মাসুদ খান-এর একগুচ্ছ কবিতা

জিজীবিষা

তেতে-ওঠা বালুর ওপর দিয়ে হাহাকার করে ধেয়ে আসে
এক মরুসরীসৃপ, মুসাফিরের দিকে।
‘বিষ ঢালব না, ছিঁড়ে খাব না মাংস, শুধু একটু গলা ভেজাব রক্তরসে,
এমন ছাতিফাটা কহর তৃষ্ণায় প্রাণ যায়-যায়, এটুকু রহম করো হে বেদুইন’
ব’লে সেই গনগনে সরীসৃপ ঝাঁপ দিয়ে পড়ে বিদ্যুৎ গতিতে,
গোড়ালি কামড়ে ধরে রক্ত শুষে ভিজিয়ে নেয় জিহ্বা ও গলা,
তারপর নিমেষে উধাও, এক ক্ষমাহীন বিষুবীয় ক্রুদ্ধ মরীচিকার ভেতর।

ক্ষুধা: প্রকৃতিসূত্র

যখন শুকিয়ে যায় সবকিছু প্রচণ্ড খরায়,
শামুক-গুগলিরাও আর পারে না বাঁচতে,
তখন স্বেচ্ছায় হতে চায় তারা হাঁসের আহার।
কখন আসবে উড়ে ত্রাতারূপে ঝাঁক-ঝাঁক হাঁস,
মরিয়া হয়ে প্রতীক্ষা করে তার।

আর
হাঁসেরা যখন থাকে অনাহারে, পায় না কোথাও কোনো খাদ্য,
শৃগালকে তখন কামনা করে কায়মনে বটে
শৃগালই অমোঘ রহমকর্তা, উদ্ধারত্রাতা, এ ঘোর সংকটে।

ফাতনা

সরল ছিপের এক প্রান্তে মাছশিকারি, চুপচাপ।
অন্য প্রান্তে মাছ।

মাঝখানে নিরীহ ফাতনা— ভাসে নিরুপায়, মধ্যপক্ষরূপে
তাকায় চঞ্চল শিকারের দিকে একবার, পরক্ষণে ধূর্ত শিকারির প্রতি।

জগতের প্রত্যেকটি ঘটনার তীব্র, তুঙ্গ মুহূর্তে হাজির থাকে
তৃতীয় একটি পক্ষ। থাকে এক সুদর্শন মাছরাঙা—
বড়শির বিবেকের মতো বাঁকা, রঙিন, আকর্ষণীয়।

আর এই সমস্তকিছুর মৌনী মধ্যস্থতা আকারে ভাসতে থাকে
একা এক শোলার ফাতনা।

উপমান

তোমার মুখের ওপর ঝেঁপে নেমে আসছে বেসামাল কেশদাম, খেয়ালি হাওয়ায়।
তারই ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে এক লালচে নির্জন দুষ্টব্রণ, গণ্ডদেশে তোমার—
যেন পুঞ্জাক্ষ আনারসের ঝোপে খুব ছোট্ট এক রূপদক্ষ গিরগিটি…

অতিদূর অতীত থেকে ভেসে আসে দূরগামী তূর্ণ ট্রেনের সিটি।


আন্তর্জাগতিক

ভিন গ্যালাক্সির মেয়ে তুমি, ভিন্ন গ্রহের মেয়ে
তোমায় আমি ফুটিয়ে তুলি ইচ্ছাশক্তি দিয়ে।
দেখতে কেমন, ভাষা কী তার, কেমন অবয়ব—
জড়বুদ্ধি জাহিল আমি, জানি না ওসব।

তার মন তৈরি রূপ তৈরি কেমন উপাদানে
কল্পভীরু এই কবি আর কীই-বা তার জানে!
জানি না তার অনুভূতি, আবেগ, স্বভাবগতি
স্রেফ অনুমানেই ফুটিয়ে তুলি, এমন প্রাণবতী!

ছায়াপথ ছাড়িয়ে, দূরের ওই সুরগঙ্গা, তারও ওইপারে, বহির্গোলকে,
শঙ্কু-আকৃতির এক মিটিমিটি আলো-জ্বলা ঘরে ব’সে
ভিন্ন ভুবনের মেয়ে তুমি
নির্নিমেষ চেয়ে আছ হে আমারই জানালার দিকে।

হৃদয়ের নেশা, এক আন্তর্জাগতিক নেশা…
একদিন ঘনিয়ে আসব ঠিকই দুইজনে, পরস্পরে।

তোমার আমার ঘনীভূত অভিকর্ষ দিয়ে
আস্তে-আস্তে বাঁকিয়ে ফেলব দেশকাল
দূর দুই জগতের মাঝখানে যে ব্যাকুল মহাশূন্য,
বেঁকে যাবে তা টানটান অশ্বক্ষুরাকার চুম্বকের মতো।
আলোকবর্ষের ওই মহাদূর দূরত্বই হয়ে যাবে
তুড়ি-মেরে-উড়িয়ে-দেওয়া ঘণ্টা কয়েকের পথ।
আর আমি ঠিকই সাঁতরে পাড়ি দেবো ওইটুকু মহাকাশ।

জ্যামিতির ছুড়ে-দেওয়া এক জেদি অথচ লাজুক স্পর্শকের মতো
তোমাকেই ছুঁয়ে ছুঁয়ে বয়ে যাব আমি
পৃথিবী নামের গ্রহ থেকে ছোটা হেমন্তদিনের হাওয়া।

তদন্ত

কী ঘটেছে ওইখানে, ওই ছায়াপথে,
রাতের আকাশে ফুটে-ওঠা
ওই চেরি-ব্লসমের পুষ্পসমাবেশে?

যেন এক মহাজাগতিক অপরাধপট,
তদন্ত চলছে, নেমে পড়েছে বাঘা-বাঘা সব
জ্যোতির্গোয়েন্দা ও মহাকাশীয় পুলিশ
অকুস্থলে খোঁজা হচ্ছে ক্লু, মোটিভ, সাক্ষী ও সাবুদ, কিংবা অ্যালিবাই…

ওই যে ওখানে একটি তারা ছিল,
লাপাত্তা হঠাৎ। মেরে ফেলেছে কি কেউ?
কোথায়ই-বা লুকালো সে-ডেডবডি?

হঠাৎ হাউৎ করে ডুকরে-ওঠা, গায়ে-হিম-ধরানো কসমিক কান্না…

আর কারাই-বা, কোন ধীর বিষপ্রক্রিয়ায়,
আস্তে-আস্তে হনন করছে প্রিয় এই গ্যালাক্সিকে!

দীর্ঘ তদন্তের পর জানা গেল—
ওই যে আবর্তমান তারা-ফোটা মহাজাগতিক চাকতি,
কল্পনাকেও ক্লান্ত-করে-ফেলা ওই মহাকায় যমজাঙাল,
মর্মদেশে বসে আছে তার
সে-এক ভাবগম্ভীর, রাশভারী, ঘনীভূত কালামামা।

এইসব নাকি তারই কাজ।

মিসিং লিংক

কালোবাজারের মর্মস্থলে বসে এতকাল
চালান করেছ দারুচিনি, ভাবাবেগ…সীমান্তের এপার-ওপার।
আজ দেখি আনাগোনা
না-কালো-না-শাদা এই হৃদগন্ধা ধূসরবাজারে!

এই তো এখন চারপাশ থেকে
কানে ভেসে আসছে বকুলের গন্ধধ্বনি
নাকের ঝিল্লিতে ঝাপসা ধাক্কা খাচ্ছে
ব্রতবদ্ধ ব্যস্ত মৌমাছির বিবিধ গুঞ্জনগন্ধ।
আর কিছুক্ষণ পরে ঝোপের আড়াল থেকে
ঢুলুঢুলু চোখে তাকাবে বহুচক্ষু আনারস
তার চূড়ায় চড়ে-বসা এক মাথাগরম গিরগিটি
চেরা জিভ বাড়িয়ে দিয়ে মাপতে থাকবে
টিপটিপ রোদের সুর, ছন্নমতি খেয়ালি হাওয়ার গতি।
রূপসী আকন্দফুল, অভিনয়পটু, সখিদল নিয়ে ছিনালি-আনন্দে
মান ভাঙাবে তিরিক্ষিমেজাজ কিছু বিছুটিপাতার।

এইবার মেলাও তো দেখি হে গুনিন
ওপরের দুই স্তবকের মধ্যকার মিসিং লিংক?

স্বভাব

শ্রেয়তে বিরাগ যথারীতি,
অনুরাগ হেয়তে আমার।
অব্যাপারে আগ্রহ অধিক, যথাব্যাপারে সন্ন্যাস।
অকাজে উদ্ব্যস্ত।

বারবার আড়াল হয়ে দাঁড়ায় এক বেঢপ পাহাড়।
পাহাড় ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গিয়ে তাই
হেলান দিয়ে রেখেছি দিকচক্রবালে,
গোল হয়ে নেমে আসা আকাশের গায়ে।

এদিকে তারার ভস্মে ভরে যায় খটখটে গিরিপথ।

উভবলতা

আচমকা কোথাও আলোড়ন হলে দূর দক্ষিণ গোলার্ধে,
কাঁপতে থাকে আঁকাবাঁকা দীর্ঘ শৈলশিরা, এই উত্তরাংশে।
আড়মোড়া ভাঙে আমাজন
লাফ দিয়ে উঠে গরগর করে লাভা ঝাড়ে ঘুমিয়ে-থাকা অনলপাহাড়।

ভূমণ্ডল কি এমনই, একইসঙ্গে স্থির ও অস্থির, যার
নদীরা প্রগলভ প্রাণবতী, সাগরেরা ঊনপঞ্চাশ পবনে-পাওয়া
আদিগন্ত হই-হুল্লোড়প্রিয়,
পাহাড়েরা অচঞ্চল আর মোরাকাবায় বসিয়ে রাখা মৌনী মালভূমি,
বনভূমি একদিকে স্পষ্ট দারুদাহের কবলে
অন্যদিকে স্পন্দমান ফুসফুস!

এ কখন উভবলে বলীয়সী হলো এই সুধীরা ধরিত্রী!
এইপার দৃশ্যত প্রশান্ত
ওইপার বাধ্যত উত্তাল, অতলান্ত।

কাঠবিড়ালির দর্শন

নিষ্ফলা কাঠবাদাম গাছ।

কী খেয়ে বাঁচবে তবে কাঠবিড়ালিরা!
তা-ভেবে কে যেন প্রতিদিন
চুপিচুপি গোড়ায় ছড়িয়ে রাখে প্রচুর চিনাবাদাম।

তন্ন-তন্ন করে খুঁজছে বাদামফল, গাছবিড়ালিরা, ডাল থেকে ডালে।
কিন্তু নিষ্ফল।

আর সেই নিদারুণ বাদাম-বিফলতার পর
একসময় গাছ থেকে নেমে আসে হতাশ কাঠবিড়ালি।
নেমেই স্ফারিত চোখে চেয়ে দ্যাখে
প্রচুর চিনাবাদাম ছড়ানো মাটিতে।

কে দেয়, কোত্থেকে আসে, কিছুই জানে না তারা। শুধু জানে—
কাঠবাদাম গাছের গোড়ার বাকল ফুঁড়ে
প্রতিদিন প্রকাশিত হয় আর টুপটাপ ঝরে পড়ে
খোসাসহ রাশি-রাশি আমান চিনাবাদাম।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS Wordpress (4)

  • comment-avatar
    প্রনবরুদ্র 4 years

    প্রতিটি কবিতা ভাবিত করলো। অন্য এক বোধের জগতে নিয়ে গিয়ে আকাশ খুলে দিলো।

  • comment-avatar
    প্রনবরুদ্র 4 years

    প্রতিটি কবিতাই ভাবিত করলো। অন্য এক বোধের জগতে এনে আকাশ খুলে দাঁড়ালো। আয়নাও দেখতে পারো যদি নিজেকে আয়নার সামনে রাখার সাহস করো।

  • comment-avatar
    গৌতম বসু 4 years

    ‘আর সেই নিদারুণ বাদাম-বিফলতার পর
    একসময় গাছ থেকে নেমে আসে হতাশ কাঠবিড়ালি।
    নেমেই স্ফারিত চোখে চেয়ে দ্যাখে
    প্রচুর চিনাবাদাম ছড়ানো মাটিতে।’

    মাত্র চারটি তুলে এনে ভাল কাজ করলাম না বুঝতে পারছি। না ক’রে পারলামও না ।
    আরও অনেক নতুন কবিতা পড়তে চাই ।

  • comment-avatar
    শীর্ষা 4 years

    ফাতনা এবং উপমান বেশ ভালো লাগল

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
    Checking your browser before accessing...