অজিত সিং বনাম অজিত সিং <br /> চতুর্ত্রিংশতি পর্ব <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
চতুর্ত্রিংশতি পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং দ্বাবিংশতি পর্ব তৃষ্ণা বসাক অজিত সিং প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি।’ ‘বেওয়ারিশ’ গল্পের চানাচুরওলা এবার ঢুকে পড়েছে বাংলার শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষাজগতের ক্ষমতার অলিন্দে।খুন, যৌনতা, প্রতিশোধ, নিয়তিবাদের রুদ্ধশ্বাস সুড়ঙ্গে সে টের পাচ্ছে- -বহুদিন লাশের ওপর বসে বারবার হিক্কা তুলেছি আমরা -বহুদিন মর্গের ভেতরে শুয়ে চাঁদের মুখাগ্নি করেছি আমরা -অন্ধ মেয়ের মউচাক থেকে স্বপ্নগুলো উড়ে চলে গেছে (জহর সেনমজুমদার) এই সবের মধ্যে বাংলার কি কোন মুখ আছে আদৌ? থাকলে কি একটাই মুখ? না অনেক মুখ, সময়ের বিচিত্র রঙে চোবানো? বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাংলার অজস্র মুখের ভাঙ্গাচোরা টুকরো খুঁজে চললেন তৃষ্ণা বসাক, তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এ । সব কথনই রাজনৈতিক, সেই আপ্তবাক্য মেনে একে কি বলা যাবে রাজনৈতিক থ্রিলার? সিটবেল্ট বাঁধুন হে পাঠক, ঝাঁকুনি লাগতে পারে। প্রকাশিত হল উপন্যাসের ৩৪তম পর্ব। এই উপন্যাসের সব চরিত্র কাল্পনিক।

৩৪

এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছিল সে। মা, সে আর রূপা –তিনজন মিলে একটা জায়গায় বেড়াতে গেছে। শীতঋতু। চারদিক চনচনে রোদে ভেসে যাচ্ছে। ভাঙ্গাচোরা রাস্তা ক্রমে নির্জনতায় পৌঁছে যায়, শাল, মহুল গাছগুলো অনেক দূরে দূরে দাঁড়িয়ে বিস্ময়ে যে বিশাল জলশরীর দেখছে, সেটাই তুর্গা লেক। তার বুকের মাঝখান পর্যন্ত একটা ব্রিজের মতন চলে গেছে।কিন্তু এদিক দিয়ে সেটা একটু গিয়েই বন্ধ। এই নির্মাণের মানে বুঝতে পারছে না কেউ। রূপা, মা তাকে জিগ্যেস করছে ‘এটার মানে কী? কেন এটা তৈরি হয়েছে আদৌ?’ মার্কেজ বিশ্বাসই করতে পারছে না, তাকে কেউ এসব জিগ্যেস করতে পারে। সে তো একটা ঘৃণ্য নরকের কীট। সারা বছর কেটে যায় একটা খুন-আত্মগোপন- আবার একটা খুনের বিষ চক্করে। সে নাকি মা বৌ নিয়ে বেড়াতে এসেছে, এত সুন্দর একটা জায়গায়! তার ওপর সে কি এতই নির্ভরযোগ্য ছেলে আর স্বামী যে ওরা তাকে একটা কিছু দেখে উত্তেজিত হয়ে তার মানে জানতে চাইছে! আর সে খুব দার্শনিক ঢঙ্গে বলছে ‘জগতে সব কিছুর কি কোন মানে হয়? এটা জাস্ট এমনি। একটা অস্তিত্ব। তুমি আমি আকাশ নদী যেমন, তেমনই এই নির্মাণটাও। আছে।’ বলে সে চলে যাবে জর্জ ম্যালোরির কথায়। ম্যালোরি এভারেস্ট অভিযাত্রী হিসেবে যত না বিখ্যাত, তার চেয়েও বেশি বিখ্যাত তাঁর একটি উক্তি। সবাই যখন তাঁকে জিগ্যেস করেছিল ‘কেন যান এত কষ্ট করে এভারেস্ট চড়তে?’ তার উত্তরে ম্যালোরি বলেছিলেন ‘বিকজ ইট ইজ দেয়ার’। ওই যে পাহাড়টা ওখানে দাঁড়িয়ে আছে, ওটা যেন একটা চ্যালেঞ্জ ছূড়ে দিচ্ছে মানুষের ঘরোয়া অস্তিত্বের দিকে। লোভ দেখাচ্ছে, এসো এসো, আর কত ঘরে শুয়ে থাকবে? এসব বোঝাবে মার্কেজ, আর শ্রদ্ধা আর সমীহ নিয়ে মা আর রূপা তার দিকে তাকিয়ে থাকবে। মা সস্নেহ বকুনি দিয়ে বলবে ‘বাব্বা, জ্ঞানের জাহাজ আমার ছেলে। বকে বকে গলা শুকিয়ে যায় না? রূপা একটু কফি দাও না আমাদের ফ্লাস্ক থেকে’ কফির কাপ এগিয়ে দিতে গিয়ে রূপা ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দেবে তার হাত।চোখে চোখে ইশারা করবে। সেই ইশারা পেয়ে সে মহুয়া গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়াবে, আর রূপা এদিক ওদিক তাকিয়ে তার ঠোঁটে দিয়ে যাবে চকিত চুম্বন। তারপর গাড়ি থেকে ছুটে নিয়ে আসবে গরম কফি ভরা ফ্লাস্ক, ঢালতে ঢালতে বলবে ‘কফির সঙ্গে আপনাদের কি কুকিও দেব মা?’ এই কুকি রূপার বেক করা, এই গাড়ি তাদেরই, কলকাতা থেকে সে-ই ড্রাইভ করে এসেছে। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কফি খেতে খেতে রূপা তিনজনের সেলফি তুলবে টুক করে। তাদের পেছনে চকচকে নীল রঙের নতুন গাড়িটা। ছোট, কিন্তু নিজেদের গাড়ি। না না নীল না, নীল না, লাল টুকটুকে রঙ গাড়িটার।ওর স্বপ্নের রঙও লাল। লাল রঙের গোল গোল বুদ্বুদ উড়ছিল ওদের চারপাশে। সে চমকে উঠল। কেউ কি রক্ত ছিটিয়ে দিয়েছে হাওয়ায়? বুকোর শরীরের রক্ত নাকি? তারপর মার্কেজ বুঝল ওগুলো রক্ত নয়, মোরগঝুঁটি ফুল ফুটেছে। কিন্তু ফুল কীভাবে ফুটল? গাছ তো মাটিতে গজায় নি। শুধু ফুলগুলো হাওয়ায় ভেসে আছে। কীভাবে হাওয়ায় ভেসে থাকতে পারে ফুল, অ্যালিসের সেই বেড়ালের হাসির মতো? তাদের অস্তিত্বটাও কি এতটাই অলীক, ওই যে অর্ধেক ঝুলন্ত ব্রিজ যেমন ভেসে আছে হ্রদের জলে? চারিদিকে কত যাতায়াত, কথা, জ্যান্ত জীবন। মহুয়া গাছের এপারে একটা আইসক্রিম ওলা, যে গর্ব করে বলছিল এক নজর দেখেই সে মানুষকে বুঝে যায়, কে চোর, কে সাধু, সব বোঝে সে। ওই যে একটু দূরে পাতার ঘর বাঁধা, অস্থায়ী। ভিন জেলা থেকে এসেছে সবাই গুড় বিক্রি করতে। প্রতি বছর খেজুর গাছ বাঁধা নেয় এরা। মা একটু পরে ওখানে যাবে। বলবে তুর্গা লেক দেখে লাভই হল মোটের ওপর। গুড় পাওয়া গেল টাটকা টাটকা। এইখানে একটা সঙ্কট তৈরি হবে। স্বপ্নের মধ্যের একটা স্বপ্নের সঙ্কট। যেখানে আদৌ যায়নি তারা, সেখান থেকে গুড় কেনে কী করে মা? যেখানে রূপার যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না, সেখানে ওর হাত থেকে গরম গরম কফিই বা কী করে খেল ও? আর তুর্গা? শব্দটা কোথা থেকে এল? স্থানিক আদিবাসী শব্দ নাকি সংস্কৃত তুরঙ্গ? ঘোড়া, ঘোড়াও কি ভেসে আছে হাওয়ায়? সেই ঘোড়ার মাথায় ফুটে আছে মোরগঝুঁটি ফুল? ঘোড়ার কি ঝুঁটি হয় মাথায়? ঝুঁটি কাদের হয়? ‘লাল ঝুঁটি কাকাতুয়া ধরেছে যে বায়না/ চাই তার লাল ফিতে চিরুনি আর আয়না’।
স্পষ্ট শুনতে পেল এই গানটা কে যেন জোরে জোরে গাইছে। ওই আইসক্রিমওলাটা কি? তাই তো মনে হচ্ছে। কী জোরে আইসক্রিমের ঠেলা গাড়ি ঠেলতে ঠেলতে ওর দিকেই আসছে ছেলেটা। ওর বুকের ওপর লেখা ‘রেখো মা দাসেরে মনে’। অদ্ভুত। বাংলা কবিতা লেখা টি শার্ট পরে আছে পুরুলিয়ার এক আইসক্রিমওলা। টি শার্টে বাংলা তো কতিপয় কলকাত্তাই যুবক যুবতীর ট্রেডমার্ক। কিন্তু ও এত জোরে মার্কেজের দিকে ধেয়ে আসছে কেন? মার্কেজ তো ওর কোন ক্ষতি করেনি। এই লেভেলের লোকের জন্য সুপারি কে দেবে? হাঃ না, না, ডোন্ট ইগনোর দা পাওয়ার অব আ কমন ম্যান। এ কিন্তু একটা কমন ম্যান, আম আদমি। এর সবচেয়ে সুবিধে হচ্ছে, একে কেউ সন্দেহ করবে না। লোকের ভিড়ে মিশে যেতে পারে। এদিকে তো মাঝে মাঝেই শোনা যায় অস্ত্রের ঘাঁটি পাওয়া গেছে। হয়তো তার চাঁই এই ছেলেটা, হয়তো ইনফর্মার, ওর আইসক্রিমের গাড়ি ভর্তি আর ডি এক্স।কথাটা মনে হতেই মার্কেজের গলা দিয়ে বিস্ফোরক, যেন আইসক্রিমের মতো গলতে গলতে নামতে লাগল। কি আশ্চর্য, ও তো আইসক্রিম খায়ইনি, ও খেয়েছে কফি, হোটেলে বানানো, আর রূপার হাতের তৈরি কুকি, বাড়ি থেকে আনা।
আচ্ছা, ওই যে সারারাত এই হাড়হিম ঠান্ডায় গুড় তৈরির বাহানায় এখানে পড়ে আছে যে লোকগুলো, তারা কি খুব সুবিধের? মা ওই যে গুড় কিনে আনল, হতে পারে, তার ভেতরেই বিস্ফোরক ভরা আছে। মার তো কোন বোধই নেই, কিনে দিব্যি গাড়িতে রেখে এসেছে। এখন গিয়ে আবার আইসক্রিমওলার সঙ্গে কথা বলছে। সারাদিন কটা লোক আসে এখানে? কত টাকার বিক্রি সারা মাসে? ছেলেটা বলছে, ‘মাসিমা, এই আইসক্রিম বিক্রি করে আমার চলে ভেবেছেন? কে চেনে বলুন এই তুর্গা লেক? হাতে গোনা কজন আসে। তার মধ্যে বাচ্চারাই যা চেল্লামেল্লি করে আইসক্রিম খাবে বলে। কটা বাপ মা কিনে দেয়? স্ট্যাটিস্টিক্স নিলে দেখবেন…’ খট করে কানে লাগে কথাটা। স্ট্যাটিস্টিক্স। ছেলেটা বলেই চলে ‘সত্যি কথা বলছি মাসিমা, আমার একটা অন্য ধান্দা আছে। এই যে গুড়ের ছাউনিগুলো দেখছেন, ওগুলো স্রেফ আই ওয়াশ।ওর পেছন দিয়ে একটা রাস্তা আছে, কেউ জানে না।ওই রাস্তা ধরে হাঁটলে একটা গ্রাম পড়বে, বাইরের লোক যেতে পারবে না সেখানে।’
মা সরলভাবে জিগ্যেস করে ‘কেন পারবে না? এরকম হয় নাকি?’
‘যেতে পারবে না। কারণ ঢুকতে গেলে একটা পাসওয়ার্ড লাগবে। সেটা ওরা জানে না।’
‘তবে কি ওরা ঢুকতে পারবে না?’
‘কেন পারবে না? আমি আছি কী করতে? আমার কাছে পাসওয়ার্ড আছে। আমাকে টাকা দিলে আমি দিই পাসওয়ার্ড। এইটাই আমার আসলি কারবার। পাসওয়ার্ড বিক্রির’
‘তাহলে যে একবার যাবে, সে তো বারবার যেতে পারবে’ ‘বাহ মাসিমা, আপনার দেখছি শার্প ব্রেন। ঠিকই বলেছেন। রাম গেলে সে শ্যাম আর যদু মধুকেও ঢুকিয়ে নেবে সেম পাসওয়ার্ড দিয়ে। তাই আমি প্রোগ্রাম সেট করে দিয়েছি। একজনের জন্যে একটাই পাসওয়ার্ড। অন্য কেউ গেলে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ হয়ে যাবে’
‘বাব্বা! কত কলকব্জা গো। তা এত ঝঞ্ঝাট করে কেনই বা যায় লোকে সেখানে? কী নাম গ্রামটার?’
‘এই একটা মোক্ষম প্রশ্ন করেছেন মাসিমা। কেন যায়? আরে পালাতে যায়, লুকিয়ে থাকতে চায়। শহরে এমন কীর্তি করে এসেছে যে ওখানে থাকলে ক্যাচ কট কট হয়ে যাবে। তাই এখানে আসে, এই আনুড়িয়া গ্রামে’
‘আনুড়িয়া!’ ভয়ানক চমকে ওঠে মার্কেজ। তা কী করে হবে? আনুড়িয়া তো দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায়, আর এটা তো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পুরুলিয়ায়, ওই তো তারা তিনজন বেড়াতে গেছে, সে, মা আর রূপা, রূপা সবাইকে কফির কাপ ধরিয়ে দিচ্ছে, সে ওদের অনেক বড় বড় কথা শোনাচ্ছে, এভারেস্ট, জর্জ ম্যালোরি। এই ছেলেটা এক নম্বরের গুলবাজ। বলে কিনা আনুড়িয়া! কিন্তু কথা বলতে বলতে ও বারবার গাড়িটার দিকে চাইছে কেন? কেমন একটা হাড় হিম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মার্কেজের শিরদাঁড়ায়। ও শুনতে পায় ছেলেটা বলছে ‘মাসিমা, আপনি গুড় কিনেছেন না? আমাকে একবার জিগ্যেস করলেন না? অজানা লোককে ওরা স্পেশাল গুড় বিক্রি করে’
‘স্পেশাল গুড়!’
‘যার মধ্যে টাইম বোম পোরা’
‘টাইম বোম!’
‘দশ, নয়, আট, সাত, ছয়, পাঁচ সরে আসুন মাসিমা, এইবার ফাটবে’
গাড়িটা উড়ে যাচ্ছে, মা রূপা মার্কেজ- সবার হাত পা মাথা উড়ে উড়ে গিয়ে পড়ছে জলে। না, না, চিৎকার করতে চায় মার্কেজ, কিন্তু গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোয় না। কোথায় ছিটকে যায় মা আর রূপার শরীর, দেখতে পায় না সে। অন্ধকার, চারদিকে ঘন অন্ধকার। যেমন হঠাৎ শুরু হয়েছিল, তেমনই হঠাৎ থেমে গেল সেই স্বপ্ন।সারা শরীরে ঘাম নিয়ে মার্কেজ চোখ মেলে দেখল সকাল হয়ে গেছে। সে শুয়ে শুয়ে দেখছিল এ বাড়ির উল্টোদিকে যে ইঁট বার করা বাড়িটা আছে, তার দেওয়ালে মায়া রঙের আলো। বাড়িটার সামনে একটা কদম গাছ দাঁড়িয়ে, তার কাণ্ডের আর পাতার ছায়াও আর ছায়ার মতো লাগছে না, মনে হচ্ছে আরেকটা গাছ।অন্য রকম আলো দিয়ে বানানো।
এই গ্রামে তার নয় নয় করে এক মাস তো হয়েই গেল, কোনদিন উল্টোদিকের দেওয়ালে এমন গাছ হতে দেখেনি তো। একটা কারণ অবশ্য, এ বছর কেবলই ঘ্যানঘ্যান বৃষ্টি, দিনরাত বৃষ্টি। মার্কেজ ঘুম ভাঙলেই দেখত বৃষ্টি পড়ছে, ঘুমিয়ে পড়ত বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে। আজ অনেকদিন পর রোদ উঠেছে, আর এমন হালকা মন ভালো করা রোদ, আজ দিনটা খুব ভালো তো বটেই। কারণ ঘুম থেকে উঠেই সে ফোনে মেসেজ পেয়েছে। ‘চলে এসো, সব মিটে গেছে’।আর তাকে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকতে হবে না। কী জ্বালান জ্বালাল এই বুকো। আরে বাবা, মরতিস তো একদিন না একদিন।সেই কি বাঁচবে নাকি বেশিদিন? যেকোন দিনই থ্যাতলানো ইঁদুরের মতো পড়ে থাকবে নর্দমার গর্তে। বুকোকে কত শান্তিতে, কত ভালো মরার ব্যবস্থা করে দিল সে। অমন সন্তানের মা হয়ে এত শোর মাচানোর কি আছে? জাস্টিস জাস্টিস! হাঃ একে বলে চোরের মার বড় গলা।
আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকলে এমনিতে তার কোন সমস্যা হয় না। শুধু নতুন নতুন বই কেনার নেশা তার, সেটাই হয় না। খাওয়া শোয়ার বায়নাক্কা তার কমই। রেলওয়ে প্লাটফর্ম থেকে গাছতলায় একটা চাদর পেতে সে শুয়ে পড়তে পারে। খাওয়াও খুব বাহুল্যবর্জিত।তার দলের ছেলেরা যেমন একটা অ্যাকশন সেরে এসে মাটন বিরিয়ানি, চিকেন চাঁপ কি বিফ ভুনা খাবার জন্যে হেদিয়ে মরে, তাদের বুঝিয়ে পারা যায় না, ওরে, এখন এমনিতেই শরীর গরম হয়ে আছে, এখন হালকা কিছু খা। তা সে কথা ওরা শুনলে তো। সব হাভাতে ঘরের ছেলে। হাতে কাঁচা পয়সা এলেই ওড়ানোর জন্যে পাগল। ফোতো কাপ্তেনের দল সব। একটা ছেলে তো অ্যাকশনে হাতে গুলি লেগেছে, অঝোরে রক্ত ঝরছে, চট করে হসপিটালেও তো নিয়ে যাওয়া যায় না সবসময়, ধরা পড়ে যাবার সম্ভাবনা। এসব কেসের জন্য চেনা ডাক্তার ফিট থাকে, কিন্তু সে ছিল একটা বেপোট জায়গা, রামদেবপুর, মাছের ভেড়িতে ঘটেছিল ব্যাপারটা, কাছেপিঠে একটা চায়ের দোকানই নেই, তায় ডাক্তার। তা ওরা যখন হাতে হাতে মালটাকে নিয়ে গাড়িতে তুলছে, একটা জামা ছিঁড়ে বেঁধে দিয়েছে হাতে, তখন সেই কেতো, আদরের নাতজামাই, বলে কিনা খিদে পেয়েছে, বিরিয়ানি খাব। বাকিরা ওকে তখন এই মারে তো সেই মারে। শালা মরতে বসেছিস, তাও বিরিয়ানি খাবার লোভ গেল না। তাজমুল হেসে গড়িয়ে পড়তে পড়তে বলেছিল ‘বেঁচে ফিরলে বাপিদার কোলে বসে কত বিরিয়ানি খাবি খা না, শালার শখ দেখো’
সেদিন মার্কেজ স্পষ্ট বুঝেছিল, বিরিয়ানিই এখন তাদের জাতীয় খাবার। ভোটে দাঁড় করালেও বিরিয়ানি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়তে পারে।
কিন্তু তার ওসব খাবার এমনি দিনেও ভালো লাগে না। যদি বাড়ি ফেরার সুযোগ থাকে, তবে যত রাতই হোক সে হালকা মাছের ঝোল ভাত খায়। বাইরে থাকলে রুটি বা পাঁউরুটি দিয়ে দুধ।
ফিরে যাবে। ফিরে যাবে। উহহ কী আনন্দ হচ্ছে তার, কিন্তু সে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার মতো কেউ নেই। এই গ্রামে সে আগেও এসেছে, কিন্তু এখানে কোন চেনা হবার উপায় নেই, কোনবার তাকে এক বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয় না, কোনবার এক লোক দেখতেও পায় না সে। সেটা কি কোন ম্যাজিক না পুরোটাই আগে থেকে ঠিক করা, কে জানে!
এবার এসেও একই ঘটনা ঘটেছে। এবার তাকে যে বাড়িতে রাখা হয়েছে, সেরকম সুবিধে গ্রামে আশাই করা যায় না। তার ঘরের লাগোয়া বাথরুম এবং তা বিলিতি স্টাইলের। অন্য অন্যবার তাকে বাথরুম সারতে উঠোন পেরিয়ে, বা খিড়কির দিকে যেতে হত, যদিও কেউ তাকায় না তার দিকে, মনে হয় যেন কেউই নেই মার্কেজ বলে দুনিয়ায়, একটা হাওয়ার মানুষ হেঁটে যাচ্ছে, গ্রামের লোকেরা এত কৌতূহলশূন্য হয় নাকি? কেমন অলীক লাগে ব্যাপারটা।তাই নিয়ে হাইকম্যান্ডকে বলেছিল একবার, তাই এবার এই ব্যবস্থা। এখানে সারাদিনে বার চার পাঁচেক একটি মেয়ে এসে খাবার, জল দিয়ে যায়, ওর কোন কিছু আনানোর থাকলে, ওষুধ ইত্যাদি সেটাও এনে দ্যায়। মেয়েটার বয়স দেখলে চোদ্দ পনেরো মনে হয়, সালোয়ার পরে, কিন্তু হয়তো আরও বেশি। ওর নাম কুন্তী। লোকের ডাক থেকে বুঝেছে।
কদমের ছায়া আস্তে আস্তে ঘন হচ্ছিল দেওয়ালে। মনে হল এ ছায়া যেন দেওয়াল ছাড়বেই না, যদি রোদ্দুর পড়েও যায়, এ ছায়া থেকে যাবে। এখানে না এলে এমনটা দেখতে পেত না সে। কিন্তু এখানে এল কেন সে? সব কিছু থিতিয়ে পড়ার জন্যে সে তো পুরুলিয়াই গেছিল, ফিরতে না ফিরতেই খবর এল, আরও কিছুদিন তাকে কলকাতা থেকে দূরে থাকতে হবে। সেই বুকোর কেসটা এখনো ঘাঁটছে পুলিশ। তাই চাঁদমারি ছাড়িয়ে বড় বিবিমা তলা ছাড়িয়ে আনুড়িয়া গ্রামে চলে আসতে হল তাকে।এই আনুড়িয়ার কথাই কি বলছিল সেই আইসক্রিমওলা? এটা তাহলে একটা আত্মগোপনের গ্রাম।তাহলে সে ছাড়াও কি অনেকে লুকিয়ে আছে এখানে? কিন্তু এখানে ঢুকতে গিয়ে তাকে তো কোন পাসওয়ার্ড দিতে হয়নি। তাহলে কি তার হয়ে কেউ আগেই দিয়ে রেখেছে? কে সে?

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes