রাহুল দাশগুপ্ত-র গুচ্ছ কবিতা
১
বর্ণের ভিতরে থাকে মিউজিক
মিউজিকের ভিতরে থাকে লম্বা টানা পথ
পথের হৃদয়ে থাকে কুয়াশা
ঋতুর পর ঋতু পিছিয়ে সেই পথ মেশে
ঋতুহীন বসন্তে
সমস্ত মৃত আত্মারা যেখানে
ফুল হয়ে ফুটে আছে
আর তাদের গন্ধ হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে
প্রেরণার অলৌকিক আঁচল।
২
যেসব দেবদূত এসেছিল
আমার স্মৃতি লুণ্ঠন করতে
তাদেরও ফিরিয়ে দিয়েছি!
মাঝি, দাঁড় তোলো
ছোরার মতো তীক্ষ্ণ ঢেউয়ের ডগায়
ভাসিয়ে দাও নৌকো…
উড়ে আয় দখিনা বাতাস, আবারও
আমি যতবার ইচ্ছে পারাপার করব
তাতে কার কী!
৩
আপাতত আমি প্রশস্ত রাজপথ দিয়ে হাঁটব…
কবে কী কারণে সংকীর্ণ গলিপথ দিয়ে
হাঁটতে শুরু করেছিলাম, মনে নেই। হয়তো সংক্ষেপে
আনুমানিক গন্তব্যে পৌঁছতে চেয়েছিলাম। কিন্তু
হাজার বছরের পুরোনো শহর,
গলিপথের দুধারে অসংখ্য স্মৃতিস্তম্ভে
সংরক্ষিত বয়স, মিলন–মৈথুন–যুদ্ধ–বিরহ অর্থাৎ
বয়সকেও ছাপিয়ে ওঠা অমরত্ব
দেখতে দেখতে মুছে গেছে অনুমান,
অনুমানে নিমজ্জিত গন্তব্য…
আপাতত হাঁটাই ভীষণ জরুরি হয়ে উঠেছে…
আর আমার মতো শিক্ষানবিশের পক্ষে
সংকীর্ণ গলিপথ দিয়ে হাঁটার বিপদও যথেষ্ট
তাই আমি প্রশস্ত রাজপথ বেছে নিয়েছি
নিরাপদ, অন্তহীন…
৪
একমাত্র মানুষের উচ্ছ্রিত বাহুবেষ্টনের ভিতর
পৃথিবী ধরা দিতে চায়
সেইসব সন্ধ্যাগুলোয় একমাত্র সাক্ষী থাকে
নির্জন হাওয়ালণ্ঠন।
এরপর সেই ক্ষুধার্ত তর্জনীর সামনে
তাতার–দস্যুর মতো আচমকা এসে দাঁড়ায়
কুটিল রাত্রি
রাত্রি সরে গেলে দেখা যায়
ওপারে যে শান্ত সমুদ্রের
অপেক্ষা করার কথা ছিল
তার পরিবর্তে রাত্রির লেজটুকু কামড়ে
উথালি–পাথালি খাওয়া
পাগলা কুকুরের বিপন্ন প্রতিধ্বনি।
৫
যে আত্মা প্রতারিত করে তার হাতকে
সে হাত খসে পড়ুক
যে আত্মা প্রতারিত করে তার চোখকে
সে চোখ নিভে যাক।
বৃদ্ধার কান্নার মতো
সময় এসে দাঁড়িয়েছে পাশে
অপর্যাপ্ত অফিস–ফেরত বাসের মতো পৃথিবীতে
আত্মার এই অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়ার কাহিনি
কোনওদিন ফুরোবে না…
৬
তবু,
সমাধির ভিতরও সে জীবিত থাকে
সমাধির ভিতরও
জীবনের সমস্ত অনুভব নিয়ে
জীবনের সমস্ত কৌতূহল নিয়ে
কেউ টের পায় না
সমাধির ভিতর সে বয়ে বেড়াচ্ছে
আস্ত একটা জীবন।