সৃজা রায়-এর গুচ্ছ কবিতা
কাফন…
অকেজো বৃক্কে ঘুণবর্জ্য লাঞ্ছনার আকাশ-
যে যতই চাক সভ্যতার হাতলে বারুদ ঘষতে,
ছাল উঠে গিয়ে তার উপর জন্মাবেই গোলাকৃতি ক্ষত।
এপার বাংলায় জনশ্রুতি ছেঁড়া গলা-
অতিক্রান্ত হরবোলা, মাঝি চাচাকে শরীর ঢাকতে শেখালো কাফন!
ছায়াময়…
কবেকার ধূসর পাটাতনকে জলে ফেলে দিয়েছি-
তার বদলে এনেছি জ্যান্ত নোঙর!
বেয়াক্কেলে হয়ে যতই তোমাদের ছায়াছবির চরিত্র হতে চাই,
হারিয়ে ফেলি ভালো থাকার প্রতিটি গন্ধ,
পাটকাঠি হয়ে পুড়তে থাকে ২০৬ টা অস্থি!
কেবলমাত্র চাঁদ...
সামনে তাকাও,একদম সামনে-
বাসি চাঁদের আলো খেয়েই যখন বড়ো হয়েছো,
চাঁদের টুকরো নিয়ে তোমার ভাবা উচিত ছিলো!
লোকে ভর্তি সভা,সভায় আছে গুণিজন।
কজনকে ব্যয় করে চাঁদ কিনতে দেখেছো?
জলাভূমি…
ছটপট করতে থাকা মাছেদের ভ্রমণ সুখের হলো না,
স্থলভূমির নিষ্ক্রিয় আবর্জনার স্বাদের থেকে পাঁকই ভালো;
জলের অবর্তমানে ঘোলাটে কর্দমাক্ত আঁখিদ্বয়!
মধ্যাহ্নে,তকরার পলান্ন বাতিল হলো,
ভোজন রসিক শাকান্নের পাশে ঠাঁই নিলো মৎস-সিদ্ধি।
রবীন্দ্রনাথ…
পঞ্চরত্ন জ্যামিতিক বিবর্তনে যারা গীতবিতান ছাড়া বোঝেনা,
তাদের জন্যই শাখাপঙক্তি রবীন্দ্রনাথ।
শৈশবে ঘুমিয়ে থাকা উড়োজাহাজের জানলা ভেঙে,
ভবিষ্যৎ অনুবাদ করে নেওয়া ডানাওয়ালা কাজেকর্মে-
দোহাই দিয়ে উঠতি যৌবন,রবীন্দ্রনাথ!
কুড়িতেও কুঁড়ি….
দেরাজ খুলে আঠারো কিশোরীর চিঠিভর্তি অভিযোগ।
একইভাবে কত আমি বদল হয়ে গেলেও,
পড়া হয়না ঐকিক লেখাগুলো।
নিঃশব্দে হাত – পা মোড়া এক ছেলেমানুষি তন্দ্রাচ্ছন্নে।
তবুও তো সকলকে ভালোবাসার বিনিময়ে কিচ্ছুটি চাইনি কখনো,
কুঁড়ির চঞ্চলতা কুড়িতে বসেও, অভিমান ও অনাদরে।
মাঝেমধ্যে চেয়ে বসি বেশি কিছু-
কথা দিই, আমার যেমন সাধ্য বর্ষিত হবে অহরহ।
তোমরাও তো তোমাদের মতো কোনো একটি দিন আমার জন্য রাখতে পারো।
ব্রাত্য…
আমরা সকলেই রঙীন প্রজাপতি।
কথার আগে এবং পরে মসৃণ আকাঙ্খার ডালে বসি
জমজ আলো, হরেকরকম চোখে, দেখায় বিস্তর!
ইতি কথার গত শতাব্দীর শিশিরে ভিজে-
ব্রাত্য ফোসকা লেগে থাকে প্রথমা হরোস্কোপে।
বাগান…
শব নয়,সবের উৎসব,
লোকান্তরিত আলো।
নুনেরছিঁটে পড়েছে অভুক্ত পেটে।
ঝড়ো বাতাসের বোতাম ফুলগুলি,
বাগান মানে শুধু আশ্রয়টুকুই বোঝে।
মাটি…
হাফ বয়েল সূর্যের শেকড়,
কুহেলিকার জ্বালাতন সয়ে নিয়ে।
মাটির উপর আকাশ নির্মাণ করেছে।
আমরা হাঁটতে গিয়ে নীহারিকার পথে,
ভুল করি শত নামতা,মাটির মায়ায়।
হরফ…
কেবল গুঁড়ো কাঠ কয়লা জীবনের মাহাত্ম্য বোঝে,
আমি দেখেছি যান্ত্রিক লোকটা একটি আয়নার উপর
অস্বচ্ছ কিছু লিখেই ছাই হয়ে গেছে।
উপশম তো কিছু নেই গ্রন্থ থামানোর।
যা করছি রোজ হরফের মতো সাজিয়ে ওতে গিয়েই উঠছে।
যা চলছে,চলতে দাও,আমাদের কষিয়ে গুটি সাজাতে হবে।