বাথিয়ুসের লেখা কবিতা
অনুবাদ ও ভূমিকা- গৌতম বসু
ব্যথিয়ুস (৪৮০ ?-৫২৪ ? খ্রিস্টাব্দ ) লেখকের নাম: অনিসিউস মানলিউস সেভেরিনুস ব্যথিয়ুস, সংক্ষেপে ব্যথিয়ুস । পঞ্চম শতাব্দীতে হূন, গথ ও ভ়্যাণ্ডল প্রভৃতি তুলনামূলক ‘বর্বর’ জাতিদের লুঠতরাজে রোমক সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ছিল । গথদের ছিল দু’টি প্রশাখা, ভ়িসিগথ (যাঁদের মধ্যে প্রধান ব্যাক্তিত্ব ছিলেন স্কুলপাঠ্য বইয়ের কুখ্যাত অ্যালারিক) এবং অষ্ট্রোগথ (এঁদের মধ্যে প্রধান ব্যক্তি ছিলেন থিওডোরিক)। গথদের প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও , তাঁরা নির্বোধ ছিলেন না, তাঁদের কেউ-কেউ দ্রুত বুঝে ফেললেন, তাঁরা যে সভ্যতাকে ভেঙে চুরমার করছেন সেটির মনের স্তরের সঙ্গে নিজেদের কোনও তুলনাই করা চলে না । তাঁরা নিজেদের রোমানদের রাজনৈতিক প্রভু ও বৌদ্ধিক ভৃত্য মনে করতেন। প্রগতিবাদী গথদের অন্যতম প্রধান থিওডোরিক এই কৌশল অবলম্বন ক’রে এবং শিক্ষিত রোমানদের সহায়তা নিয়ে আধুনিক ইতালীর প্রায় পুরোটাই দখল ক’রে নেন । ব্যথিয়ুস কর্মসূত্রে থিওডোরিক-এর সাম্রাজ্যে অতিবিশ্বস্ত, অতিউচ্চপদাধিকারী প্রশাসক ছিলেন। পরবর্তীকালে ব্যথিয়ুস-বিষয়ে থিওডোরিক-এর মনে নানা রকম সন্দেহ জন্মায় । রাজসভার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ব্যথিয়ুস-কে কারাবাস, নির্বাসন এবং শেষ পর্যন্ত, শারীরিক নির্যাতন ও মৃত্যুদণ্ড ভোগ করতে হয় । ন্যায়, গণিত, সঙ্গীত, খ্রিস্টীয় ধর্মতত্ত্ব, অ্যারিস্টটলীয় দর্শনশাস্ত্র প্রভৃতি বহু বিষয়ে পুথি রচয়িতা হলেও, আজ তিনি আদিমধ্যযুগের একজন অন্যতম প্রধান কবি-দার্শনিক রূপে সমাদৃত । অবর্ণনীয় নৃশংসতা ও নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, কারাগারে রচিত তাঁর De Consolatione Philosophiae (The Consolation of Philosophy) একটি কালজয়ী গ্রন্থ । অনুবাদিত কবিতাটি সেই মহাগ্রন্থেরই একটি টুকরো ।
চুক্তিবদ্ধ বস্তুদিগের মধ্যকার কলহ
চুক্তিবদ্ধ বস্তুদিগের মধ্যকার কলহ,
সত্য বনাম সত্যের ইহা অনন্ত সংঘাত,
সত্য একা সত্য; দুই প্রান্ত যদি মিলাইতে
যাও,সত্য তৎক্ষণাৎ মিথ্যা হইয়া যায় –
দেবতাগণ কি জানেন বিভ্রাটের কারণ ?
অথবা এমন যদি হয়, সত্য ছিদ্রহীন,
প্রতি বস্তু অপর বস্তুর মিলন-প্রত্যাশী।
কামনায় নিমজ্জিত, আমারই ভ্রান্তির ফলে,
নিভন্ত অগ্নিকুণ্ডের ভস্মের স্তূপ হইতে
উদ্ধার করিতে পারি নাই যোগসূত্রগুলি ?
কী কারণে তবে সে আজি এত বেদনাতুর,
রহস্য উন্মোচনের তরে এমন কাতর ?
যাহার লাগি এ-প্রদাহ, তাহারে জানিল কী?
যাহা আছে,কেহ কি তাহারই সন্ধানে ফিরিছে ?
সম্পূর্ণ অজানারে কেহ কি করে অন্বেষণ?
অজানারে সে কেমনে করিবে অনুসরণ ?
লভিবে তাহা কোন্ পন্থায়, লভিবার পর
কি উপায়ে চিনিবে উহারে ? কহো,অন্তর্যামী,
তুমি কি একদা লভিয়াছিলে বিশ্বচেতনা,
অংশত, না কি দেখিয়াছিলে পূর্ণ কুম্ভ তা’র ?
ডুবিয়া মত্ত রহিলেও ইন্দ্রিয়ের উল্লাসে,
আত্মা আপনারে সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে নাই,
অংশটি ছাড়িয়া, ধরিয়া রহিয়াছে পূর্ণতা ।
সেইহেতু কহি, যাহারা মূলসত্যসন্ধানী,
চিত্ত তাহাদের শান্ত, তৃপ্ত হইবে না কভু ।
কারণ, সে কভু লাভ করিবে না পূর্ণজ্ঞান,
পূর্ণবিস্মৃতিও তাহার ভাগ্যে লিখা নাই।
কেবল চূড়া রহিয়া যায়, সে দেখিয়াছিল
যাহা, কেবল শিখর জেগে রয় স্মৃতিপটে,
এবং, কামনা রহিয়া যায় বিস্মৃত সত্যেরে
পুনরায় ফিরায়ে আনিতে আপনার মাঝে ।
২০ কার্ত্তিক ১৪২৪,২৩-২৪ কার্ত্তিক ১৪২৪ মঙ্গলবার, শুক্র – শনিবার /০৭.১১.২০১৭ , ১০-১১ .১১.১৭