সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ
যত দিন যায়
[They also serve who only stand and wait : John Milton]
অপেক্ষার শেষ নেই — অপেক্ষার অপেক্ষায় বসে
লাভ করা আকাশ বাতাস
হা-হুতাশ কিছুমিছু — নিঃশ্বাসে বিশ্বাস
কোথায় ছড়িয়ে পড়ছে —একাকীর দোহাই তোমার…
নিকটে দাঁড়ায় এক গাছবাবা, বড় বলশালী
আমি তো তোমাকে পালি —যেমন ঠাকুর পালে কেউ
যেমন গৃহস্থ পালে একনামে সেই পাখিবউ !
যতদিন যায় তার পায়ে পড়ে শিক্ষা হয় আরও
বিবেচনার মধ্যেই পড়ে থাকি কিভাবে কি হয়!
আমাকে ভাতের মত বেড়ে নাও থালায় তোমার
অপেক্ষার হাওয়াই- বাতাসে
অদৃশ্য মাঠের মধ্যে কত সেই বেড়া, কাঁটাতার!
প্রতিক্রিয়া
[Seeing things : Seamus Heaney(1939-2013)]
ওই যে জিনিসগুলি আমিই দেখেছি মাত্র —আর
কিভাবে আলোয় ব্যয় হয়ে যায় যে বিবেচনায়
আমাদের অধিকার থেকে সামান্য পরিবেশনে
আমিই রেখেছি কিছু নির্মাতার নির্মিত আলোয়
যেভাবে প্রতিভাটুকু লুকিয়ে নিয়েই মুখোমুখি
বসে যায় অন্ধকারে কত শত নামজাদা সূর্য!
জগতের উপকারে লাগবে বলে, তাই যেন হয়
জিনিসে জিনিসে ঠাসা —বাড়ি- ঘরে থাকাটুকু আছে…
দ্বিতীয়,তৃতীয় শ্রেণী ভরে গেছে এই যে সমাজে
প্রথম শ্রেণীটি ওই নদীটির বাঁকে একা হাঁটে
আমার ধৈর্যের পাড়ে কারা ফালতু গুবগুবি বাজায়…
মেঘমগ্ন
মন থেকে নিভে গেছে কত আলো, মাধব মন্ডল
তোমার বন্ধুত্বে সেই হেসে খেলে কাটিয়ে জীবন
দাঁড়াই নদীর কাছে গাছ ডাকে— চির বৃক্ষশাখে
কত যে করাত ভয়ে কেঁপে উঠি সবুজে সবুজে
অবুজ মেঘের দল জলঝরে সারা দিন কাল
কোথাকার মেঘমেয়ে কোথায় এসেছে—
ঘাসের সংসার কোলে হাত পাতে কত যে রাখাল!
কোথাও ঘরের কোণে মন রেখে একাই কুসুমে
লুকিয়েছি কত কিছু নিভৃত প্রাণের দেবতায়
নম্রপ্রাণ মেঘমুখি সংগ্রহ করেছি এ- মরশুমে
—
দৃষ্টিকোণ
আজ শুধু মেঘ আর মেঘের সারথি ঘনঘোর
চারিদিক ছেয়ে মন তুলসী, গোলাপ হয়ে ভাসে
যতদূর জানালায় —পথে পথে বৃষ্টিকে বিলোয়
আরও কত জলধর্মে যত বিন্দু ভেবেছে জেলেরা
এ-জীবন ছোট নৌকো রাত্রি পার অজয়,কোপাই
যেখানে শতাব্দি থাকে জ্যোৎস্নায় বাড়িয়ে তোলা হাত
গান যত সুরে ওই এ-বর্ষার মাথায় মাথায়
আজ এই মেঘে কিন্তু রবীন্দ্রসংগীত শুনতে পাই !
ভাল লাগল কবিবন্ধুর হৃদয়নিঃসৃত প্রয়াস। জীবনের ছোটনৌকো রাত্রিপার হোক।