গুন্টার কুনার্টের দশটি কবিতা
গুন্টার কুনার্ট। জার্মান আধুনিক কবিতার এক স্তম্ভ। ১৯২৯ সালে জন্ম। ২০১৯ সালে মৃত্যু। যেমন দেখেছেন ফ্যাসিস্ট জার্মানি, তেমনই দেখেছেন পূর্ব জার্মানিতে সোভিয়েত আগ্রাসন। ' সাইলেন্ট ডায়ালগ' তাঁর এক বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। উল্ফ বেয়ারম্যানের নাগরিকত্ব যখন কেড়ে নেয় কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানি তখন তিনি একটি পিটিশনে সই করে নাগরিকত্ব হারান। দু বছর বাদে পশ্চিম জার্মানি চলে যান।
শীত
কার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকব
কোন সেতু ধরে পেরিয়ে যাব বরফের নদী
কার হাত ধরে আগুনের থেকে ছিনিয়ে৷ নেব উষ্ণতা
তা তোমায় বলব না
তুমি কেড়ে নেবে বলে আমার৷ বাগান করিনি
তুমি দেওয়াল তুলবে বলে লিখিনি এ শহর
তুমি হত্যা করবে বলে আমি জন্ম নিইনি
তুমি পিশাচ, কিন্তু আমার রক্তের রঙ নীল নয়
শুধু এই কথাটুকুই মনে রেখো
গুলাগেও ফুল ফোটে, এর অর্থ
অতটা অন্ধকার তুমিও পারোনি গড়ে তুলতে
স্যালাইন
দেশ ভাগ হয়ে গেল। ওদিকে আমার একটি হাত
আর এদিকে আমার আরেকটি
হাওয়া যায় এ দেশে ও দেশে
শব্দ যায় এ দেশে ও দেশে
শুধু আছে এক নিরাসক্ত পাঁচিল
যা আমাদের কাউকে চেনে না
তাদের প্রত্যেকের মুখ স্তালিনের মতো
আমার দেশ শুয়ে থাকে
যেভাবে হাসপাতালে ছিন্নভিন্ন রোগী
তবু প্রাণ ধুকপুক করছে
অসীম সূর্যের আলো এসে পড়ছে
ড্রিপ ড্রপ ড্রিপ ড্রপ ড্রপ
নৈশভোজ
স্তালিন ও হিটলারের দেখা হয় মাঝেমাঝে
এক বিরাট কবরখানার উপর বসে
তাঁরা,নৈশভোজ করেন
আবহে বাজে বিটোভেন। ফিফথ সিম্ফনি।
মাঝেমাঝে চাইকভস্কি।
স্তালিন ও হিটলার জার্মানি খান
ভাগ করে নেন কাঁটাচামচে
অবাধ্য কুকুরের মতো আসে আমেরিকা।
ছিনিয়ে নেয় মাংসের টুকরো
ভয় দেখায়
কবর থেকে চিৎকার ওঠে
জল দাও আত্মা দাও সম্মান দাও মাটি দাও
কেউ শুনতে পায় না
কবরে নৈশভোজ চলে
পাসপোর্ট
বিশ্বাস করুন, বুলেটে কারোর নাম লেখা ছিল না
বন্দুকেও না
ওরা শরীর খুঁড়ে বুলেট বের করেছে
নাম লিখেছে
তার পর রেখে এসেছে দেওয়ালে
যার কোনও দেশ নেই
পতাকা
আমি যে রঙকানা হয়ে পড়েছি
কারণ আমার শিকড় ওরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে
সেই শিকড়
গাছ হবে না তাদের
বাগান হবে না
একটি কুঠার পড়ে আছে
তাতে মাটি লেগে।
সে মাটি আমার দেশের
যা তোমরা ভাগ করতে পারোনি
যুদ্ধ
বরফের মধ্যে
একটি গুহা
হাঁ করে আছে
এ গুহায় রূপকথা থাকে
ভালো থাকার দেশ কোথায় আছে
এ কথা ভাবতে ভাবতেই
বরফের সেই গুহা থেকে চিৎকার করে ওঠে
পুরোনো ভাল্লুজ
আবার সে গর্তের মধ্যে ঢুকে যায়
বরফের মধ্যে
চিৎকার করে ওঠে
বরফ
লাশ
মাথার উপরে আর বিমান চক্কর কাটছে না
কামানের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে না ইতিহাস
ঘরের ভিতরে আর ট্যাঙ্ক নেই
কারণ ঘর নেই
মাথার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে
ড্রাগন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
রাস্তা
ভাষা এবং নীরবতার মধ্যে
একটি হাইওয়ে চলে গেছে
আমি তার নাম দিতে চাইনি
কিন্তু সেই হাইওয়ে
ভেঙে দিচ্ছে
আমাদের ছোটো ছোটো রাস্তাগুলো
প্রতিটি মানুষের মুখে
লেগে আছে কবরের ঘ্রাণ
সাহস
দেওয়াল ভাঙতে যারা গিয়েছিল
তাদের কবর দেওয়ালের নীচেই
পড়ে আছে
দেওয়াল ভাঙতে যারা যায়
তাদের মৃত্যু হয় না
কবরের ডালা খুলে তারা
মিছিল করে
দেওয়াল ভাঙে
সেই ভাঙার শব্দ শুনতে পায় না কেউ
তাই
দেওয়াল একদিন
ভেঙে যায়
ক্রিসমাস
ভালোবাসার জন্ম দিতে গিয়ে
ভালোবাসাই লুকিয়ে থাকে
যারা জানে, একনাত্র তারাই জানে
একমাত্র তারাই
ভালোবাসার জন্ম দেয়
মরে
অনুবাদ – হিন্দোল ভট্টাচার্য