‘সে আকাশে নৌকা খোলা আছে’ :
সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায়
সামান্য উপলব্ধির পাড়ে
সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায়
মা আর মেয়েটি
জয় গোস্বামী
এক পথ ঘুমন্তের পায়ে
এক পথ নৌকার পারানি
এক পথ পালকের গায়ে
মা আমি সমস্ত পথ জানি
দিন থামে গাছের তলায়
রাত্রি থামে পরীদের বাড়ি
সিঁড়ি দিয়ে আলো উঠে যায়
মা আমি সমস্ত আলো পারি
এ আকাশ ভাঙে মাঝে মাঝে
ও আকাশ মেঘে আত্মহারা
সে আকাশে নৌকা খোলা আছে
মা আমি আকাশভরা তারা
মা আমার এক দীঘি জল
সারা গ্রাম করে ছলোচ্ছল…
‘পোড়ামুখী, দু চক্ষের বিষ
ফের তুই প্রেমে পড়েছিল? ‘
—
কত অজানার মধ্যে দিয়ে এই যাওয়া। যেখানে আমাদের মস্তিষ্কের সফটওয়্যারও সময়ে সময়ে আপডেটেড হয়। জীবন ধারাবাহিকের কত মাঠ -জল, আকাশ বাতাস ছড়িয়ে চারিদিক। ঘুমাতে গিয়েও তো মনে মনে কোথায় চলে যাচ্ছি, — জল – বালি – পালকের গায়ে। যে এখনও পথ হবে বলে উঠি -উঠি করছে। যে পথ শিশু। ঘুম ঘুম চোখে যে পথিক! যিনি রওনা দিয়েছেন সেই ত্রিকালজ্ঞ -এর পথে আমি সামান্য, — বিস্ময়ে ঘুরে ফিরে যেটুকুর দেখা পাই! যে মেয়েটি স্থলে জলে অন্তরীক্ষে চলাচল। পারি দিতে সব বাধা পেরিয়ে — , সে অবাধ্যই তো। যে মাকেই বলতে পারে : সমস্ত পথ জানি। অচেনাকে ভয় কী আমার! দিন থামে কত পরিচিত কাছে দূরে সব গাছের তলায়। আস্তে আস্তে ডাল, পাতার থেকে গড়িয়ে সন্ধ্যা চলে আসে ঘরে বাইরে কতদূর রাত্রি করে। যেখানে পরীদের গল্প, কাহিনির পর কাহিনি। সেই অলীক সুন্দর – এর বাড়ি! যে ঘটনা নিজের মধ্যেই চলতে থাকে। সে মেয়ে নিজেই কত আলো, যে নির্ভয়া। সে সিঁড়ি ভাঙলে মনে হয় আলো যাওয়া আসা করে। যে মাকেই আশ্চর্যময়ীর মতোই বলতে পারে : সমস্ত আলো পারি। জীবন জগতের যত আহ্লাদ যেন সেই মেয়ের জন্য সাজানো । মানব সমাজের সমগ্রতার মধ্যে কবি জয় গোস্বামী, তাঁর ‘মা আর মেয়েটি’ কবিতার নিবিড় অনুশীলনের আশ্চর্য এই কবিতার দেখা পেয়ে ধন্য হচ্ছে মন। কোন কিশোরবেলা বেলায় প্রথম পত্রিকায় পড়েছিলাম, তারপর বইতে। ফিরে ফিরে যে পাঠে আমার তাঁর আরও কবিতার মত এতেই মুগ্ধতার শেষ নেই। এই কবিতাটি পড়লেই যা মনের মধ্যে ভেসে ওঠে , এক শরৎ আকাশ। দীঘি ভরা বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার আরও আরও বাংলার জল থইথই পৃথিবীর মুখ দেখা সেই আয়না। যে আকাশ ভাঙে মাঝে মাঝে, যেখানে প্রবল বৃষ্টি হবে সেই মেঘ বর্ষায় থমথম করে চারিদিকে মজে থাকে প্রকৃতির আত্মহারা মেজাজ। সেখানে নৌকা কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় দূর সুদূরের মেঘমল্লার। যেখানে যেন আমারই গ্রাম বাড়ির উঠোন থেকে বলবে সেই রৌদ্র জয়ী মেয়ে : মা আমি আকাশভরা তারা। সেই তারার মেয়েটির দেখা পাই। এর কাছেই হয়তো সন্ধ্যাতারা আছে। লাভপুরের ছোট্ট ঘাটতিতে নৌকা ভাসমান ঢেউয়ের তালে তালে। আমার নিজস্ব পাঠের ভেতরে কবিতাটির মধ্যে মায়ের সেই এক দীঘি জলে আমার সারা গ্রাম ছলোচ্ছল করছে ততদূর যতদূর প্রকাশ হলে এ কবিতার মান নিরন্তর আনন্দ ধারায় বইতে থাকে। কত প্রেম, জ্ঞান, কত আলোয় সম্বন্ধের ইঙ্গিত দেওয়া কোন জননীর কাছে। প্রশ্নের তুচ্ছতা লেগে প্রতি যুগে। মায়ের চোখ ভরা জল। এ কী দুঃখের, না আনন্দের? সেই এক দীঘি জল মানে যেন আমার গ্রামের বড় পুকুরের মতো শালুক পদ্মে টইটই করছে জলে সারা গ্রাম সময়ের বিখ্যাত কবিতার মধ্যে দিয়ে। পোড়ামুখী আবারও যে প্রেমে পড়েছে! এই প্রকৃতি পুরুষের দ্বিতীয়, তৃতীয় সবই যে মাখামাখি এই ছোট জীবনেও। এই সামন্য উপলব্ধিতে সুস্থিতি লাভ করার যেন কোনও চেষ্টায় আত্মতৃপ্তি নেই। তবুও সময় প্রসৃতির সীমানায় জীবনের কোন আস্থা লাভ করবো জানি না। শুভ সময়ের দিকেই দিক নির্ণয় করে চলেছি আমার একা একা জয় গোস্বামীর কত কবিতার সঙ্গে এটাও আমার আপন পাঠে।