মারাঠি সন্ত কবি সয়রাবাঈ-এর কবিতা
অনুবাদ – বেবী সাউ
১৪ শতকে মারাঠি এক সন্ন্যাসী কবি ছিলেন সয়রাবাঈ ( অথবা সয়রাবাই) । এই নারী সেই সময়কার মারাঠা সমাজে ছিলেন ব্রাত্য মাহার সম্প্রদায়ের। বসবাস করতেন পবিত্র নগরী পান্ধারপুরে। তিনি ছিলেন তাঁর স্বামী চোখামেলার শিষ্যা। তিনি অনেক গানই লিখেছিলেন, যেগুলির বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলির মধ্যে ৬২টি গান এখনও পাওয়া যায়। তাঁর অভঙ্গাগুলিতে তিনি নিজেকে চোখামেলার মাহারি রূপে বর্ণনা করেছেন। ঈশ্বরকে অভিযোগ জানিয়েছেন কেন তিনি দলিতদের ভুলে যান এবং দলিতদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্দশাগ্রস্ত। তাঁর ভক্তিগীতিগুলিতে তিনি অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে তীব্র কণ্ঠে প্রতিবাদ জানান। দলিতদের যে অল্প মাত্রায় খাদ্যশস্য দেওয়া হত, তাতে তাদের পেট চলত না। এ নিয়েও তাঁর গান রয়েছে। তাঁর ভক্তিগীতিগুলিতে রয়েছে ঈশ্বরের সঙ্গে মিলনের কথা, এক অদ্বৈত সত্তার কথা এবং অস্পৃশ্যতা যে কোনও ভাবেই ঈশ্বরের অনুমোদিত হতে পারে না, সে সম্পর্কেও তীব্র বক্তব্য। ভক্তি এবং অস্পৃশ্যতার মধ্যে পার্থ্যকের কথাটি তিনি তীব্র ভাবেই বলেন তাঁর গানে। স্বভাবতই, সে সময়কার ব্রাহ্মণ্যসমাজে এই সব গানগুলি ছিল তাদের একপ্রকারের অস্বীকার করাই। মারাঠি সন্ত মহিলা যাঁরা, তাঁরা বেশিরভাগই ছিলেন দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। অনেক অস্পৃশ্যতা, দারিদ্র্য এবং ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের অত্যাচার সহ্য করেও, তাঁরা গান লিখেছেন, গান গেয়েছেন। সেই সব গান এবং ভাবনা ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মধ্যে। সয়রাবাঈয়ের এই গানগুলি ইংরিজি অনুবাদ করেছেন জেরি পিন্টো এবং মীরা ভাগবৎ। ইংরিজি অনুবাদ থেকেই বাংলায় ভাষান্তর করলেন বেবী সাউ।
সয়রাবাঈ-এর কবিতা
কতটা মৃত্যু, কতটা কান্না
কতটা মৃত্যু, কতটা কান্না
কে আকাশে তোমার দিকে চেয়ে হাসছে?
আমরা তাকিয়ে থাকি বিস্ময়ে, আর ভাবি, সত্য কী?
আর কেন এত মায়ার প্রতি মন চলে যায়?
মৃত্যু কী? শোকই বা কী?
কার প্রতি হেসে উঠি ভাবনা ছাড়াই?
কাকে ছেড়ে দিই? কাকে ছেড়ে চলে যাই?
আমাদের প্রত্যেকের নিয়তিই একই সূত্রে গাঁথা
সয়রা বলে, এসব কথার উত্তর কি হয়?
এগুলির একটিও যে ঈশ্বরকে ডাকে না আর…
একই রঙের এখন
একই রঙের এখন, একই রঙ, তোমার-আমার
আমি তোমার দিকে তাকাই, পাণ্ডুরাঙ্গা, একটি মাত্র দৃষ্টি
তার পর তুমিও নেই, আমিও না
এ আবেগ শান্ত হয়ে আসে
শরীর লুটিয়ে পড়ে, ঝরে।
আমরা এক, না আমি, না তুমি
সয়রা বলে, কে যে দ্যাখে আর
কাকে যে দেখা যায়?
উপাসনা
আমার পুজো তোমার প্রতি
তোমার দেখা আমায় উপাসনা
আমরা দুজন সঙ্গীতের মতো
সুরে কথায় নেই যে সীমা কোথাও
এক হয়েছি বলেই জানি তোমায়
আমি নিজেই নিজেকে দিই ফুল
আমার পুজো আমারই চরণে রাখি
তোমার চরণ সেই দুটি আমারই…
গান
রাঙা, তোমার চরণে দেব রঙ
আমরা মিলে যাই
এক শরীরে কত শরীর থাকে
এক মনে তো হাজার রামধনু
রাঙা, তোমার বাঁশির কাছে শুই
বাঁশি শরীর, মন তো তার সুর
আমি তাকেই চিনি
তুমিও তাকে গাও
পান্ডুরাঙা, তোমার কাছে এলে
আমার কাছে আমিই ফিরে আসি
তোমার গানের আলো
তোমার গানে যে আলোা পাই
সেখানে কোনও ছায়ার দেওয়াল নাই
সেখানে আছে অনন্তের স্রোত
মিলন-গীতি, শান্ত চারিদিক
তবে কেন বা মানুষ পৃথক করে
তোমার নামে, যেন বা তুমি তাদের
অলংকার, আমরা চুরি করি
আমি তো চোর, চিরকালের চোর
কেমন করে আমরা মিশে গেছি
দ্যখো তো, কোনও স্পর্শ আছে কিনা?
ক্ষত
এ তো ক্ষত নয় প্রিয়, এ তো অপমান
তোমার-আমার মধ্যে কারা নিয়ম বানায় শোনও
আমরা কেউ কি মৃত্যু জানি? জন্ম জানি বলো?
ঈশ্বর তুমি জন্ম নাও তো আমার মধ্যে জানি
আমিও তোমার মধ্যে বসে আশীর্বাদ করি
যে পাতা ঝরে, যে পাতা জন্ম নেয়
যে ফুল ঝরে, যে ফুল ফোটে রোজ
তারা কি কোথাও আলাদা হতে জানে?
মালি তো বাঁধে কেবল তার মালা
সেও কি পারে বলতে কোনও ফুল
অপবিত্র হয়?
“তোমার কাছে এলে
আমার কাছে আমিই ফিরে আসি”
সুন্দর অনুবাদ! ❤️❤️
প্রতিটি অনুবাদ মন ছুঁয়ে গেলো …শ্রদ্ধা সয়রাবাঈ🙏