স্রোত
পর্ব ১৫
যশোধরা রায়চৌধুরী
১৫
পুরুষতন্ত্রের ছ্যাঁকা
সোমদত্ত , সাবধান! সাবধান! মাথার মধ্যে কে যেন বলে। শরদিন্দুর গল্পও অ্যান্টি মহিলা! শেষ অব্দি এও দেখতে হল। পড়তে পড়তে বুঁদ হয়ে যায় ও। এখনো। বিশেষত পঞ্চম ষষ্ঠ খন্ড। উফফ। লোকটার লেখার গ্রিপ, তার প্রসাদগুণ, তার টেনে রাখা, এত আমোদের ভাষা। আর সেই লেখাতেও ওরা আজকাল, পলিটিকালি ইনকারেক্ট খুঁজে পাচ্ছে।
একটা নির্মল রসিকতাতেও পলিটিকালি ইনকারেক্ট। কালে কালে কতই দেখব , মা! মা গো!
এখুনি এক প্রস্থ হয়ে গেছে। কে যেন তার স্ত্রীকে সুগার বলে, কে যেন তার স্ত্রীকে হানি। ডার্লিং । কতকিছু। সোমদত্ত শুধু মাঝের থেকে বলেছিল, গুড়ের নাগরির মত চেহারা। কোন মহিলা সম্বন্ধে। শুনেই তেড়েফুঁড়ে উঠেছিল স্বস্তিকা । উফফ।
সোমদত্ত আজ বাড়িতে। স্বস্তিকাও আজ বাড়িতে। না তাদের জীবনে কোনদিন নির্বিকল্প আনন্দের নয় আবার নির্বিকল্প দুঃখও সে অর্থে নেই। একধরণের পিছল ছিরকুটে দাম্পত্য তাদের।
ছুটির দিনে বাড়িতে থাকলে দুজনে ঠোকাঠুকি লাগে।
সোমদত্ত দেখে, স্বস্তিকা সারাদিন ফোনে থাকে।
স্বস্তিকা দেখে সোমদত্ত সারাদিন নেটে থাকে।
একটা বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল কোন এক ফোন কোম্পানির। সার্ভিস প্রোভাইডার । মোবাইল ফোনের। দেখিয়েছিল, নায়িকা শ্রীলেখা কথা বলেই চলেছে বলেই চলেছে, কাজ করছে, কথা বলছে, হুশ হুশ করে পাখি তাড়াচ্ছে। জল ঢালছে। কথা বলেই চলেছে ফোনে বিরামহীন। এই মোবাইল ফোন কাঁধ আর কানের মাঝখানে চাপা চেহারা , মেয়েদের, কথা বলতে বলতে রান্না করা, টিভির ভল্যুম অফ করা, জানালার ঝুল ঝাড়া, কাক তাড়ানো সবটাই সবার চোখে এতটাই চেনা হয়ে গেছে যে শ্রীলেখার ঐ বিজ্ঞাপন খুব হিট হয়ে গেছিল।
এখনো স্বস্তিকার দিকে তাকিয়ে সোমদত্ত ওই সিন্ টাই দেখছে। পাখি হুশ। পাখি তাড়াচ্ছে স্বস্তিকা জানালার বাইরে। ঝুল ঝাড়ু হাতে , মাথায় রুমাল বেঁধে , চুলে একগাদা লালচে হেনা করা মধ্যবয়সী স্বস্তিকা।
মধ্যবয়স চেপে রেখেছে সে, চুলে রঙ করে , স্পঞ্জ ইলাস্টিক স্প্যানডেক্স, ছোট হাত টাইট জামা ইত্যাদি ব্যবহারযোগে। আর কথা বলে চলেছে মাদ্রাজিদের মত গলগলিয়ে, সেটা চেপে রাখতে পারছে না মধ্যবয়সের বাক্যবাগিশ অবস্থা। সবকিছু বলে ফেলতে হবে এই বাধ্যবাধকতা যেন তার। সময় ফুরিয়ে আসছে তাই সবটা বলে ফেলা দরকার। এত তাড়া।
স্বস্তিকা কথা বলছে প্রথমার সঙ্গে। সেই প্রথমা, যে ব্যাঙ্গালোরে ছিল। সুস্নাত আর প্রথমার বিয়ে প্রায় ভঙ্গুর কাচের বাসন। এই ভাঙে তো সেই ভাঙে। সেই চলল । গত কুড়ি বছর। এখন প্রথমা কলকাতায় চলে এসেছে। এটা একটা কারণ হতে পারে।
প্রথমার মেয়ে সুনন্দনা আবার কিছুদিন লটকেছিল অর্চির সঙ্গে। শেষমেশ দুবাড়ির লোকেদের প্রভূত নাচিয়ে ওদের ওই প্রেমপর্ব, মানে অ্যাফেয়ার, ব্রেকাপ হয়ে যায়।
ব্রেকাপ হয়ে যাওয়ার কারণ খুবই নগণ্য। অর্চি নাকি ওর ফেসবুক প্রোফাইলে সুনন্দনাকে অস্বীকার করে, নিজেকে সিঙ্গল দেখাচ্ছিল। সুনন্দনা নিজের প্রোফাইলে , ইন এ রিলেশনশিপ উইথ অর্চি দেখালেও। এই নিয়ে খিটমিট। এর মধ্যে ব্যাঙ্গালোর থেকে সুনন্দনা ছবার কলকাতায় এসেছে, অর্চি সোমদত্ত আর স্বস্তিকাকে প্রভূত পেন দিয়ে তিন চারবার ব্যাঙ্গালোর গেছে। তারপর টুয়েল্ভ পাশ করে অর্চির দিল্লি চলে যাওয়া পড়তে, আর সেখানে নতুন গার্লফ্রেন্ড অর্জনের একটা কানাঘুষো খবর। সুনন্দনার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেলিং এর ফলে, অর্চি নাকি বুদ্ধি করে ফেসবুকে ইন এ রিলেশনশিপ দিয়েছিল এমন ভাবে যা শুধুই সুনন্দনা দেখতে পাবে। বাকিদের কাছে ও সিঙ্গল থাকবে। এটা টেকনিকালি নাকি সম্ভব, সোমদত্ত নেট ফেসবুক এইসব সম্বন্ধে অত শত জানে না, তবে এটা বুঝেছে এই দুনম্বরিটা সুনন্দনা ধরে ফেলেছিল। মেয়েগুলোও তো আজকাল ঝানু কম না। অন্য বন্ধুর প্রোফাইল থেকে ফেসবুক দেখলেই তো ধরে ফেলা যায়।
সেটা ধরে ফেলার পর অর্চির সঙ্গে কাট্টি হয়ে গেছে সুনন্দনার। ব্যাস। তারপর ওইদিকে দশমাইল শান্তি কল্যাণ।
সোমদত্ত আপাতত দেখছিল, স্বস্তিকা প্রথমাকে কাউন্সেলিং করছে, কারণ সুস্নাতকে ছেড়ে দিয়ে, ব্যাঙ্গালোরে স্বামী আর মেয়েকে রেখে সটান কলকাতায় চলে এসেও প্রথমা হ্যাপি নয়। এই সব খতরনাক নারীবাদী মেয়েগুলো কখনো হ্যাপি হয়না, এদের এটাই রোগ। চিরতরে চুড়ৈলের মত মাথার মধ্যে এরা ক্যারি করে অশান্তির জার্ম। বিদেশ থেকে ইম্পোর্ট করা কন্ডোম বা কোল্ড ড্রিংকের মত ফেমিনিসম ও একটা ইম্পোর্টেড জিনিশ। যেটা নাকি ৭০ দশকে মার্কিন আরো অনেক জিনিশের সঙ্গেই এসেছিল এ দেশে। দেশের মাটিতে গজায়নি এ জিনিশ। ছেলেদের সঙ্গে ঝগড়া করার, নিজের ইচ্ছেমত কাজ কর্ম করার একটা অছিলা দিয়েছে মেয়েদের এই নারীবাদ। সহজেই পুরুষের দিকে আঙুল তোলার একটা বাহানা।
তা সেই প্রথমা প্রথমে নিজের স্বামীকে ডাম্প করেছে, তারপর কলকাতা এসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবী বিদ্যা চর্চা কেন্দ্রে কী কী সব কানেকশনবাজি করে একটা কাজ জোগাড় করেছে।
কাজটা নেহাতই ক্লারিকাল। কিন্তু এতে ওর সুবিধে হয়েছে , কারণ প্রথমা নারীবাদী ও নারীবাদী প্রবন্ধ টবন্ধ লিখে এদিক ওদিক ছেপে ইতিমধ্যেই বেশ একটা মাস্তান টাইপ হয়ে উঠেছে ও লাইনে। ব্যাঙ্গালোরে স্বামীর পয়সায় ফুটানি মারত যখন, একটা দুর্দান্ত দামি ফ্ল্যাটে থেকে, ব্যাঙ্গালোর বেসড একটা নারীবাদী এন জি ও তে জয়েন করেছিল। সেই এন জি ওর হয়ে অনেক কী কী সব সোশ্যাল ওয়ার্ক করেছে, গ্রামটামে গিয়ে দরিদ্র মেয়েদের সঙ্গে কাজ করেছে নাকি।
সবটাই “নাকি” কারণ কাগজে কলমে ও যা লেখে তা থেকে এসব জানা গেছে। কেউ সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত তো করতে যায়নি।
স্বস্তিকার বান্ধবী যখন তখন কত আর বেশি কাজ করবে। এসি র বাতাসে না রাখলে এইসব সুখী গাছ শুকিয়ে যায়। সারাগায়ে বার্ন হয়ে যায়। ঘামাচি হয়ে যায়। অন্তত স্বস্তিকা তো সেই রোগের শিকার আজকাল। দশবছর আগেও এসি র কথা ভাবতে পারত না কেউ। আজকাল এসব ছাড়া ওরা থাকতে পারছে না।
এখন প্রথমা নিয়ে পড়েছে তার নিজের সেন্টারের হেডকে নিয়ে। ভদ্রলোক নাকি মানবী বিদ্যা চর্চা কেন্দ্রের মাথা হয়েও, নিজে বেসিকালি ভীষণরকম অ্যান্টি মহিলা। মিসোজিনিস্ট, স্বস্তিকাদের ভাষায়। বোঝ!
টানা সাড়ে বাইশমিনিট কথা বলার পর স্বস্তিকা ফোন রাখল। হাতে কাজ নামিয়ে রেখে এল, খিঁচুটে মুখে বলল, তোমার নেটের কাজ হল? উফ বাবা সারাক্ষণ কী করে নেটে থাকো!
তুমি তো সারাক্ষণ ফোনে থাক। সোমদত্ত খুব ঠান্ডা গলায় বলার চেষ্টা করল।
হ্যাঁ কিন্তু ফোন করতে করতে আমি তো কাজ করতে থাকি। নেট করতে করতে তুমি কটা ঘরের ঝুল ঝেড়েছ? তুমি তো পুরুষ তাই সদা সচেতন , পিওর কনশাসনেস। আমি প্রকৃতি তাই মাটি ধুলো ন্যাতাকানি এসব নিয়ে আমার থাকা। এর মধ্যে রান্নাঘরেও হাত লাগিয়ে এসেছি। বলার সময় ভেবে কথা বলবে।
উফফফ। শুরু হয়ে গেলে ত! ওই নারীবাদীটার সঙ্গে কথা বললেই আমি দেখেছি তুমি কিরকম যেন খেঁকুরে কুকুরের মত হয়ে যাও।
চুপ কর। দেখি , আজ নাকি ফেসবুকে কে একটা হেব্বি গালাগাল করেছে প্রথমাকে। দেখতে হবে।
আচ্ছা , একটা কথা বল। আজকাল প্রিয়নাথবাবুর সঙ্গে ওরকম খারাপ ব্যবহার কর কেন? আজ সকালেও তো দেখলাম তুমি একদম ঘরে ঢুকে বসে রইলে। ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছিলে, হঠাৎ গ্যাস অফ করে দিয়ে বেডরুমে চলে গেলে। উনি তোমাকে ডাকছিলেন। আমি তোমাকে ডেকে তারপর বুঝলাম কেস গন্ডগোল। তাই ওনাকে বললাম ও বাথরুমে ঢুকেছে।
ডাকছিলেন? বুড়োটার আস্পর্ধা তো দেখছি মাত্রাছাড়া হয়ে গেছে। লোচ্চা, নোংরা লোক একটা।
এ আবার কী ভাষা! কী হলটা কি তোমার স্বস্তিকা।
হবে আবার কী! এতদিন বলিনি, বলতে পারিনি, এসব নোংরা কথা মুখে আনতে আমার প্রবৃত্তি হয়না বলেই।
কী নোংরামোটা উনি করেছেন তোমার সঙ্গে, অ্যাঁ? মুখ বেঁকে যায় সোমদত্তর। চোখ ছোট হয়ে যায়।
ওই দ্যাখো। তোমারও মুখ কেমন হয়ে গেল, পুরুষতন্ত্রে ছ্যাঁকা লেগে গেল, না? লোকটা আমার দিকে অসভ্যের মত তাকায়। টু বি প্রিসাইজ, আমার বুকের দিকে তাকায়। ওই লোকটার সামনে আমি যদি আর এসেছি সকালে। সারাসকাল আমার মাটি করে দিয়ে চলে যায়। কোন প্রাইভেসি তো এবাড়িতে এমনিই আমার কোণদিন নেই। বুড়ো ভামটা এখন বাবা মাকে ফিজিওথেরাপির নাম করে এসে রোজ সকালে দুঘন্টা আড্ডা মেরে, বাড়ির কেন্দ্রীয় জায়গাটায় বসে বসে কাটিয়ে চলে যায়। লোকটাকে উচ্ছেদ করা সম্ভব নয় তোমাদের ওই ওনাকে নিয়ে “কাকু, কাকু” ন্যাকামির জন্যই যখন, তখন আমাকেই ওই সময়টা ঘরে বসে কাটাতে হবে। আর কিচ্ছু করার নেই।
শোন স্বস্তিকা, খাটের ওপর কোলবালিশটা পিঠের তলা থেকে টেনে বের করে কোলে রেখে সোমদত্ত ঠিকঠাক ভাবে বসে। একটা আলোচনায়, একটা রফায় আসার চেষ্টা করে। অন্তত বডি ল্যাঙ্গুয়েজে রিল্যাক্সড অবস্থা থেকে একটা টান টান ভাব আনার চেষ্টা করে। ড্যামেজ কনট্রোল দরকার এবার।
শোণ স্বস্তিকা, একটা কথা বলি তোমায়। প্রিয়নাথবাবুর প্রতি আমার আলাদা করে কোন সফট কর্নার নেই। কোনদিন ছিল না। থাকার কথা নয়। হি ইজ জাস্ট অ্যানাদার পার্সন ইন আওয়ার নেবারহুড। আমাদের বাড়িতে আসেন এই মাত্র। তার বেশি কিচ্ছু নয়। তোমার যদি ধক থাকে তুমি মুখের ওপর বলবে, যেভাবে রাস্তাঘাটে আর চারটে লোককে বুকের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলে বলতে।
ও , তার মানে তুমি আমার কোন কাজেই আসবে না। আমার একট অসম্মান হচ্ছে, তুমি আমার পাশে দাঁড়াবে না?
সোমদত্ত প্রায় ধৈর্যচ্যুতির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে এ মুহুর্তে। মুখ চোখ সব সরু হয়ে আসে ওর বিরক্তিতে। এই স্বস্তিকার মুখে এসব ন্যাকা ন্যাকা কথা শুনলে তার বেজায় রাগ হয়। সেটা প্রকাশ করাও যাবেনা। তাহলেই সেই পলিটিকালি ইনকারেক্ট হয়ে যাবে। পুরুষের জীবন এখন খুব চাপের। বাড়িতে একটা গ্যাজেটও সোমদত্তের সঙ্গে কনসাল্ট করে কেনেনি স্বস্তিকা। মাইক্রোওয়েভ কিনে ফেলেছে নিজে নিজেই, স্যান্ডউইচ বানানোর যন্ত্রটন্ত্র, সবই। নিজের শাড়ি জামাকাপড় কেনার সময়েও সোমদত্তের ধার ধারেনি। নিজের অফিস নিয়েও কোন উচ্চবাচ্য করেনা, অফিসের কোলিগদের সঙ্গে এদিক ওদিক বেড়ানোর প্ল্যান বানায়। টিন্টো যখন ছোট ছিল, টিন্টোর জ্বর হয়েছে, টিন্টো কাঁদছে, টিন্টোর হোমওয়ার্ক হয়নি, এওসব বলে তাও স্বস্তিকার ওপর চাপ সৃষ্টি করা যেত। এখন টিন্টো বড়, তাই স্বস্তিকাকে কোণভাবেই কনট্রোল করা যাচ্ছে না। যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে।
তার স্বাধীনতায় সোমদত্ত কোণদিনই হস্তক্ষেপ করেনি। আজ এসব কী কথা। পাশে দাঁড়ানো, সম্মান রক্ষা। মজা মারার আর জায়গা পায়না।
দ্যাখো স্বস্তিকা। তুমি কচি খুকি নও যে আমাকে তোমার বডিগার্ড হয়ে বেড়াতে হবে। বয়স যথেষ্ট হয়েছে তো। বছর পয়ঁতাল্লিশের একটি মহিলা তুমি। এমন কিছু ভীষণ সুন্দরী বা পুরুষের কাছে প্রচন্ড অ্যাট্রাকটিভ নিজেকে মনে করো না যে তোমার দিকে সব দুনিয়ার পুরুষ হাঁ করে তাকিয়ে আছে। প্রিয়নাথকাকা একবার দুবার চোখ দিয়ে চেটে নিয়েছেন সেটাতে আমি এমন কিছু অস্বাভাবিকতা দেখিনা। ওটাকে একটা ইস্যূ বানাচ্ছো এবার তুমি । এসব খেলা ছাড়ো। তোমার সবসময়েই প্রাইভেসি প্রবলেম ছিল, আছে। কিন্তু এখন যথেষ্ট বয়স হয়েছে।
গলগল করে আপাত দৃষ্টিতে পলিটিকালি ইনকারেক্ট কথাগুলোই অবাধে বলে ফেলল সোমদত্ত। বলেই প্রায় দাঁত চেপে অপেক্ষা করল সেই বিস্ফোরণটার, যেটা ঘটবেই।
হ্যাঁ ঘটলো। কাঁদল স্বস্তিকা, চীৎকার করল, তারপর দুম দাম করে বাথরুমে ঢুকে গেল কথা থামিয়ে । হু হু করে কাঁদছিল সে। ঠিক মনে হল সোমদত্তের, এক পঞ্চদশী তরুণী বুঝি স্বস্তিকা। উফফ। এই মেয়েগুলোর সঙ্গে বসবাস একটা দৈনন্দিন স্ট্রাগল।
আর স্বস্তিকা, স্বস্তিকা কী ভাবল?
এখন স্বস্তিকার ক্রমশ মনে হয় নিজের সঙ্গে প্রভার্বিয়াল গৃহবধূ তার শাশুড়ি বা মা, বা পিশ শাশুড়ির কোন তফাৎই যেখানে নেই, শেষ পর্যন্ত তোমার বিচার হবে কতটা গুছুনি তুমি, কতটা গৃহকর্ম নিপুণা, কত ভাল করে তুমি তুমি রেঁধে বেড়ে দিতে পার অতিথিকে, তাহলে মন বুদ্ধি অস্তিত্ববোধ আত্মসচেতনতা এসব কিনে বেচে খেয়ে হল টা কী সারা জীবনে?
এই সেদিন প্রাক্তন বলে একটা সিনেমা কী হিট হল। এই কথাই তো বলেছে সেখানে। চাকরি করা মেয়েরা ভাল বউ না, আর ভাল বউ মানেই স্বামীর মন রেখে চলা, চালাকি করে চলা। মানুষ আবার এভাবে ভাবছে।
বিয়ের পরদিন থেকে মশারি টাঙানোর কথা বলেছিল সোমদত্তকে, মনে পড়ে আজকাল হাসি পায় স্বস্তিকার। সেই থেকে রোজ মশারি টাঙানো আর তোলা সোমদত্তর কাজ। বাকি আর কোন কাজই ভাগ হল না। তবু ঐ মশারি টাঙানো নিয়ে বাচ্চা ছেলে তখন অর্চি, সে এসে বলএছিল, কাকু তুমি কেন মশারি টাঙাচ্ছো? কাকিমা টাঙাচ্ছে না কেন? আমাদের ঘরে তো মা সবসময়ে টাঙায়।