বেবী সাউয়ের কবিতা
উৎসর্গ
শান্ত অভিমান বুকে,
কার দিকে হেঁটে যাও, মন!
এখানে মিশেছে এসে ভাঙা পলাশের ডাল
হরীতকী ফল; ব্যথাতুর চোখে কোকিলও মিথ্যে মনে হয়…
বোধহয় বশ্যতা শিখিনি বলে প্রতিটি প্রেমিক খুনী; রক্ত গোপালের খাঁজে এঁকে দেয় মৃত্যু উপত্যকা,
সামান্য লালা ও থুতু
তিনহাজার কবিতা লেখা হলো ভেবে, বিরহের,
কুহু ডাক মায়াবিনী…ঘাতকপ্রবণ
রং
রাস্তা তো একটাই
অথচ
মনে পুষে রাখা আপামর
ক্ষোভ
মুখোশ
সাদা থানে কেমন
আগুন
রামধনু হয়ে খেলছে
লাটাই
এমনসব মুহূর্তে গানের মতো ভেসে যেতে ইচ্ছে করে…সুর ভেঙে তাল ভেঙে যেন ঠিক বেতালা বাতাস, ঝড়ো ঘূর্ণি কিংবা নির্জন দুপুরের তপ্ত দাহ। তুমি তখন একমনে সেধে চলেছ সরগম, ভাঙা-গড়া। হাতের রেখায় ফুটিয়ে তুলছো হিসেব। আগা থেকে গোড়া কিংবা গোড়া থেকে সম্পূর্ণ নীলের গতিবিধি। তাকে থামানোর সাধ্য আমার নেই! তোমাকে শাসনের নিয়মে বাঁধতে চেয়ে আমিও হয়ে উঠছি দুর্বোধ্য কথা, তাল, সুর। তুমিও নাছোড়, শেষ পর্যন্ত আমাকেই গাইবে ভেবে কঠিন হয়ে উঠছে সাধনা…
ততক্ষণে আমি যেন কাটা ঘুড়ি, সুতো ছেড়ে, মাটি ছেড়ে নীলদেশের রাজকন্যে হয়ে বসে আছি!
নির্বাচন
তাকে সব কথা বলা যায় ভেবে লিখে দিই এই নরকাল
আঁচড়ের দাগ নিয়ে প্রতিটি দেশের কথা আর তার রাজনীতি ; জমে থাকা শোক; আনন্দের লেশ মাত্র নেই
শুকনো শাখার বুকে ঘষে যাওয়া ঠোঁট ও ঈষদুষ্ণ চোখ —
জ্বালা করে
পৃথিবীর পুরুষ ও নারীরা বুঝে গেছে হত্যার কৌশল
তাই আজ আফসোস নেই; প্রতিটি জন্মকে মনে হয় ছলনার দাস
প্রতিটি মৃত্যুও যেন খেলামাত্র
বিধিবদ্ধভাবে তাই কৃষিখেতে কুমিরেরা চলে…
চারণকবি
পাহাড়ে ডুবেছে রোদ ধুলোখেলা পেতেছে পথিক
বিকেল কেটেছে একা স্নানহীন বন্ধন গোলক
আমিও অপেক্ষা পুষি আলোতাপ বিস্তীর্ণ তারিখ
ভালোটি বেসেছি তাকে, অভিমানী বিষাদবালক
অভিযোগে পথ ভরে বেঁকে গ্যাছে হাঁটার শহর
সোনার বিবাহমেলা গভীর নিষাদ জন্মশোক
ক্ষেতের ধুলোয় দৃশ্য ক্লান্তিকর ছবি আঁকে তোর
প্রেমের আঙ্গিক যত, ঘুমজানে সূর্যাস্ত আলোক
পাহাড় ভরেছে জলে, ডুবন্ত পাথর, অহল্যার
পা-ছাপে সিঁদুর ভর্তি, নিভন্ত সূর্যের হোলিখেলা
মাউথ অর্গাণে বাজে সুর বাঁশি প্রেমিকের নাম
আসলে শহুরে তাকে পথের বিকেলে চিনতাম
পলাশে গেঁথেছে সেও, বিষাদবালক, অবলীলা
অভিমানে ভেঙেছিল গ্রিলমোড়া দরজা আমার
অনাথ কবিতা
আসলে প্রতিটি রাস্তা ভীষণ ভীষণ একা। আর
প্রতিটি ধুলোর মায়া হাঁটাপায়ে লিখে দেয় স্নেহ,
বিরহ কিছুটা। ভাবে, বুঝি এলো হলুদ বাইক
নিষিদ্ধ নগরী থেকে তুলে নেবে প্রীতি, ভালোবাসা
অনুযোগ শেষ হলে প্রতিটি কবিতা মৃত, একা
প্রতিটি কাজল চোখ বর্ষাহীন ফাটা মরুভূমি
মাটির ফসল জানে মৃত নগরের ক্ষুধা বেশি,
হিমোগ্লোবিনের লোভে ফাঁদ পাতে তারা
রোজ রাতে। হাহা হোহো উপত্যকা হাসে, আর
সমস্ত পেঁচার লাশ জেগে ওঠে… আড়চোখে চায়
ঘুমন্ত ঘুঙুর সেও নববধূবেশে শ্যাম খোঁজে
হরিধ্বনি চলে যায়…খই পড়ে যেন সাদা ফুল…
এসব পথের কাজ শিখে নেয় শান্ত বর্ণমালা
ধীরে ধীরে শব্দ গড়ে,লিখে ফেলে অনাথ কবিতা…
“রং” কবিতাটি অসাধারণ। শুভেচ্ছা।
Meet at home – http://2track.info/LkJN