মণিশংকর বিশ্বাস-এর কবিতাগুচ্ছ
পারভার্ট- ১
ধর্মাবতার, মিথ্যে বলব না, ঘুম থেকে উঠবার পর থেকেই
শুরু হয় যৌনচিন্তা— মাইল-মাইল লম্বা আর প্যাঁচালো পথ—
চড়ুই পাখি, যারা সারাদিন খুঁটে খায় আর যৌনতা করে
ওদের তো তবু চিন্তাটা করতে হয় না—
এদিকে আমি হাড়হাভাতে
সারাদিন এই পাপের পথে হাঁটি
চটির ফিতে ছিঁড়ে যায়, পায়ে এটা ওটা বিঁধে যায়
এত হিউমিডিটি, যে দম খিঁচে আসে
তবু দরজা খোলে না কোনো…
সন্ধ্যাবেলায় আত্মহত্যার পরে
কখনো-সখনো একপশলা বৃষ্টি নামে—
আরো রাতের দিকে
এঁটো-হাতে ছেঁড়া জবাফুল নিয়ে বসে থাকি
রুগ্ন-বউ ঘেন্নায় পাশ ফিরে শোয়…
পারভার্ট ২
মৃদুমন্দ মেয়েটি যখন পাশে এসে বসে
মেয়েটির শরীর আর শরীরের মনও পাশে এসে বসে।
কয়েক ইঞ্চি দূরে থাকা মেয়েটির মন
যদি যোজন দূরের কোনো অলৌকিক জলযান—
ওই ছায়াঘন কামরাঙা ফুল—
চিতল হরিণ…ডোরাকাটা বাঘ…
একটা গোটা সুন্দরবন তো মাত্র একহাত দূরে!
মেয়েটিকে না ছুঁয়েও
ছোঁয়ার ভাবনাটি তাই অধৈর্য পেন্ডুলাম হয়ে
এদিক-ওদিক করে
দুজনের মাঝখানে সুন্দর এক বন…
একদিকে আনমনা ল্যান্ডস্কেপ আর্টিস্ট—
অন্যদিকে পারভার্ট পায়চারি করে…
নটে গাছ
কলকাতার রাস্তায় বাসের হর্ন
অথবা কাঁকড়াঝোড়ের জঙ্গলে হাতির বৃংহতি
কিছুই নৈঃশব্দ্যের অন্তরায় নয় কখনো—
নৈঃশব্দ্যকে ভাঙতে পারে শুধু মানুষের আওয়াজ—
কখনো পাশের বাড়ির প্রজ্ঞাপারমিতার একটি চিৎকারে
দীপেশের সারাজীবনের ধ্যান ভেঙ্গে যায়
আবার কখনো-বা ঘুমের ভিতর ফিসফিস শব্দে
অভিষেক ঘুম থেকে উঠে বসে, সিগারেট ধরায়—
তবুও একলা-মানুষ খুব দূরে
‘সমুদ্রবিলাস’-এর পেন্টহাউসে বসে ভাবে—
এত দূরে এসে, এত একা হয়েও
নিজের সঙ্গে নিজের কথা
এখনও ফুরালো না!
অতর্কিতে
তাজা বরবটির মতো ট্রেন—
এসো, তাকে শীত বলে ডাকি
ব্যক্তিগত ঈশ্বর বা পথের কুকুর—
কাউকে নিয়ো না সঙ্গে
গত তিনদিন ধরে চোখে লেগে থাকা মেয়েটি
পাল্সের ভিতর হেসে ফ্যালে
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
ডলোমাইট মিশ্রিত মাটি থেকে ধোঁয়া উড়ছে
পানীয় জল, নীলরেণু আকাশ, শালবন—
শালবনের ভিতর নেচে ওঠা
বাংলা সিনেমার অখ্যাত নায়িকার মতো লাট খাচ্ছে
ডাবল হেলিক্স
সবাই জেনে গেছে অতিরিক্ত খাবার,
প্লেট থেকে
উড়ে যাবে না আফ্রিকা বা অভুক্ত জেলার শিশুদের পাতে
তবু খাদ্যশৃঙ্খলের ডাকে সাড়া দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে
চিন্তিত মুখ, কলার বোন
গাছে গাছে আই কিউ ঝুলছে
মোটা আর লম্বা
আধ্যাত্মিকতা
শুকনো পাতার মতো জড়ো করি
ফেলে আসা প্রতিটি দুঃখিত মুখ —
ওরাই আমাকে বলেছে, আঘাত করো
ভাঙো—
অথবা বয়ে যাও—
আগে জল হও
খুব সৎ কবিতা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
খুব ভালো লাগল । তীব্র, প্রখর, সৎ ।
অসাধারণ লেখা, বারবার ফিরে আসার মত অভিঘাত
কবিতার নদী খাত বদলাচ্ছে। ধু ধু চর জেগে উঠছে কোথাও, কোথাও চোরা বালির বিস্তার। একটা অস্থিরতার ঢেউ কোথাও আছড়ে পড়ছে যেন পরিষ্কার শুনতে পেলাম।
কী বলি ! চুপ করেই থাকা ভালো …
এমন কবিতাসঙ্গে 🙏❤🙏
চমৎকার সব কবিতা। মণির কবিতার বাঁক বদলের চিহ্ন রয়েছে এইসব লেখায়।
অসম্ভব ভালো সব লেখা। মুগ্ধ…সেভ করলাম, আরও বেশ কয়েকবার পড়তে হবে।