব্দ
অমৃতের মতো মনে হয়।
মনে হয় বলি, মারো, এভাবেই হত্যা করো আমায়
আর হাতে তুলে নাও আদিম খঞ্জর,
কর্কশ অভিবাদন আর বেশ্যাপট্টির গালি।
পড়ে থাকবো এককোণায়, লৌহজাত মরিচা,
ঝুরঝুরে ক্ষয়জাত।
অথবা বুকের ভিতর থাকে অট্টহাস্য,
যে হাসি দেখাবো না কখনও, অগ্নিসঞ্জাত।
প্রতিটি মিথ্যে প্রেমের দিন যেভাবে
খুঁজেছে হাত দৈহিক।
আর বারান্দায় ঝরেছে গোলাপ, অপ্রতীক।
ঝরে গেছে হয়তো ফুটবে বলে
হয়তো এই চায় ন্যাতানো মানুষের ভাণ!
আমি কি চেয়েছি আদৌ এই আত্মসংবরণ?
পূর্বাভাস
কোনও খেদ অসমাপ আছে কি?
যেসব আধ্যাত্মিক প্রস্তাব মনে রেখে
কেটে যাবে প্রৌঢ়জীবন।
তারপর বাগানের গাছে জল ঢেলে
ভেবে নেবো, এমন জীবন তো
পূর্বজন করে গেছে দান, রিক্থ।
পাড়াতুতো বৌএর দল
চোখকান খোলা রেখে শলা করে যাবে।
সব থেকে দূর হয়ে গিয়ে
আমারই ভেতর আমি দাহ হয়ে যাবো।
ততদিন জলাশয়তীরে স্থির হয়ে থাকি।
উন্মুখ যুবকের বৃক্ষে
পরজীবী লতা হয়ে থাকি।