সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ
টানটান
কিসের ইচ্ছায় আরও টানটান হয়ে থাকে দিক
ফুরফুরে শরীরে ওই শাড়িই ছলনাময়ী — ঠিক
যত স্নেহ, ভালবাসা আমাকে ঘামিয়ে দেয় আজ —
দুঃখ দূর করতে আরও কোথায় পাঠিয়ে — ঝড়জলে
রাত্রিগুলো ডানা মেলে আলো খেলছে সোনার দৃষ্টিতে
জীবনানন্দের সেই হীরের প্রদীপ জ্বলে ছোটে
এদিক ওদিক প্রান্ত — ক্লান্ত নয়, কিছুর ইচ্ছায় —
গ্রহ–তারা-রবি ওই শত হাত শাড়ির আঁচলে
কত যে বিন্দুর গল্প সমুদ্রের হাত ধরে হাঁটে
সাহসী হাওয়ার চোটে রৌদ্র ঝাপটায় টানটান
শূন্য মুষ্টি জানালায় — যত দূর ইচ্ছার বাগান
ঘোলাটে
ঘোলা জলে মাছ ধরা আমাদের প্রাচীন স্বভাব
হাত ধরে উঠে আসা অন্ধকারে আরও কত কাজ
একটা সূর্যের জন্যে এত কিছু! প্রাপ্তি শস্য-যোগ
আমাদের ছিল, আছে ভোগ করা বিষয় বস্তুতে
ছড়িয়ে লোভের মন, গল্পের গাছেও চড়ে গরু
ভাল থাকতে ইচ্ছা হয়, শীতে গ্রীষ্ম বাধ্য হয়ে ওঠে
আমাদের কাছে শুধু প্রয়োজন টুকু ছাড়া আর —
কী আছে টগর, জবা! বাগানে বাগানে রুক্ষ টান
একটি গণ্ডির মধ্যে নিজেদের বেঁধে ফেলা পায়ে
অসহিষ্ণ, হতচ্ছাড়া — আমাদের কেমন স্বভাবে!
ঘোলাটে চোখের উষ্ণ দিনগুলি ঢেউ তুলে
ঋণ
কত মানুষের কাছে আমার যে কত কত ঋণ
মাটিই বুঝিয়ে দেন খাঁটি যার মৃন্ময়ী দিন
সামনেই অস্থির রাত্রি— আমার ভারতবর্ষ জানে
নিভে যাওয়া থেকে টিকে আছি— বহু বছরের গানে
প্রাণের নদীটি ক্লান্ত— কত যে ক্ষতের রক্ত চোখে
কত সেই তোলা বাজি, বোমাবাজি অমুকে তমুকে
সারাদিন খেটে মরছে কেউ কেউ কোথায় কে জানে!
কেউ কী বলছি না কিচ্ছু? টানাটানি করে যারা থাকি
কোথায় আমার মাটি রোমাঞ্চিত না-হাওয়ার শীতে
শেষ করে দেওয়া থেকে আর আর কত দূর বাকি!
খাতা
এই মাটি হয়ে শুয়ে আছি শীর্ণ ঘাসে ঘাসে ঢাকা
প্রবল বৃষ্টির মুখে কখনও গ্রীষ্মের চোখে চোখ
কাছে দূরে ছুটে গেছে কতরকমের সব চাকা
শান্তি অশান্তির মধ্যে শূন্যের ভেতরে ঢেউ তুলে
যা কিছু চেয়েছি একা কীটপতঙ্গের সঙ্গে ঘরে
মুখ বুজে সহ্য করলে সবাই তো বোবা কালা বলে
এমন মাটির মন ছেঁনে কেউ উড়ে আসে _ পাতা
প্রবল ঝড়ের মধ্যে ঠিক মতো দাঁড়িয়ে জীবনে
যন্ত্রণার মধ্যে ঠিক তিক্ত , মধু ধরে থাকা খাতা।
আসা যাওয়ার পথের মাঝে
কতজন আসত যেত
কতজন ফুলের মাটি
এমনই মানুষ ছিল
আদলে সরল খাঁটি
আকাশে একটি চিলও
ঘুরছে নিজের মনে
পথ যে আন্দোলনে
কত কী এলো গেলো
রাজ্যে লাল, সবুজ
বাঙালি তাও অবুঝ
মেরে খা যেমন পারিস
যেদিকে চোখের নিস
গুলতি -গোলা – গুলিতে
ছড়ানো গ্রীষ্ম শীতে
যাবি যা যেদিক খুশি
মেরেছে একলা ঘুষি
শেষে যে বোকা পেয়েই
লুকিয়ে হিংসা ছেয়ে
পেতেছে আসন – পিঁড়ি
দেখি ভাই একটা বিড়ি
আচ্ছাই আগুন দিলি
অকাজের গোলাপ, লিলি…