ভক্তি বনাম শক্তি  <br /> বেবী সাউ

ভক্তি বনাম শক্তি
বেবী সাউ

ভক্তি বনাম শক্তির দ্বন্দ্বে অবশ্যই শক্তির জয় হয়। বিশেষ করে শক্তি যদি ভক্তিকে ব্যবহার করে ভক্তির নামে শক্তি প্রদর্শন করে, তখন
সেই শক্তি ভক্তিরই প্রতিনিধি হয়ে দাঁড়ায়। ভক্তও মনে করতে থাকেন, এ শক্তি আমারই। কিন্তু মুশকিল হলো, ভক্তির শক্তি কেবল ভক্তিতেই।
শক্তির নশ্বর প্রদর্শনে নয়। রাম একটি মহাকাব্যের চরিত্র, যার অন্তর্নিহিত ভাবনাকে আমরা ভালোবাসতে পারি। রাম সংক্রান্ত যে কাল্পনিক বিশ্ব
তার অধিকাংশই বর্ণিত মহাকাব্যের পাতায়। কিন্তু যা বাস্তব নয়, তাকে বাস্তব করে তোলার পিছনে একধরনের পরিকল্পনা কাজ করে। আর সে
পরিকল্পনা ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত থাকে। ভক্তির সঙ্গে নয়।
একজন ভক্ত এবং একজন ভক্তের ভেকধারী ক্ষমতার প্রতিভূর মধ্যে পার্থক্যের জায়গাটি হল এই যে ভক্তের হৃদয়ে যার অবস্থান, তার আসলে
কোনও রূপ নেই। সে এক আইডিয়া মাত্র। কিন্তু সেই আইডিয়া মহৎ, তার সঙ্গে মহাপ্রকৃতির সম্পর্ক। তার সঙ্গে আমাদের এই নশ্বর পৃথিবীর
চাওয়া পাওয়া হারানো ছিনিয়ে নেওয়া জোর করার সম্পর্ক নেই। আজ যদি আমি বলি, আমি ভক্ত কৃষ্ণচূড়া গাছের। আপনাকেও এই কৃষ্ণচূড়া
গাছের ভক্ত হতে হবে। তা না হলে আপনি এই দেশের শত্রু। আমি তৈরি করছি এই কৃষ্ণচূড়া গাছের মন্দির। তখন তা হয়ে যায় শক্তির ভক্তি প্রদর্শন।
তা কিছুতেই ভক্তের আকুতি হয় না।
এই যে লক্ষ লক্ষ মানুষ হেঁটে চলেছেন রামমন্দিরের দিকে, শীত উপেক্ষা করে রামমন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে জড়ো হয়েছেন, তাঁদের আবেগকে এবং ভক্তিকে
অসম্মান করার কোনও জায়গা নেই। কিন্তু কোথায় চলেছেন তাঁরা? মনে পড়ছে এই কয়েক বছর আগে, করোনাকালে, লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক যখন শয়ে শয়ে কিলোমিটার পায়ে হেঁটে অতিক্রম করে ফিরছিলেন নিজেদের গ্রামে, তখন তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াননি কোনও পুরোহিত। রামরাজত্বে তো আশা করা যায়, পীড়িত মানুষের জন্য মানুষই এগিয়ে আসবেন। রাষ্ট্র এগিয়ে এসে মানুষের ভালো করবেন। তবেই তো জয়ধ্বনি দেবে মানূষ। কিন্তু শোনা গেল অনেক জায়গায় এই সব পরিযায়ী শ্রমিকরা রাস্তাতেই মারা গেছেন। তাঁদের জন্য কেউই এগিয়ে আসেননি। আবার আমরা জানি নাসিক ( মানে গোদাবরী নদীর তীরে অবস্থিত সেই রামপূণ্যভূমি) থেকে দিল্লি অব্দি হেঁটে গিয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ কৃষক। তাঁদেরও সমস্যার সুরাহা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না।
সুতরাং, রামরাজত্ব না দিয়ে আমাদের দেওয়া হল রামমন্দির। খুবই সহজ এটি দেওয়া। মানুষের করের টাকায় মানুষকে এমন কিছু দেওয়া, যাতে মানুষ তার
সমস্যাগুলো থেকে দূরে সরে যায়। মানুষ মেতে ওঠে এমন এক আফিমে, যা দিয়ে মানুষ ভুলে থাকতে পারে তার সমস্যাগুলির প্রকৃত কারণের থেকে। এ এক
অদ্ভুত সময়। যদি আপনি বলেন রামের দর্শন বা ভাবনা নিয়ে আমার আপত্তি নেই, যদি বলেন, কবীরের দোঁহায় যে রাম, সেই রাম আপনার আরাধ্য, তাহলে
আপনার কথা বিশ্বাস করবে না সেই শাসকশ্রেণি, যারা মনে করে আধ্যাত্মিকতা নয়, ধার্মিক উন্মত্ততাই আসল। রাম কেমন শাসক ছিলেন, বা আদৌ কোনও শাসক ছিলেন কিনা, এ হেন কাল্পনিক বিষয়গুলি সম্পর্কে আলোচনা না করে, আমরা বরং ভাবতে পারি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই রামমন্দির করে আখেরে কার লাভ হল?
নিন্দুকেরা বলবেন, রুটি দিয়ে কি ধর্মের আবেগকে সংযত করা যায়? এখানে উল্লেখ্য এই যে,ধর্ম এখানে বিষয় নয়। বিষয় হল, ধর্মব্যবসা। আজ যদি আমরা তহ্যের খাতিরেও এই রামমন্দির নামক ঘটনাবলীর দিকে তাকাই, তাহলেই বুঝব, ধর্মকে এখানে একটা প্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহার করে তা নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। এ এক আশ্চর্য সময়,কারণ অযোধ্যায় রাম নামক কোনও রক্তমাংসের মানুষ জন্মেছিলেন এমন কোনও প্রমাণ নেই, আর বিষয়টি যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক সাহিত্যের, তা ভুলে এখন সেই সাহিত্যকে ইতিহাস হিসেবে ভাবার এক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই যে রামমন্দির প্রতিষ্ঠিত হল, এর সঙ্গে আমরা ফ্যাসিবাদকে এক করে ফেলছি কেন? তার কারণ, রামমন্দির প্রতিষ্ঠা এবং তার প্রচারের মধ্যে
দীর্ঘ এক সময় জুড়েই অত্যাচার, অনাচার এবং আবেগকে পুঁজি করে পুঁজির সঞ্চয় এবং তার পরে তার প্রচারের মধ্যে একটি সর্বশক্তিমান চেহারা আমাদের চোখের
সামনে ভেসে উঠছে।
এখনো স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চাকরি এবং ক্ষুধাসূচকে দেশকে উন্নত করা যায়নি। এ দেশের কোটি কোটি মানুষের মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় পরিচয়ের এক উগ্র ইমেজ। এমন একধরনের ইতিহাসের নির্মাণ করা হচ্ছে, যা আদৌ ইতিহাসই নয়। বিকৃত এক ইতিহাসের উপর দাঁড়িয়ে মিথ্যাকে সত্য বলে বারবার ঘোষণা করার এই সংস্কৃতিই হল একধরনের ফ্যাসিবাদ। অথচ এমন রামরাজত্কে তো রামরাজত্ব বলা যায় না। বলা যায় রামের নামে দুর্বৃত্তের রাজত্ব। এক নেশার আবহের মধ্যে ভারতবর্ষের মানূষ এখন ছুটছে। এভাবে মানুষকে ভুল পথে উন্মত্ত এক পথে চালিত করার মধ্যে হিন্দু ফ্যাসিবাদের এবং হিন্দু রাষ্ট্রের ভিত্তিরই প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল বলা যায়।
গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ, কবীর, নানক, দাদূ, সুরদাস, তুলসীদাস, কৃত্তিবাস, বিবেকানন্দ এবং রামকৃষ্ণের দেশ আজ যে এক ধর্মীয় মৌলবাদী দেশে পরিণত হয়েছে এ বিষয়ে মনে হয় আর কারোরই সন্দেহ নেই।
৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ এবং ২২ জানুয়ারি ২০২৪ এক হয়ে গেল। ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য এ এক কালো দিন।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes