সব্যসাচী মজুমদার -এর কবিতা
ছ’টি কবিতা
এই ইলাবৃত্তে
এই ইলাবৃত্তে আমরা যখন কেউ ছিলাম না,
তুমি একটা অপূর্ণ সংগ্রামের মতো
একা একা বেড়াচ্ছিলে।
আমাদের বিমর্ষের মুখে শিল্প -সভ্যতা জন্মাচ্ছিল।
অথচ অদ্ভুত,আমরা কেউ বুঝতে পারছিলাম না এসব একদিন জলের তলায় চলে যাবে।
পাতাল শকুনের গন্ধ
তখনও পাওনি তুমি।
সমুদ্রের ধার ঘেঁসে হেঁটে যাচ্ছিলে বড় বড় ঘাসের দিকে।
আমাদের ভেতরে ভেতরে সমাজ বিপ্লবের তাগিদ জন্মাচ্ছিল।
অথচ ,আমরা তখন কেউ ছিলাম না।
তুমি সিগাল ওড়াচ্ছিলে।
ফেনা এসে লাগছিল তোমার গায়…
ধীর লয়ে শঙ্খ -ঘণ্টা
ধীর লয়ে শঙ্খ ঘণ্টা বেজে ওঠার সময়
শিকারির কুনকি বক এসে কাশের ভেতর
বলে গেল, প্লুত স্বরে রামায়ণ বর্ণনায়
যে দুপুর ছিল,তাতে মাছরাঙা পুকুরের
অন্যপাড়ে বসে থেকে উড়ে চলে গেছে বৈ
আর কিছু ঘটেনি ও গোসাপের মনোমতো
একফালি আবহাওয়ার ভার লেগে আছে তাতে।
এই সমগ্র গল্পের দায় আমি নিতে পারি
বলে তোমার গলার শিরা ছিঁড়ে গেল আজ-
কোনও শব্দ নেই আর কোনওখানে জলে কিংবা
নদীর ও পাড়ে গ্রামে…নেই খুনের খবর।
কুণ্ঠিত দেহের মতো সবুজ রঙের ক্ষেত।
তলায় ডিমের খোল ভেঙে বেরুচ্ছে হেমন্ত…
লবণ, তোমার
লবণ, তোমার সব কিছু নিয়ে তবু বসে আছি।
সবিনয়ে… মানে,মেঘে -সঙ্ঘে-চরে-শামুকের গন্ধে-
সতেজ ফলের গাছে -হতবাকে-বুনোনে বুনোনে –
পেট ছেঁড়া দেহটির এপাশে ওপাশে…বসে আছি।
সে মরে যাচ্ছিল বলে, মাছের অভুক্ত আঁশ আমি
ঝেড়ে ফেলছিলাম তার শরীরের বাংলামত থেকে।
এই ছবি তবে তুমি খুব ভালো পছন্দ করোনি।
তোমার বিশেষ প্রিয় -ডায়েনেরা দাঁড়িয়ে রয়েছে
আর হাতে আঁতুড়ের মাথা মৃদু দুলে দুলে যায়…
লবণ, তোমার সব কিছু নিয়ে তবু বসে আছি
জগতের মুছে যাওয়া বড়ো বাঁওড়ের ওই দিকে
সন্ধের আগে
সন্ধের আগে মুছে যাচ্ছিলে কুয়াশায়…
আমি একবারও তাকিয়ে দেখিনি জলটির
শেষদিকে দুটো পাগল দাঁড়িয়ে লজ্জায় …
ওরা চিরকাল শিকার করতে ব্যর্থ ।
মড়া দেখলেই ভয় পেয়ে গিয়ে অকারণ
সুর তুলে গায় ইস্কুলে শেখা শেষ গান।
সাদা রঙে ভরা মাঠের বাইরে রাস্তায়
অবলোকিতেরা উপাসনা করে ফিরছেন।
পাখির পাঞ্জা সেদ্ধ করার গন্ধে
ম’ম’ করে ওঠে দয়ালের গ্রামগঞ্জ।
শেয়ালের মতো ঢুকে যাচ্ছিলে সন্ধ্যায়।
দূরে উনোনের আলো পিছলায় নিঃসাড়…
ওরা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে
জল খাচ্ছিল একে অন্যের ইশারায়…
একটি ব্যাঙ পিষে
একটি ব্যাঙ পিষে রয়েছে তদৃশে
হিংসে করি তার জীবৎকাল
অল্প স্তোক দিয়ে সামনে ফেলে গেলে
শীতের রোদ্দুর ও সন্তান…
বিপুল দাস টানে ধানের গোছগুলো
মাথার ওপরেই ডোম্বীকাক
নদীর ধার ঘেঁসে যাচ্ছি ভালোবেসে
আকাশগঙ্গার অংশভাক…
একটি ছেলে বোঝে শক্ত এই কোচে
জিওল মরবেই দু’তিনটে
যুগল মিলনের স্পষ্টতার জের
বইতে হলো গিয়ে অনিত্যের
কিন্তু, আধচেনা পাখির ঠোঁট থেকে
শস্য পড়ে কেন আমার গায়?
মথের সংকেতে গো সাপ জিভ চাটে
শান্ত হয়ে যাওয়া এ বর্ষায়…
যদিও জাদু নয় চেয়েছি ভিক্ষাই
চেয়েছি , ছায়াহীন ওষ্ঠ হোক
পাতাটি ঝরা ছিল…পাতাও ঝরছিল
দৃশ্যটিও ছিল তোমার লোক…
শীতের মধ্যে একটা টার্কির
শীতের মধ্যে একটা টার্কির গলায় দড়ি বেঁধে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিড়ি খাচ্ছ।বড়টার দাম চারশো আর বাচ্চাগুলো সত্তর টাকা পার পিস চাইলে। এই চাওয়ার শব্দটুকুর ভেতর দুই-তিন কিক মেরে মাছি দেখে ফেলল টার্কির সপ্তম এবং অষ্টম মাত্রা।
আর আমিও দেখতে পাচ্ছি,পাখির চোখে ভাসছে ব্রোকোলির পুরো সিলুট। ছুটন্ত আমলকির পঞ্চম দিকের আঘাতে উত্তর থেকে পূর্বে ঘুরে যাওয়া ছোট্ট বাতাসটি ক্রমশঃ চেষ্টা করছে পাখির চোখের ভিজে ভাবকে শুকিয়ে দিতে। রাস্তার দশম দিক থেকে গুড়ের গন্ধ বেরিয়ে বাতাস ভারি করে তুলতেই মাছিটাও উড়ে গেল সেদিকে।যাওয়ার সময় বাম চোখ ঘুরিয়ে দেখল,টার্কি একবার তোমার দিকে তাকিয়ে ফের পেঁয়াজের দিকেই ঘুরছে। ঠিক তক্ষুনি মাছি সাইকেলে ধাক্কা খেতেই তার বুক ফুটো করে ঢুকে গেল একটা কোমল নি…
গুরুদেব গুরুদেব
ধন্যবাদ ধন্যবাদ
ভালো লাগল সব্যসাচী
শ্রদ্ধা জানাই দিদি
খুব ভালো লাগল।
শ্রদ্ধা জানাই দাদা