সঞ্চিতা চক্রবর্তীর কবিতা
মেলোপিয়া
এখনও ভিজছো খুব মনে মনে আবির গুলাল
রং ছেড়ে উড়ে বসছো অন্ধকার বিষের থোকায়
ছুঁয়ে দেখছো আষাঢ় মৌ, সাঁঝবাতি, বিলোল বিদ্যুৎ
এখনও ভিজছো তুমি এই মাথা রাখার আকাশ।
এপারে কুহকখানি ঝরে আছে রতিগতপ্রাণ
ঘনবৃন্তে মেঘ কালো,অন্তরীক্ষে মায়াবিনীফুল
অনন্তজলের মতো বহে যায় অরণিহৃদয়
মধুর মধুর গঙ্গা দগ্ধচিতা গোলাপি বকুল
মৃত কোকিলের চোখ তোমার ঠোঁটের মত লাল
তোমার ফেরার মত দীর্ঘ ছায়া মন্ত্রবৎ চুপ
তোমার মাধুরী যত সুতীর্থ আলোয় শোভাময়
দিব্যযামিনীর গান চন্দ্ররসে ভিজে অপরূপ
পাষাণমন্দির গলে রক্তস্রাবী লেখার ওপর
কোথায় শ্যামলশীষে ধান হয়ে পচে যাচ্ছ তুমি
আর না দেখার মত হাওয়ায় হাওয়ায় অভিমান
আর না ফেরার মতো স্তব্ধতায় নীল বধ্যভূমি
এখনও ভিজছো তুমি এই মাথা রাখার আকাশ
ছুঁয়ে দেখছো আষাঢ় মৌ, সাঁঝবাতি, বিলোল বিদ্যুৎ
রং ছেড়ে উড়ে বসছো অন্ধকার বিষের থোকায়
এখনও ভিজছো খুব মনে মনে আবির গুলাল।
বারান্দা
সন্ধ্যা হলে একটা দুটো আরোগ্যের গল্প হয়
প্রেম নয়, অবিরত ভেঙে যাওয়া প্রদীপের মত
মাটির গভীর দুঃখ নয়, বিকেলের বারান্দার মত
ঘরের বাইরে কিছু কুন্দ আর জুঁইয়ের কুসুম
যতটা বাগান হতে পারে, সেখানে অলীক এক
প্রজাপতি ওড়ে। সে বড় হাসির কথা। বয়সের পারে
স্তিমিত হয়েছে তারা, চন্দ্রময় অপরূপকথা
এখন কোথায় পাবে, ক্ষতের উচ্ছ্বাসে তবুও গোলাপ
কাঁপে,পরিচর্যার ভাগ্য কখনও হয়নি তার, অভ্যাসের বশে
মানিয়ে নিয়েছে প্রেম, বিবাহ ও উৎসব,তোমাকে বোঝায়
ইকেবানা বানানোর ঝুঁকি, ফুলেদের ইচ্ছামত নষ্ট হয়ে
যাওয়া,স্মৃতির স্বভাব। ঝুঁকি থাকে।বৃষ্টি হয়
প্রগাঢ় স্তবকে পা রেখে দেখি
তোমার দৃঢ়তাগুলি শুভ্র ফুল হয়ে ঝরে আছে…
ক্রৌঞ্চ
একজনই উড়ে গিয়ে বেঁচে গেছি
সে কি তুমি না আমি ভালো করে ভাবিনি এখনো
মৃত জন্মদিন কোনো মহাকালে কাব্যে লেখা নেই
চিহ্ন নেই বাক্ নেই জল নেই মরুরাশি আদিগন্তহীন
সূর্যাস্তের রঙে সেই ভিজে হাওয়া রক্তপালক
ক্রমশ যুদ্ধের দিকে ছুটে গেছে,
চরাচর হয়ে গেছে ফুলজল প্রমত্তের দিন।
এখন বসন্ত এলে পাতায় পাতায় বাজ পড়ে
কুঁড়ির অনন্ত মোহে জ্বলে ওঠে সুকৃষ্ণ পাবক ।
এখন অসুখকাল কটুগন্ধ লাল তমোস্রোত
কর্কশলিপির ডাল তুমি, রসপাত ভুলে গেছো।
সংঘাতমুখর দেশ পুন্যশ্লোক ,আমি
সে চন্দনকলম ভালোবাসি। ভালোবাসি শ্রীবসন্ত,
আরো লাল প্রত্যয়গামী প্রিয়তমহীন শোভা, আকন্ঠ আকাশ
আর…যে দূরভাষ
ফুলে ফুলে থেমে গেছে, আসেনি কখনো।।
মাজুমগুচ্ছ
ও মিশুক, বিশাখ ভুলো না
মৃত হংসধ্বনিজল আমাকেই ডোবাবে যে অর্ধকড়ি অর্ধউন্মাদে
মাজুমের ঘূর্ণিজলে বনচরী চাঁদ
স্মরণগুচ্ছে কিছু ঘনপুঞ্জ পিংকের স্তবক সাজাবে
ভেবে এই মহাকালে ভয়ে ভয়ে ফিরে আসি চেনা বাঁশি চেনা মফঃস্বলে
স্বপ্নে তুমি এসো শুধু, বাকি সব হিরণ্যের ভার ছেড়ে এসে
অবশেষে এতদিনে আমি বড় সুহানি হয়েছি
শ্যামপুষ্পাধার হয়ে মধুতে বসেছি।
ভার্চুয়াল
শরীরের কথা কখনো তেমনভাবে লেখাই হলো না।
দেহের গভীরে যত চাঁদ, তারা আর গ্ৰহের উৎসব
তুমি তা কেমন করে ধরে রাখো অন্তরীক্ষে, প্রেমে
যেমন অরণ্যশীর্ষ ছুঁয়ে আসা গাঢ় প্রজাপতি
বনান্তরাল খুঁজে নিয়ে ডুবে যায় আলোকান্তে
ভেসে যায় কৃষ্ণপত্রে, জলে। মিলে আর মৃত্যুতে
যতটা তফাত সেই একবিন্দু তৃষা শুধু জানে
একদিন রেখে যাবো রুদ্ধ কন্ঠস্বর; তোমার কাছেই।
ময়ূরের মত অন্ধকার রেখে যাবো মোবাইল স্ক্রিনে
অপার স্নেহের ধর্ম নেমে আসা, যতই সুদূর
মহাজীবনের স্বপ্ন হোক, অভিপ্রেত ফলটির মতো
দৃশ্য নয় ঘ্রাণ নয় শুধু দ্যুতিস্নানে চ্যুত হও
রূপোর জাহ্নবী থেকে প্রস্ফুটিত কাজললতায়
রাত্রি হয়েছে ফুল। তোমার সময়।
ভালো লাগল
ভালো লাগলো