মাসুদুল হক-এর কবিতাগুচ্ছ
আমাদের ভ্রমণ ও অন্যান্য কবিতা
বৃষ্টি
এ দেশে বর্ষার সঙ্গে ঘরের সম্পর্ক আছে জেনে
আমি বৃষ্টির ধরন নিয়ে ভেবে থাকি
বৃষ্টি, কমপক্ষে চৌষট্টি কলায় ঋদ্ধ
টিনের চালে প্রতিবার একেক কলায় নেচে ওঠে
বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নৃত্যের মুদ্রা সাজায়
বজ্রের মুখে কান্নার আওয়াজ তোলো
জলাবদ্ধ পুকুরে বৃষ্টি আলতো পায়ে নাচে
জলাভূমিতে গতির মুদ্রায় নদীর দিকে ছোটে
নদীতে মন্থর গতিতে এলিয়ে পড়ে জলের বুকে
সমুদ্রের ঢেউয়ে বৃষ্টি অদ্ভুত নটরাজ
পাখিদে গায়ে বৃষ্টি নেচে ওঠে নিঃশব্দ আওয়াজে
রোদের পিঠে বৃষ্টিকে ঝংকার তুলে পড়তে পড়তে
কত্থক নৃত্যে হাসতে দেখি
এদেশে একেক বর্ষায় বৃষ্টি
ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রায় নেচে ওঠে
বৃষ্টির চৌষট্টি কলা ও নিজস্ব মুদ্রার পাশাপাশি
অসংখ্য ডানাও আছে!
মেয়েটা ঝড়
মেয়েটা ঝড়। বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে আগুন
রান্না ঘরে ভীষণ গর্জন
কাঁচের সামগ্রী ভেঙে চুরমার
শিলাবৃষ্টি সঙ্গে বজ্রপাত
ভীষণ কান্নার আওয়াজ
একটু পরে ওর হৃদয়ে
লুকিয়ে থাকা নদী থেকে
বেরায়ে আসবে অথৈ জলের ধারা
টুপটাপ জলে ভিজে যাবে
আমাদের মানবিক গার্হস্থ্য উঠান
গলেনুর
আশ্চর্য লাগে; মেলাতে পারি না
যখন গরীবের চেহারায়
আভিজাত্যের দেখা পাই
গলেনুর জানে না, কি অর্থ বহন করে
তার নাম
অথচ মানব বাগানে আলো হয়ে
মুখরিত করেছে সংসার
নব্বুই পেরিয়ে এখন
কাঠের বাগানে
শুকনো খড়ির সঙ্গে কাটায় রাত!
আধুনিক বনবাস
রাধাচূড়ার স্বরূপ নিয়ে মালতী আজ
কান্তনগরে;
কৃষ্ণচূড়াগুলো
গুছিয়ে রাখছে ভ্রমণ পোটলায়
এ জীবন বনবাস–
নিমগাছের সন্ধানে ভুলে যাচ্ছে
মিথুনমুখর রাতগুলোর স্মৃতি
বুড়ির হাটে লঙ্কাপুরি
দিনগুলো রাতগুলো
কামশিল্পের চূড়ান্তে উঠে
কবরী, তমাল, হিজলের ছায়ায়
সাধুসঙ্গ খুঁজে বেড়ায়
বৈষ্ণবীয় সোনালী সন্ধ্যায়!
ড্রাগন ফল
ড্রাগনের বাগানে এসে
আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় …
সুপক্ক ফলের গন্ধ পাই
ভুলে যাই আমাদের
কল্পনায় আছে জেগে
ভয়ঙ্কর প্রাণীর আগুনমুখ
গামারীর ছায়া আর
চিরতা পাতার মায়ায়
ড্রাগন আজ সুডৌল ফল!
আমাদের ভ্রমণ
হেঁটে হেঁটে একদিন
আমরা হয়ত
কোনো এক সহজ নগরে পৌঁছে যাব;
যেখানে হাঁটা বলে আর কিছু নেই
সেখানে প্রাণ নেই; নেই কোনো প্রাণি
সেখানে বয়স কিংবা মৃত্যু বলে কিছু নেই
প্রাণগুলো ক্রমান্বয়ে হয়ে গেছে পাথর!
প্রতিটি কবিতাই অসাধারণ ভাবনায় নির্মিত
আপনার কবিতা সব সময় সুন্দর।