
সুপ্রভাত মেট্যা-র কবিতা
হে প্রভু
দাও কষ্ট দূরে ফেলে নতুন সকাল হে আলো ।
পথ ভরিয়ে দাও সাদায়।
ধবধবে ভাতের তাগিদে এগিয়ে দাও সুখ ।
এই ধুলোভর্তি কবিতায় আমার আর ঢেউ লাগেনা।
স্বপ্ন ফলেনা সোনার ।
শুধু বাঁচার চাঁদে গিয়ে
যেটুকু কলঙ্ক জড়ানো জটিল অন্ধকার
আমার জীবন জুড়ে আছে
তুমি মুক্ত করে দাও হে প্রভু।
সুখের ঠিকানা
তোমাকে টুকে সহজ পাতায় হালকা হই…
ভারি দুঃখের দিন কেটে গিয়ে ,উড়ো ধুলো হয়ে
ছড়িয়ে পড়ি জীবন এক নতুন স্বপ্নের পৃথিবীতে ।
তোমাকে আকাঙ্ক্ষার উর্ধ্বসীমায় আলতা পরিয়ে
আকাশ আঁকি প্রেম ।
সহস্র ধর্মের হিসেব থেকে অনেক দূরে তোমার শরীর,
সহাস্যের ,লাবণ্যের ,নীল আগুন দাউদাউ ,অন্ধকার শানিত;
আমার আলো এবং জলের শৈবাল কাটতে কাটতে
কখন পাগল অন্ধ হয়ে যাই।
আর কখন মিলন সৌন্দর্যের গলিপথে সেই জল,নালা বেয়ে
নেমে আসে শ্রাবণ ,স্বর্গ থেকে ,আমাদের আশ্চর্য এক
সুখের ঠিকানায় ।
সত্যিকারের মানুষ
সত্যিকারের মানুষ ,এক ছবির…..
না,চাইনা হতে । এমন সত্যি আমি কখনও চাইনি ।
কখনও অর্থ ভাবিনি কবিতার ।
সৌন্দর্য ভেবেছি । সৌন্দর্য কি অর্থের নয় ?
নাকি সমস্ত অর্থই নিহিত সৌন্দর্যের ?
তোমার কথাগুলোতে কে যে বারবার আমাকে এত ছবি আঁকে কে জানে !
ভারতীয় নীল একটা হাওয়া-অসুখ একবার,
আমার মাথা নাড়িয়ে উড়ে চলে গেল ,বিকেল উড়ানে কোথাও ।
আমার হাত-পা অবশ হয়ে এল। কথা আটকে গেল কাঁটায়,
আড় হয়ে। মস্তিষ্কের নীল ছড়িয়ে পড়ল সারা শরীর।
ভাবলাম,আর হয়তো উঠে দাঁড়াতে পারবনা কখনও ,কোনওদিন ভালো হয়ে।আর অমন ভালো হয়েইবা কী লাভ ?
যদি ভালো কিছুই না করতে পারি জীবনে ?
তো তখন সেইদিন গাঢ় অন্ধকার ;
সেখানকার একজন সহজসরল মানুষ
আমাকে আলো দেখিয়ে ,বিবেকের দোর গড়ায় পৌঁছে দিয়ে ,
বলল : ‘দেখো,তোমারইতো দেশ ? এটা তোমারই অসুখ ।
এর বেশি কী আর বলব তোমাকে ।
আর বলতেও চাইনা । ‘
আমার চোখ খুলে গেল তখনই !
সত্যকিরণ
বড্ড বেশি মুখ করলে
তোমার মুখের কোনও শ্রী থাকেনা ।
শান্তিরপ্ত হও । নিজেকে কু-কথার থেকে দূরে ,
আলোর ভিতরে ঢুকে,চোখ খুলে দেখো
এখনও কতটা পরিষ্কার তুমি ।
ভালো আর মন্দগুলি পরপর মেলে দাও রোদে ।
দেখবে,মন্দগুলি শুকিয়ে ,হালকা হয়ে,
ক্রমশ হাওয়ায় ,উড়ে চলে যাচ্ছে দূর ।
আর যা-কিছু ভালো তোমার
লাল টকটকে ,ফুল হয়ে ফুটে উঠছে দাওয়ায় ।
‘সত্য-কিরণের এমনই সদ্ভাব ।’ আমার মা বলতেন ।
তিনি আরও বলতেন ,
‘কখনও শূণ্য ভেবোনা,
নিজেকে প্রমাণ করো নিজেই ।
জেনো,হাতপাতা স্বভাবের কেউ
বড় হয়ে উঠলে,তাকে ছোটই লাগে মানুষের ।’
মেয়েকথা ও একটি স্বাধীন কবিতা
কবিতায় যে মেয়েকথা তুলে আনো তুমি
তেমনই নরম, স্বাদু….
তুলতুলে দুইহাতে গড়া প্রতিমাসম স্বাধীন তোমার দুচোখে সাহিত্যনন্দন খ্যাতি, এমনইতো চাই ?
তুমি নেই ?
তোমার পাদুকাস্পর্শে প্রনাম রাখি রোজ ।
ফি-বছর সংসারের রূপ বদলে
বড় হতে হতে পাল্টে যাই জীবন ।
হাওয়া দলবেঁধে ঢুকে পড়ে গ্রামে, ধুলো ওড়ায়।
বাড়ি গাছপালা ভাঙে ঝড়ে,
তবু ভাবি ,এতটা গ্রীষ্মে ভেতরটা খুলে দিয়ে বসে থাকা ভালো, যদি হাওয়া ঢোকে হু-হু করে ?
ভুল,ভুল,ভুল,ভুলভাবি আমি !
আমি কি স্বাধীন ? যেভাবে পতাকা তুমি ওড়াও
পতপতিয়ে একটি স্বাধীন কবিতায় ?
জীবনের গল্প
রোদভালো সময় এখন উঠোনে ।
ঠাণ্ডা লাগা শরীর
কেঁপে ,ভেসে আসছে সুর কন্ঠ থেকে ।
ধুলোসাহিত্যের লেখা
ফুটে উঠছে পাতায় ।
ক্রমশ আলো
রাস্তা খুলে বেরিয়ে আসছে,
কুয়াশার জট ছাড়িয়ে ,
খুলে যাচ্ছে চোখ ।
জীবনের গল্প শুরু হচ্ছে এইবার ।
কিছু প্রশ্ন নিজের কাছে
রাজ্যের কাজ এসে জড়ো হয়েছে আমাদের অভাবী সংসারে।
হাজার অনটনের ভাষা দুঃখ নিয়ে ফুটে উঠছে
আমার নতুন কবিতায়।এভাবে কতটাইবা এগোনো যায় !
নোনা ধরা মাটির দেওয়াল ,পাশে আমার শান্ত হৃদয়
চুপ মেরে বসে আছে। হ্যাঁ ওইতো,ওই দেখো শৈশবকাল কেমন
নুন হয়ে ঝরে যাচ্ছে বিকেলের গা বেয়ে,
ওকেও কি রাজসিক বলবে ?
যা দিনকাল,কী আর এগোবো ?
বন্ধু আমার ,এতটা প্রশ্রয় দিলে শুয়ে জড়াবে না তো আবার ,
বলে, ‘ আমার উনি , ‘ এইটাই শুধু ভয় !
এত ভয় ,ভয় ভয় তোমার ? অথচ বিয়ের আগে ভালোবাসার
সফলতা নিয়ে ফসল গর্ভ হয়ে উঠলেই যত দোষ তোমার ,না ?
নীরবতা মানেই কিছু একটা হয়েছে সবসময় তা নয় ।
একাকীত্বেরও অনেক ঘটনাবিহীন অঘটন থেকে যায়
এমনি এমনিই।
কি বলছ ?কবিতা ? দশকেই আসছিনা
আর তুমি সহস্রের কথা তুলে ধরছ ?
প্রলেপন
ভাত পাতে না পড়লেই সমস্তই অন্ধকার ।
দুপুরও মেঘ ডাকে পেটের।
নেতা মহাশয়ের মতো দুইবেলা শুধু এসে,একটু মৃদু হেসে,
পিঠ চাপড়ে গেলেই কি – পেট কি তা শুনবে ?
বৈবাহিক কারনে ,অভাবজনিত অযথা অশান্তির জেরে
হারিয়ে যেয়োনা তুমি ,
বলছি ।
আমি শুধু এই ভেবে ভালো আছি,যে
আমি এখনও বেঁচে আছি ; যেভাবে শিকড় আর শীর্ষের
মধ্যকাণ্ডতে ,ডালপালাহীন ঝুলে থাকে জীবন ;
ঠিক সেইভাবে !
আগের,একটানা এক বছরের
ফেলে আসা রোববারগুলোকে তুমি একটু সাবান মাখিয়ে ,
ভালো করে ,স্নান করাওতো কবিতা ?
দেখবে,চকচক করে উঠছে পঙ্ ক্তি ,তোমার মুখ,শরীর,
তখন বেশ আনন্দ লাগবে নিজেকে ।খুশিতে বুক ভরে
আবার বাঁচতে ইচ্ছে করবে তোমার ,সত্যি বলছি ।
ক্রোধ
যাবেতো যাবেই,
এমন গোঁ পেতে চলে যাওয়া আমার ভালো লাগেনি ।
ভালো লাগেনি তোমার দুধভাত
মাটিতে বসে খেতে দেওয়া ।
রেখে যাওয়া আনন্দের সংবাদ আমার একটুও ভালো লাগেনি ।
তুমি না-থাকলে কি হয় ?
কীভাবে কোথায় এখন আটকে আছে হৃদয়
তুমি তার হর্ণও বাজাওনি ।
ক্রমশ জল ঘোলা করে
জটিল করে তুলছ তুমি আমাদের সম্পর্ক !
আমার ভালোলাগাগুলি এখন থেমে যাচ্ছে
ক্রমশ বিকেলের রোদে, ম্লান
আমার গল্পবিহীন চোখ…..
তোমাকে ভোলা যায়না ;
এমন শক্তিধর স্মৃতিটুকুই শুধু আমার পুরনো কবিতা ।
ভাইলগ্ন
এই তোমার দোষ,কথায় কথায় কোলকাতা এসে যায় ।
আরে বাবা ,আমারওতো কিছু ছিল না কি ?
এই গ্রাম ,মাটি ,সবুজক্ষেতের হাওয়া
এই ধুলো ,ধান,মা বসানো
মন্দির-ঘরের লক্ষ্মী ,এ-সব কি কিছুই নয় ?
দ্যাখো,দুধেল গাভির ডাক ওই ভেসে আসে গোয়াল থেকে ,
এখনও ।সাদা ধবধবে হয়ে ওঠে খুশি ।
শিশুভাব ফুটে উঠে নবীন সকালে আজও ।
দুধে-ভাতে ,ভাই হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সময় ।
এ-সব কি কিছুই নয় ?
তোমার ওই মরচেপড়া শহর –
ব্রাশ করি আমি রোজ,তাতে রং লাগাই
আর আমার দুঃখ চেপে রাখা খুশি দিয়ে তাকে
আলো ঝলমলে করে তুলি ।
কিন্তু না,কিছুতেই আর ফিরে আসছেনা সে-সময় ।
আমাদের দেওয়া কথাগুলি কিছুতেই আর
দাঁড়াতে পারছেনা উঠে ,নিজেরা ।
এই বিশ্রীভাবে ভালো হয়ে থাকায় কি কোনও লাভ আছে ?