
রুমা তপাদার
প্রকৃত ঘুম ভেঙে গেলে
ক
ঝিঁ ঝিঁ ডাক সাইকেল একাহার অপুষ্টি ঘুমের
দিকে চলে যাওয়া সন্ধ্যা-ঘোরের মধ্যেও খিদে-ভাব
প্রেমিকাটি হৃষ্টপুষ্ট দেহজ চাহিদা বলতে
কোল পেতে নিতে হবে মাথা, মাথায় আঙুল নেই
পঙ্ক্তি বিনিয়োগ কথা, ‘তোকে ভালবাসি, তুই মায়া’
আর তুমি, তুমি হলে যোগমায়া যোগাযোগ
খুনসুটি ওঠাপড়া জীবন বোধের দিকে
যেভাবে আমাকে চোরাটান নিয়ে চলে গেল
আখাম্বা মেয়েটি ধীরে ধীরে নিজেকে তলিয়ে নিয়ে সংগীতে লুকালো…
খ
সেদিন সমক্ষে অপলক নামিয়ে নিয়েছি তাও
দেখেছি বিনষ্ট ছায়ামূর্তি হয়েছি এমন চূর্ণ
এ যন্ত্রণা বুঝেছে কে? বোঝেনি। আমিই তো দিইনি।
এ মোহ আমার থাক, এ আমার বিলাসিতা
এ অপেক্ষা দীর্ঘকাল লিখিয়ে আমাকে নেবে
আমার কবিতা, কোলাহল থেকে শতহস্ত দূর
দূরত্ব এমন পরিমাপ নেই যার শুধু যাব
এ শহর থেকে স্বাভাবিক এমন দূরত্ব নেব
ধুলোমাটি যাবে না যেখানে কখনওই হাওয়াও না
সবকিছু ভুলে যাবে সকলেই সকলের মতো
বার্ধক্যজনিত কি না জানা নেই কারণ যথেষ্ট
তবুও বিশ্বাস এইখানে কোনও এক ভোরবেলা
বিছানা থেকেই চোখ জানালার ওপারে যতটুকু
সেইখানে চোখ রেখে স্পষ্ট আমার আদল দেখে
চোখে জল এনে তুমি ঝাপ্সা দেখবে সূর্যোদয়
কান্না নেই অভিমান নেই মাটি চাপা অপেক্ষায়
পথে পড়ে আছে শীর্ণ একটি শুষ্কপ্রায় জলাশয়
গ
কান্না আসে। দশক দশক পার হয়।
এত ভুল বোঝা এত জেদ এ কি অকারণ!
নিশ্চয়ই কারণ আছে যোজন যোজন দূরে
সরে চলে যাওয়া তোমারও তো সহজ ছিল না।
মাঝরাতে কাঠ হয়ে বসে থাকি, ঘুম নেই
রাত্রির আকাশ ধীরে ধীরে কেটে যায়
চোখের পাতারা বন্ধ হয়ে আসে কান্নার ক্লান্তিতে
চোখে মুখে জল দিয়ে জল খেতে যাই
বুক থেকে একঢোঁক নামে না কিছুতে
ভাবনারা মাথা জুড়ে থাকে বসে
রোমকূপ উথাল পাথাল করে তলপেট থেকে
মৃত্যুগন্ধে বমি আসে।
ঘ
সরে সরে যেতে যেতে গণ্ডিটান টেনে দেব
প্রভূত আঁচড়ে যাতে কেউ কিছু বুঝে নিলে
বুঝে নেবে মনে মনে কিন্তু বলার আদতে
সম্মুখীন তবু কন্ঠ রুদ্ধ রীতিমতো গুম
এ প্রসঙ্গ অভ্যন্তরে নাড়া দেবে মাঝে মাঝে
খেই উঠে নিভে যাবে নাম ধাম কাজ গতি
গল্প শেষের সন্ধ্যায় তুমি বাড়ির সম্মুখে
একবার সহজে আরও আমার সমস্ত ঘোর
ফেলে দিয়ে সোজা বাড়ি ঢুকে যাবে আর যাবে
নিজের ভিতরে হাত জোড় করে গুটি পায়ে
ভিতরে প্রবিষ্ট আমি মধ্যরাতে নেমে আসব
স্বপ্নে ডুবে যাব ক্রমে তুমি মুক্ত হতে চেয়ে
আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখের জলের মতো
নিজের অন্ধত্ব খাচ্ছ একরাত ধরে একা
দু’হাত পেতেছ আজ বলছ অনর্গল চোখে
‘তোমার সমস্ত অশ্রু নির্দ্বিধায় আমাকে দাও!’
ঙ
একদিন সমস্ত ঘর দীর্ঘস্থায়ী মৃদু অন্ধকার
তুমি একা বসে আছ চেয়ারে হেলান মাথা
প্রথম গঙ্গার ধার হাতে হাত অনায়াস
ভেসে যাওয়া নাও ভেসে কীভাবে সহজে যায়
সময়ের মতো ধীরে অপলক তাকিয়ে ছিলাম
তখন নদীর জলে তোমার মুখের শব্দরূপ
চোখে শুধু জলস্তম্ভ চোখে নাও দাঁড় বিশ্ব টানা
হাতে স্পর্শ বাহু ধরে বসে আছি পাশাপাশি
তোমাকে কোথায়, রাণী, রাখি বলো গোপনে গভীর
আজ এতকাল পরে আমাকে তোমার মনে পড়ে
একা ঘরে ভগ্ন শব্দে তুমি আজ প্রচণ্ড অস্থির
চ
কীভাবে বুঝেছ ভুল কীভাবে গিয়েছ সরে
একদিনে জেদে রাগে এতটা সজোরে গেছ
আমাকে সমস্ত কথা বাক্যবাণে নিশানা নিশ্চিত
জর্জরিত আহত তুমুল বিদ্ধ বিদ্ধ আজীবন
শুয়ে থাকি তারপরে প্রতিরাতে শরশয্যায় একাকী
ঘুম আসে না কিছুতে কান্না পায় ঘোর আসে
স্বপ্নে আসো তুমি সেই আগেকার মতো গান হয়ে
স্পষ্ট শুনি কানে আর তনছট করি এপাশে-ওপাশে
ঘেমে-টেমে উঠে বসি নিঃস্ব হই বুঝে যাই
স্বপ্ন নয় আমার প্রকৃত ঘুম আজ ভেঙে গেছে।
ছ
মাঝখানে পথ পড়ে আছে, ঝিঁটানো পথের পাশে
পড়ে আছে মাঝখান। এ এক ভোরের গল্প,
মায়াবী সন্ধ্যার দিকে চলে যেতে হবে আমাদের
বেলা বাড়াটুকু মেনে নিতে পারলেই সব ঠিক
পারে না পারে না মন মেনে নিতে তবু সয়ে যায়
কান্নাজল থেমে গিয়ে চোখ শুকনো হয়ে হাসে,
দেহটি এলিয়ে দিতে হয় শহরের ক্লান্তিশেষে
মন রয়ে যায় সেই মালভূমি পাহাড়ের কোলে
ঝাটিঙ্গা ঝোঁপের মতো দুমড়ে মুচড়ে একপেশে