
আমার রবীন্দ্রনাথ,অনন্ত এক জীবন সঙ্গীত
সুবীর সরকার
১.
রবীন্দ্রনাথ।জনমনে যিনি রবি ঠাকুর।আসলে রবীন্দ্রনাথ তো আসলে মহাকাশ।একজন বহুবর্ণ ব্যক্তিত্ব।রবির আলো নিরন্তর ঘিরে রাখে আমাদেরকে।বাঙালির আসলে একজন রবীন্দ্রনাথ আছে।
যেমন ছিল শ্রীচৈতন্য,রামকৃষ্ণ,নেতাজি,ক্ষুদিরাম আরো কেউ কেউ।
রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কিছু লেখা বা বলা নুতন করে খুবই কষ্টকর।
৮০ বছর আয়ুষ্কাল জুড়ে এই মানুষটির দানবীয় কর্মকান্ড প্রতিনিয়ত নুতন করে কেবল বিস্ময়েরই জন্ম দেয়!
২.
কিন্তু বিশ্বাস করুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আমার সুগভীর কোন সখ্যতা নেই।সখ্যতা গড়ে ওঠেনি কিংবা সখ্যতা গড়ে উঠেছে এমন বিজ্ঞাপন আমি কখনই বহন করিনি।কারণ এটাই যে রবীন্দ্রনাথ তো সঙ্গেই আছেন সবসময়।রবীন্দ্রনাথের গান আমার জীবনের পরতে পরতে জড়ানো।
আমার জীবনের অনেক সুখ দুঃখ বিষন্নতা আমাকে ঘিরে রেখেছিল রবীন্দ্রনাথের গান।সমস্ত শিরা উপশিরা জুড়ে জুড়ে রবীন্দ্র গান আসলে মন্ত্রের মত,ধ্যানের মত
যা কেবল আচ্ছন্ন করে রাখে।
ছোটবেলায় খুব ছুঁয়ে থাকতো_
“মেঘের কোলে রোদ হেসেছে/বাদল গেছে টুটি
আজ আমাদের ছুটি রে ভাই/আজ আমাদের ছুটি”
আর খুব মায়া খুব ভালোবাসা নিয়ে জড়িয়ে রাখে যেমন এই গানটি_
“যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে”
লোকজ সজলতা আর চিরায়ত দর্শন রবীন্দ্র গানে যা আমাকে পুষ্ট করে।শেখায়।আর বদলে যেতে থাকে আমার অন্তরদেশ।
আমি কেবল নতজানু হয়ে থাকি।
৩.
রবীন্দ্রনাথ শুরু করি “কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি দিয়ে”।তারপর রবীন্দ্র কবিতার সঙ্গে পরিচয়।
তবে আমাকে চমকে দিয়েছিল “সোনার তরী”।
বার বার পড়তাম এই কাব্যগ্রন্থটি।
অদ্ভুত এক বিকেলের ম্লান আলোর শুন্যতা এই বইয়ের কবিতাগুলোতে।
বিষন্ন আর চিরায়ত এক জীবন দর্শন।
আজও চমৎকৃত হই এই বইটি পাঠ করতে করতে।
এরপর প্রবেশ করি রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের ভুবনে।
পূর্ব বাংলার গ্রাম জীবনের মায়াময় ছবি ও ছায়ায় ঘেরা গল্পের ভুবন।
তারাপদ,ফটিক,চন্দরা আপন হয়ে ওঠে আমার।
৪.
আমাকে বিস্মিত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ তার “ছিন্নপত্র” দিয়ে।একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম
“ছিন্নপত্র” পড়তে পড়তে।প্রথম পাঠের সেই আচ্ছন্নতা
এখনো অমলিন।বার বার পড়ি।
পূর্ব বাংলার সজল আলো বাতাসের স্পর্শ পাই।
এক নুতন পূর্ব বাংলাকে চিনি।
এই “ছিন্নপত্রের” সূত্র ধরেই পরবর্তীতে ব্যক্তিগত ভাবে আমি ভ্রমণ করি শিলাইদহ,সাজাদপুর ও পতিসর।
ছুঁয়ে আসি লালন ফকির,চলন বিল,নাগর নদী।
আমি আঁকুল হয়ে খুঁজতে থাকি পদ্মার চরের আব্দুল মাঝিকে।কিন্তু পাই না।পদ্মা যে এখন সরে গেছে অনেক দূরে।
রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ “সভ্যতার সংকট”,”রাশিয়ার চিঠি”
আমাকে ভাবায়।তার বিশ্বিবিক্ষা আমাকে বিস্মিত করে।
৫.
যোগাযোগ, ঘরে বাইরে,বউ ঠাকুরাণীর হাট,চার অধ্যায় এই উপন্যাস গুলি আমার প্রিয় পাঠের তালিকায়।
তবে শেষের কবিতা একদম টানে নি আমাকে।
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় এখন আর আকর্ষণ আগ্রহ বোধ করি না।
বরং খুব মন দিয়ে এখন দেখি তার আঁকা ছবিগুলি।
রেখা রং আচর।
ছিন্নপত্র পড়ি মাঝে মাঝেই।
ছেলেবেলা পড়ি।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বলেই তো খুব প্রিয় হয়ে আছেন
হাসন রাজা।
রবীন্দ্রনাথ একটা বিপ্লব করেছিলেন।
তিনি শান্তিনিকেতন,শ্রীনিকেতন গড়ে সেখানে টেনে এনেছিলেন সমস্ত পৃথিবীর আলো।
তিনি চিনিয়েছিলেন খোয়াই।কুটিরশিল্প। নন্দলাল।রামকিঙ্কর।গ্রাম্য সঙ্গীত।
৬.
আমার রবীন্দ্রনাথ আসলে মস্ত একটা আশ্রয়।অনন্ত এক আশ্রম।
গানে গানে ভরে ওঠা জীবন সঙ্গীত।