পৌষালী চক্রবর্তী-র কবিতাগুচ্ছ
চর্যা
বিদ্যুৎ বহতা হয় প্রতিবার একই বিজ্ঞাপন
ব্লেডের ধারটি পরীক্ষিত;ধন্য বিষ্যুদবার
উজ্জ্বল লন্ঠনের আলো, সন্ধ্যাকাল, গৌরী বাতাসে
পুনর্বার দপদপ ; ছায়াপথে ইতস্তত যায়
কী তীব্র আক্রোশ রাতে রাত হুইসেল ব্যারাকে
ট্রাকভর্তি কবিতা খাতা ,তিনশ বছর পরে গোয়ালে উদ্ধার
নির্ঘুম শঙ্খচূড় ফণা তোলে, কোমড় আছড়ায়
অবরোধবাসিনীরা হিমকন্ঠ -পড়া বলে যায়
নক্সীরুমাল মুড়ে রাখা , লবঙ্গের ঝাঁঝালো আস্বাদ
তারা তবু হিমকন্ঠ- ব্রাহ্মীলিপি শেলেট ভরায়…
মধ্যাহ্নের জাতককথা
উঠোনে বৃষ্টি এল ঝেঁপে
মনে হয় ফুটে থাকি কাঠগোলাপ ঝোপে গ্রীষ্মথোকা নিদারুণ
শান্ত শিশু ছেড়ে দিচ্ছে কাগজের নৌকা
ইতিহাস খাতা ছিঁড়ে
অক্ষর মুছে যাচ্ছে, পড়ে রইল অবোধ্য লিপিকুশল ছাঁচ
হরফেরা ভেসে গেল বার ভূঁইঞ্যার তীরে
অপ্রমেয় ঈশা খাঁর ফজর নামাজ
কয়েকশো বছর পর ফিরে আসে ধলেশ্বরী কূলে
মাটির উনান ঘিরে ঊর্ধ্ব মুখে উঠে যায় রোদে ভিজে ভিজে
বেরিয়ে আসি পাটলিপুত্র ছেড়ে
সার্থবাহ দলে ভিড়ে —রেশম ,গুগগুল, ধুনো,কাংস্য বাসন
ফিরি করি লিচ্ছবি দেশে
অন্যতমা রাণী তার তীব্র জাদুটোনা
কুকড়ে দিল পাহাড় আর উপড়ে দিল বোধি
এ পথে কি গেছিলেন শাক্যমুনি?সারিপুত্ত বলো।আমি তবে কেন এত উন্মার্গগামী?
আলো ঠিকরে আসে কোন জন্মান্তর থেকে
পিচ্ছিল পাতার থেকে শোণগঙ্গায় পড়ে
স্তম্ভলিপি পেরোয় পথ আলোকবর্ষ দূরে
তার ভ্রূণমাটি থেকে একটি দুটি পাতা,
বনধূঁধূলের সহজিয়া গিঁটে বেঁধে রাখে
কোমলাঙ্গী রৌদ্ররস, গৃহস্থের ছায়া
অবচেতন আর কী দেখায়?
ভাতঘুম ঠেলে?
মধ্যাহ্নের বৃষ্টি ধারা যতগুলি জাতককথা জন্ম দিতে পারে
অপদৈবী
অন্ধ মেঘের বুক চিরে আলো আজ কৃষ্ণ হয়ে আসে
প্রসবের দ্বার আটকে উপদেবীগণ
বিছিয়েছে অন্নঝাঁপি
কম্পমান গুপিযন্ত্রে যদি কেউ আরাধনা করে
জন্ম দিবি নে ওর!
ফেটে আসি ভ্রূণমাটি
ষেঠের বাছার কাছে উবু হয়
সাধের বিল্লি ওই শ্রয়ডিংগারের
তাচ্ছিল্যের দিকে পিঠ ফিরিয়ে
গর্ভজলে সাঁতরায় ভামিনী রোদ্দুর
ডুবে যাই আর ভাসি
মানতের ঢিল বাঁধা গাছের আড়ালে
আমরা তবু সূর্যের জন্মকথা জানি…
ধুলোশিমুল
বড়সায়েবের নজর এড়িয়ে এ পাড়াতেও বসন্ত ঢোকে
একটি শিমুল ডাল – ট্রাফিকের ধুলোমাখা
একটি পলাশ শাখা- শহরের ধুলোছাপ গায়ে
রথের চাকার নক্সা,কেয়ারির মরশুমি ফুল -করিডোর নিভে আসছে
দারোয়ানের দেহাতি টিনের চাল
ভরে থাকে পাতাঝরা পলাশে শিমুলে
তুলোট কাগজ ওড়ে— ঠেলাগাড়ি,লালফিতে, যূথবদ্ধ ফাইলের সারি
শালবল্লা খুঁটি পোঁতা , ডিসিআরসি নিউট্রাল রঙ
ও পাড়ায় যুদ্ধসাজ,আমরা তার ক্ষতস্থান,
চৈত্রবাতাস জুড়ে উড়ে আসা ছাই
এখানে বসন্ত দিন, জল তার ছায়াও রাখেনা…
রাঙাপিসিমার নাকফুল
এই শারদীয়া জ্যোৎস্নায় তুমি উপাসনা কর
হাঁসের ডানার মত নির্জনতা,
শ্বেতশুভ্র পালক
ডিঙাপথে জোয়ার আসে
গৌরাঙ্গের মত মহাভাব আচ্ছন্ন করে
উহাদের কৃষ্ণনীল বিষণ্ণ খিলান
হারিয়ে যাওয়া নাকফুল রাঙাপিসিমার
নশ্বরতার পাশে
আয়ান ঘোষের মত
হংসলগ্ন হয়ে আছে
ভালো লাগল