বৃত্তান্ত : সুরদাস <br /> :: দুর্গা দত্ত

বৃত্তান্ত : সুরদাস
:: দুর্গা দত্ত

তুমি চাও আর না-ই চাও

আমি যে অমন করে ফিরে আসি

সে শুধু নিজের পায়ে মাটি খুঁড়ে কথা বলি বলে।

 

লোকে বলে জন্মভিখারী আমি সুরদাস ঈশ্বরবিশ্বাসী

কেষ্টকেত্তনের ঢঙে কথা বলি আজন্ম লম্পট, বলে

বাবলা কাঁটায় আমি যতবার ডুবিয়েছি চোখ

সে নাকি  নদীর পাড় নতুন ভঙ্গীতে আরও

ভাঙবার ছল করি বলে —

 

এবার আমিই বলছি শোনো :

বয়ে যাওয়া ছাড়া নদীর জলের কোনো ইতিহাস নেই

এরকম ধ্রুবপদে আমি জেগে উঠিনি কখনো।

পাড় ছুঁয়ে যে নদী আমাকে জাগিয়ে রাখে

বসন্তে বা বৃষ্টির মুদ্রায়

আমার বাবলা কাঁটা সেই এনে দিয়েছিল

পাড় ভাঙবার ছলে নয়

দোহার বুননে খুব ঘনঘোর মেঘ লাগে বলে —

সেই দিন থেকে আজও মেঘের ভিখারী আমি সুরদাস

জলদাস হয়ে বেঁচে আছি

 

সমুদ্রে বা জ্যোৎস্নায় জন্মতিথি ছিল না আমার

ভূর্জপত্র ছিল না কবচে, এবং

জন্মের মাটি ছায়াসুনিবিড় কোনো শ্যামদেশও নয় —

আমার হাতের ছাপে তুলসীপাতা ছিল না বলেই

শব ও শকুনের ঠোঁটে ফুটেছিল কুয়াশার ভোর, তবু

মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে খুঁড়ে পাতালের কাছে

মুখ তুলে চেয়েছিল জলস্রোত শিরা —

ভৈরবী চক্রের থেকে পদ্মসম্ভব মাটি নিয়ে

আমি তো শেকড় ছুঁয়ে চলে যেতে চেয়েছি শ্যামল

ঝাঁজিরই যাপনে !  সেদিন গোপনে

সমস্ত শরীর জুড়ে শুরু হয়েছিল তীব্র দোহা ও ঝুমুর —

জলবন্দনার সেই গাথা

তোমাদের মনে থাকে আর না-ই থাক

আবার বলছি শোনো

সমস্ত শরীর জুড়ে সেদিন থেকেই আমি

রোপণকালীন গান গেয়ে গেছি নগরকীর্তনে

 

তোমাদের উঠোনে উঠোনে যারা মাধুকরী করে, আর

পাঁচালির লন্ঠন দোলায়

তাদের ধরনে আমি কোনোদিন করতাল মুঠোয় ধরিনি।

বিপ্লববিলাসী নই আমি।

রেশনে লাইন দিই, টিউশনি করি

বেবিফুড চারাপোনা কিনি

বিদ্যুৎ বিহীন ঘরে বসে থাকি,

সূর্যাস্তের আভা পড়ে ঘরের দেওয়ালে

দেওয়ালের স্তর থেকে কেঁপে কেঁপে ঝরে যায় চুণ ও সিমেন্ট —

বাবলার গূঢ় বন ঝেঁপে আসে চোখের ভেতরে

আঙুলের শীর্ষে জাগে তোমার মুখের ছবি

বারবার ছিঁড়ে ফেলতে চাই, তবু

পাড় ভেঙে স্রোত ঢোকে ঘরে

দোহায় দোহায় ঘর ভরে যায় এবং

নগর গ্রাম মরুপ্রান্তরের সব ঝড়

তটস্থ বিপ্লবে ভাঙে, উপড়ে দেয় খুঁটি ও ছাউনি

আবার আবার বুনি

বীজের ভেতরে বুনি বাবলার ঘর

 

সেদিন বাবলার বনে বড়ো বেশি জলস্রোত ছিল

পায়ের ভেতর দিয়ে ঘুরেছিল তীরহুত কেঁদুলি মিথিলা

এবং তোমার মুখ জেগেছিল আমার ভুবনে

সেদিন বিকেলে

তোমার আঁচল থেকে দুলে দুলে ঝরেছিল বৈঠকী ঝুমুরের ধুয়া

নন্দনসঙ্গিনী ছিল হাওয়া —

দেহাতি মানুষ আমি আমার দুহাতে ছিল মেঘের খঞ্জনী,

দিগন্তরেখায় ঘন রঙ।

খরা ও বন্যার গানে, আকালের গানে আমি

এঘর ওঘর থেকে ছুটে বেড়িয়েছি শুধু

তোমাকে স্রোতের কাছে নিয়ে যাব বলে, তবু

শরীরের মাটি থেকে সরে গেছে নদীর সম্বল, আজ

নদীহীন মৃত্তিকা আমার !

 

লোকে বলে, ভালো নাকি ভালো —

ভালো যদি ভালো এই মতিচ্ছন্ন বিকেলের আলো

তবে কেন বাথানে বাথানে শেষ সূর্যের হাহাকার

মৃতবৎসা গাভী আর অলৌকিক বাছুরের খুরের ধ্বনিতে !

 

কোনো পুণ্যোদক কোনো জলঝাঁজি

আমার পায়ের তলে ছিল না সেদিন

পার্বণে পার্বণে শুধু আগুনের নালা জমেছিল

কোনো দুধ ছিল না কোথাও

আগুনসন্ন্যাসী ছিল ভবিতব্য

গ্রামদেবতার মুখে আগুনেরই আভা লেগেছিল

 

লোকে বলে : যতটা আড়ালে থাকে ততটাই ঈশ্বরসমান

হাতে নিয়ে ছুঁয়ে দেখো, নোনাধরা পোড়ামাটি

রাধুকুমোরের তৈরি, পাকুড়তলার বাসী

ভাঙাচোরা শূন্যের পুরাণ

 

কী করে বোঝাবো সেই আগুনের আভাময় গ্রামদেবতায়

তোমার মুখের রেখা সজল সূর্যাস্ত হয়ে ঘিরেছিল সমস্ত বিকেল !

গ্রামগ্রামান্তের পথে কাঁটাবনে বেলে ও বাবলায়

সমুদ্রদলের স্নেহ জেগেছিল পায়ের তলাতে !

 

তোমাকে বলিনি এইসব, তবু লোকে বলে

সুর তাল লয় নাকি ডামাডোল নগরকীর্তনে

নিশিজাগরণ থেকে তুলে আনা রুদ্রাক্ষের রৌদ্রমুখী ঢল

আঙুলের ফাঁক দিয়ে ঝরে গেছে বালিতে পাথরে

বলে, অন্ধ আমি ছন্দহীন ধর্মহীন ভিখারী লম্পট

হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে নিই শীতের কম্বল

অন্ধকারে চাল চুরি করি, বলে

আমার শরীর নাকি জ্বরে ভেজা অন্ধকারময়,

দুহাতে আঙুলে চোখে পায়ে ও শিরায় নাকি

শুধুই আঁধার, বলে

করতাল মাধুকরী নিঃশ্বাস প্রশ্বাস সব

আঁধারেরই তন্তু দিয়ে বোনা

 

তবে কেন কেন আজও

তোমার পায়ের শব্দে খুলে যায় সহস্র জানালা

জলশব্দে টের পাই  আলোর নূপুর

চোখ ঝেঁপে নেমে আসে জলঝাঁজি শামুকের দেশ

তৃষ্ণায় আতুর আমি জলদাস

তোমার পায়ের ছাপে ছুঁতে পারি সরোবর সমুদ্র আকাশ

এবং প্রচ্ছদহীন শরীরে আমার

দিনের আভাস নিয়ে শুরু হয় প্রভাতী কীর্তন !

 

সমুদ্র বাজাও তুমি পায়ে পায়ে ফেনার ঝুমুরে

জলস্রোতে জ্বরে আমি বহুদিন সমুদ্র দেখিনি

নিজের আঙুল ছুঁয়ে জেগে থাকবার মতো বহুদিন নিজেকে দেখিনি

পার্বণে পার্বণে ঢাকা বহুদিন স্বদেশ দেখিনি

পাথরে পায়ের ছাপে জলশব্দে জেগে ওঠা

বহুদিন তোমাকে দেখিনি

 

প্রচ্ছদে প্রতারিত মাটির ফাটলে আমি অন্ধকারে ধান ছড়িয়েছি

মাথার ভেতরে বাসা কতদিন বুনে গেছে শকুন পালক

আজ, মুথার উদ্ধৃতি ছুঁয়ে বসে আছি পথের পাথরে

 

জন্মভিখারী আমি সহজিয়া সুরদাস আমিই বলছি,  তবু শোনো,

হাতের মুঠোয় কোনো পদ্মবীজ

পালকের ভাঁজে কোনো গান আজ থাক আর না-ই থাক

মধ্যরাতে খুলে দেব ভোরের আজান

বনমোরগের ডাকে মেলে দেব ধ্বস্ত দুই চোখ

দুচোখে বাবলার বন গেঁথে দেবে কমলেকামিনী

পাথরের জলশব্দে ভেজাবো শরীর আর

বধির আঙুলে মেঘে বুনে যাবো তোমার ভুবন

 

যা বলে বলুক লোকে নগরের পথে, আজ

আমিই বলছি, আমি

মেঘের ভিখারী আমি চাঁদের ভিখারী আমি

সারাদিন সারারাত বাবলাকাঁটায়

ঘরের কাঠামো যার বোনা আছে দোহা ও ঝুমুরে

আজ আমিই বলছি, তুমি

দারুণ দুপুরে যদি কোনোদিন ছিঁড়ে ফেল শালুকের মূল

পদ্মের বীজ যদি পাথরে ফাটাও

পশ্চিমে ফেরাও যদি মুখ, তবে

কেঁদুলির জল ছুঁয়ে আমিই বলছি আজ,  শোনো

 

জ্বরে জ্বরে সমুদ্রে জ্যোৎস্নায় বীজে ধুনুচি ও ধূপে

চূড়ান্ত আগুন জ্বেলে অনর্গল দুচোখ পোড়াবো

ভূর্জপত্রে রক্ত ঢেলে ভেঙে দেব সব বেলকাঁটা

আর কোনোদিন আমি আর কোনোদিন আমি

নৈঋতে মেঘের কথা তোমাকে বলবো না।

CATEGORIES
TAGS
Share This
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes