স্রোত
পর্ব-১৬
যশোধরা রায়চৌধুরী
অবনীর খসখসে জীবন
অবনী তালপাড়ের সঙ্গে মিল্ক শেক খেতে খেতেও একরকমের বিশ্বদর্শন ঘটল
স্বস্তিকার। তবে সেটা করে ওর একটু নিজের জীবনটাকে বেশিই সহনীয় বলে মনে
হল।
অবনী স্বস্তিকার স্কুলবেলার বন্ধু। একটা জায়গায় খুব মিল দুজনের। দুজনেই
আর্মির অফিসারের মেয়ে। আসলে আর্মি স্কুলে , গুয়াহাটিতে বেশ কয়েকটা
গুরুত্বপূর্ণ বছর একসঙ্গে কাটিয়েছিল ওরা। ক্লাস ফাইভ থেকে নাইন। জীবন গড়ে
ওঠার জরুরি বছরগুলো। গল্পের বই আদান প্রদান থেকে শুরু করে, সেই সময়ের
রেডিওর বিবিধভারতীর সান্ধ্য প্রোগ্রাম, রাগ মঞ্জরীতে প্রিয় গান,
ক্ল্যাসিকাল মিউজিকে একসঙ্গে গিয়ে বাজনা শোনা ভাগ করে নেওয়া। কী ছিল না ।
ফালতু হিন্দি গানের সঙ্গে প্রথম বেলবটম প্যান্ট পরে নৃত্য, দরজা বন্ধ
করে। যাতে বাবা মায়েরা দেখতে না পায়। হ্যাঁ সেটাও ছিল।
আজও বন্ধুত্ব অটুট।
অবনী এখন কেন্দ্রীয় সরকারের বাঘা অফিসার। ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টে
কাজ করে, বাছাই করা বন্ধু মেনটেন করে। বিয়ে করেছিল খুব দেরিতে, সে বিয়ে
ভেঙে গেছে।
অবনী মহারাষ্ট্রীয়। ও নিজেকে সংস্কৃতিসম্পন্ন মনে করে। এই বাঙালিনী
বান্ধবীর সঙ্গে মারাঠি নাট্যসঙ্গীতের ক্যাসেট আদানপ্রদান, একসঙ্গে চুটিয়ে
ক্রসওয়ার্ড সলভ করা। এইসব করে অবনীরা প্রায় নিজেদের “ইন্টেলেকচুয়াল” ইমেজ
তৈরি করে ফেলেইছিল।
দুজনেই কম্পিটিশন করে প্রেমে পড়েছিল নাসিরুদ্দিন শাহ আর নানা পাটেকরের।
আজ ও ফোন করতেই স্বস্তিকা উচ্ছ্বল। নিজের সব কাজ ফেলে আগে প্ল্যান করতে
বসে, কোথায় দেখা করা যায়।
স্বস্তিকার লজ্জা করে কারুকে বাড়িতে ডাকতে। একেই এই চাপা চাপা ফ্ল্যাট
বাড়ি, দুটো আয়া আর তিনজন কাজের লোক ঘুরে বেড়ানো ঘরে ঘরে, পশ্চিমবঙ্গের
বর্ষার বৃষ্টির মত বিচ্ছিন্নভাবে আর বিক্ষিপ্তভাবে এদিক ওদিক ছড়ানো বই,
কাগজ, জিনিশ রাখারাখির ফলে হাঁটাচলা করার বেজায় অসুবিধে। বসবার ঘরটা
একটা বাজার। সকালে প্রিয়নাথ নামে এক প্রৌঢ় বাবা মাকে মালিশ করার নামে এসে
এক ঘন্টা আড্ডা দিয়ে যান। মজার বুড়ো, কিন্তু মজাটা ক্রমশ কেমন কমে আসছে,
দেখা হলেই ওনার ওই , মা স্বস্তিকা, কেমন আছো মা, বলে গায়ে হাত বুলিয়ে
দিতে চুলবুল করে ওঠা হাত, আর চোখদুটোর তিরতির করে ওর বুকের দিকে গিয়ে
সেটল করা দেখলে মাথা গরম হয়ে ওঠে। তারপর চা বিস্কুট খেতে খেতে সারা
পাড়ার কেচ্ছা এবং খবরের কাগজ ঘেঁটে যত রাজ্যের গসিপধর্মী খবরের আলোচনা।
এই বুড়োর এ বাড়িতে আসা আটকাতে পারে না স্বস্তিকা। এটা তো নিজের বাড়ি নয়,
শ্বশুর বাড়ি। তারপর একে একে কত লোক আসে যায়। ডাক্তার আসেন। আসে এল আই সি
এজেন্ট। বাবার ছোটবেলার বন্ধু আশুকাকু। আসেন শাশুড়িমার গাল গল্পের
সঙ্গিনীরা।
শুধু স্বস্তিকা কখনো নিজের বন্ধুদের ডাকেনা। কারণ তার মনে হয় , ওদের
সঙ্গে বসে কথা বলার প্রাইভেসি নেই এখানে। কোনওভাবেই পারেনা, নিজের এই
দিনরাত কাটানোর খুপরি ঘরগুলোতে ডেকে আনতে সইদের। ছোটবেলার বান্ধবী,
যথেষ্ট সফিস্টিকেটেড ব্যাকগ্রাউন্ডের অবনীকে তো এখানে আনার প্রশ্নই নেই।
তবে গত দশ বারো বছর ধরে কলকাতায় এই সমস্যাটা আর সমস্যা নেই। শুরু হয়েছিল
কিছু ভাল ভাল শপিং মলের ভেতরের ছোট ছোট ব্র্যান্ডেড কফির দোকান দিয়ে।
কাফে কফি ডে-র মত চেনস্টোরে দুদন্ড বসে কফি খাও, কথা বল। এখন সারা
কলকাতায় গিজগিজ করছে অনেক রকমের ছোট ছোট কাফে।
এত সুন্দর সে সব কাফে, নয়ন মনোহর। তাছাড়া খাবারেও কনটিনেন্টাল স্যান্ডউইচ
থেকে শুরু করে, দুর্দান্ত মোকা কফি কাপুচিনো কফি অথবা কাফে লাতে ,
গ্রিনটি বা দার্জিলিং চা, ঠান্ডার ভেতরে ক্রাশার অথবা লস্যি অথবা
অ্যালকোহলহীন মোহিত পানীয় যে কোন ধরণের বস্তু পাওয়া যাবে। জমাটি এক পসরা।
যদিও দামের দিক থেকে যথেষ্ট বেশি, বেশ উচ্চবিত্তীয়। কিন্তু হ্যাঁ,
স্বস্তিকার মত লোক মাসে দু একবার এ ধরণের কফিশপে বসে সাময়িকভাবে
বাড়িতেনিজের বসবার ঘর না থাকার যন্ত্রণা ভুলে বন্ধুদের ট্রিট দিয়ে
মনোরঞ্জন করতেই পারে। ভারি ফুরফুরে হয়ে যায় ওর মেজাজ এইসব দোকানে বসলে।
অবনীকে ও নিয়ে গেল গড়িয়াহাট অঞ্চলের একটা মাঝারি কফিশপে। পুতুল টুতুল
দিয়ে সাজানো, গোলাপি চমৎকার দু-তিন পরত সুন্দর রং-এর বাহার করা। নামেও
বিলিতি ছাপ।
কেমন রূপকথা রূপকথা। অবনীর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া বিদেশি রূপকথা বইয়ের ভারি
খসখসে ক্রিমকালার কাগজের বইয়ের পাতা ওল্টানোর মত লাগে স্বস্তিকার।
শিরশিরে সুখ হয় একটা।
অবনীর গেস্ট হাউজও এ পাড়ায়তেই এক বিখ্যাত সরকারি সংস্থার গেস্ট হাউজ।
দু বান্ধবী একটা করে গ্রিলড চিকেন স্যান্ডউইচ অর্ডার দিল। অবনী নিল
মিল্ক শেক আর স্বস্তিকা গ্রিন টি উইথ হানি।
ঈষদচ্ছ চায়ের ভেতর ভাসছিল তুলসি পাতা। অবনীর সাদা দুধ-ভ্যানিলার লম্বা
সুদৃশ্য গেলাসের গা বেয়ে জমছিল ঘাম।
অবনী অন্যদিকে তাকিয়ে বলছিল, ও ভাল আছে। কিন্তু…।
আড্ডা জমলেই ওরা কিন্তুগুলো বলতে শুরু করে। অল হেল ব্রোক লুজ বলে
ইংরিজিতে একটা কথা আছে। নিজেদের ক্রাইসিসগুলো , চুটকি আর মজা করার
পাশাপাশিই , ওরা বলে ফেলতে চায়। ভাঙা ইংরিজি, হিন্দি। অল্প বাংলাও।
পাঁচমিশেলি ভাষায় একটা আদি অন্তহীন গল্প। আবার শুনতে হবে, ভাবেনি
স্বস্তিকা।
তোর সঙ্গে অনেকদিন ক্যাচ আপ করা হয়নি। তাই না রে?
তুই বিয়ে করেছিলি, তারপরের বার যখন কথা হল, বললি দিল্লি থেকে শিমলায়
পোস্টিং হয়ে গেছে। একাই থাকিস। তাই তো?
হ্যাঁ ঠিক তাইই।
তোর বিবাহবিচ্ছেদের গল্পটা বলবি এখন? না ইটস টু লেট?
টু লেট। ভুলেও গেছি রে কী থেকে কী হয়েছে। তবে হ্যাঁ, বিয়েটাই করা উচিত
হয়নি। কারণ জানিসই তো, বত্রিশ বছর বয়স অব্দি আমার বিয়ে করার কোন মতলবই
ছিল না।
অবনীর দিকে , বাল্যবান্ধবী হিসেবে নয়। একটু অন্যভাবে তাকায় স্বস্তিকা।
সুন্দরী নয়, কোনমতেই সুন্দরী নয় অবনী। অথচ স্কুলে ডিবেটে ফার্স্ট হত।
তার্কিক , পড়াশুনোয় ভাল, সেই মেয়ের চেহারা সুন্দর নয় বলে ছেলেরা কাছে
ঘেঁষেনি। এখন ও ভুরু প্লাক করে, চুল স্টেপ করে কাটে। দারুণ সব পোশাক পরে।
এই মুহূর্তে স্বাভাবিকভাবেই বেশ দামি চিকনের কুর্তি পরে আছে , পাতলা
হালকা সাদা কটনের। সঙ্গে জিনস। এই মেয়ের বিয়ের বর, কোন আশ্চর্য কারণে ,
প্রায় হাঁটুর বয়সী এক যুবক ছিল। ভাবাই যেতে পারে, সবটাই সুবিধের জন্য
বিয়ে।
অবনী বলে, ছাড় ও কথা। নালায়ক টাইপ ছিল আমার বর। ভারি সেলফিশ। কিছুদিন
আমাকে ইনটেলেকচুয়াল কম্প্যানিয়ন হ্যানত্যান বলে তারপর ডাবল ক্রসিং শুরু
করল। সুভাষ। ওর নাম। হাতে নাতে প্রমাণ পেয়ে গেলাম এক্সট্রা ম্যারিটাল
অ্যাফেয়ারের।
তারপরই সেপারেশন হল।
যাক গে ছাড়…
অবনী স্ট্র দাঁতে নিয়ে বলে তোর কী খবর? তোর বরটা কিউট ত, মাঝে মাঝে
ফেসবুকে দেখি ত , ফোটো দিস। বেশ খুশ খুশ।
না সে ঠিক আছে। তা ছাড়া ছেলেটাকে নিয়ে বেজায় চাপে আছি।
স্বস্তিকা বেশি বলতে চায়না। অবনী নিঃসন্তান। ছেলে মেয়ের গল্পের ঝাঁপি ওর
কাছে খুললে, বেচারি মেনস্ট্রিম ছাপোষাদের দ্বারা আরো কোণঠাশা হয়ে যাবে।
অবনী বলে, তোরা কাগজে দেখেছিলি, আমার একটা কেস? আমি আমার এক কলিগের নামে
কেস করেছিলাম? ছেলেটার ডিমোশন হয়। জয়েন্ট সেক্রেটারি ক্যাডার থেকে ডেপুটি
সেক্রেটারি ক্যাডারে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তাইই? নড়ে চড়ে বসে স্বস্তিকা। সে ত বিশাল ভিক্টরি রে। তুই বলিস নি তো আমাকে।
আমার শিমলার থেকে দিল্লি ফেরার কথা ছিল। এই অভিযোগ, এবং তারপর সেই উজবুগ
ক্যারেকটার লেসটার শাস্তি , এই সময়ের পর পরি আমাকে গোরখপুর পাঠিয়ে দেওয়া
হয়। কোন কাজ নেই অফিসটায়। গাঁ গঞ্জের মাঝখানে নো ম্যানস ল্যান্ডে। কেন
বলত?
কেন?
পাজিটা নিজে শাস্তি পেয়েছে কারণ গভর্মেন্ট রুলস ফ্রেম করেছে, তা থেকে
পালানো যায়না। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে ভার্বাল ক্যাম্পেন করাটা তো আর কোথাও
বারণ করা নেই। উইস্পারিং ক্যাম্পেন হয়েছে। লোকজন বলেছে, ওই তো রূপ, ওই
মেয়ের সঙ্গে অভব্য আচরণ করবে রাজীব শ্রীবাস্তব, ওর কি আর মেয়ে জোটেনি?
আসলে অবনী তালপাড়ে একটি ফ্রাস্ট্রেটেড মাল, বর পালিয়ে গেছে, চিপ
পাবলিসিটি পাওয়ার জন্য এখন রাজীবের নামে নালিশ করেছে।
লোকজন বলেছে মানে কারা বলেছে?
তারা বেশিরভাগই মহিলা। আমার সিনিয়রদের মধ্যে প্রায় সবাই কনভিন্সড এটা
আমারই বানানো, সাজানো দোষারোপ। বুঝতেই পারিস যারা আমাদের পোস্টিং দেয়
তারা একটা লবি। সব উত্তর ভারতীয়। আমরা মহারাষ্ট্রীয় গোটা সিভিল সার্ভিসে
সংখ্যায় কজন বলত? রিজিওনাল কার্ড আর জেন্ডার কার্ড, দুটোই আমার ক্ষেত্রে
ব্যাকফায়ার করে গেছে।
উফ। দম আটকে এসেছে স্বস্তিকার।
তোর ঐ উত্তরপ্রদেশী কলিগ কী করেছিল রে?
অসভ্যতা করত। রোজ। কথায় কথায় সোফায় পাশে বসে হাঁটু চাপড়ে কথা বলত। অশ্লীল
জোকস বলত। প্রায়ই নানান অফিশিয়াল পার্টিতে নিজে বোতল বয়ে এনে খুলে বসে
পড়ত, বসগোত্রীয় পুরুষগুলো তো সবাই ছুপা রুস্তম সেক্সিস্ট , মিসোজিনিস্ট।
তাদের হাতে রাখত, মাল খেত। অন্য মেয়েরা ভয়ে লজ্জায় উঠে যেত। আমি যেতাম
না। কেন উঠে যাব রে। মেয়ে বলে কেন গুডি গুডি হয়ে থাকতে হবে?
তাই তোকে অ্যাভেলেবল ভেবে ফেলল?
হ্যাঁ অবভিয়াসলি। আমার বিয়ে ভেঙ্গে গেছে, বাচ্চাকাচ্চা নেই। ওর লাইসেন্স
আছে যেন আমার সঙ্গে অসভ্যতা করার। সুতরাং অসভ্যতা করল। অসম্ভবরকম । তারপর
অস্বীকার করল, বলল ওই শুকনো কাঠের মত মহিলার সঙ্গে আমি অসভ্যতা করব?
কীসের আকর্ষণে করব, বলুন ধর্মাবতার? … আমার এভিডেন্স পোক্ত ছিল বলে
শাস্তি পেয়েছে, তার প্রতিশোধ এখনো নিয়ে যাচ্ছে। ডিপার্টমেন্টে আমি একটা
ব্যানড অবজেক্ট। আমাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সমাজে। চাকরির জগতে কেউ আমাকে
ছোঁয় না। আমি আনটাচেবল।
গলা শুকিয়ে আসছিল স্বস্তিকার। এক চুমুক সবুজ চা দিয়ে ঠোঁট ভেজাল। ভাবল,
আমিও তো তোকে এখনি অসুন্দর ভেবে, কেমন নিচু নজরে দেখলাম। মনে পড়ল একবার
সোমদত্ত বলেছিল, তোমার বস তোমাকে সামনে বসিয়ে রাখে সারা সকাল, রাখবে নাই
বা কেন? তোমার ওপর বিধাতার আশীর্বাদ আছে, এই সব লাবণ্য, এই সব ঝরে পড়া
স্নেহপদার্থ। কোমরের চামড়ায় আঙুল জড়িয়ে চিমটি কেটেছিল, মনে আছে।
শুকনো, খসখসে অবনীর দিকে যে করুণাভরা চোখে তাকিয়েছিল স্বস্তিকা, সেটা
ফিরিয়ে নিল, আবার ক্ষমা চাইল। আমি আমার লাবণ্যের কারণে একভাবে
এক্সপ্লয়েটেড হলে, তুই তোর রূপ না থাকার কারণে। উই আর অন দ্য সেম বোট।
অবনীর সামনে টিন্টোকে ফোন করতে ইচ্ছে ছিল না। মেয়েটির বাচ্চা নেই। সন্তান
নিয়ে মায়েদের হুজুগ, মাথাব্যথা, অতিরিক্ত তোলা তোলা করা, এসব দেকলে শুষ্ক
অবনীর চোখ মুখ পালটে যেতে পারে।
কিন্তু অ্যাভয়েড করা গেল না। কী করে করবে? টিন্টো আর সোমদত্ত বার বার ফোন
করে তার প্ল্যান ঘেঁটে দিল।
টিন্টো প্রথমে ।
মা, আমার এ মাসের ফি দেওয়া হয়নি।
এখন সেটা তোমার মনে পড়ল, টিন্টো? ক্লাস টেনে উঠে গেছিস বাবু, এখনো এগুলো
নিজে মনে রাখতে পারিস না?
আরে, কী অদ্ভুত । তুমিই তো এগুলো সব দেখ, তুমি এ মাসে ভুলেই গেলে? কাল
ম্যাম বলেছে, এর পর নাম কেটে যাবে।
কেটে গেলে যাবে। কাল ম্যাম বলেছে তো আজ এত বিকেলে বলছ কেন? সকালে বল নি কেন?
ভুলে গেছিলাম।
বাঃ টিন্টো, তুমি ভুলে যেতে পার, আর আমি ভুলে গেলেই দোষ। আমারও অনেক কাজ
ছিল , কবে দশ তারিখ হয়ে গেছে খেয়াল নেই। যাকগে রাখো এখন, কাল দিয়ে দেব।
এর পর সোমদত্তর ফোন।
কী রাজকার্যটা কর বলতো? টিন্টোর স্কুল ফি দেওয়া হয়নি।
ভুলে গেছিলাম তো। গলায় অনুনয় আর অনুতাপের সুর এসে গেল অটোমেটিকালি। বলা
হল না, তাতে তোমার কী হয়েছে সোম। তুমি তো কোনদিনই টিন্টোর স্কুল ফি জমা
কর না।
সত্যি, কী করে ভুলে যাও বুঝতে পারিনা। সেদিন টিন্টোর ডাক্তারের
অ্যাপয়েন্টমেন্টও ভুলে গেছিলে। তোমার কী হয়েছে বলতো?
কী আবার হবে? মনটা অবনীর মুখোমুখি বেশ হালকা হয়ে এসেছিল। আবার তেতো হতে
শুরু করে। মুখের রেখাগুলিকে নির্বিকার রাখতে হবে স্বস্তিকাকে। সেই
চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিরুত্তাপ বলে।
কোথায় এখন তুমি? যখন তখন বেরিয়ে যাচ্ছ অফিস থেকে! ল্যান্ড লাইনে করে দেখলাম নেই!
আমার এক বন্ধুর সঙ্গে ক্যাফেতে এসেছি।
কে বন্ধু।
( সে খোঁজে কাজ কী তোমার, সোম? মনে মনে বলল স্বস্তিকা) অবনী, আমার পুরনো
বন্ধু। মারাঠি। মনে নেই?
বান্ধবী না বন্ধু? এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার করছ কারুর সঙ্গে? সত্যি
মাল হয়ে যাচ্ছ তুমি একটা।
ফালতু হিন্দি গানে বেলবটম পরে নৃত্য…আহা!