শিবালোক দাস -এর কবিতা

ছুতো
তর্জনী রাখি আমার বুকে,
ছুতোর সংসারে মিলিয়ে যেতে যেতে
কেমন যেন মুষড়ে পড়ে ক্যালেন্ডার।
চুপ, নিশ্চুপ ! পাতায় টোকা মারার শব্দ,
ভুল, একবার নৈঋতের মেঘে বৃষ্টির ঘ্রাণ,
তর্জনী রাখি আমার বুকে।
সন্ধে নামতেই দু পা পিছিয়ে যায় অমৃতলোক,
তখন গভীর আঁধারে মিশে যাওয়া আগুনকে দেখতে ইচ্ছে করে,
চুম্বনের শব্দ, রক্ত ঝরে পড়ে,
একবার নিঃশ্বাসের শব্দে ঘুরে যাক চাকা !
সরল
সরলকে রুখে দিলে যদি সে আরো সরল হয় ?
নেই, নেই, নেই, নেই…তবু আছে,
মেপে মেপে পা ফেলে তারপর অপার্থিব।
সরলকে রুখে দিলে কি সত্যিই আরো সরল হয় ?
আঙুল ছোঁয়ালেই নিঃশ্বাস ঘন,
এমন সময়ে তুমি মধ্যযামিনীর হাত ধরে কোথায় যাও ?
লুকিয়ে থাকে আগ্নেয়গিরির ছোঁয়াচে দাহ্যগুন,
পায়ের কাছে রেখে দেব ছিন্ন মঞ্জরী।
সরলকে রুখে দিলে যদি সে ভয়াবহ হয়ে ওঠে ?
একবার দুহাত তুলে তুমি নিজের স্বচ্ছতা প্রমাণ করো,
অতিপ্রাকৃতের কাছে চুম্বন রাখতে চেয়ে একদিন
ভুঁইফোড়ের সাক্ষী, নিরন্তর আসা যাওয়া !
এখনও শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকে জল।
সরলকে রুখে দিলে সে কি চূড়ান্তে মিলিয়ে যাবে ?
সে কি পারবে না ধ্বংসের মুখে ‘ওম’ উচ্চারণ করতে ?
অবিনশ্বর
একটি কথার পরিপ্রেক্ষিতে একদিন
আমি অবিনশ্বর হতে চেয়েছিলাম।
এমনই বৃষ্টি নেমেছিল সেদিন,
আমার পা দুটি ডুবে যায়নি।
মৃগয়া ফেরত বর্বর চোখকে ফাঁকি
দিয়ে হাতে করে এনেছিলাম সোনালি ধুলো !
মনে আছে সেই দিগন্ত পেরোনো সন্ধিক্ষণ ?
এ দেহ বেড়ে ওঠার পেছনে একটা সংঘর্ষ আছে,
প্রতি রাতে আমি কথার সামনে উবু হয়ে বসি,
রাত্রির ক্ষমতা হয় না সে জড়িয়ে উঠুক রহস্য জন্মের
মতো, কই, পলাতকের মতো তার চাউনি ফিরিয়ে
নেয়নি ? ঈশ্বরের মুখোমুখি আমার সমস্ত হিসেব।
কবিতাও জানে সে কত লাইনে সেতু গড়েছে
ভাঙনের মুখে, রক্ত থামিয়েছে ক্ষতের গায়ে…
আমি কথার পরিপ্রেক্ষিতে একদিন
অবিনশ্বর হতে চেয়েছিলাম, কবিতার কাছে…
হাতের তেলোয় একটি নদী বয়ে যাচ্ছে…
আনত
জল যাদের ছুঁয়ে দেখে না,
তাদের আমি আশ্রয় দিই।
গতকাল সারারাত্রি নক্ষত্রসমুহ বিভিন্ন
পরিচয়ে পুড়ে গিয়েছে আগুনে,
অর্ধেক লেখা খণ্ডযুদ্ধে তারা পা রেখেছিল অনায়াসে।
আনত রাস্তায় তাদের কেউ বাঁচাতে আসেনি।
তাদের ছুঁয়ে দেখে না বসন্তের শেষ ফুল,
কুয়োর শ্যাওলায় মিশে গেছে মরা সন্ন্যাস,
বন্ধ শীতল গুহামুখ, অজ্ঞাতবাসে প্রদীপের
ধুঁকে ওঠা জীবন,
তারা কুলটা, আছড়ে মারে তাদের বাতাসের লেজ।
আনত রাস্তায় তাদের কেউ বাঁচাতে আসেনি।
চলে যাবার আগে শুনেছি দৃষ্টি ফেরাতে নেই,
ফেরাতে নেই এক মুঠো চাল, দাহ্য মন,
ফেরাতে নেই ফুলের বাগান, সান্ধ্যকালীন ফেরার গান,
বরং দাঁড়াতে হয় একটুক্ষণ,
আনত জীবন দুহাত বাড়িয়ে ডাকে গভীর অরণ্যে…
লেখাটি যদি ভালো লাগে, আবহমানে নিজের ইচ্ছেমতো ফোন পের মাধ্যমে
অবদান রাখতে পারেন, এই কিউ আর কোড স্ক্যান করে। ফোন পে করুন 9051781537
অথবা স্ক্যান করুন পেমেন্টের লিংক