সরোজ দরবার-এর গদ্য

সরোজ দরবার-এর গদ্য

এ জীবন, অসীম দরিদ্র…

লাল লাল চাকা চাকা জ্যোতির্ময় দাগ; জীবনের গায়ে; কী করে কবে যেন ফুটে উঠেছে অবতারগুণ; এমতাবস্থায় আর তাকে প্রশ্ন করা যায় না কিছুতেই, যে, তুমি কেমন আছ? তোমার অতীত; বর্তমান! আর ভবিষ্যতের কথা কতখানি ভাবতে পারছ তুমি! তুমি কি জ্যান্ত আদৌ! উত্তর নেই, যেহেতু সত্যি বলতে প্রশ্নগুলোই ছিল না কোত্থাও| দূর থেকে শুধু দেখা যায়, সমস্ত প্রশ্ন ও সন্দেহের ঊর্ধ্বে ওঠা একটা জীবন জেগে আছে চুল্লির খিদে নিয়ে| সে জানে আর মানে, যে, আগুনই একমাত্র উত্তর, যার কাছে সব প্রশ্নই সমান, অথবা, কোন প্রশ্নই গ্রাহ্য নয়| আগুন বস্তুত একপ্রকার যন্ত্র, যা সুচারু ভাবে তৈরি করে ছাই| ছাইয়ের ভিতর জেগে থাকে সমূহ প্রশ্নের নাভিকুণ্ড, আমরা প্রথামাফিক তাকে ভাসিয়ে দিই জলে| এই পর্যন্ত বলে মনে হল, এই জীবন কি চেয়েছিল আদপে, এমন প্রশ্নহীন অবতার হয়ে উঠতে? কিন্তু যা বোঝা যায় না আর, তা হল, এই প্রশ্নটুকুও এখন আদৌ তাকে করা যায় কি-না!
সেবার সারিপুত্ত বুদ্ধকে বলেছিলেন, হে প্রভু, আপনার মতো জ্ঞানী আর দ্বিতীয়জন নেই| না অতীতে কেউ ছিলেন| না ভবিষ্যতে কেউ হবেন| আপনিই শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী| বুদ্ধ শুনলেন; স্মিত হাসলেন| তারপর বললেন, সারিপুত্ত, তুমি নিশ্চিত অতীতের সকল জ্ঞানীর জ্ঞানের মাত্রা অনুধাবন করেছ| সারিপুত্ত জানালেন, না, তা তিনি করেননি| বুদ্ধ জানতে চাইলেন, তাহলে নিশ্চিতই ভবিষ্যতের সব জ্ঞানীদের জেনেছ? সারিপুত্ত এবারও বললেন, না| বুদ্ধ বললেন, তবে নিশ্চয়ই আমি যা জেনেছি, তার সবটুকুই জেনেছ| সারিপুত্ত সবিনয়ে জানালেন, তা জানা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়| বুদ্ধ তখন বললেন, তুমি অতীত, বর্তমানের জ্ঞানীদের কথাই জানো না; তাহলে এই সিদ্ধান্তে কী করে উপনীত হচ্ছ! কেনই বা এমনতর কীর্তন তোমার! অর্থাৎ, সিদ্ধান্ত এই যে, বুদ্ধ নিজে বোধহয় অবতার হতে চাননি! ভক্তেরা, কোনও কোনও ভক্তেরা, তাঁর গায়ে লেপে দিয়েছে অবতার-চন্দন| বুদ্ধ তা থেকে মুক্তি পাননি| পাননি বলেই তিনি ধর্ম হয়ে গেলেন| ধর্মের প্রতিদ্বন্দ্বিতা একদিন খেয়ে ফেলল তাঁকেও| অজস্র বাঘ ঘুরে বেড়ায় যে অরণ্যে, সেখানে যুক্তি, ক্ষীণপ্রাণ রোগা মেয়েটির মতো কোনক্রমে বাঁচে| স্তন শুকনো তার, যেন সন্তান বহু চেষ্টাতেও পায় না পুষ্টিরস| ফলত অন্ধকার নেমে আসে| অথচ ভুলে গেলে চলবে না, যে, বুদ্ধ চেয়েছিলেন একটা প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রত্যেকের নিজের ভিতরে|
অতএব যে কথা উঠেই পড়ে শেষমেশ, এ জীবন কি তবে এড়াতে পারে না বুদ্ধনিয়তি! প্রদীপ কামনা করে সে-ও কি তবে শেষমেশ সেই অবতার, যাকে নেমে পড়তে হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায়! কে বড়ো? কে শ্রেষ্ঠ? কে তীব্রতম? আমি যা বলেছি কেন তুমি মান্য করোনি! আমি যা ভাবছি কেন ভাবছ না তুমি! আমার করোটির ভিতর সমস্ত নীল ধোঁয়া কেন ঢুকিয়ে নিচ্ছ না তুমি তোমার মগজে! এইসব হাওয়া ওঠে! এইসব হাওয়ায় ক্রমে কেঁপে ওঠে শিখা; প্রদীপ নিবে যায়! তখন, সেই অন্ধকারের ভিতর, জীবন এক নিমীলিত নয়ন প্রাজ্ঞজন যেন, আসলে দু-চোখে কালো দেখে প্রকৃত প্রস্তাবে; নিজের ভিতর থেকে বের করে আনে লুকোনো সারিপুত্ত; তারপর বলে, তুমি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী – বলে নিজেই নিজেকে – তোমার তুল্য মহাজ্ঞানী না ছিল আগে, না হবে পরে| তার গায়ে তখন লাল লাল চাকা চাকা দাগ; অবতারগুণ ফুটে ওঠে; এবার তাকে ঐশী ক্ষমতা আয়ত্ত করতে হবে, অন্তত ছেনে নিতে হবে ভণিতাটুকু| হয়ে উঠতে হবে আগুনের পাহারাদার, চুল্লীর এক ও অদ্বিতীয় প্রেমাষ্পদ|
এই শালার জীবন নিয়ে কী করব? একে না রাখা যায়, না ফেলা যায়! এই কথাটুকু যে বলেছিল, ইতিহাস তাকে মনে রাখবে না| কেননা ঘামের আলাদা কোনও মহাকাব্য নেই| কেননা শ্রমের জন্য কেউ লেখেনি কোনও ধর্মগ্রন্থ| অতএব সেই রিকশাচালক, চেন পড়ে যাওয়ার দরুণ যে জীবনকে দোষ দিয়েছিল, তার নাম আমাদের গোচরে নেই| শুধু তার দিকে ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নটুকু উদ্ধার করে জানা গেল, সেটি ছিল এরকম, সামান্য চেন পড়ে যাওয়ার দরুণ জীবনকে এত দোষারোপ কেন? এরপর জানা যায়, সেই রিকশাচালক যারপরনাই বিস্মিত হয়ে বলেছিল, রিকশা আর জীবন কি আলাদা! রিকশা রাখাও যা, জীবন রাখাও তা-ই| রিকশা না-থাকলে জীবনও নেই| সে জানিয়েছিল আরও, রিকশা থাকে কখনও কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি| যদিও একটা জীবন সে চিরকাল কামনা করে এসেছে, যেখানে থাকবে না চেন-পড়ে-যাওয়া| এ-জীবনে সে অন্তত হাজারবার চেন তুলে চালিয়েছে জীবনকে, আর জীবন আরও হাজার বার চেন ফেলে আটকে দিয়েছে তার চলা| এর বদল চায় সে| কিন্তু কে এনে দেবে বদল! রিকশার চেন পড়বে না, এরকম প্রতিশ্রুতি তাকে আজ অব্দি দেয়নি কোনও ইশতেহার| অগত্যা সে, ঈশ্বরকে জানায়, একটা জীবন, ঠাকুর, একটা জীবন দাও, যেখানে আর থামতে হবে না| ঠিক এইসময় হাওয়া ভারী হয়ে ওঠে; আর সেখানে ভেসে আসে এমন সব প্রতিশ্রুতি, যা প্রতি মুহূর্তে বিস্মিত করে স্বাধীনতাকে| ধর্ম নিজেই এক আশ্চর্য ইশতেহার| সব ধর্ম; সব ধর্মেরই আছে অঢেল প্রতিশ্রুতি! প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির দুখানা দণ্ড ছুটে গেছে সেখানে পাশাপাশি, কোনও একদিন অসীমে মিলবে বলে| অসীমকে কে দেখেছে! কেউ না| অতএব সেই অসীমে কেউ একজন সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে, প্রায় সব ধর্মেই দেওয়া আছে এমন হদিশ| কিন্তু সেই সবকিছুর ভিতর রাখা আছে এক আশ্চর্য কৌতুক! যা বলে, যদি তুমি নিজে অমুক তমুক এটা সেটা হও| তোমার নীতির নির্ধারক তুমিই; যদি তুমি সেই নীতি মেনে মেনে চলো, তবে তুমি অমুক অমুক পাবে| ততদিন অবশ্য চেন পড়বে, আর চেন তুলবে; আর মাঝে মাঝে বলবে, এ শালার জীবন নিয়ে কী করব!
জীবনের উলটো দিকে কিচ্ছু নেই| এক প্রস্তাবে, আবার আছেও| জীবনের ওপিঠে আছে অন্যতর জীবন| মলাটের উলটোদিকে যেমন পিছনের মলাট| কথা হল কোন জীবনটা বর্তমানে সামনের দিকে আছে, সেইটেই বুঝে ওঠা যায় না| আমাদের অতীত আছে| তার মুখ ঢাকা ঘোমটায়, বেশিরভাগ সময়| আমাদের ভবিষ্যত আছেই| কিন্তু পরে আছে অনিশ্চিতের গা-ঢাকা পোশাক| এর মাঝে পড়ে ফাঁপরে জীবন; কখনও তার মনে হয় সে বোকা, অসহায়; সে নিয়তি আর ভয়ের হাতের পুতুল একখানা| কোন অনির্দিষ্টের দিকে যে সে ছুটে চলেছে সে নিজেই জানে না| আবার খানিকটা সময় পরে তার মনে হয় সে সর্বজ্ঞ; সে জানে না এমন কিছু নেই| আর যা সে জানে, সেটাই ধ্রুব| অতএব আকাশে দ্বিতীয় কোনও নক্ষত্র নেই| ভিতর থেকে তখন বেরিয়ে আসে তার সারিপুত্ত; আর তাকে অবতার করে দেয়; প্রদীপ নেভে; জ্বলে ওঠে আগুনের শিখা|
এই আগুন এক আশ্চর্য যন্ত্র – আমরা তো গোড়া থেকেই জানি – যা কেবলই ছাই তৈরি করে| মগজ, মেধা, মনন সবকিছু সে খেয়ে ফেলে একমাত্রিক ক্ষুধায়| সকলই তার কাছে একরকমের হবিষ্য| বিনিময়ের ছাই ওড়ে যখন রাস্তায়, তখন তা চোখে পড়লেই চোখ জ্বালা, চোখ থেকে জ্বল পড়া ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা| বহুকাল একে অশ্রু হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, আর অশ্রুনিবারণের জন্য লেখা হয়েছে গাদা গাদা পুথি| কিন্তু পুথিদের কাছে কেউ জানতে চায়নি, এত জল ধারণে তারা রাজি ছিল কিনা! ফলে ক্রমশ ভুল আর বিরক্তিকর ব্যবহারে পুথিদের রাজত্ব ধসে গেছে এক সময়, ক্ষয় লেগেছে তাদের প্রশাসনে| এখন উইপোকারা; ধর্ম আর তথ্য সম্পদ তাদের; এর উপরই বেঁচে আছে তারা; আবার খেয়েও চলেছে একেই; উইপোকাদের আশ্চর্য পানশালা এই পৃথিবীর ভিতর জীবন এখন কী করে বেঁচে থাকবে! অনেক ভেবে ভেবে সে ক্রমে তাই মেগালোম্যানিয়াক! কিংবা অবতার! তার স্নিগ্ধতা চুরি হয়ে গেছে বলে সে ক্রমশ বিস্ময়হীন, উতসবহীন; অর্থাৎ অসীম দরিদ্র|
তবুও জীবন; যেন সে সেই আশ্চর্য রিকশাচালক| যে জানে, এ জীবনে চেন-পড়ে-যাওয়াই নিয়তি| তবু একে ফেলা যায় না, যতই রাখতে মন না-চাক! সে তাই কামনা করে একটা হোঁচটহীন যাত্রা; ঘাম আর শ্রমের| যেখানে ধর্মের ইশতেহার অপ্রয়োজনীয়| প্রতিশ্রুতিই প্যাডাল ঘোরানোর একমাত্র শর্ত ও অবলম্বন নয়| এই বাসনায় সারাদিন সে ঘোরে আর ঘোরে| কত পথ পার হয়ে যায়, তবু সে ফুরিয়ে যায় না, শেষ হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না কোনও ভাবে| সূর্য সাক্ষী করে সে ঘুরিয়ে যায় চাকা| সময় থেকে বেরিয়ে আসে পরবর্তী সময়| কখনও অন্ধকার নেমে এলে সে শুধু জ্বালিয়ে নেয় একটা আলো| প্রদীপ; তার নিজের জন্যে; নিজেই নিজেকে চালানোর জন্য|
ঘরে তার কেউ নেই| নইলে সে বলেই ফেলত এই অবতারের বহুরূপী হয়ে থাকা তার আর ভালো লাগে না| সে ঘামের ভিতর, ভুলে যাওয়া নামের ভিতর মিশে মিশে থেকে যেতে চায়| উত্তর নয়, একখানা প্রশ্নের ভিতর সে লিখে রাখতে চায় তার পুনর্জন্ম; যে প্রশ্ন প্রতিবার, প্রতি ধর্মে, ঈশ্বরে, ঝড়ে, অন্ধকারে তাকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কেমন আছ? এই প্রশ্নটুকুর প্রশ্রয় ব্যতীত কেবলই চুল্লির প্রহরযাপন; আগুন আর সেই হেতু ছাই; ফলত অসীম দরিদ্র এবং অবতারগুণে কৃত্রিম হয়ে থাকা| এই কি কাম্য ছিল!
ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না যে, এই এতকিছুর পরেও জীবন কিন্তু ভোলেনি, যে, একখানা প্রদীপ জ্বালবে বলেই একদিন সে সভ্যতায় ছড়িয়ে দিয়েছিল আলোর বীজধান| আলোর ফসল ছাড়া, অতএব, আর সমস্ত সম্পদই তার কাছে অর্থহীন এবং পরিত্যাজ্য| অবতার হয়ে ওঠার আগে সে মূলত এই কথাটাই বলতে চেয়েছিল প্রতিবার| চায় এখনও; শুনতে শুধু ভুল হয়ে যায় আমাদের, সভ্যতার, প্রতিবার ভুল করে যারা তাকে বানিয়ে ফেলে অবতার|

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
Checking your browser before accessing...