শাশ্বতী সান্যালের কবিতা
পুরোনো বিবাহ-কথা
১.
লুকোনো বাদাম মুখ, তাকে তুমি ভোলোনি এখনও?
বেহ্মদত্যি হাওয়া আসে উত্তুরের বেলগাছ থেকে
যেন সেই কবেকার দেশভাগ পূর্ববর্তী চিঠি
সাকিন মৈমনসিংহ। মধুরার বিল…
জোড়া ডিঙি। ধানখেত। স্বদেশি ছোঁড়ার মৃতদেহ
জলে ভাসে। জলে ডোবে। হু হু কাঁটাতার উঠে যায়…
মেয়েলি ছাঁদের লেখা
গোলাপি কালিতে। উপরে বাঁদিক ঘেঁষে
(মনে পড়ে?) ‘শ্রীদুর্গা সহায়’…
২.
তারপর ঠিকানা না লেখা সেই চিঠি
কড়া নাড়বে কার্তিকের ভোরে
পোস্টমাস্টারের মেয়ে- দুগগাপ্রতিমাটি
বিসর্জনের রাত্তিরে যার কথা ভেবে কিশোরেরা
মৈথুন শিখেছে- আজ খড়ের কাঠামো সেও,
চোয়ালের হাড় জেগে আছে…
অতীত হরিণশিশু, নদীতীরে হলুদ বালিতে
জল খেতে এলে তুমি টের পাও
পুরোনো তূণীরে শব্দভেদী বাণ নেই আর
অস্ত্রসমাচার কবে বদলে গেছে এই পোস্টাপিসে।
৩.
কোনও সম্বোধন নেই
কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা প্রথম লাইন
‘মুখপুড়ি, ভুলে গেছি তোকে’
কোথাও ক্যামেরা চলছে… দৃশ্য থেকে পর্দা উড়ে যায়
পশ্চিমের নীল ঘর, ছাদে প্রতিবেশী শুকতারা
সেসব শাসন দিন। পায়চারি। ভ্রুকুটি কুটিল-
‘রাক্ষস বিবাহ করে বংশের মুখ পুড়িয়ো না’
কেউ কি মানত, বল? কতবার বর্ষার দুপুরে
দুজনে পালাতে গেছি
দুজনে চৌকাঠে থেমে গেছি…
চিঠি বুকে নিয়ে আজ কাঁদতে গিয়ে হেসে ফেলে মেয়ে
কোনও সম্বোধন নেই। শেষ ছত্রে শুধু
গোটা গোটা হাতে লেখা
‘মুখপুড়ি, মরে যা এবার’…
৪.
কাশির পুরোনো-পাতা পান এনো গোটা পাঁচ খিলি
কে যেন লিখেছে কাকে! কতযুগ আগের বয়ান
রঙিন টকির দিন, বেলকুঁড়ি, বালিশের পাশে
সুহাসিনী পমেটম স্মৃতি। মৃদু গন্ধজলে
পুরোনো বিবাহ-কথা, ফ্রেমে সাদাকালো অভিমান
চার পাঁচ খিলি এই শীতকালে
গঙ্গাচান সেরে
শহরে ম্যাটিনি শো’য়ে প্রমথেশ বড়ুয়ার গান
৫.
চিঠি তো লিখিনি, তুমি জানো
এ শহরে আর কোনও লালরঙা ডাকবাক্স নেই
পোস্টাপিসের মোড়ে ধুলো ওড়ে নিজের স্বভাবে
নীরবতা, আমাদের পুরোনো দোসর, তাকে বোলো
ক্ষতটি আড়াল করতে
কবিতা রক্তের ছিটে বয়ে নিয়ে কতদূর যাবে?
খুব সুন্দর লেখা ।
সুন্দর!
অসাধারণ
খুব ভালো লাগল শাশ্বতীদি। খুব ভালো!
অপুর্ব। অপুর্ব।
আপনাকে আগে পড়িনি। শব্দ আঞ্চলিক উচ্চারণের মিশেল খুব ভালো লাগলো । শুভ কামনায় ।