
অভিনন্দন মুখোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ
পঞ্চব্যঞ্জন
সজনে ফুলের বড়া
আমার সমস্ত গায়ে পশমের আলো
অথচ যখনই দেখি পুরানো শিশির, হাত
অতি ভারি হয়ে আসে
ঘাসের উপর দিয়ে চলে গেল ডানার নৌকা
নিচে কোনো জল নেই, শুধুমাত্র সজনে ফুলের মৃদু বড়া।
আমি ঠিক যতদূর পারি, নৌকাটিও ততদূর
পারে নাকি! সন্দেহ জাগে
এইসব সন্দেহ করেই গৃহস্থরা গেল
তার চেয়ে এমন পদ রাঁধো
এমন বাড়ির মশলা থেঁতো করো হামানদিস্তায়
গন্ধে গন্ধে যেন নৌকাটি পাড়ে এসে লাগে
সজনে ফুলের বড়ার চেয়ে ভাল কোনো প্রলোভন নেই
পৃথিবীর রন্ধনশালায়
গেঁড়িবাটি
জলের গভীরে এত কালো মুক্তো রয়েছে
জানা হতো না, যদি না একদিন তুলে এনে
নৈবেদ্য সাজিয়ে দিত মা।
সামান্য পেঁয়াজ কুচি, অসামান্য লঙ্কার আভা,
টুকটুকে গরম ভাতের মাঝে মিলিয়ে যাচ্ছে আমার লোভ
আমার নোলার মাঝে এসে দাঁড়িয়েছে খিদের শয়তান
আমাকে তিন টুকরো করো, কবিতার ভয় দেখাও
আমি এখন পাত ছেড়ে উঠছি না
এসব ছোটোলোকের খাবারের জন্য আমি
আধুলিও হয়ে যেতে রাজি
দেবত্ব চাই না, শুধু আরেকটু গেঁড়িবাটি পেলেই অমর
ফুলকপি পাতার বাটা
এমন সবুজ যেন অরণ্যকে চটকে কেউ
হাল্কা জল মেরে রেখে দিয়েছে পাতের ধারে।
এমন তুলতুলে যেন এখুনি আমার মস্তিভাব জেগে উঠবে
আর আমি চন্দনের মতো নরম ভেবে একটা
অদৃশ্য হওয়ার পোষাক বানিয়ে ফেলবো
আমি সহজে অস্থির হই না
আমার হাত এসব দূরে ঠেলে দেয়
অথচ দেখো অড়হড় ডাল ফেলে, পোস্ত ফেলে
আমি ফুলকপি পাতাবাটার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি
আমার গায়ের রং সবুজ
আমার চুলের জায়গায় থেঁতো করা পাতা
আমি সেই আত্মহত্যাকামী চাষিটির নিবিড় বন্ধু
সন্ধেবেলার দুটি পায়ের ফাঁকে বসে
পুকুরে ভাসিয়ে দেবো মাটির প্রদীপ
আকাশে উঠে আসবে ফুলকপির মতো বড় চাঁদ
কুচো চিংড়ির ঝাল
শরীরে করাত নিয়ে যারা জন্মায় তাদের
একগ্রাসে খেয়ে ফেলে তুমুল বিরহ হয়।
মুখের ভেতর আরেকটি মুখ, আরেকটি মাথা
যখন চিবিয়ে খাই মনে পড়ে রাষ্ট্রের কথা,
আমাকে ঠিক এভাবেই গিলে নিয়ে সংবিধানের
চোখ থেকে জল ঝরে পড়ে।
আমার শরীরে করাত নেই
আমি জিহ্বা চিরে দিতে পারি না
গলাকে ফালাফালা করে নেমে যেতে পারি না যন্ত্রের কেন্দ্রে
শুধু নির্বিষ জালে ধরা পড়ে যাই
অল্প কষিয়ে রাঁধো, নিভু নিভু আঁচে জল মরে এলে
আমাকে বিলিয়ে দাও সহস্রধারায়
স্বাদ ঠিক ততদূর হোক যতখানি বিরহ যায় আইনমাফিক
কচুর লতি
চিরকাল গরিবিয়ানায় থেকে যে উঠে এলো সম্মানে
তাকে এত সহজে ছেড়ো না,
তার কাছে শিখে নেওয়া যাক সমাজবিদ্যা।
ধরা যাক গ্রামের বধূটি এনে তুলে দিচ্ছে সন্তানের হাতে
থালায় জোৎস্না মাখা অন্নকূট
অথবা শুরুর অধ্যায় হিসেবে সপাট মাংসের আগে
খাবার টেবিলে রাখা জারানো বৈভব
হে আমার কচুর লতি
যেভাবে মাটির দাওয়ার থেকে ডাইনিং স্পেস একাকার করে দিলে,
এই পোড়া জাতের দু’গালে হালকা চাপড় মেরে
সমাজ অপেরায় মনে হয় তুমিই বিবেক
ভীন্নস্বাদের ঝঁাঝ পেলাম
অসাধারণ সব কবিতা পড়লাম