সমসময়ের কবিতা, চিরসময়ের কবিতা <br />  বেবী সাউ

সমসময়ের কবিতা, চিরসময়ের কবিতা
বেবী সাউ

স্পর্ধা আসলে লোভ। স্পর্ধা আসলে ঘৃণা, দুর্বিষহ জীবনযন্ত্রণা। আলো নেই তার। মুক্তি নেই। আছে শুধু ভয় দেখানোর মন্ত্র। শাস্তি দেওয়ার অজুহাত। আর তাই বোধহয় সে নিঃসঙ্গ, একাকী। তার সুখ আছে কিন্তু ভাগ করে নেওয়ার কেউ নেই; তার দুঃখ আছে কিন্তু চোখের জলে নৌকা ভাসায় না কেউ। তবে এই রাজতন্ত্র, রাজত্ব নিয়ে কী করবে তার আকাশ! রাজার কাছে, রাজত্বের কাছে, পাওয়ারের কাছে হয়তো বা ক্ষণিকের জন্য মাথা নত করে আছে সত্য! কিন্তু এই সত্য চিরন্তনের। পরের জন্ম, তার পরে জন্ম হলেও ঠিক তাকে মেনে নেবে, স্বীকার করবে, স্বীকৃতি দেবে। কিন্তু যা শক্তি দিয়ে পরাভূত, তাকে তো ছাড়তেই হবে পথ। কেননা, সমস্ত শক্তিই, পাওয়ার, আসলে ফুরানোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর এখানেই যেন কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে প্রকাশিত হয় শক্তির সত্যতা। যেন কবি সেই মিথ্যে শক্তিকে উপেক্ষা করে তাচ্ছিল্য ছুঁড়ে দিয়েছেন। উপহাস করে উপেক্ষা করেছেন সাজানো রাজত্বকে। আর তাসের ঘর যখন ভেঙে গেছে, যখন ভাঙার মুখে তখনই "বিজ্ঞান কি তখন থেমে ছিল?

অধিকার আমাদের চাই-ই। রক্ত দিক, হিংসা-ক্ষোভ-হত্যা দিক, সম্পর্ক ভেঙে যাক– রসাতলে যাক বোধ বুদ্ধি— কিন্তু আমাদের যেনতেন প্রকারেণ একটা জিনিসই চাই, অধিকার। আর সেই অধিকার নামক কিম্ভূতকিমাকার বস্তুটির পেছনে পেছনে ছুটতে ছুটতে আমাদের মোড় যাচ্ছে বেঁকে, পথ যাচ্ছে ফ্যাকাশে হয়ে আর উদভ্রান্ত, দিকভ্রান্ত পথিকের মত এই ছুটে চলা, কাকে যে কখন হত্যা করে ফেলছে অজান্তে; মাড়িয়ে, চেপ্টে, জাপ্টে, ঝাপ্টে এইযে দারুণ বিশৃঙ্খল একটা অবস্থা তার জন্য দায়ি কে? ফিরে তাকানোর সময়টুকুও নেই যে। প্রভু হয়ে ওঠার এই অদম্য বাসনা কী আসলে এই নুব্জ্য সমাজের কাছে বলিহারি হয়ে ওঠা কিছু! হয়তো কিংবা হয়তো না! কিন্তু যেটা হচ্ছে রাস্তা তো নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে, নিজেকেই হেঁটে যেতে হবে… আর সেই পথের দিক এবং নিশানা, আলো এবং আঁধার তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে! এই বিশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থায় তোমাকেই পেতে হবে তার আসল কর্মযজ্ঞ। পথ যেমন কেউ কাউকে দিতে পারে না, দিতে চায় না, তেমন কেউ জানেও না আসলে কোন পথটি আসলে সত্য! কোনপথে গেলে খুঁজে পাওয়া যাবে সেই হীরের খনি। কিংবা জ্ঞান- বোধ -সত্যের পথ। বিভ্রান্তিকর এই মনের টানাপোড়েনে, ভালো -মন্দ বিচারের পরে মানুষ একটু হলেও কি খুঁজে পায়, পেতে চায় আলোর, সত্যের ঠিকানা?

আর তখনই যেন দূর চিৎকার করে ওঠে… কেঁপে ওঠে চারপাশ…বলে,

” বরং তাকেই একদিন রাস্তা ছাড়তে হয়, যার স্পর্ধা আকাশ

ছুঁয়ে যায়।”

স্পর্ধা আসলে লোভ। স্পর্ধা আসলে ঘৃণা, দুর্বিষহ জীবনযন্ত্রণা। আলো নেই তার। মুক্তি নেই। আছে শুধু ভয় দেখানোর মন্ত্র। শাস্তি দেওয়ার অজুহাত। আর তাই বোধহয় সে নিঃসঙ্গ, একাকী। তার সুখ আছে কিন্তু ভাগ করে নেওয়ার কেউ নেই; তার দুঃখ আছে কিন্তু চোখের জলে নৌকা ভাসায় না কেউ। তবে এই রাজতন্ত্র, রাজত্ব নিয়ে কী করবে তার আকাশ! রাজার কাছে, রাজত্বের কাছে, পাওয়ারের কাছে হয়তো বা ক্ষণিকের জন্য মাথা নত করে আছে সত্য! কিন্তু এই সত্য চিরন্তনের। পরের জন্ম, তার পরে জন্ম হলেও ঠিক তাকে মেনে নেবে, স্বীকার করবে, স্বীকৃতি দেবে। কিন্তু যা শক্তি দিয়ে পরাভূত, তাকে তো ছাড়তেই হবে পথ। কেননা, সমস্ত শক্তিই, পাওয়ার, আসলে ফুরানোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর এখানেই যেন কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে প্রকাশিত হয় শক্তির সত্যতা। যেন কবি সেই মিথ্যে শক্তিকে উপেক্ষা করে তাচ্ছিল্য ছুঁড়ে দিয়েছেন। উপহাস করে উপেক্ষা করেছেন সাজানো রাজত্বকে। আর তাসের ঘর যখন ভেঙে গেছে, যখন ভাঙার মুখে তখনই
“বিজ্ঞান কি তখন থেমে ছিল? তীর্থের পাণ্ডাদের হই হই, তাদের লাল.

চোখ কি পেরেছিল পৃথিবীকে বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে, সূর্যকে

তার চারদিকে ওঠবােস করাতে?”

কেউ পারে না। পারে নি। পারবেও না। এই পরাজয় শাসকের মিথ্যে শাসনের। এই হার মিথ্যে হামবড়াইয়ের। আসলে পথ হচ্ছে নদীর মতো। ঠিক খুঁজে নেবে তার পথ। আর এই খোঁজার স্রোতেই ভেসে যাবে মাঝের বাধাবিপত্তি। শাসকের রক্তচোখও তখন এই স্রোতের কাছে তুচ্ছ। শুধু পথটিকে নদী করে তোলার জন্য চাই নিজের লক্ষ্য, এম, গোল পূরণ করার মতো স্রোত। সেই স্রোত যেন ভাসাতে পারে। এগোতে পারে বাধার পথ ডিঙিয়ে।

আবার যখন সত্য নত হয় লোভের কাছে! যখন সেও শিখে নিতে শেখে লাভ-লোকসানের পারসেন্টেজ —-তখন? তখন —
” বিজ্ঞান যখন প্রেমের গান ভুলে ভাড়াটে জল্লাদের পােশাক গায়ে চাপায়, আর

রাজনীতির বাদশারা পয়সা দিয়ে তার ইজ্জত কিনে নেয়,

আর তার গলা থেকেও ধর্মের ষাঁড়েদের মতােই কর্কশ

আদেশ শােনা যায় : ‘রাস্তা ছাড়াে! নইলে – ”

বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় ফুটে ওঠে নির্মম বাস্তব। আবার দো-টানায় বিভ্রান্ত পথের শেষে এক আশার আলো। এই বাস্তববাদী কবি বাস্তব থেকে তুলে আনেন তাঁর কবিতা, অক্ষরদের। তাই তার কাছে বড্ড কঠিন ছিল সেই ১৯৮৪-৮৫ সাল। রাজনৈতিক টানাপোড়ন, সমগ্র ভারতবাসীর স্বাধীনতা নিয়ে স্বপ্নভঙ্গের হতাশা তাঁকে যেন কবিতার রোমান্টিকসিজম, রহস্যরোমাঞ্চ থেকে বের করে এনে ফেলেছে কঠিন রক্তচোষাদের সামনে। কিন্তু কবি তাকেই শেষ পথ বলে মেনে নেননি। হতাশায় ভেঙে পড়েও নত হন নি লোভাতুর মিথ্যের কাছে। তাই আজ বোধহয় যখন ২০১৯ এ এসে আমরা তাকাই আজকের এই বাস্তবের দিকে তখন সেই “রাস্তা কারও একার নয়” কবিতাটি মনের কোণ থেকে উঠে আসে। চিৎকার করে উঠতে চায়। আশ্বাসবাণীর মতো, পুনরাবৃত্তি করে ওঠে অক্ষর,,ভাষা —
“ধর্ম যখন বিজ্ঞানকে বলে রাস্তা ছাড়াে!’ বিজ্ঞান কি রাস্তা ছেড়ে দেয়?

পােপের ভয়ে দেশান্তরী হয়েছিলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। সারাদিন

একটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে পায়চারি করতেন গ্যালিলিও গ্যালিলেই ;

তাঁকে পাহারা দেবার জন্য বসে থাকতাে একজন ধর্মের পেয়াদা, যার

চোখের পাতা বাতাসেও নড়তাে না।

বিজ্ঞান কি তখন থেমে ছিল? তীর্থের পাণ্ডাদের হই হই, তাদের লাল.

চোখ কি পেরেছিল পৃথিবীকে বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে, সূর্যকে

তার চারদিকে ওঠবােস করাতে?”

আর তখনই নিস্প্রভ বাস্তব উঠে দাঁড়ায়। রক্ত দিয়ে লেখে অধিকারের দাবি। দাবিদার হয়ে ওঠে সত্যের। আর সেই সত্যকে, অধিকারবোধকে ছড়িয়ে দিতে তৈরি হয় বিপ্লব, সমতা চাওয়ার আর্জি। ধর্ম নিয়ে মিথ্যেচারীদের মুখোশ খোলার তোড়জোড়। সত্যের হাত ধরে, বিজ্ঞানের পথে হেঁটে মানুষ দেখে সব রক্তের রঙ লাল। সব জীবনই প্রকৃত অর্থে অমূল্য। শাসকের কিংবা রাষ্ট্রের কারো অধিকারই নেই সেই জীবন, অধিকার কেড়ে নেওয়ার। শুধু বন্দুক দিয়ে অধিকারের তর্জনী উঁচিয়ে তোলা যায়, কিন্তু তার ফল তো আমরা ইতিহাসে বারবার দেখেছি। আর আজ এই অস্থির সময়ে যখন দেখি দেশের টালমাটাল অবস্থা, দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধঃপতন — তখন যেন আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তখন এই ‘রাস্তা কারও একার নয় ‘কবিতাটি মন শক্তির খোঁজে বারবার উচ্চারণ করে ফেলে। মনে পড়ে যায়, ধর্মের প্রকৃত অর্থ। ধর্ম আসলে একটা ধারণ। যেমন মানুষের মানবতাধর্ম, জলের ধর্ম, বাতাসের ধর্ম। মানুষ বুঝতে শেখে। ভাবনা বিস্তারিত করে। তারপর উঠে দাঁড়ায় সত্যের হাত ধরে। আর এই ধারণাটাই ভেঙে ফেলে ধর্মের মুখোশ। অন্ধকার কালো মুখোশকে। আর হাঁটে… সত্যের দিকে, আলোর পথে…

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar
    নিমাই জানা 4 years

    নিমাই জানা

    একটি অনন্য ও অসাধারণ অনুভবকে পড়লাম । যে অনুভব ক্রমশঃ আরও দীর্ঘতর হয় ছায়ার মতন । কবির সার্বজনীনতা এখানেই । খুব ভালো লিখেছেন । লেখা টি হৃদয়ে নিলাম । ভালো থাকবেন ❤️❤️🙏🙏🙏

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
    404 Not Found

    Not Found

    The requested URL was not found on this server.


    Apache/2.4.41 (Ubuntu) Server at hacklink.site Port 80