
অয়ন চৌধুরীর কবিতা
আরণ্যক
সেদিন তার করোটি থেকে বেরিয়ে এসেছিল গর্ভবতী এক ফুলের দেহ
ক্রমে সে ফুলের কাছে পূর্ণচাঁদ নেমে আসে
তার চোখের ভাষায় লেগে যায় আরণ্যক জ্যোৎস্না
সেখানে গুটিয়ে থাকে বিষাক্ত ছোবল
সেখানে ফুটে ওঠে মাদারী গাছের ঘন ছায়া
দ্রাক্ষাবনের পথ চিরে ওখানে দাঁড়িয়েছে পুথির বিকেল
ঢোঁড়া সাপ ও জলের সঙ্গম
ঘোর হয়, ঘোর লেগে থাকে পাতায় পাতায়
বৃন্ত ছুঁয়ে নেমে আসে মেঘের গর্জন ভূর্জপত্র-জালিকা ও শিরায়
এত কিছুর পর সে রাতে তুমি তার কাছে সন্তান চেয়েছ।
চেয়েছ জাদুভ্রম ও মন্ত্রপাঠের মৃগনাভি সুর
সে তোমার দিকে চেয়ে আছে। অথচ তার মন ঘৃণার আতুর
করোটি খুলে দেখিয়েছে গোপনে রাখা কত বীজ নষ্ট হয়ে গেছে দিনে দিনে
ছায়া মেখে গর্ভ পড়ে আছে। শোক ঢাকা আছে মায়ার কাফনে…
অলীক
সেদিন সূর্যাস্তের আলোয় পাখিদের কান্না ভেঙেছিল
ওদের বাসা কত সামান্য, কত দুঃখ ছোপানো
আকাশে উড়ছে মেঘের অহংকার, চূর্ণ হীরের মতো তারাদের আলো
ছুরিতে লেগে থাকা রক্তের মতো আবছায়া ভেঙেছে যখন
জোড়া নিমগাছ, ফলের গন্ধ নিয়ে জল থেকে উঠে এল প্রেতের ছায়া
ঘোরানো পথের বাঁকে সাইকেল রাখা
মেঘে মেঘে ঢাকা জমির আলপথে প্রেমের খাতা খুলতে খুলতে সন্ধ্যার আরতি, শাঁখ
মায়ের বকুনি খেতে হবে বলে কত কত দিন পার হয়ে গেল, কত পার হয়ে গেল সমীহ শেখার বয়স
কত গাছজীবন শেষ হয়ে গেছে
কত লতা শিখেছে আদর। সকালের ফুলগাছে সাপ জড়িয়ে ছিল
কোনও আপেল নয় দু’টুকরো মাধবীলতাই এ সর্বনাশ ঘটালো
ওষ্ঠ ছুঁয়ে নেমে আসে অলীক অভিসার, নীল হয়ে যায়, নীল হয়ে যায় ক্ষতের মুখ
এ যেন শুধু বিষ আর বিষের অসুখ…